অচিনপুরের দেশে: অষ্টম পর্ব

অচিনপুরের দেশে: অষ্টম পর্ব

পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় এবং গৌতম সরকার

 গৌতম সরকার

অনিশ্চিতপুর কোনো জাদু রাজ্য নয়। এখানে প্রবেশদ্বারে কোনো জাদুকর দাঁড়িয়ে থাকেনা যে আহুত-অনাহুত-রবাহুত আগন্তুকের গায়ে জাদুদন্ড বুলিয়ে তাদের শরীরের মনের সমস্ত আবিলতা ফুঁ মন্ত্রে দূর করে দিতে পারে। তবে যদি কেউ মনে করে নিজেকে পরিবর্তন করবে, নিজের মধ্যেকার সমস্ত কালো, আলোর সুষমায় ঢেকে দেবে তাহলে এখানকার আকাশ-বাতাস-গাছ-মাটি-ফুল-ফসল সর্বোপরি সদাহাস্য সহজ সরল মানুষগুলো আন্তরিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। আর যাদের অহং কখনোই নিজেদের ত্রুটি, দূর্বলতা দেখতে দেয়না তারা অনিশ্চিতপুর কেন স্বর্গের নন্দনকাননে বসেও মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করবে, নিজেদের কেউকেটা মনে করে অন্য মানুষদের ঘৃণা করবে, অপছেদ্দা করবে, করুণা করবে। কয়েকদিনের মধ্যেই শহর থেকে মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে আসা ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষগুলো অনিশ্চিতপুরের টাটকা আলোবাতাসে তাদের হৃত স্বাস্থ্য, ক্ষয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল আর সঙ্গে সঙ্গে ফিরে পেল টিপিক্যাল নাগরিক মানসিকতা। যে চিকিৎসক ভদ্রলোক সুবলকে দেখতে অস্বীকার করেছিলেন তাঁর সঙ্গে আমার মাত্র একদিনই কয়েকটা মাত্র বাক্যের আদান-প্রদান হয়েছে। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই বুঝে গেছি ভদ্রলোক সাংঘাতিক উন্নাসিক, অসামাজিক অর্থাৎ নিজের সমকক্ষ বা উচ্চকক্ষ সমাজ ছাড়া মেশেননা, আর চারটে কথার মধ্যে তিনটি বাক্যে নিজের পেশার বিজ্ঞাপন করেন। এইরকম এক চিকিৎসক যার যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে প্রকৃত সৈনিকের মতো দিনরাত লড়াই করে (অন্যদের মতো) এই মারণ রোগের মোকাবিলা করা উচিত ছিল, সেই চিকিৎসক প্রাণভয়ে আরো পাঁচটা সাধারণ মানুষের সাথে পালিয়ে এসেছে, তার কাছ থেকে এইরকম ব্যবহারই প্রত্যাশিত। তার সাথে যোগ হয়েছে আরো কিছু মানুষ যারা নিজের আর পরিবারের ভালোর বাইরে প্রত্যক্ষ করার মতো অন্তঃদৃষ্টি অর্জন করতে পারেননি। ব্যতিক্রম আছে বইকি ! ওই যে শিক্ষিকা মহিলা–কি নিষ্ঠার সাথে আর্তের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। ওই মহিলা প্রতিদিন সুবলের বাড়িতে গিয়ে শারীরিক ভালো-মন্দের খোঁজখবর নেন, ওর জ্বর মাপেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও ঔষধ-পথ্যের ব্যবস্থা করে ডাক্তারবাবুর চেম্বারে যান। এদের মধ্যে অনেক মানুষ আছেন যারা নিজেদের ছড়িয়ে দিতে পারেন দশের সেবায় ও কল্যানে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে উদ্যোগ ও সাহসের অভাব। তারা এই গন্ডিবদ্ধ জীবনের আগরে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে এই আগর ভাঙা বা গন্ডি টপকানোর কথা ভাবলেই এদের হৃদকম্প শুরু হয়। এদের ক্ষেত্রে দরকার ইচ্ছের সলতেটায় একটু অগ্নি সংযোগ করা। যদি ঠিকঠাক এদের উদ্বুদ্ধ করা যায় তাহলে যেকোনো জীবনযুদ্ধ টুসকি দিয়ে জিতে নেওয়া যায়। যেকোনো দেশ বা সমাজের ক্ষেত্রে ‘মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়’ হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড। তাই এই সম্প্রদায়ের শক্তি অসীম। এরা যদি ফেলে তুমি পড়ে যাবে আর এরা যদি রাখে তুমি থাকবে। সমাজের এই দুর্দিনে এই শক্তির জাগরণ খুব জরুরি। এদের জাগতেই হবে। এই ব্যাপারে সবথেকে বেশি সাহায্য যার কাছ থেকে পাওয়া যাবে ,সেই মানুষটি হলো-লীলাদি। ওনার সাথে কথা বলা খুব জরুরি।

