আমার কেদারনাথ যাত্রা

আমার কেদারনাথ যাত্রা

গৌতম সরকার

আর পাঁচটা ভ্রমণ পিপাসু মানুষের মতো চারধাম যাত্রা চিরকালই আমার ভ্রমণ তালিকার বেশ ওপরের দিকেই ছিল। কিন্তু একজন প্রকৃত তীর্থযাত্রীর নিষ্ঠা এবং বিশ্বাসের অভাব থাকায় চার ধাম একত্রে দর্শনের সাহস না দেখিয়ে চারধামকে সমান দুভাগে ভাগ করলাম৷ প্রথম ভাগে পড়লো কেদার আর বদ্রি। সাথে আরও কয়েকটি আকর্ষণীয় জায়গা যোগ করে তেরো-চোদ্দ দিনের একটা ভ্রমণ তালিকা বানিয়ে মে-মাসের এক দগ্ধ-দহন সন্ধ্যায় হাওড়া থেকে দুন এক্সপ্রেসে চেপে বসলাম। ঠিক করলাম হরিদ্বার পৌঁছে রুদ্রপ্রয়াগে একটা রাত কাটাবো, তারপর ওখান থেকে রওয়ানা দেব গৌরিকুন্ড। ইচ্ছে আছে চারধামের মধ্যে প্রথমে কেদারদর্শন করে নিজেদের ধন্য এবং শুদ্ধ করবো।

আমার কেদারনাথ যাত্রা

ছবি – দেবপ্রয়াগ সঙ্গম

হরিদ্বারে আমাদের ট্রেন ঢুকলো ভোর চারটে পঞ্চান্ন-এর জায়গায় গনগনে দুপুর সোয়া বারোটায় ; যোশিজি গতকাল রাত্রেই নৈনিতাল থেকে এসে অপেক্ষা করছেন, তাই আর সময় নষ্ট না করে ওনার গাড়িতে চড়ে বসলাম৷ হাঁসফাঁস গরমের মধ্যে হরিদ্বারের ভিড় ঠেলে ২৩ কিলোমিটার দূরে হৃষিকেশে এসে আগে খেয়ে নিলাম, তারপর আরোও ৭২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌছলাম দেবপ্রয়াগ- পঞ্চপ্রয়াগের অন্যতম, অলকানন্দা আর ভাগীরথীর সঙ্গম যা গঙ্গা নাম নিয়ে হরিদ্বার হয়ে সমতলে বয়ে গেছে৷ 

দেবপ্রয়াগ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীনগর, ছবির মতো সুন্দর একটা শহর, বেশ কিছুটা উপত্যকা জুড়ে শহরের বিস্তার, ওখান থেকে আরোও ৩৫ কিমি পথ পেরিয়ে পৌছলাম রুদ্রপ্রয়াগ৷  সন্ধ্যে সাতটা বেজে গেছে, কিন্তু আকাশে তখনও গোধূলির আলো মাখামাখি হয়ে আছে৷ গাড়োয়াল নিগমের হোটেলে চেক ইন করে চটপট বেরিয়ে পড়লাম৷ গন্তব্য সঙ্গম, যেখানে কেদারনাথ থেকে বয়ে আসা মন্দাকিনী আর বদ্রিনাথ থেকে আসা অলকানন্দা পরস্পরে মিশেছে৷ হোটেল থেকে সঙ্গম হাত ছোঁয়া দূরত্বে হলেও এর স্পর্শ পেতে অনেকটা ঘুরে যেতে হয়৷ বেরিয়ে কিছুটা যেতেই প্রকৃতি বাদ সাধল, আকাশ ভাঙা বৃষ্টি শুরু হল, চলল প্রায় চল্লিশ মিনিট৷ অবশেষে বৃষ্টি শেষে সঙ্গমে পৌঁছে যখন দুই ভালোবাসার নদীর সাথে হাত মেলালাম তখন সেখানে কোনো জনপ্রাণী নেই, মন্দির বন্ধ, আরতি শেষ, আর আমার স্ত্রী সিঁড়ি ভাঙ্গার কষ্ট না নেওয়ার ব্রত নিয়ে অনেকটা ওপরে দাঁড়িয়ে৷

আমার কেদারনাথ যাত্রা

ছবি – রুদ্রপ্রয়াগ সঙ্গম

পরের দিন অর্থাৎ মে মাসের একতিরিশের ভোরে ঘুম ভাঙলো অলকানন্দা-মন্দাকিনীর যৌথ সরগমে৷ তৈরী হয়ে একক ভ্রমণে বেরিয়ে আবার পৌঁছলাম সঙ্গমে, কাল রাতের আবছা আলোয় দেখা মন্দির আর নদীদ্বয়ের মিলনস্থল প্রখর আলোয় চাক্ষুষ হল৷ মন্দাকিনীর ওপরে সুন্দর ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে ঘুরে এলাম ওপর পারের এক বস্তি (আদিবাসী গ্রাম ) থেকে৷ অচেনা, অযাচিত আগন্তুককে দেখে কয়েকটি বাচ্ছা দৌড়ে পিছনে পালিয়ে গেল ; সামনে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ রাগী রাগী মুখে চুটকা খাচ্ছে আর তার সামনে দুটো বাচ্ছা পালাতে না পেরে ভয়মিশ্রিত অবাক চোখে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার বৃদ্ধের দিকে৷ আমি কাছে গিয়ে ‘নমস্তে ‘ বলতে কিন্তু বৃদ্ধের একমুখ হাঁসি ; কিছু কুশল সংবাদ আদান প্রদানের পর আরেকটু এগিয়ে গেলাম, কিন্তু বেশিদূর এগোনো গেলনা৷ পূর্ব উল্লিখিত শিশুগুলি ভেতরে গিয়ে খবর দিয়েছে আর কয়েকজন মহিলা গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে৷ এগোনো সমীচীন হবেনা মনে করে ব্রিজ পেরিয়ে আরেকবার রুদ্রনাথকে দর্শন করে প্রভাতিক ভ্রমণ সাঙ্গ করলাম৷

আমার কেদারনাথ যাত্রা

ছবি – কেদারনাথ যাত্রাপথে মন্দাকিনী নদী

 আজ আমাদের গন্তব্য গৌরীকুণ্ড, তবে ইচ্ছে আছে রুদ্রপ্রয়াগ থেকে কার্তিকস্বামী হয়ে গৌরীকুণ্ড যাবো৷ সেই মতো কেদারের রাস্তা ছেড়ে বদ্রিনাথের পথ ধরে চললাম প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে কনকচোরা৷ ওখান থেকে তিন কিলোমিটার চড়াই ট্রেক পথে কার্তিকস্বামী মন্দির ; আমাদের পক্ষে খুব একটা সহজ ট্রেক নয়৷ জানিনা পাহাড়ে কিলোমিটারের এরিয়াল মেজার হয় কিনা ! কি জানি বাবা ! চড়াই পথে হেঁটে যাচ্ছি তো যাচ্ছি, যাচ্ছি তো যাচ্ছি, রাস্তা আর শেষ হয়না৷ তবে রাস্তাটা অতি সুন্দর, পাইন, ফার আর অসংখ্য রডোডেনড্রনে পুষ্ট পথ৷ একদম শেষে পৌঁছলাম একটা গ্রামে, যেখান থেকে অনেকটা চড়াই পথ জুড়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘মায়াবতীর’ চার কোটি টাকার এক প্রকল্প- সিঁড়ি তৈরী হচ্ছে শূন্যে, দুদিকে মজবুত রেলিং, আরোও অনেক কিছু৷ অসম্ভব সুন্দর প্রেক্ষাপটে এই মন্দিরের বৈশিষ্ট্য হল, শিবের ধরাধাম উত্তরাখন্ডে এই একটিই মাত্র শিবপুত্রের মন্দির আছে৷

আমার কেদারনাথ যাত্রা

মন্দাকিনীর সাথে কিছুক্ষণ

কিন্তু প্রকৃতির অসহযোগিতায় কার্তিকস্বামীর প্রেক্ষাপটে কোনো শৃঙ্গের দেখা পেলাম না৷ আমার সঙ্গিনীকে নিয়ে চারঘন্টায় অভিযান শেষ করে আবক্ষ খিদে নিয়ে নিচে এসে পেলাম কেবল এক প্লেট করে ম্যাগি৷ তখন সাড়ে তিনটে বেজে গেছে, আকাশের অবস্থা ভালো দেখছিনা, সারা আকাশ জুড়ে কালো মেঘ অকাল সন্ধ্যে ডেকে এনেছে৷ তড়িঘড়ি গাড়িতে উঠে বসলাম, মুনখাল আর বাঁশওয়ারা হয়ে শর্টকার্ট করলেও গৌরীকুণ্ড তখনও প্রায় একশো কিলোমিটারের ওপর পথ৷ শোনপ্রয়াগ পৌঁছতে সন্ধ্যে সাতটা হয়ে গেল, আর ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’ যেটা হল, কেদারনাথ যাত্রা শুরুর কারণে আমাদের (সমস্ত ট্যুরিস্টদের) গাড়ি শোনপ্রয়াগে আটকে দিল, তখনও গৌরীকুণ্ড আসতে পাঁচ কিলোমিটার বাকি৷ কি করি! আমাদের রাতের আস্তানা বুক করা আছে গৌরীকুন্ডের জিএমভিএন-এ৷ পুলিশ ভাইদের জিজ্ঞাসা করে জানা গেল গৌরিকুন্ড যাবার জিপগাড়ি মিলবে তবে শেষ গাড়ি দশ মিনিটের মধ্যে ছেড়ে যাবে৷ দৌড়ে আমাদের গাড়ির কাছে ফিরে এলাম, একটা ছোটো ব্যাগে দু-রাত্রির জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঢুকিয়ে যখন হাঁফাতে হাঁফাতে ঐ জায়গায় গিয়ে পৌঁছলাম তখন শেষ গাড়িটা ছেড়ে গেছে৷ অবশেষে পুলিশের বদান্যতায় তাদেরই ব্যবস্হা করে দেওয়া একটা গাড়িতে রাত আটটার পর গৌরিকুন্ডে পৌঁছলাম৷

আমার কেদারনাথ যাত্রা

ছবি- কার্তিকস্বামী মন্দির

আমাদের অতি বড় শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মানুষ বলে গেছেন –‘পতির পুণ্যে সতীর পূণ্য, নহিলে খরচ বাড়ে’ কিন্তু আমরা ভয়ে হোক, ভক্তিতে হোক এই মহান সত্য নিজেদের জীবনে পালন করতে পারিনা; আমিও একজন এই দলের -সাহস, শক্তি, আর আধিপত্য বিস্তারে অত্যন্ত দূর্বল ; ক্ষীন কণ্ঠে দুয়েকবার হয়তো প্রতিবাদ জানাই, অবশেষে গৃহ শান্তি ঘেঁটে যাওয়ার আতঙ্কে আর পাঁচটা পুরুষ মানুষের মতো সব কিছু মেনে নিই৷ যার ফলশ্রুতিতে ট্রেকিংয়ের সাধ জলাঞ্জলি দিয়ে পয়লা জুন সকাল ছটায় পাশাপাশি দুটো ঘোড়ায় চড়ে বসলাম কেদারনাথ যাত্রার উদ্দেশ্যে৷ হাজারে হাজারে মানুষ ওই সকালে হেঁটে, ঘোড়ায়, ডান্ডিতে, কান্ডিতে ‘হর হর মহাদেব’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করতে করতে এগিয়ে চলেছে শৈবতীর্থ, পঞ্চকেদারের সবচেয়ে জনপ্রিয় তীর্থ কেদারনাথের উদ্দ্যশ্যে৷ আমরা ধীরে ধীরে তীর্থযাত্রীর ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চললাম৷ প্রাথমিক পর্বটা বেশ মসৃণভাবেই হল ; চার কিলোমিটার দূরে জঙ্গলচটি পেরিয়ে দেড়ঘণ্টার মধ্যে পৌছে গেলাম মন্দাকিনীর একদম কোলে অবস্থিত ভীমবালিতে, গৌরীকুণ্ড থেকে দূরত্ব ছয় কিলোমিটার৷ এখানে এসে আমাদের পা আর কোমরের একটু বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়লো, আর সাথে কিছুটা উদরের তদ্বির৷ সব মিটিয়ে আবার এগিয়ে চলা৷ মন্দাকিনীর অন্য পাড়ে নতুন যে রাস্তাটা তৈরি হয়েছে সেটা ভয়ংকর চড়াই, প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সেই প্রানান্তকর চড়াই পেরিয়ে পৌঁছতে হবে লিনচোলি৷ তবে একটাই ভরসা ভীমবালি ছাড়ার কিছুটা পর থেকেই সারা আকাশ জুড়ে রজতকান্তি কেদারনাথের সমুজ্জ্বল উপস্থিতি তীর্থযাত্রীদের শক্তি ও ভক্তি দুটোই বাড়িয়ে তুলবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়৷ আমাদের যদিও খুব কিছু অসুবিধা হলনা, চড়াইয়ে অশ্বভ্রমণ কষ্টকর তো নয়ই বরঞ্চ বেশ আরামদায়ক৷ আস্তে আস্তে লোয়ার লিনচোলি, আপার লিনচোলি পেরিয়ে ওপরে অনেকটা দূরে গরুড়চটির আভাস দেখতে পেলাম৷ অবশেষে আরোও কিছু চড়াই আর শেষের দিকে একটু উৎরাই পেরিয়ে ঘোড়া আমাদের যেখানে নামিয়ে দিল, সেখান থেকে মন্দির মাত্র দেড় কিলোমিটার৷

আমার কেদারনাথ যাত্রা

ছবি-মন্দিরের পথে

ঘোড়া থেকে নেমে চারপাশ তাকিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম – বিষ্ময়, ভালোলাগা, ভালোবাসা, মুগ্ধতা, সবকিছু গোল পাকিয়ে মিলেমিশে একটাই অনুভূতি সারা শরীর মন জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল- এটাই স্বর্গ, এছাড়া জায়গাটিকে আর কোনো বিশেষণেই বিশেষিত করা যায়না৷ চোখের সামনে হাত ছোঁয়া দূরত্বে নীল আকাশের ক্যানভাসে কেদারনাথ, কেদারডোম, সুমেরু, কীর্তিস্তম্ভ পাশাপাশি আপন আপন আভিজাত্যে সমাসীন৷ হোটেলে ঢোকার আগে মন্দির দর্শনে গেলাম, বেশ বড় লাইন, বইয়ে দেখা বা নেটের ছবির সেই অতি পবিত্র এবং অনিন্দ্যসুন্দর মন্দির এখন চোখের সামনে আর তার মাথার ওপর হিমালয় শৃঙ্গসমূহের সুমহান উপস্থিতি৷ পূজো দিয়ে ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে বিকেল বিকেল আবার বেরিয়ে পড়লাম৷ হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া বয়ে চলছে গোটা উপত্যকা জুড়ে৷ হি হি করে কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে চললাম মন্দিরের দিকে৷  মন্দিরের পথ ছেড়ে বাঁদিকে একটু উজিয়ে গিয়ে বসলাম মন্দাকিনীর পাড়ে, নদীর বরফজল ছোঁওয়া বাতাস অসহ্য হয়ে উঠলেও সেই স্বর্গীয় অনুভব হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে মেখে নিলাম৷  সূর্য ডোবার সময় হতে মন্দাকিনীর আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এসে মন্দিরের রাস্তায় পড়ে প্রতীতি হল, এতক্ষণ কেদার যেটা দেখিয়েছে সেটা কেবলাত্র ট্রেলার ছিল৷ ভগবান শিবের মন্দিরের ঠিক মাথার ওপর কেদারনাথ, কেদারডোম, সুমেরু যেন হোরিখেলায় মেতে উঠেছে৷ রুপোলি থেকে সোনালি, গাঢ় রক্ত রং, আবার রুপোলি রঙে রাঙিয়ে দিয়ে গোধুলির আলো একসময় নিভে গেল, সারা আকাশ জুড়ে রয়ে গেল অদ্ভুত স্বপ্নিল বর্ণচ্ছটা৷ সন্ধ্যারতি দেখে যখন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ হোটেলে ফিরলাম তখন মনে হল, সত্যিই আমরা পরিপূর্ণ হলাম৷

আমার কেদারনাথ যাত্রা

ছবি-কেদারনাথ মন্দির

দু তারিখে খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল ; কেদারপথের বৈশিষ্ট্য হল বেলা বারোটার পর আবহাওয়া খুব প্রতিকূল হয়ে ওঠে, তাই ওঠা-নামা দুটো কাজই সকাল সকাল হওয়া বাঞ্ছনীয়৷ তাই তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম যাতে করে ছটা নাগাদ ঘোড়ায় চড়ে ফেলতে পারি ; কিন্তু বিধি বাম, শুনলাম ঘোড়যাত্রা শুরু হতে সাড়ে আটটা-নটা৷ অফিস খুলবে আটটায়৷ আসলে গৌরীকুণ্ড থেকে যে সমস্ত ঘোড়া ওপরে আসে সেগুলো সন্ধ্যেবেলা সওয়ারী নিয়ে বা বিনা সওয়ারীতেই নিচে নেমে যায়, কারণ ঘোড়া বা ঘোড়সওয়ার কারোর পক্ষেই রাতে কেদারে থাকা সম্ভব নয়৷ তাই সকালবেলা গৌরীকুণ্ড থেকে সওয়ারী নিয়ে ঘোড়া আসবে তারপর ওপরের লোকেরা নিচে নামার সুযোগ পাবে৷ অগত্যা সকালবেলা ঠান্ডায় ঠান্ডায় নিচে নামার পরিকল্পনা বাতিল করে আবার হোটেলে ফিরতে হল৷ ইতিমধ্যে যে গুটিকতক ঘোড়া ওপরে ছিল তাদের মালিকেরা পর্যটকদের সাথে ব্ল্যাক করা শুরু করে দিয়েছে৷ ওপর থেকে নিচে নামার সরকারি রেট ১১০০ টাকা সেখানে কেউ ২০০০, কেউ ২৫০০ টাকা দর হাঁকছে, আর আশ্চর্য্য হয়ে দেখলাম কোনো কোনো পর্যটক তাতেই রাজি হয়ে ঘোড়ায় চড়ে বসছে৷ এর ফলশ্রুতিতে যখন সরকারি অফিস খুলে স্বাভাবিক রেটে যাত্রা শুরু হয়ে গেল তখনও কিছু কিছু ঘোড়াওয়ালা  পর্যটকদের বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করে বেশি টাকা লোটার চেষ্টা করতে লাগল৷ যাই হোক আমরা কাউন্টার থেকে পরচি কেটে যাত্রা শুরু করলাম ঠিক সকাল সাড়ে আটটায়৷

আমার কেদারনাথ যাত্রা

গোধুলীর বর্ণচ্ছটায় রুপোলী শৃঙ্গ

ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ে ওঠাটা একদমই কষ্টদায়ক হয়না কারণ চড়াইয়ে ওঠার সময় ঘোড়াকেও দম নিতে নিতে ধীরে সুস্থে উঠতে হয়, তাই বেশি বদমায়েশি করার সুযোগ পায় না, কিন্তু নামার সময় ঠিক উল্টো৷ ল্যাগবেগে চারটে পা কোথায় না কোথায় ফেলতে ফেলতে তড়বড়িয়ে নামতে থাকবে ভাবলেই আপনার প্রাণপাখি খাঁচা ছাড়ার উপক্রম করবে৷ অবশেষে তিন ঘণ্টার প্রাণান্তকর অবতরণ শেষ হল, লিঞ্চোলি থেকে ভীমবালির পাঁচ-ছ কিলোমিটারের অবিরাম উৎরাইয়ের শেষে করে মনে হচ্ছিল শরীরের বেশ কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাস্তায় খুলে পড়ে গেছে৷ জঙ্গলচটিতে একটা ছোট ব্রেক নিয়ে যখন গৌরীকুন্ডে এসে পৌঁছোলাম তখন আমাদের দুজনের অবস্থাই ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি৷’ গাড়ি আমাদের শ্যোনপ্রয়াগে, তাই একটা জিপগাড়ি ধরে রওয়ানা দিলাম, যোশিজি ওখানে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছেন৷

            

ঋণ স্বীকার: কার্তিকস্বামী মন্দিরের ছবিটি সংগৃহীত (ইন্টারনেট)

বাকি ছবি তুলেছেন লেখক৷

এই লেখকের আরও লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
ভালোবাসার গল্প : বিচ্ছিন্ন মগ্নতা

ভালোবাসার গল্প : বিচ্ছিন্ন মগ্নতা

তানবীর সজিব আজ দোসরা শ্রাবণ। অধিকাংশ সময়ে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। ঘাসের সবুজ ডগা শুকানোর আগেই আবার বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি একটু ...
কিভাবে স্মার্ট হবেন? ২০২৪ সালে আপনার সম্ভাবনা তৈরী করুন

কিভাবে স্মার্ট হবেন? ২০২৪ সালে আপনার সম্ভাবনা তৈরী করুন

ছাইলিপি আর্টিকেল ডেস্ক ২০২৪ সালেও যদি আপনি স্মার্ট না হন। তাহলে দেখে নিন কিভাবে হতে পারেন স্মার্ট? বুদ্ধিমত্তা শুধুমাত্র পারিবারিকভাবে নির্ধারিত হয় না; এটি এমন ...
আপনদ্বার

আপনদ্বার

আশিক মাহমুদ রিয়াদ নিশুতি রাত! চারদিকে ঝি ঝি পোকার আওয়াজ। গ্রামে রাত হলেই সব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এই চুপচাপ পরিবেশের মধ্যে ঘরের খাটে ঘুমাচ্ছিলেন আফসার ...
ছোটগল্প-  বিভ্রান্ত পথিক

ছোটগল্প- বিভ্রান্ত পথিক

 সৌর শাইন গল্পটা ইমরান হাফিজ ও তার স্ত্রী ফাতেমার দীর্ঘ দ্বন্দ্ব নিয়ে। অন্ধকারে থাকা চোখ হঠাৎ আলো মানিয়ে নিতে পারে না। আচমকা আলোর ঝাপ্টা সৃষ্টি ...
দুটি কবিতা - গোলাম কবির

দুটি কবিতা – গোলাম কবির

|গোলাম কবির   ১. কবিতা লেখার ধুম  আজ বলে দিলাম মেঘলা আকাশকে – তোমার চেয়ে আমার মন  কী কম খারাপ? আমার আকাশ হতে একে একে ...
Dhaka Metro-Rail Paragraph (For SSC, HSC, Class Five or Class Eight)

Dhaka Metro-Rail Paragraph (For SSC, HSC, Class Five or Class Eight)

**Revolutionizing Dhaka’s Commute: The Dhaka Metro Rail Project** (150 word) for  Class 5 Dhaka Metro Rail, a monumental infrastructure project in Bangladesh, stands as a ...