অণুগল্প – অন্য পৃথিবী  

অণুগল্প - অন্য পৃথিবী    

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

বছর দশ হল স্বামী অনীশের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই সুরমার। কোনো ঝগড়া বিবাদ নয়, কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া নয়। বিয়ের বছর তিনেকের মধ্যেই সুরমার মনে হল, অনীশ চারদেয়ালের মধ্যে নিজেকে এমনভাবে বেঁধে ফেলেছে যে ওই জগৎ থেকে নিজেকে বের করে আনা তার পক্ষে আর সম্ভব নয়। এমনটা হলেও কোনো অসুবিধা ছিল না। মনকে বোঝানো যেতো মানুষটা নিজেকে নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত থাকে কিন্তু অন্য কারও পৃথিবী নিয়ে সে নাড়াচাড়া করতে যায় না। কিন্তু তা তো নয়। নিজের মতো অন্যকেও বেঁধে রাখতে চায় নিজের পৃথিবীতে। সুরমা এমন মানুষকেও কাছে ডেকেছিল। ভেবেছিল ভালোবাসা দিয়ে অনীশের পৃথিবীটাকে কিছুটা হলেও বদলে দিতে পারবে। অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলো।

  অনীশ চেয়েছিল, তার একার রোজগারেই সংসার চলুক। সুরমা চাকরি ছেড়ে দিয়ে সংসার আর মেয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। সুরমা মানতে পারে নি। কিন্তু তাই বলে সে কোনো বিবাদের মধ্যেও নিজেকে জড়ায় নি। কারণ সে নিজেকে বোঝাতে পেরেছিল, প্রত্যেক মানুষেরই এই পৃথিবীতে স্বাধীন মত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার আছে। আবার অন্যদিকে সেই মতকে না মেনে চলারও অধিকার আছে। সুরমার মনে হয়েছিল চাকরি বজায় রেখেও সে অনায়াসে সংসারকে সময় দিতে পারবে। একদিন হঠাৎ করেই অনীশকে অবাক করে দিয়ে দুবছরের শ্রীতপাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল সুরমা। অনীশ অনেকবার ফোন করেছিল কিন্তু সুরমা ফিরে যায় নি। কারণ তার মনে হয়েছিল, এই বিশ্বাস বদলের নয়। চেষ্টা করে কয়েকদিনের জন্যে হয়ত জানলা দরজা খুলে দেবে কিন্তু তা বন্ধ হতেও বেশি সময় নেবে না।

সেদিনের দুবছরের শ্রীতপা আজ বারো বছরের। সব নিজে হাতে করেছে। কাজের লোক রাখে নি। নিজের সংসার নিজের মতো করে গুছিয়েছে সুরমা। রান্না করে দুজনে খেয়ে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে তবে নিজের স্কুলে পা রেখেছে। অবশ্য একটা সুবিধা পেয়েছে সুরমা, নিজের স্কুল থেকে কয়েক পা হেঁটে গেলেই মেয়ের স্কুল।

               যখনই সংসারে হাঁফিয়ে উঠেছে সুরমা তখনই বাড়ির পাশের আমগাছটার নিচে বেশ কিছুক্ষণের জন্যে গিয়ে বসেছে। শ্রীতপা একদিন খেতে বসে মাকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি আমগাছটার কাছে যাও কেন মা ?”

  —– ওটা যে আমার বাবা।

 —– ধ্যাত! আমগাছ আবার কারও বাবা হয় নাকি ? 

               —– হয় হয়। ওটা আমার একটা পৃথিবী। যখনই মনে হয় আমাদের সঙ্গে কেউ নেই তখনই আমি ওখানে যাই। বাবার মতো মাথার ওপর ছাতা ধরে থাকে। ও আমাকে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে উৎসাহ দেয়। 

   —– তুমি কি শুধু ওইখানেই যেতে চাও 

   —– সেটা আমি ঠিক জানি না মা। আমি ওইখানে পৌঁছে যেদিকে খুশি চলে যেতে পারি। আসলে ওই জায়গাটা আমার অন্য পৃথিবীর মূল প্রবেশ পথ।

 

ময়নাডাঙা,আশ্রয় অ্যাপার্টমেন্ট, পশ্চিমবঙ্গ,ভারত।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
Technology Changed My Life. Here’s My Story

Technology Changed My Life. Here’s My Story

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...
ছাইলিপি ই-শারদ সংখ্যা-২০২০

ছাইলিপি ই-শারদ সংখ্যা-২০২০

প্রিয় পাঠক, শারদীয়ার শুভেচ্ছা গ্রহন করুন! আশাকরি বিশ্বের এই খারাপ পরিস্থিতি আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই ভালো আছেন কিংবা ভালো থাকার চেষ্টা করছেন।  এসেছে শারদোৎসব। ...
ছড়া - অন্নপূর্ণা 

ছড়া – অন্নপূর্ণা 

স্বাগতা ভট্টাচার্য  দূর্গা পূজা আসছে বলে আমার খুকু হাসছে। পায়নি খেতে ওদের খুকু বানের জলে ভাসছে। আমার খুকু পরবে পূজায় টুকটুকে লাল জামা। একটা জামা ...
শাকিব খানের নায়িকা সোনাল চৌহান যেন আগুন

শাকিব খানের নায়িকা সোনাল চৌহান যেন আগুন

ঢালিউড কিং শাকিব খান পা দিয়েছেন বলিউডের মাটিতে। এত দিন গুঞ্জন শোনা গেলেও পরিচালক অনন্য মামুনের হাত ধরে বলিউডে ডেবিউ হতে যাচ্ছে ঢালিউডের হাইয়েস স্ট্যারডম ...
হিন্দু (সনাতনী) ছেলেদের বাছাইকৃত সেরা নাম (২০২৪)

হিন্দু (সনাতনী) ছেলেদের বাছাইকৃত সেরা নাম (২০২৪)

অ দিয়ে হিন্দু ছেলেদের নাম ১.অসীম — প্রসিদ্ধ, মহান, অনেক বড়, বিশাল ২. অনিক — ভগবান গণেশ৩. অবদ — উপহার, পুরষ্কার৪. অকীল — বুদ্ধিমত্তা, বুদ্ধিমান৫. ...
রহমতুল্লাহ লিখন এর তিনটি কবিতা

রহমতুল্লাহ লিখন এর তিনটি কবিতা

রহমতুল্লাহ লিখন    এক এখন আমার কঠিন তরল বায়বীয় লক্ষ্য ১ আমি আনন্দিত বিমোহিত, আপনার পা চেটে চরম পুলকিত। জীবন এখন স্বার্থক শোভিত,  দয়া করে ...