কদিন ধরে অকাল বর্ষণে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বছরের এই সময় এরকম একটানা বৃষ্টি সাধারনত দেখা যায়না। মাঠ-ঘাট জলে থৈ থৈ; জমিতে ধান ফলতে শুরু করেছে, এই সময় গাছের গোড়ায় জল দাঁড়িয়ে গেলে ফসলের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। চাষিদের মাথায় হাত, আমারো কপালে চিন্তার একটা স্থায়ী ভাঁজ পড়ে গেছে। ঘরে মন টিকছেনা। কদিন মাঠের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার ফলে এই স্থবির জীবন অসহ্য লাগছে। গতকাল বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা মাথায় মঈদুলরা কয়েকজন মিলে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। তাদের কথায় বুঝলাম বৃষ্টি কয়েকদিনের মধ্যে বন্ধ না হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এসময়ের ফসলটাই এখানকার মানুষের সারা বছরের রসদ। এটা নষ্ট হয়ে গেলে মানুষ না খেতে পেয়ে মরে যাবে। এখনো যদি বৃষ্টি থামে জমি থেকে অতিরিক্ত জল ছেঁচে বের করে ফসল বাঁচানো যাবে। কিন্তু আল্লা-ভগবান-যীশুর কি ইচ্ছা বোঝা যাচ্ছেনা। আমি আমার মতো করে ওদের আশ্বাস দিলাম। ওরা ভীষণ মনমরা হয়ে পড়েছে। এই দুর্দিনে নতুন করে এই দুর্বিপাক ওদের ভীষণ অসহায় করে তুলেছে। বিড়বিড় করে আল্লার নাম স্মরণ করতে করতে ওরা ফিরে গেল। ওদের বিদায় দিয়ে আমি দুপুরের খাবার খেতে ডাইনিং রুমের দিকে এগোলাম।

এখানে দুপুরের খাবার সময় বারোটা থেকে দুটো। রান্না-পরিবেশন-রান্নাঘর পরিষ্কার ইত্যাদি কাজের জন্য দায়িত্ব ভাগ করা থাকে, তবে নিজের এঁটো বাসন নিজেকে ধুতে হয়। খাবার সময়টা দুঘন্টা ধরে চলায় কোনো সময়ই খাবার ঘরে খুব বেশি ভিড় থাকেনা। সবাই যে যার মতো খেয়ে চলে যায়। আজ পৌছেই দেখি ‘ডাইনিং রুম সরগরম’।প্রায় সবাই উপস্থিত, রীতিমতো হুল্লোড় চলছে। বুঝলাম গান-বাজনার আসর জমে উঠেছে। আমি পৌঁছনোর পরই একটি অল্পবয়সী মেয়ে তার সুরের জাদুতে সভাঘর ভরিয়ে তুললো,

