জোবায়ের রাজু
সুন্দরী সুরমাকে দেখে তার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে তাকে একেবারে আমার বউ করে ঘরে নিয়ে এসেছি। সংসার করে এখন বুঝি এই বউ জন্মের কিপটে। সুরমার কিপটামি কেমন, তার কয়েকটি ঘটনা জানাচ্ছি।
১/
সেদিন গোসল করতে পুকুর ঘাটে গিয়ে দেখি সাবান নেই। সুরমাকে ডেকে বললামÑ‘কইগো বউ, কাল যে লাক্স সাবানটা এনেছি, সেটা নিয়ে এসো তো?’ সুরমা দ্রæত পুকুর ঘাটে নেমে এসে পুকুরের কিনার থেকে এক দলা পাতলা কাদা তুলে এনে বললÑ‘এটা সারা গায়ে মেখে ঘষতে থাকো। মনে করো এটাই তোমার লাক্স সাবান। ওই সাবান আরো ক’দিন পর বের করব।’
২/
এক বদনা পানি এনে দেখি আমাদের সদ্য নির্মাণ করা নতুন টয়লেটের দরজায় বিশাল এক তালা ঝুলছে। সুরমাকে ডেকে বললামÑ‘চাবি দাও। কুইক।’ সে চেঁচিয়ে বললÑ‘যাও, রাস্তার সাইডে গিয়ে সেরে এসো। দিনে তিনবার করে টয়লেটে গেলে তো এক সপ্তাহে টাংকি ভরে যাবে। তারপর তো আবার মেথরের খরচ আছেই।’ বদনা হাতে দাঁড়িয়ে আমি মনে মনে বলিÑবাপরে, কি কিপটেরে বউটা।
৩/
সেদিন আমার ভীষণ কাশ হয়েছে। সুরমাকে বললামÑ‘আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো।’ সে একটা পুরাতন গামছাকে দুই টুকরো করে এক টুকরো আমাকে মুখের ভিতর ভরে দিয়ে বললÑ‘মুখে গামছা গুজে এভাবে বসে থাকো। কাশ আর আসবে না।’
৪/
একদিন বিকেলে সুরমাকে বললামÑ‘চলো আইসক্রিম খেতে যাই। চকবার আইসক্রিম। বাজারের এক দোকানে ভালো ভালো চকবার পাওয়া যায়।’ আবদার শুনে সুরমা আমার পাশ থেকে উঠে গেল। কিছুক্ষণ পর একটা টোষ্ট বিস্কুট এনে আমার হাতে দিয়ে বললÑ‘চকবারের দাম কত, খবর আছে? এই নাও টোষ্ট বিস্কুট। আপাতত চকবার ভেবে এটা চাটতে থাকো।’
৫/
একবার সুরমাকে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে গেলাম। বিকেলে বিচে নামার পর একটা ছেলে ঘোড়া নিয়ে এসে বললÑ‘ভাইজান, ঘোড়ায় চড়বেন? প্রতিজন আশি টাকা।’ সুরমাকে বললামÑ‘আসো ঘোড়ায় চড়ি। মাত্র আশি টাকা করে।’ সুরমা দাঁত কেলিয়ে বললÑ‘আশি টাকা কম লাগে? তার চেয়ে তুমি কিছুক্ষণ আমার পিঠে চড়ো।’Ñবলেই সুরমা ঘোড়াকৃতির মত উপুড় হয়ে বিচে পিঠ পেতে দিল।
৬/
কিছুদিন আগে কোন কারণ ছাড়াই আমাদের বাসার কলবেলটি নষ্ট হয়ে গেল। নতুন কলবেল সংযোজনের জন্য সুরমাকে বললামÑ‘আমি তো অফিসে ব্যস্ত থাকি। তুমি বিকেলে মার্কেট ঘুরে একটা ভালো দেখে কলবেল কিনে এনো।’ সুরমা হ্যাঁ না কিছুই বলল না।
রাতে অফিস থেকে এসে দেখি দরজার পাশে চেয়ারে একটি পুরণো চ্যাপ্টা পাতিল আর একটি মরিচা ধরা হাতুড়ি পড়ে আছে। ব্যাপার কি?
পরে সুরমা ভাত বেড়ে দিতে দিতে বললÑ‘পয়সা দিয়ে নতুন কলবেল কেনার দরকার নেই। তুমি অফিস থেকে ফিরে দরজার পাশে রাখা পাতিলটিতে হাতুড়ি দিয়ে দু তিনটা বাড়ি দিলেই আমি উড়ে এসে দরজা খুলে দিবো।’ শুনে মনে মনে বলিÑবউ, এত বুদ্ধি নিয়ে রাতে ঘুমাও কিভাবে!
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী।