মাথার মধ্যে একধরনের ভোঁতা যন্ত্রণা। জুন মাসের ভ্যাপসা গরম। বৃষ্টি-বাদলের দেখা নেই এমন একটা অবস্থা। অসহ্য গরমের মধ্যে সিগারেট ধরতে ইচ্ছে করছে। সিগারেট আগের মতো তেমন একটা খাইনা। লকডাউনে দাম বেড়েছে। বাজেটের পরে আরো দাম বেড়েছে। যুথিকা আমাকে অনেক করে বলেছে,’সিগারেট ছাড়ো নাহয় আমাকে ছাড়ো। ‘ ম্যারেইড লাইফ শুরু হওয়ার পর থেকে সে এমনটা বলে আসলেও বিয়ের পরেও আমার থেকে সিগারেট ছাড়াতে পারেনি।পত্রিকা পড়ে যুথিকা মিটিমিটি হাসে। হাসার কথা ওর! সিগারেটের দাম বেড়েছে। বেচারির এতেই যত শান্তি। ব্যালকনিতে বসে অলস বিকেলের হাই তুলছিলাম। বিছানায় গা এলিয়ে দিতে ইচ্ছে করলেও আবার কেমন যেন এখান থেকে উঠে যেতে ইচ্ছে করছে না। মাথার মধ্যে ভোতা যন্ত্রণাটা আবার বেড়েছে। এই করোনাকালে অফিস নেই। কাজকর্ম তেমন নেই বললেই চলে। মাঝেমধ্যে দু একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ল্যাপটপ মুখের সামনে নিয়ে বসতে হয়। তবে আগের মতো ব্যস্ততা নেই বললেই চলে। যুথিকা তার শরীরে নতুন একটি প্রাণের উপস্থিতি টের পেয়েছে গত দুমাস আগে, লকডাউনের আগে । যুথিকার বড় বোন ডাক্তার। চেকআপ করানোর পরে থেকে কত কথা। লকডাউনে বোরিং না হয়ে বেশ ভালো সময় যাচ্ছে ওর। আমাদের সন্তানের জন্য উইলের কাপড় বুনছে। ইউটিউব দেখে শিখেছে।আমার মাথার চুল বিলি করছে। সেদিন গোটা পাঁচেক সাদা চুল তুলে সে কি খিল খিল করে হাসে। হাসলে বেশ লাগে ওকে,আমি ওর থেকে ওর হাসিকেই ভালোবাসি।ঠাট্টার সুরে বলল,’আমাদের বাবু আসার আগেই তো তুমি বুড়া হয়ে গেলা! হায় হায়। ‘ আমি ঠাট্টা করে বলি,’বুড়া হওয়ার পরেও কত মানুষের বেবি হয়। ‘আপাতত জানাতে পারছি না আমাদের প্রথম সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে। তবে যুথিকা নাম ঠিক করে রেখেছে, ‘ছেলে হলে নাম হবে-আযম। আর মেয়ে হলে আযমিন। ‘
২.
বিকেল হলে দুজন মিলে জুনের আকাশের মেঘের প্রতিকৃতি দেখি।যুথিকা গুন গুন করে গান গায়,রবিঠাকুরের গান-‘মেঘ বলেছে যাব যাব’। ওর গলা ভালো। গুনগুনিয়ে গান গাইলে শুনতে বেশ লাগে। তবে কখনো উচুস্বরে গায় না। কেন গায় না? শেষ বিকেলে সূর্য ঢলে পড়ে পশ্চিম আকাশে। শহুরের অট্টালিকা গুলো পেড়িয়ে, মেঘগুলো কেমন প্রতিকৃতি তৈরী করে। কখনো দৈত্যের ন্যায়,কখনো ডলফিনের মতো,কখনো সিংহ-বাঘের মতো। বেশ লাগে দেখতে! আজও দেখছি মেঘের এমন প্রতিকৃতি। মা তার শিশুকে কোলে করে রেখেছে এমন প্রতিকৃতি। মুগ্ধ হলাম! যুথিকাকে ডাকলাম। হাত দিয়ে দেখালাম-দেখো দেখো এই মেঘের প্রতিকৃতিটা দেখো। যুথিকা কিছুই বুঝতে পারলো না। যুথিকাকে হাত নেড়ে নেড়ে বুঝিয়ে দিলাম- ঐ যে ছোট মেঘে ভেলাটা ওটা হচ্ছে বাচ্চা আর বড় যে মেঘটা বাঁকিয়ে গিয়েছে ওটা হচ্ছে মা। দেখো দেখো! যুথিকার কোন উত্তর পেলাম না। হাসি হাসি মুখ করে তাকালাম ওর দিকে। চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। আমার জামাটা শক্ত করর আঁকড়ে ধরে আছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে! আমি ওর চোখের জল মুছে দিচ্ছি। মেঘ মিলিয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। সূর্যো ডুবে গোধূলীর লাল আভা সৃষ্টি হয়েছে, সেই লাল আভা পড়েছে যুথিকার মুখে। কী দারুণ!