“মেঘ বলেছে যাবো যাবো,রাত বলেছে যাই

সাগর বলে কুলমিলেছে

— আমি তো আর নাই…..”৷

মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে ছিল। প্রথমে নিজেকে একদম পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারছিলামনা। মানুষগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল–কোথাও কিছু ঘটেনি, কোনো বিপদ-ভয়-রোগ-শোক নেই; জীবনটা শুধু আনন্দের, জিতে নেওয়ার, ভোগের ও উৎসবের। এতগুলো মানুষ সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভাবে ভুলে কিভাবে এই নাচগানে মেতে উঠতে পারে ভেবে পেলামনা। আস্তে আস্তে সময় বয়ে যেতে লাগলো, একটার পর একটা গান, কবিতা , ভাষ্য আমার চোখের সামনে একটা হলুদ রঙা পর্দা ওড়াতে লাগলো। স্নিগ্ধ হলুদের মোলায়েম স্পর্শে আমার সমস্ত কষ্ট, চিন্তা, ভয় আস্তে আস্তে কালো থেকে ধূসর, আরো ধূসর হতে হতে দিকচক্রবালে মিলিয়ে যেতে লাগলো। আশ্বর্য্যজনক ভাবে আমার মধ্যে সুর জন্মাতে লাগলো, আমার কন্ঠনালী উন্মুক্ত হলো সেই সুর প্রকাশের অদম্য বাসনা নিয়ে; নিজের অজান্তেই গলা মিলে গেল সবার সুরের সাথে…..

“এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়……..আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে।”

সুরের ঐকতানে এই ডাইনিং হল আমার চোখের সামনে পরিণত হলো ঘন সবুজ দিগন্তবিহীন মাঠে। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি হেমন্ত পবন দোলা দিয়ে যাচ্ছে সোনারঙা ধান শীষের পরতে পরতে ; আর দূর আকাশে সূর্য্যের মিটিমিটি দুষ্টু হাঁসির ঝকমকে রোদ সারা পৃথিবী রাঙিয়ে দিচ্ছে বসন্ত আবিরে। আবার একবার বুঝলাম, দুঃখের মধ্যেই সুখের বীজ লুকোনো থাকে, শুধু তাকে খুঁজে নিতে জানতে হয়; কান্নার পরই তো ভুবনভুলানো হাঁসির প্রকাশ ঘটে। আর সেই হাস্যমুখে চোখের জলের ফোঁটার মধ্যে যে জীবন চলকায় তাকেই দুহাতে জড়িয়ে ধরতে হবে, আঁজলা করে বুক ভরে তার সুগন্ধ নিতে হবে। তানাহলে আর বাঁচার সার্থকতা কোথায়! এই স্বপ্ন সুন্দর ভাবনার মধ্যেই গোটা ডাইনিং হল খাবারের সুগন্ধে ভরে উঠলো। নিমেষের মধ্যে সবাইয়ের সামনে ধোয়া-মোছা সতেজ কলাপাতায় এসে পড়লো গরমগরম খিচুড়ি আর বেগুনি। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি রান্নাঘরের মুখটিতে হাঁসি হাঁসি মুখে লীলাদি দাঁড়িয়ে পরিবেশন তদারকি করছে। ভদ্রমহিলাকে দেখেই সকাল থেকে খারাপ হতে থাকা মনটা ভালো হয়ে গেল। মনে মনে বললাম, “আপনাকে খুব দরকার দিদি, খুব দরকার।”

 

পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায়

জাদুদণ্ড আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই লুকিয়ে আছে।ওটি ব্যবহার করে কত কি করা যায়। অনিশ্চিতপুরেতো সর্বদাই বাস করছি।কখন কি হয় তার কোন ঠিক আছে?লোকাল ট্রেনের হ্যাণ্ডেল ধরে ঝুলতে ঝুলতে টুপ করে খসে পড়লো যে জীবন,হঠাৎ ফুটপাতে উঠে গড়গড়িয়ে চলে গেল যে জীবনের ওপর দিয়ে মদ্যপের গাড়ি, কানে মোবাইল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাকে পিষে দিল চলমান যান,বান্ধবী যে সাতসকালে কলেজে আসবে বলে উঠতে গিয়ে সেই যে পরে গেল আর উঠলো না, তারা কি জানতো তারা আর কোনদিন তাদের আদরের নিশ্চিতপুরে ফিরবেনা? ভোরবেলা বন্ধুর স্কুটারে চেপে হাসিমুখে বেড়িয়েছিল ছোট ভাইটা এক মৃত্যুদূত তিস্তা ব্রিজ থেকে বিপুল গতিতে নেমে ঘুমঘোরে পিষে দিল তাকে।শুধু কি তাকে ?চালক সেই বন্ধুটিকেও,রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল ছোট্ট একটা বছর সাতেকের মেয়ে তাকে,এক রিক্সাচালককে রিক্সাসমেত ছেঁচড়ে টেনে নিয়ে গেল ,পা কাটা গেল তার,রিক্সাটিও গেল, পুরো জীবনটাই অনিশ্চিত হয়ে পরলো।

আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে ঐ জাদুদণ্ড দিয়ে আমরা কত অলৌকিক কাণ্ড ঘটাতে পারি তার শেষ আছে?কঠিন দুরারোগ্য রোগকে পরাস্ত করে মৃত্যুকে পরাভূত করতে পারি,সঞ্জীবনী মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র ঐ জাদুকাঠিতে নিহিত আছে,আরো কত অসম্ভব ঐ জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সম্ভব হয় তার ইয়ত্তা যে কি – স্বল্পবুদ্ধিতে তা ব্যাখ্যাগম্য নয়।মনের মালিন্য কিন্তু জাদুকাঠির স্পর্শে ঝাঁ চকচকে হয়ে ওঠেনা ওটা নিজেরসংস্কার,বোধ,চেতনা,শিক্ষার পালিশেও অনেকে আয়ত্ত করতে পারেননা।কালো-আলোময় জীবনে কালোর আবিলতা সংক্রমণ ছড়ায় যেমন সংক্রমিত হয়েছেন এখানে আশ্রয় নিয়েছেন যাঁরা।আকাশ,গাছ,মাটি কল্লোলিনীর আবহেও মায়া ছড়ায়,শুধু উপভোগ করবার মনের আর সময়ের অভাব।এখানে ঐ দুটির অভাব নেই।মানুষের মান আর হুঁশ যার আছে তার কাছে অনিশ্চিতপুর নন্দনকাননতো বটেই,তিলোত্তমায় থেকেও সে নিজের একটা নন্দন কানন বানিয়ে নেন,যেমন আমাদের দলের শিক্ষিকা মহিলাটি।অস্মিতা কার না আছে?অস্মিতার মাত্রা একেকজনের কাছে একেকরকম। নিজের পরিমণ্ডলের মধ্যেই আত্মতৃপ্ত কেউ,আবার অস্মিতা কারুর বিশ্বব্যাপী, নিজের গণ্ডীবদ্ধতা ছাপিয়ে অহংবোধ সেখানে নিঃসীম।”তত্র কো মোহঃ কঃ শোক একত্বমনুপশ্যতঃ।”নিজেকে অপরের সঙ্গে এক এবং অভিন্ন দেখার মধ্যেই তাঁর আত্মতৃপ্তি।অপরের প্রতি মোহ নেই, নিজস্ব বলে কিছু নেই তাই হারাবার ভয়ও নেই।

জীবনযুদ্ধে কাউকে নেতৃত্ব দিতেই হয় সেটা সাহসী পদক্ষেপে হওয়াই দরকার কখনো অনমনীয়তার সাজুয্য তাতে অন্যমাত্রা এনে দেয়।নিজেকে ছড়িয়ে দিতে যাঁরা উদ্বুদ্ধ করেন তেমন উদাহরণ আমাদের দুই বিদেশিনীতো আছেনই যাঁরা দেশ, কাল পরিবেশ,পরিস্থিতি উপেক্ষা করতে পেরেছেন শুধুমাত্র মানুষকে ভালবেসে।প্লেগে আক্রান্ত কোলকাতা কি নিবেদিতার সেবা ভুলতে পেরেছে? আর মাদারকে ভুলে যাবে এমন পাষণ্ড কি কেউ আছে?জীবনে দাগ রেখে যাওয়া এক অন্য ঘরানার আদর্শ।যাঁরা পারেন তাঁরাইতো পথপ্রদর্শক, আলোকোজ্জ্বল উদ্ধারের উত্তরসূরী তাঁরাই।হাত ধরে টেনে উত্তরণ ঘটানো একটা সমাজকে,একটা জাতিকে সেটাতো সোজা কথা নয়।একের ঘুম ভাঙবে ,ধীরে ধীরে একটা পরিবারের,তারপর পাড়ার,সমাজের এইভাবেই হয়তো ছড়িয়ে পরে জাগরণের গান,উদ্বুদ্ধ করে জাতিকে দেশকে যেমনটি ছিল দেশোদ্ধারে নিবেদিতপ্রাণ ঐ স্বদেশী আন্দেলনে যুক্ত ছেলেগুলোর,যাঁরা আজও স্মরণীয়।মধ্যবিত্তের বিত্তই হল তাদের অদম্য ইচ্ছা, কর্মোদ্যোগ,”করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে” এই মানসিকতা ,তার সঙ্গে সঙ্গতে আছে ‘কুছ করকে দিখাও’-এর সঙ্গত।নিম্নবিত্তের বেঁচে থাকার,নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে মরিয়া শ্রম এর সঙ্গে তাল না ঠুকলে সমাজের আসরটি জমবে কি করে?উচ্চবিত্তের মজলিসে এরাই শিল্পী এরাই কারিগর এরাই ধুয়োধারী।এখন এরা অসহায় তাই সমাজ স্থবির জরদ্গব হয়ে এক জায়গায় স্থির নিশ্চুপ।

প্রকৃত বিত্ত ঐ মন,চৈতন্য –

কথায় আছে যে ‘বিত্ত হতে চিত্ত বড়’। মধ্যবিত্তের ঐ চিত্তধনটুকুই সম্বল। তাই দিয়েই সে জীবনের কত ঝুঁকিই না নিতে পারে।কিন্তু চিত্তে সমৃদ্ধি কি উচ্চবিত্তে নেই?আছে ।তবে সীমিত।সেখানে উৎসাহ উদ্দীপনাকে হাঁ করে গিলে ফলে অহমিকা আর স্ফীতপকেটের গৌরববোধে নিশ্চিন্ত জীবন।আর নিম্নবিত্তের চিত্তবৃত্তি? দিনযাপনের গ্লানিতেই শেষ হয়ে যায় তা। যেটুকু বেঁচে থাকে তা দিয়েও অনেককিছুর ভেলকি সে দেখাতে পারে যদি অর্থ তার অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়।

যাক্ গে সে সব চুলচেঁড়া আত্মবিশ্লেষণ।ফিরে আসা যাক বাস্তবে।লীলামাসি বহু পোড় খাওয়া এক মহিলা তিনি বোর্ডে দিয়ে দিয়েছেন সুবলের রোগমুক্তির ছাড়পত্রের প্রত্যায়িত কপি।তিনি এও বলেছেন যদি কেউ এ নিয়ে সন্দিহান হন বা প্রশ্ন তোলেন তাহলে তিনি নিজের ব্যবস্থা করে নিতে পারেন।এদিকে পালাবার পথ নাই কারণ শহর এখন মৃত্যুপুরী।ফিরে যাবার ব্যবস্থা নেই ।তাছাড়া ঐ ডাক্তারবাবু সকলকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভয় পাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি।তাই পরিস্থিতি বর্তমানে আয়ত্তাধীন।সত্যিই “সাগর বলে কূল মিলেছে “এবার তাই আমিও সমবেত গানে গলা মেলালাম।রবীন্দ্রনাথের গানই আমাদের পরম আশ্রয়।”হাসি কান্না হীরে পান্না” হয়ে ওঠে যাঁর গানে,যাঁর সুর শোনায় মুক্তির আশ্বাস,”কান্না হাসির দোলদোলানো পৌষ ফাগুনের মেলা” বসে যেখানে,”সুখের মাঝে তোমায় দেখেছি দুঃখে তোমায় পেয়েছি প্রাণ ভ’রে”,তাই সেই “প্রভু আমার প্রিয় আমার পরম ধন”কে নিমেষে আঁকড়ে ধরে উত্তাল সময়কে পেরিয়ে যেতে চাই আমরা।গরম গরম খিচুড়ি আর বেগুনি দারুণ আকর্ষণীয় মধ্যাহ্ন ভোজ জমে উঠলো।খিচুড়ি আমাদের মিশ্র মানসিকতার প্রতীক আর তাতে স্বাদবর্ধক বেগুনি যেন সুর সঞ্চার করলো।আজ সন্ধ্যায় জমে উঠবে স্মরণ বরণে বিশ্বকবি।হ্যাঁ আজ রবীন্দ্রনাথকে আমরা স্মরণ কোরবো গানে কবিতায়।আকাশে কিন্তু মেঘ,ভারি বর্ষণের ঈঙ্গিত।

(ক্রমশঃ…..)

 

 

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
বর্ণমালার ফুল

বর্ণমালার ফুল

বর্ণমালার ফুল মায়ের কন্ঠ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে সেই বর্গি দানব, সাথে সাথে শুরু হয় সংক্রুদ্ধ সন্তানদের আগুন মিছিল ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’- ঢেউ তোলে ঢাকার রাজপথ তারপর ...
সমবয়সী

সমবয়সী

এন এইচ সংগ্রাম  * যখন তুমি গ্রীষ্মের প্রখর গরমেও কোর্ট, স্যুট, টাই পরে,  দুধ ডিম আর বাহারী ফলের ব্রেকফাস্ট করে ঘোড়ার খুরের মত বুটে শব্দ ...
বঞ্চিত চিত্রকরদের নতুন ছবি- মহীতোষ গায়েন

বঞ্চিত চিত্রকরদের নতুন ছবি- মহীতোষ গায়েন

 মহীতোষ গায়েন রংতুলি সব হারিয়ে গেছে তবুও কষ্ট এঁকেছি চিত্রপটে,সব দু:খগুলো একটু একটু করে রঙিন হবে,তারপর একদিন নিলাম হবে,চড়া দরে বিকোবে চিত্রপট। আস্তিন গুটিয়ে নিয়েছে ...
Mukti Dao - মুক্তি দাও লিরিক্স  Kacher Manush | Prosenjit C, Dev, Ishaa | Sonu

Mukti Dao – মুক্তি দাও লিরিক্স Kacher Manush | Prosenjit C, Dev, Ishaa | Sonu

গানের কথা: আমি বেমানান… কেনো থাকবো যুক্তি দাও… যদি ভালোবাসা আমায় মুক্তি দাও… যদি ভালোবাসা আমায় মুক্তি দাও… আমি বেমানান… কেনো থাকবো যুক্তি দাও… যদি ...
রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা, ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা, ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা, ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন। আগে ওকে বারবার দেখেছি লালরঙের শাড়িতে দালিম ফুলের মতো রাঙা; আজ পরেছে কালো রেশমের ...
মৃদুলা

মৃদুলা

শহীদুল ইসলাম মৃদুলা মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে বলছি তুমি তোমার খেয়াল রেখ। তুমি তোমার যত্ন নিও। তুমি আরো বাঁচো। হাজার বছরের চেয়েও বেশি বাঁচো। তুমি আরো ...