জোবায়ের রাজু
ঘড়ির কাটায় রাত দুইটা। কবির হোসেনের ঘুম আসছে না। চব্বিশ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্ত্রী ঝর্না বেগমকে বেশ মনে পড়ছে। আজ তাদের বিবাহ বার্ষিকী। স্ত্রী বেঁচে থাকলে ছোট খাটো একটা ঘরোয়া আয়োজন দিতেন। নিজের পছন্দের সবুজ শাড়ি পরে ঝর্না বেগম সারা ঘরে হাঁটতেন। কবির হোসেন মুগ্ধ দৃষ্টিতে ঝর্না বেগমের কর্মকান্ড দেখতেন আর মুখটিপে হাসতেন।
এসব ভাবতে ভাবতে রাত দ্ইুটা দশ মিনিটে বিছানায় গেলেন কবির হোসেন। বিছানায় গা হেলানোর অনেকক্ষণ পর সাধারনত কবির হোসেনের ঘুম আসে। কিন্তু আজ তার বিপরীত। বালিশে মাথা রাখতে না রাখতেই ঘুমে তলিয়ে গেলেন। একমাত্র সন্তান কনকের রাত জাগার অভ্যাস আছে। ক্লাসের পড়া নয়তো ফেসবুকে আড্ডা, এ দুটোতেই রাত পার হয় কনকের। রাতে সে ঘুমায় না বললেই চলে। তার ঘুম হচ্ছে দুপুর চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এতরাতে বাবার ঘরে লাইট জ্বলতে দেখে কনক এগিয়ে এসে দেখে বাবা গভীর ঘুমে এতটাই মগ্ন যে মশার কয়েল পর্যন্ত জ্বালাতে ভুলে গেছেন। মশারির তলে ঘুমাবার অভ্যাস নেই কবির হোসেনের। যতই মশা থাকুক না কেন কয়েলই তার একমাত্র ভরসা।
বাবার নিদ্রিত খাটের পাশে কয়েল জ্বালিয়ে আর লাইট বন্ধ করে নিজের ঘরে গেল কনক। ঘড়িতে এখন রাত আড়াইটা। বিথীকে কল দিলে কেমন হয়! এত রাতে সে জেগে আছে তো! কল দিলে আবার বিরক্ত হবে না তো! হোক বিরক্ত। তবু এই মুহুর্তে কনক বিথীকে কল দিবেই।
বিথী কনকের হবু বউ। এক বছর আগে তাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিথীর অনার্স ফাইনালের পরই বিয়ে। ততদিনে মাষ্টার্সটাও কমপ্লিট হবে কনকের। কবির হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাফায়েত আলীর একমাত্র মেয়ে বিথী। ভারী রুপসি। এমন রুপসি মেয়েকে হাতছাড়া করতে চান না কবির হোসেন। পুত্র বধূ হিসেবে বন্ধুর কাছে বিথীকে চাইলেন তিনি। কিন্তু নিরাশ হননি। সাফায়েত আলী বন্ধুর প্রস্তাবে একবাক্যে রাজী। বিয়ে ঠিক হবার পর দুই পরিবারের সম্পর্কটাও আরেকটু মজবুত হল। কবির হোসেনের সংসারে নিজের সন্তান আর কাজের ছেলে মিযান ছাড়া আর কেউ নেই। অন্যদিকে সাফায়েত আলীর সংসারে তার প্যারালাইসিস স্ত্রী, প্রবাসী ছেলে কানন, ছেলে বউ নুসরাত আর একমাত্র মেয়ে বিথী। নুসরাতই প্যারালাইসিস শ্বাশুড়িকে দেখে শুনে রাখে।
কনক বিথীর ফোনে কল দেয়। কিন্তু নাম্বার বিজি। এতরাতে বিথীর নাম্বার বিজি থাকার কোন কারণ দেখছে না কনক। বিথী কার সাথে এত রাতে কথা বলবে! সাধারণত এত রাতে আর কখনো বিথীকে কল দেয়া হয়নি কনকের। মাঝরাতে এই প্রথমই কল দেয়া হবু বউকে।
মাঝরাতে অবশ্য বিথীকে কল না দেয়ার ব্যাপারে আগেই বারন ছিল বিথীর। ঘুরে ফিরে একটিই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কনকের মাথায়Ñবিথী এতরাতে কার সাথে কথা বলবে! কোন বান্ধবী? না অন্য কোন ছেলের সাথে বিথীর রিলেশন আছে? না না , এটা হবে কেন? কি সব আবোল তাবোল ভাবছে কনক!
ঘড়ির কাটায় এখন রাত তিনটা। আচমকা কবির হোসেন ঘুম চোখ ঢলতে ঢলতে ছেলের ঘরে এলেন। বাবা সাধারনত তার ঘরে খুব একটা আসেন না। কিন্তু এখন এসেছে দেখে অবাক হল কনক। তাও আবার এই রাতের অবলোয়। কবির হোসেন ঘুম ঘুম চোখের বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ছেলের দিকে।
-তোর কিছু হয়নি তো বাপ?
-না তো! কেন, কি হবে আমার?
-একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি তোকে নিয়ে। কে যেন হাত পা বেঁধে তোকে নদীতে ছুঁড়ে মেরেছে। তুই বাঁচার জন্য যতই চেষ্টা করছিস, ততই অথৈ জলে ডুবে যাচ্ছিস। তোকে বাঁচাবার কেউ নেই।
-ওহঃ। দুঃস্বপ্ন দেখেছো।
-দুঃস্বপ্ন কখন মানুষ দেখে জানিস তো! যখন খুব বিপদ আসে। তখন।
কনক বাবার কথায় ম্লান হাসলো। কবির হোসেন যে আজ কেবল দুঃস্বপ্ন দেখেছেন, তা নয়। ইদানিং তিনি খারাপ খারাপ স্বপ্ন দেখছেন। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে স্বপ্নের কথা তিনি মনে রাখতে পারছেন না। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে কবির হোসেনের মস্তিষ্ক থেকে স্বপ্নের সব ঘটনা ধূসর হয়ে যায়। বার বার চেষ্টা করেও তিনি স্বপ্নের ঘটনা মনে আনতে পারেন না। এটা বার্ধক্যজনিত সমস্যা কিনা কে জানে!
এই গভীর রাতে ছেলের ঘরে খানিকক্ষণ থেকে তিনি পুনরায় নিজের ঘরমুখি হওয়ার আগে মনে মনে কি সব সূরাÑদো’আ পড়ে ছেলের গায়ে ফুঁ দিয়ে বিদায় হলেন। বাবা চলে যাবার পর কেন জানি ভয় লাগতে শুরু করল কনকের। তাই সে জানালা বন্ধ করে বিছানায় এসে বিথীকে আবার কল দিবে কিনা ভাবতে লাগল।
একগ্লাস পানি খেলেন কবির হোসেন। তিনি যুবক বয়সে কি একটা উপন্যাসে পড়েছেন খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গলে পানি খাওয়া ভালো। কিন্তু পর পর এভাবে কয়েক রাত দুঃস্বপ্ন দেখার কোন যুক্তি দেখেন না কবির হোসেন। তবে কি লাইফে তার কোন খারাপ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে? স্ত্রী ঝর্না বেগম এ্যক্সিডেন্ট হবার আগেও তিনি এভাবে খারাপ খারাপ স্বপ্ন দেখতেন। চব্বিশ বছর আগের কথা সেটি যদিও। তখন সন্ধ্যা হলে বাড়ির পাশের জামরুল গাছটিতে ভয়ংকর শব্দে পেঁচা ডাকতো। ভীষণ রকমের ভয়ও হতো কবির হোসেনের। কারন তার বাবা মারা যাবার আগেও ঠিক এভাবেই একই জায়গা থেকে ভয়ংকর শব্দে পেঁচার ডাক আসতো।
ঝর্না বেগম যেদিন মারা যাবে, তার আগের রাতেও পেঁচারা অস্থিরভাবে এভাবে ডেকেছিল। সে ডাকে যেন সারাবাড়ি মাথায় উঠে গেল। সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাবার জন্য অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে রিকশায় চড়ে পাশাপাশি যাচ্ছিলেন কবির হোসেন। পেছন থেকে দ্রুতগামী ট্রাক এসে ধাক্কা দিলে রিকশা আরোহী দুজন ছিটকে পড়ল। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায় রিকশাওয়ালা যুবক ছেলেটি। রক্তাক্ত ঝর্না বেগমকে পথচারিরা হাসপাতালে নিলে ডাক্তার জানান রোগী অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আল্লাহর অশেষ কৃপায় এ ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান কবির হোসেন। ছোট্ট কনক তখন তার ছোট মামির বাসায় ছিল। তা না হলে ছোট্ট শিশুটার কপালে সেদিন কি লেখা ছিল এক আল্লাহ জানতেন।
আবারও বালিশে মাথা হেলিয়ে দিতেই ঘুমে টলে পড়লেন কবির হোসেন। এবারও তিনি ছেলে কনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখলেন। তবে এবারের স্বপ্নটা ব্যতিক্রম। বিশাল আয়োজনে কনকের বিয়ে হচ্ছে। সারা বাড়িময় অতিথিদের আসা যাওয়া পর্ব। উপহার সামগ্রী নিয়ে কনকের বন্ধুরা আসছে। সবাই কনককে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। নিজের বিয়ে বলে কনক মেয়েদের মত লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে আছে। কবির হোসেন মহা উৎসবে সাদা পাঞ্জাবি পরে বারান্দায় বসে বসে পান রাঙ্গানো ঠোঁটের কোনে হাসির আভা ছড়িয়ে অতিথিদের আগমন দেখছেন। ছেলের বিয়েতে তিনি তার স্কুল কলেজের বন্ধুÑবান্ধব সহ আশে পাশের দশ গেরামে নেমন্তন্ন করেছেন। হঠাৎ ঘরের ভিতর থেকে কে একজন কবির হোসেনকে ডেকে বললÑ‘চাচাজান, আপনি এখানে? চাচিজান আপনাকে ডাকে।’ সেই অচেনা একজনের কথাটা ঠিক বুঝতে পারলেন না কবির হোসেন। ‘চাচি আপনাকে ডাকে’ মানেটা কি? কোন চাচির কথা বলা হয়েছে? স্ত্রী ঝর্নার কথা নয়তো! কিন্তু ঝর্ণা তো চব্বিশ বছর আগে মারা গেছে।
‘ওগো শুনছো’Ñএই নারী কন্ঠ শুনে চমকে উঠলেন কবির হোসেন। এ তো স্ত্রী ঝর্নার কন্ঠ। সে কোথা থেকে এলো? ভিতরের ঘরে পাগলের মত ছুটে গেলেন কবির হোসেন। হ্যাঁ, ওই তো ঝর্না সবুজ শাড়ি পরে মাথায় বিশাল ঘোমটা দিয়ে পালঙ্কে বসে আছে। কবির হোসেন স্ত্রী বিশাল ঘোমটা সরিয়ে বিস্মিত গলায় বললেনÑ‘ঝর্না তুমি?’ অশ্রুতে ভিজে যাওয়া গাল মুছতে মুছতে ঝর্না বেগম বললেনÑ‘ওগো, তুমি আর কনক মিলে বিথীকে ক্ষমা করে দিও। বিথী ভালো আছে। ওর কোন ক্ষতি হবে না।’ স্ত্রীর কথার আগা মাথা বুঝলেন না কবির হোসেন। হঠাৎ সেরওয়ানি পরা কনক মা বাবার কাছে ছুটে এসে বললÑ‘বিথীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিথী নেই কোথাও।’ ছেলের কথাও বুঝতে পারলেন না কবির হোসেন।
এমন আজগুবি স্বপ্ন দেখার পর সকাল সাড়ে সাতটায় ঘুম ভাঙ্গলো কবির হোসেনের। চোখ খুলে তিনি প্রথমে দেখলেন শিয়রে বসে আছে বন্ধু সাফায়েত আলী। তার থেকে হাত তিনেকের ব্যবধানে বিষন্ন মুখে দাঁড়িয়ে কনক। সাফায়েত আলী এই সাত সকালে এখানে কেন! এমন প্রশ্ন জাগলো কবির হোসেনের মনে। এমন তো আগে কখনো হয়নি।
কনকের মতই বেশ মলিন সাফায়েত আলীর মুখও। কবির হোসেনের ঘুম ভাঙ্গলো দেখে সাফায়েত আলী নড়েচড়ে বসলেন। তারপর কবির হোসেন কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলেন সাফায়েত আলী অবুঝ শিশুর মত কান্না শুরু করে দিয়েছে। ‘আমাকে ক্ষমা করিস বন্ধু। এমন একটি ঘটনা ঘটবে আমি চিন্তাও করিনি।’
কি হয়েছে! কি ঘটেছে! কবির হোসেন কিছু বুঝতে পারছেন না। তিনি একবার তাকান বন্ধুর দিকে আবার তাকান ছেলের দিকে। কনকের চোখেও জল টলমল করছে। কোন অশুভ সংবাদ নয়তো!
-কবির, আমার মেয়েটা একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে।
-কি হয়েছে বিথীর?
-বিথী আমার বোনের ছেলে আহাদের সাথে কাল রাতে ঘর ছেড়ে চলে গেছে।
-কি বলছিস? এমন হবে কেন?
এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেন না সাফায়েত আলী। তার চোখ থেকে পানি ঝরছে। মেয়ে এমন একটা কান্ড করবে, তিনি ভাবতেই পারেননি। অথচ এই মেয়ের উপর তার ছিল এক পৃথিবী বিশ্বাস।
কবির হোসেন ছেলের দিকে তাকালেন। না, বোঝা যাচ্ছে কনকের মন ভালো নেই। হবু শ্বশুরের মুখে এতক্ষণে কনক নিশ্চয় সব ঘটনা শুনেছে। তা না হলে কনকের মুখ এত গোমড়া দেখাবে কেন? কবির হোসেন ছেলের বিয়ে এবং ভবিষ্যত নিয়ে যে স্বপ্নের জাল বুনেছেন, তা এক নিমিষেই ছিঁড়ে গেল। এই ঘটনায় কনক মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে কিনা কবির হোসেনের জানতে ইচ্ছে করছে। সেই সাথে ছেলের জন্য তার বুকের ভিতরটাও জ্বলছে। কনককে যখন প্রথম দিন তিনি বিথীর প্রসঙ্গ তুললেন, কনক কোন কথা বলেনি। ছেলের এমন নিরবতা থেকে তিনি বুঝে নিয়েছেন, কনকের এই বিয়েতে সুÑমত আছে। কে জানে ছেলে ততদিনে তার হবু বউকে নিয়ে কতখানি স্বপ্ন দেখেছে! বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে কবির হোসেন ছেলের অনেক কিছুর খবর জানতেন না। এই প্রস্তাবের আগেই যে কনক মনে মনে বিথীকে পছন্দ করত, বা বিয়ে ঠিক হবার পর কিভাবে কিভাবে যেনো বিথীর ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে বিথীকে মাঝে মাঝে কল দেয়া বা গতমাসে বিথীর জন্মদিনে বিথীকে সাড়ে তিন হাজার দামের সালোয়ার কামিজ গিফট পাঠানোÑএসব কবির হোসেনের কাছে অজানাই ছিল।
সাফায়েত আলী আচমকা কবির হোসেনকে জড়িয়ে ধরে হুঁ হুঁ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেনÑ‘কবির, বিথীর জন্যে নয়, আমার বরং তোর মা মরা ছেলেটার জন্য খারাপ লাগছে। সেই সাথে নিজেকে অপরাধীও লাগছে।’ কবির হোসেন কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছেন না। আজকের সকালের এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় তিনি যেন স্তব্দ হয়ে গেছেন।
কনক বাবার পাশে এসে দাঁড়াতেই কবির হোসেন কেঁদে ফেললেন। বিথীর কর্মকান্ডে কনকও অবাক। অন্য ছেলের সাথে বিথীর সম্পর্ক আছে, এটা কখনো বুঝতেই পারল না সে।
সাফায়েত আলী পকেট থেকে একখানা চিঠি বের করে কবির হোসেনের হাতে দিয়ে বললেনÑ‘বিথী যাবার আগে এই চিঠিটা তার মাকে লিখে টেবিলের উপর রেখে গেছে।’ কবির হোসেন বিথীর লেখা ভাঁজ করা চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলেনÑ“মা, তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। কনক ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হবার কয়েকদিন পরই আহাদ ভাইয়া আমাকে প্রপোজ করল। আমি অনেক আগ থেকেই আহাদ ভাইয়াকে অনেক পছন্দ করতাম, কিন্তু কেন জানি কখনো বলার সাহস পাইনি। আহাদ ভাইয়া যখন নিজ থেকে আমাকে মনের কথা বলল, তখন যেন আমি আনন্দে পাগল হয়ে গেলাম। তাই আহাদ ভাইয়ার প্রস্তাবে একবাক্যে রাজী হতে সময় নিইনি। জানি তোমরা কখনো এই সম্পর্ক মানবে না, তাই আমাদের সম্পর্কের কথা তোমাদের কাউকেই জানাইনি। মানবেই বা কেন, কারণ আমার তো বিয়ে ঠিক হয়েছে কনক ভাইয়ার সাথে। আর কনক ভাইয়ার কথা যে আমি একবারও ভাবিনি, তাও কিন্তু নয়। অনেকবার ভেবেছি। কিন্তু আহাদ ভাইয়ার ভালোবাসা আমাকে অন্ধ করে দিয়েছে। কতবার ভেবেছি কনক ভাইয়াকে আহাদ ভাইয়ার কথা সব খুলে বলব, কিন্তু পরে ভাবলাম আমার কথা শুনে যদি তিনি কোন কষ্ট পান! তাই আর বললামও না। মা, তোমাদের সবাইকে কষ্ট দিয়ে আমি এই রাতের অন্ধকারে ঘর ছাড়লাম। ষ্টেশনে আহাদ ভাইয়া আমার অপেক্ষায় আছে। আমরা শহরে গিয়ে আহাদ ভাইয়ার বন্ধু সফিকদের বাসায় উঠবো। তারপর কি হবে জানি না। দোয়া করো মা।”
কবির হোসেনের চোখের জল টপটপ করে বিথীর চিঠিতে পড়ছে। সে দৃশ্য দেখে সাফায়েত আলী হাউমাউ করে কাঁদছেন। চোখের জল মুছে কবির হোসেন ছেলেকে ডাকলেন ‘আমার কাছে আয় বাপ। আমার বুকে তোর মাথাটা একবার রাখ।’ বাবার এই কাঁপা গলার কথাটা শুনতে ভালো লাগছে না কনকের।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী।