গোবিন্দ মোদক
‘রেইনি ডে’ ঘোষণা করেছেন হেডমাস্টার। গুটিকয় যে ক’জন ছাত্র-ছাত্রী এসেছিল তারা সব চলে গেছে। এতো বৃষ্টিতে বের হবার উপায় নেই — তাই কথা হচ্ছিল টিচার্স রুমে বসে। কেন জানিনা আজ এই অবিশ্রান্ত বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি ও ইলিশ কিংবা ছোটবেলায় বৃষ্টির জলে কাগজের নৌকা ভাসানোর মতো কোনও বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল না — কথা হচ্ছিল অহংকার নিয়ে।
ইংলিশের টিচার দীপক বলে উঠলো — স্বাগতার খুব অহংকার, রূপের অহংকার ! দীপককে সমর্থন করেও পৃথ্বীশ বললো — আহা অমন চাঁদনী রূপ ! যেন শ্রীদেবীর ছোট বোন, অহংকার হবে নাই বা কেন !
অংকের সৌম্য গম্ভীর স্বরে বললো — হুম্ ! ঠিকই ! তবে স্বাগতার রূপের অহংকার থাকলেও শ্রীতমার অহংকার ফিগারে !
— ঠিক বলেছো ব্রাদার ! দেখতে হয়তো অতটা সুন্দরী নয়, তবে ওর চলন গমন দেখলে যে কোন পুরুষের বুকের রক্ত ছলকে উঠবে ! আহা ! কী ফিগার ! বত্রিশ — চব্বিশ — ছত্রিশ ! অর্ধনিমীলিত চোখে ফোড়ন দিলো বায়োলজির অনুপ।
— তবে, পাঞ্চালী কিন্তু খুব শোবার ! ছিমছাম সুন্দরী ! রূপ তেমন কিছু নেই, তবে আলগা একটা শ্রী আছে যাকে বলে লাবণ্য ! তবে কিন্তু কোনও ভ্যানিটি নেই, একেবারে নিরহংকারী ! তদ্গত ভাবে বললো বাংলার অনুপম।
— আরে রাখ তোর নিরংহকারী ! অমন মনে হয় ! মেয়েদের আবার অহংকার থাকবে না ! নিজের কোন অহংকার না থাকলেও, বর ভালো চাকরি করে — তার অহংকার হবে ! কিংবা ছেলে পড়াশোনায় তুখোড় — তার জন্য অহংকার হবে ! কিংবা বাপের বা শ্বশুরবাড়ি প্রচুর আছে — তার অহংকার হবে ! অহংকার থাকবেই ! টেবিল চাপড়ে বললো কেমিস্ট্রির সোমনাথ !
— তা থাকতে পারে ! তবে আমার কিন্তু মনে হয়েছে পাঞ্চালীর অহংকারটা তেমন নেই ! পুনরায় বলে অনুপম।
— এই তো ভাই ! তোমার গ্রামারে গলতি হয়ে যাচ্ছে ! মানে গলতি সে মিসটেক্ ! আসল কথাটা হলো — “ওর কোনও অহংকার নেই” – এটাই হলো ওর অহংকার !
সোমনাথের কথা বলার ধরণে সবাই উচ্চৈঃস্বরে হেসে ওঠে !
রাধানগর, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত