আদনান সহিদের কবিতা – “শৈত্য ‘সত্য’ বচন”

আদনান সহিদের কবিতা - "শৈত্য 'সত্য' বচন"

 আদনান সহিদ

 

মাঝরাতে কম্বলের ওম ছুঁড়ে ফেলে

ধড়ফড়িয়ে উঠে বসি হঠাৎ

কাঁচা ঘুম জড়ানো বিরক্ত স্বর শোনায়

প্রেয়সীর সদ্যবিচ্যুত উষ্ণ আলিঙ্গন,

পাগলামির যারপরনাই সীমা ছাড়িয়ে 

বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা পেরিয়ে

রাস্তায় এসে দাঁড়ায় আমার 

হিমশীতল খামখেয়ালী।

এভাবে কি প্রেম হয় কখনও?না হয়েছে?

হয় না,হয় নি,হবেও না

 

নাই বা হলো,আফসোস নেই তাতে।

কারণ, ততক্ষণে হু হু ঠান্ডায় দাঁড়ানো

সিনেমাপ্রেমী আমার চোখ পড়েছে

ফুটপাত সংলগ্ন নোংরা দেয়ালে সাঁটা

গা গরম করাশীতকালীন সিনেমার 

অপ্রত্যাশিত এক পোস্টার!

 

অনেক কষ্টে আধো আলো ছায়াতে 

মুক্তির আগেই মুক্তি পাওয়া সেই পোস্টারে

দেখলাম অভিনয় শিল্পীর নামগুলো

শ্রেষ্ঠাংশে

অশীতিপর বৃদ্ধ,

জবুথবু নারী

আদুল কিশোর,

শীতকম্পে শিশু,

খকখক কাশিতে রিক্সাওয়ালা,

খসে পড়া আঁচলে নিশিকন্যা,

আর্তচিৎকারে নবজাতক,

আর নাম না জানা কতকএক্সট্রা‘!

 

দেয়াল ঘেঁষে গোল হয়ে বসে থাকা

পোস্টারের চরিত্রগুলোকে দেখে মনে হলো,

সিনেমার কোনও দৃশ্যেরজীবন্তশট দিচ্ছে ওরা

পরিত্যক্ত টায়ার,কাগুজে স্তুপের গা বেয়ে ওঠা

আগুনের লকলকে জিভের উত্তাপ পোহাতে পোহাতে!

 

কিন্তু কী আশ্চর্য!

আশেপাশে নেই কোনও 

ক্যামেরাম্যান,বিজ্ঞ পরিচালক কিংবা স্পন্সরশীপ

এও কী সম্ভব!

 

তবে কি এর

বিজ্ঞাপনেফুটপাত?

প্রযোজনায়লকলকে আগুন?

পরিচালনায়ভাগ্যদেবী?

 

সদাজাগ্রত কুকুরের চিৎকারে

হাড় কাঁপানো শীত শীৎকারে

কুয়াশার ঘোলাটে ফুৎকারে

সম্বিত ফিরে এলেও

মনে করতে পারলাম না

হৃদয়ে ব্যাকুলতা সৃষ্টিকারী কোনও

সঙ্গীত কিংবা নৃত্য পরিচালকের নাম!

শুধু শুধু গুনগুন করে 

গেয়ে উঠলাম ধন্যবাদের গান,

শত যোগ্যতা নিয়ে এই সিনেমায়

অভিনয়ের সুযোগ পাই নি বলে!

 

কনকনে হাওয়ায় নিজ দাঁতের ঠকঠক শব্দ হঠাৎ

আমার দর্শকানুভূতিকে স্তব্ধ করে দিল,

অসহ্যসত্য সিনেমা হলে ঢোকার আগেই

ভাগ্যচেকার কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফেলেছে যে



আমার সহনশীল টিকেট!

 

আমি তাই ছেঁড়াএক টিকিটে দুই ছবি‘ 

দেখতে লাগলাম অপার বিস্ময়ে

বিছানায় আলিঙ্গনরতউষ্ণপ্রিয়তমা

কী কিউট!

আর

শীতের আর্দ্র দাপটে,

কুয়াশায় জাপটে ,

রাজরাস্তায় এলিয়ে থাকা 

কতগুলো শৈত্য,সত্য দেহ

কী অশ্লীল!

 

কাল ভোরের আলো ফুটলে

শৌখিন রসুইঘরে,

আলোকোজ্জ্বল জ্ঞান সাগরে,

শীতাতপ সিনেমা ডোরে,

মখমলের কার্পেটে

আমার পাগলামি, প্রেম কি আর

লেখা থাকবে? পড়া যাবে? দেখা যাবে?

অবশ্যই না!

 

তবুও

এভাবে প্রেম হবে,হয়ে যাবে,হতে থাকবে

প্রতি রাতের শৈত্যসত্যবচনে!

 

*আদনান সহিদ : কবি,অনুবাদক শিক্ষক

ঢাকা ,বাংলাদেশ । 


“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
বই রিভিউ - থ্রি এ এম

বই রিভিউ – থ্রি এ এম

বইয়ের নাম- থ্রি এ এম (থ্রি এম সিরিজের প্রথম বই) ধরন-থ্রিলার লেখক-নিক পিরোগ বই পর্যালোচক –আবির জয়। প্রচ্ছদ ছবি-তাসনিম তূর্জ। নিক পিরোগ এর লেখা ‘থ্রি ...
ঈদের সেরা মেহেদি ডিজাইন(২০২৪)

ঈদের সেরা মেহেদি ডিজাইন(২০২৪)

সেজেগুজে ডেস্ক ঈদ এসেছে ঈদ কিংবা লেগেছে বিয়ের ধুম? কিন্তু! কী মেহেদির ডিজাইন করবেন সেটি ভেবে পাচ্ছেন না? চিন্তা কিসের? আমরা আপনার জন্য সংগ্রহ করেছি ...
টিপু সুলতান এর তিনটি কবিতা

টিপু সুলতান এর তিনটি কবিতা

টিপু সুলতান অসমাপ্ত আয়োজন সব বেদনার মতো খুঁড়ে চলেছ টুক করে বড় হওয়া সামান্ত প্রাণ বাদামি রং তরুণ পৃথিবীর নৈঃশব্দ্য এইখানে পাতাভরা দিন গোনে বৃক্ষ ...
পারমিতার মোবাইল ফোন

পারমিতার মোবাইল ফোন

ভালোবাসার গল্প প্রথমাংশ-লুনা রাহনুমা  শেষাংশ- আশিক মাহমুদ রিয়াদ  উঠতে, বসতে, হাঁটতে, খেতে, শুতে – মোদ্দাকথা সারাক্ষণই হাতের মুঠোয় মোবাইল ফোনটাকে বয়ে বেরায় পারমিতা। মেয়ের মুখে ...
ফেলে আসা শৈশব | অজিত কুমার কর

ফেলে আসা শৈশব | অজিত কুমার কর

|অজিত কুমার কর   আসে না কেন যে ফিরে মধু শৈশব ভোলা তো যায় না মোটে তার বৈভব। কত ছবি ভেসে ওঠে চোখের তারায় নিমেষে ...