সকালে ঘুম থেকে উঠে অভ্যাসবশত উত্তরের ঝুলবারান্দায় এসে দাঁড়াতেই চোখ পড়ল রাস্তার ওপারে কৃষ্ণচূড়া গাছটির দিকে। কদিন থেকে খেয়াল করছিলাম গাছটিতে নতুন পাতা বেরোচ্ছে। আজ দেখি পাতাগুলো ঘন হয়ে গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে, তাতে আবার চূড়ায় বেশ কটি ফুলও ফুটেছে। টকটকে লাল ফুল। ঠিক যেন লাল–সবুজ পতাকা। মনটা আনন্দে গেয়ে উঠল।
সেদিন ছিলো শুক্রবার। তারামণি ও তার দুই বন্ধবী মিলি ও নীলা মিলে হঠাৎ করেই একটা প্ল্যান করল। আগামী পরশু তারা নীল শাড়ি পরে শরতের কাশফুলের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। প্ল্যান মতো তারা রবিবারে প্রশান্তির নীল শাড়ি পরে ঘুরতে বের হলো। ঠিক এমন সময়ে তারামণির ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো। সেদিনের সেই ব্যস্ততার মধ্যে সে কলটা রিসিভ করতে পারল না। কিন্তু রাতে হোস্টেলে ফিরে ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের লক খোলার পর মন পড়ল সেই অচেনা নাম্বার থেকে আসা কলের কথা। তখনই সে কল ব্যাক করবে, কি করবে না? ভাবতে ভাবতে কল দিয়ে বসল। এক পুরুষ কন্ঠ হ্যালো বললো। এই হ্যালো শব্দটি শুনে তারামণির মনের মধ্যে অজানা এক প্রতিধ্বনি বাজতে লাগল। দুজনের মধ্যে কথা বার্তা হওয়ার পর বোঝা গেল কলটা ভুল করে এসেছিলো তারামণির নাম্বারে। এই ভুল থেকেই শুরু হলো তারা আর নয়নের প্রেমালাপ। তারামণি সবেমাত্র ভার্সিটির ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আর নয়ন একজন বেকার গ্রাজুয়েট। চাকুরীর আশায় ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে ক্লান্ত প্রায়। আর ঠিক এই ক্লান্ত রথের যাত্রী হয়ে আসল তারামনি নয়নের জীবনে। এভাবে কয়েকমাস হলো বেজে চলেছে তাদের নতুন প্রেমের গীত। এরপর তারামনি ১৭ই মার্চে করোনার কারণে ছুটিতে চলে এলো বাড়ি। সমস্ত পৃথিবী থমকে যাচ্ছে সেই সাথে ওদের ভালোবাসা ও স্থবির হয়ে যাচ্ছে । কত জল্পনা কল্পনা ছিলো ওরা ১৪ এপ্রিলে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ করবে। নয়নের পছন্দের বেগুনী রংয়ের শাড়ি পরে এলোকেশে সামনে দাড়াবে তারামণি। কিন্তু তা আর হলো কই! তারা জেগে জেগে কত শত কল্পনা করে সারাদিন।। কেমন করে ভীড়ের মাঝে অদেখা নয়নের চোখ দুটো খুঁজে পাবে? কোন কোন শব্দমালা দিয়ে তার সাথে আলাপচারিতা শুরু করবে? নয়নের চোখের দিকে একটানা তাকিয়ে থাকতে পারবে তো সে? এরকম হাজারও অনুভূতিগুলো তারামণির আকাশে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। শয়নেস্বপনে তারামণি শুধু নয়নের কল্পনায় ভেসে যাচ্ছে। নাহ্! কল্পনার আনন্দটা বোধ হয় বেশি হয়ে যাচ্ছে।
একদিন তাদের দেখা হবে। দুজনে এক পলকে তাকিয়ে দুজনাকে মনভোরে দেখবে। আরও কত কি!বিপরীত দিকে নয়নও বসে আছে। হচ্ছে না কোনো চাকুরীর সুযোগ এই দূর্যোগময় মূহুর্তে । ইতিমধ্যে তাদের মধ্যে ভার্চুয়াল জগতের মাধ্যমে সাক্ষাৎ মিলেছে। এখন শুধু সরাসরি সাক্ষাতের পালা। তারামণি পথ চেয়ে বসে আছে হয়ত পৃথিবী একদিন সুস্থ হবে। সেদিন তারা পৃথিবীর আকাশে তাকিয়ে প্রাণ ভোরে রংধনু দেখবে। এভাবে তারা চেয়ে আছে পৃথিবীর সুস্থতার প্রতিক্ষায় আর নয়ন আছে চাকুরীর খোঁজে। জানি না কবে শেষ হবে তাদের প্রতিক্ষার প্রহর!
ক এমন সময় তারামণি নয়নকে ফোন করেই যাচ্ছে, মোবাইলে মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু নেই তার কোনো সাড়া। কারণ নয়নকে গ্রাস করেছে কোভীড-১৯। এভাবেই শেষ হয়ে গেলো তারামণির প্রতিক্ষা। তবে আদৌও শেষ হয়েছে কি তার প্রতিক্ষার ঘন্টা?
শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।