প্রীতির গায়ের গন্ধ
রাত দেড়টা! যে গরম পড়েছে এতে সাধারণ মানুষের এই দুর্বিষহ গরমে হাঁসফাস করার অবস্থা। সেখানে অদ্ভুত কোন এক সম্মোহনী টানে এই গরমেও রুমে ফ্যান না ছেড়ে বসে থাকাটা যেন তাল-তমাল বনে আগুন লাগার মতো! রুমের এক কোনে চুপটি করে বসে আছে তমাল। তার হাতে একটি চটি বই! চটি বইয়ের নাম শুনলেই আজকাল মানুষের শরীর বিড়বিড়িয়ে ওঠে! চটি বই বলতে ছোট গল্পের বই। যৌনউত্তেজক এমন কিছু নয়! মাঝেমধ্যেই তমাল একখানা বই নিয়ে রুমের এক কোনে চুপটি করে বসে থাকে, বন্ধুরা এসে তাকে কত কথা শোনায় তাতে তার বিন্দু মাত্র এসে যায় না! সেদিন রুবেল নামে এক নিগ্রোধর্মী তার এক বন্ধু তাকে বলে, ‘সারাদিন ঘরের কোণে বসে, চটি না চিবিয়ে ঘর থেকে বেড়োতে তো পারিস না কি?’
তমাল বলে না কিছু! এক ঝলক অগ্নিতপ্ত চোখে নিগ্রো রুবেলের দিকে তাকিয়ে আবার চুপ করে বইয়ের পাতায় মনযোগ দেয়। রুবেল আর কিছু বলে না, ঘরের এক কোণে বসে সে সিগারেট ধরায়। অর্ধেকটা টেনে বাকি অর্ধেক দেয় তমালের হাতে। তমাল গাঁজা খাওয়ার মতো দু’টো টান দিয়ে সিগারেটটা ফেরত দেয় রুবেলের দিকে!
রুবেল হতভম্ব হয়ে বলে, এ তো গাঁজা না রে ! বিড়ি আরও টান!
তমালের মুখ থেকে এবার কথা বের হয়, অতিরিক্ত সিগারেট খাওয়া শরীরের জন্য হানিকারক! জনস্বার্থে – তীর্থ তমাল। রুবেল এক গাল হেসে বলে, তমাল না বাল – খালি বই পড়ার তাল। তমাল হেসে রুবেলের গালে ছোট করে একটা চাটি মারে!
রুবেলের সাথে রাস্তায় হাঁটতে তমাল খানিকটা বিব্রতবোধ করে! ওর ঢ্যালা ঢ্যালা চোখ নিয়ে যেভাবে মেয়েদের দিকে তাকায়! তাতে মেয়েরা ঠিক কতটা বিব্রতবোধ করে তার ধারণার বাইরে। তমাল মেয়ে হলে রুবেলের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিতো!
আপাতত রাগটা ঝাড়ে সিগারেটের ওপর! তবে রাগ ঝাড়তে গিয়ে নিজেই খানিকটা বিপাকে পড়ে। লম্বা লম্বা টানে মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। আজ বিকেলে বের হওয়াটাই যেন অনার্থক! জনসম্মুক্ষে মানুষের সঙ্গে কিভাবে আলাপচারিতা করতে হয়, ‘তার ছিটে ফোঁটাও জানে না রুবেল। তমাল যখন সুরুত করে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলো ঠিক তখনই রুবেল বলে ওঠে, ‘নতুন একটা কালেকশন আছে! রাতে ড্রাইভে পাঠিয়ে দেব নাকি?’ গরম চা গিয়ে গলায় বাঁধে তমালের! দম ফেঁটে কাশি আসার উপক্রম হয়। বিড়বিড় করে তমাল বলে – এ শালা তো দেখছি কখন কি বলতে হয় তা-ই জানে না!
২.
প্রীতির কথা কি তমালের মনে আছে? হ্যাঁ ওটা প্রীতিই হেসে হেসে কার সাথে যেন কথা বলছে, কোন একটা ছেলের সাথে! প্রীতির বয়ফ্রেন্ড। তমাল রুবেলকে ফেলে সোজা এগিয়ে যায় প্রীতির দিকে!
-প্রীতি?
(মেয়েটি তার ছেলের বন্ধুর সাথে কথা বন্ধ করে তাকায় তার দিকে! মেয়েটির চোখে সিলভার কালারের কোন একটা প্রসাধণীর উজ্জ্বলতায় চিক চিক করছে)
-হ্যাঁ। (মিষ্টি গলায় জবাব দেয় মেয়েটি)
-আমাকে চিনতে পেরছো? আমি তমাল তোমাদের সাথে একসাথে ওয়াপদা কলোনীতে থাকতাম? সিরাজগঞ্জ?
(মেয়েটির আড়চোখ খানিকটা স্মৃতির পুনরুত্থান ঘটায়। তারপর মিষ্টি গলায় বলে, তমাল। রাইট?)
তমাল ঠোটের কোণে মৃদু হেসে বলে, ‘ইয়েস’
এবার প্রীতির হাত চলে যায় তমালের মাথায়!
‘তোকে কতটুকু দেখেছি! কত বড় হয়ে গিয়েছিস রে’ স্নেহের আদুরে গলায় প্রীতি – তমালকে বলে।
তমাল আর প্রীতির কথোপকথন শুনে এতক্ষণে পাশে দাঁড়ানো অপরিচিত লোকটি বুঝে ফেলেছে ! তারা পরিচিত। প্রীতি এবার পাশে দাঁড়ানো লোকটির সাথে তমালের পরিচয় করিয়ে দিতেই তারা দুজন হ্যান্ডশেক করে নেয়। পাশে দাড়নো লোকটি প্রীতির ফিয়ান্সে। লোকটির নাম – রাশেদুজ্জামান। বাইরেরে একটি কন্সট্রাকশন গ্রুপের কনসাল্টেন্ট সে! আগামী ছ’মাস দেশে থাকবে, প্রীতিকে সাথে নিয়ে এখানে-ওখানে ঘুরবে! প্রীতিকে মানিয়ে নিয়ে, বিয়ে করে তারা দুজন দেশের বাইরে চলে যাবে আপাতত এতটুকুই তাদের পরিকল্পনা।
ছোটবেলা থেকেই প্রীতিকে ভীষণ ভালো লাগতো তমালের। যদিও প্রীতি তমালের থেকে বয়সে খুব একটা বেশি বড় নয়। তমাল যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে প্রীতি তখন ক্লাস টেনে।
“বাঙালি ছেলেদের প্রাপ্ত বয়স্ক হতে ক্লাস ফাইভের বেশি লাগে না! এ কথাটি কেউ না বললেও তমাল নিজেকে নিজে বলে’’ । ক্লাস ফাইভে থাকতে সে উপলব্ধী করে মেয়েদের সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে গার্লস স্কুলের ড্রেসে! যদি বলা হয়, বিয়ের সা’জের থেকেও বেশি সুন্দর? তমাল নিঃসন্দেহে বলবে হ্যাঁ! কারণ তমাল এখন পর্যন্ত বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি!
প্রীতিদের বাসা ছিলো তমালদের বাসার মুখোমুখি! তমালের জানলা দিয়ে প্রীতিকে না দেখা গেলেও রান্না ঘরের জানলা কিংবা বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে একটু চোখ বাড়ালেই প্রীতিকে দেখতে পেত তমাল। প্রীতির পনিটেইল চুলের সাথে নীল-সাদার ড্রেস যেন তমালকে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ বানানোর দায়িত্ব নিয়েছিলো!
– প্রীতি আপু স্কুলে যাচ্ছো?
প্রীতি তমালের কান মলে সেদিন বলেছিলো, আপু ডাকবি না আমায়! জাস্ট প্রীতি! ঠোট দুটোর প্রসরণ করে কেমন অদ্ভুত একটা হাসি দেয় প্রীতি।
৩.
আষাড়ের কোন এক সন্ধ্যে বেলা। বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি সারাদিন। ভীষণ জ্বরে কাতর তমাল। বাইরে বিক্ষুব্ধ ঠান্ডা বাতাস। সেই বাতাস যেন তমালের গায়ের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তমাল পাতলা একটি কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে রুমের ছোট্ট একটি সিঙ্গেল খাটে। এটা তমালের ঘর, দক্ষিণ দিকের জানলা দিয়ে তাকালে প্রীতির ঘরটাও এখান থেকে দেখা যায়। তবে জানলা বন্ধ, সারদিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় কারণে কাঠের জানলা ভিজে আছে।
সন্ধ্যে বেলায় বৃষ্টি দম দিয়েছে ক্ষণ! আকাশে মেঘের দোলাচল কমে সাদা বরফে মেঘ উড়ছে। কাঁথার তল থেকে মাথা বের করে বাইরের দিকে তাকাতেই আলোর ঝাপটা এসে লাগে তমালের চোখে। অস্বস্তিতে খানিক চোখ বন্ধ করে আবারও চোখ মেলে তাকাতেই ঘরের দেউড়িতে একটি মেয়ের অন্ধকারচ্ছন্ন ছায়া দেখতে পায় তমাল। কিছুটা বুক দুরু দুরু করে ওঠে, সারাদিন শুয়েছিলো বলে মাথায় কেমন অদ্ভুত দোলাচল শুরু হয়েছে। দু’চারবার দিয়েছে নেশাতুর ঘুম।
মেয়েটি তমালের বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। মেয়েটির শারিরিক গঠন দেখে তমাল এতক্ষণে বুঝে গিয়েছে! ছায়ামূর্তিটি প্রীতির।
-কিরে ঢিলু! সন্ধ্যেবেলাতেও ভূতের মতো ঘুমাচ্ছিস কেন?
-তমাল লম্বা একটা নিশ্বাস নেয়। এ নিশ্বাসে যে কোন মেয়ের বুকে দুরুদুরু শুরু হয়ে যায়। ছেলেদের কিছু কিছু জিনিস মেয়েরা পছন্দ করে। তার সবথেকে বড় একটি কারণ, ছেলেদের পৌরষস্বত্তা।
-তমাল চোখ ডলা ডলি শেষ করে প্রীতিকে বলে, তোকে কতবার বলেছি! তুই আমাকে ‘ঢুলু’ বলে ডাকবি না।
-আত্মবিশ্বাসের স্বর এনে প্রীতি বলে, ঢুলু না রে গাঁধা। তোর নাম ঢিলু।
তমাল কোন পালটা জবাব না দিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে আবার।
-প্রীতি এবার তমালকে ব্যাঙ্গ করে বলে, তোকে কি আর সাঁধে সাঁধে ঢিলু ডাকি?
সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকবি। তোদের বাসায় আসলাম কোঁথায় গল্প করবো তা না।
-কাঁথার তল থেকে মাথা বের করে প্রীতকে রাগন্বিত গলায় তমাল বলে, এই সন্ধ্যে বেলায় আমার শাকচুন্নির সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা নেই। আমার জ্বর! প্লিজ রেস্ট নিতে দে। আর না দিতে দিলে আমার ঘর থেকে বেড়িয়ে যা!
প্রীতি এরপর নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ। তমাল চোখ বুজে ভাবে, প্রীতিকে এত কঠিন করে বলাটা তার মোটেও উচিত হয়নি। বাইরে দূরে বাঁজ পড়ে খুব শব্দ করে। বাজ পড়লে মেয়েরা একটু হলেও ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে ওঠে। এই স্বভাবের ব্যাতিক্রম নয় প্রীতিও তবুও..প্রীতি কিছু করলো না। তমাল কাঁথার তলায় বসেই বাজ পড়ার শব্দে চমকে গিয়েছিলো। তবে সে তার থেকেও বেশি অবাক হলো প্রীতির কোন রেসপন্স না পেয়ে। কাঁথার তলা থেকে মাথা বের করে প্রীতির দিকে তাকাতেই দেখলো…প্রীতির চোখে জল। এরপর অভিমান করে যখন প্রীতি খাট থেকে উঠে যাবে ঠিক তখনই চারদিক দিনের আলোর মতো ফর্সা করে আরও একটি বাজ পড়লো ধারে কাছে কোথাও। প্রীতি এবার ভয় পেলো ভীষণ। প্রীতিকে আটকাতে তমালও তখন থতমত হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসেছে। প্রীতি ভয় পেয়ে এসে পড়লো তমালের গায়ে, তমালের জ্বর কাতুরে শরীর প্রীতির ভার না নিতে পেরে প্রীতিকে সমেত পড়লো বিছানায়। অন্ধকারের মধ্যে তমাল তার ঠোটে অদ্ভুত কিছু একটা অনুভব করে। তমাল আর দেরী করে না, নিজের মুখের মধ্যে এটে নেয় প্রীতির ঠোট। এরপর চলে অদ্ভুত সম্মোহন, ঠোট রেখে এবার তমালের ঠোট এগোয় প্রীতির গলায়। বাইরে বৃষ্টির তোরজোড় বেড়েছে দু’টো বজ্রপাতের পর। প্রীতি যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে, প্রীতির মাথায় তখন কি চলছে? প্রীতির তমালকে বাঁধা দেওয়ার কোন শক্তি পাচ্ছে না। অবশ্য প্রীতি চাচ্ছেও না বাঁধা দেওয়ার। সে এক জীবনের নতুন স্বাদের সন্ধান পেয়েছে। যার পরশ সে আগে কখনো কোনদিন পায়নি। তমালের নাকের গরম নিশ্বাস প্রীতির গলা বেয়ে নামে ঘন নিশ্বাসের বুকে। জ্বর কাতুরে শরীরে তমাল সেদিন পৃথিবীর সব থেকে সম্মোহিত ঘ্রাণের সন্ধান পায়। তমাল প্রীতির বুকে নিজের মাথা ঠেকিয়ে লম্বা একটা নিশ্বাস নেয়। এ নিশ্বাস যেন জন্মান্তরের নিশ্বাস। এরপর যখন আরও একটা বাজ পড়ে ততক্ষণে তমালের উত্তপ্ত অর্ধনগ্ন শরীরের নিচে প্রীতি। প্রীতি ধাক্কা দিয়ে তমালকে সরিয়ে দেয় নিজের অবচেতন শক্তির জোরে। তমাল এবার ঘন নিশ্বাসের সাথে সাথে নিজের জ্বর কাতুরে শরীর নিয়ে দুটো হাত প্রসরিত করে নিজেকে স্বর্বৎস উজাড় করে দেয় ঘর্মাক্ত বিছানার জ্বলন্ত ক্রোধের বুকে।
প্রীতি বিছানা থেকে উঠে নিজের জামা ঠিক করে দৌড়ে বের হয়ে যায় পাশের ঘরে।
৪.
তমাল কি প্রীতিকে ভালোবেসে ফেলেছে? অথবা প্রীতির কি তমালকে ভালো লেগেছে? তার দু’জন এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজে নিজেদের অজান্তে। সেদিনের পর থেকে প্রীতি আর তমালের সামনে আসেনি। তমালও প্রীতির কাছে কেমন নিজেকে আড়াল করে রাখতো। তবে প্রীতিকে তমাল রাখতো চোখে চোখে, আড়াল থেকে দেখলেও প্রীতির সামনে যায়না তমাল।
একদিন বিকেলের ঘটনা, হালকা দরজা ভিজিয়ে দিয়ে প্রীতি পড়ছিলো তখন। সামনেই উচ্চমাধ্যমিকের ফাইনাল। তমাল বাইরের দেয়াল টপকিয়ে প্রীতিদের বারান্দা দিয়ে সোজা চলে যায় প্রীতির রুমে। পড়ার প্রতি এতই মনোযোগী ছিলো প্রীতি যে, তমাল কখন এসে তার রুমে ঢুকেছে তার খেয়ালই করেনি সে। তমাল একটি চকলেট বাড়িয়ে দেয় প্রীতির দিকে। প্রীতি আচমকা হাত দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়,
-ফিসফিস করে বলে, তুই……তুই এখানে কি করিস?
-তমালও এবার ফিসফিস করে বলে, তুই আমার সাথে কথা বলিস না কেন?
-প্রীতি এবার কিছুটা অভিমানের স্বরে বলে, জানি না!
-তুই কি আমাকে ইগনোর করছিস?
-প্রীতি এবার তমালের চোখের দিকে তাকিয়ে ঠোট প্রসরণ করে সেই মৃদু হাসি দিয়ে বলে, জানি না!
তমাল এবার প্রীতির মাথায় ছোট্ট করে একটা চাটি দিয়ে বলে, জানিসটা কি?
(ওঘর থেকে ফিসফিস আওয়াজ পেয়ে প্রীতির মা প্রীতির নাম ধরে ডেকে বলে, এই প্রীতি; কার সাথে কথা বলিস রে?)
প্রীতি এবার ফিসফিসে কন্ঠে তার মা’কে জবাব দেয়…..কারও সাথে না মা!
প্রীতির এমন বোকামী দেখে হেসে ওঠে তমাল। তমাল শার্টের একটা বোতাম খুলে…..প্রীতিকে বলে আজকাল যে গরম পড়েছে !
প্রীতির চেয়ার ছেড়ে উঠে বলে, আমি পড়ছি… তুই আমার রুমে এসেছিস জ্বালাতে? সামনে পরিক্ষা আমার। যা বেরো ঘর থেকে।
তমাল মৃদু আহুতু হাসি হেসে বলে, সেদিনের শোধ নিচ্ছিস? ভাবলাম তুই আমার ওপর রাগ করেছিস! তাই আমি আরও এলাম তোর রাগ ভাঙাতে।
যাহ! আমার আসাটাই ভুল হয়েছে। এবার পকেট থেকে আরও কয়েকটি চকলেট বের করে প্রীতির পড়ার টেবিলে রেখে তমাল রুম থেকে বেরোনোর জন্য দরজার দিকে এগিয়ে যায়। প্রীতি এবার এক অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে ফেলে। তমালের হাত ধরে হেঁচকা টান দিতেই তমাল এসে যায় তার কাছে। এক হাত দিয়ে দরজা এটে, অন্য হাত তমালের মাথার পিছনে দিয়ে কাছে টেনে নেয় তমালের ঠোটকে। এরপর লম্বা একটু চুমুতে তমাল যেন সেদিনের বাকি অর্ধেক গল্পটি লিখে ফেলে। দুজন দুজনের ঠোটকে এত নিবিড়ভাবে চুষতে থাকে যেন তারা জন্মান্তরের তৃষ্ণায় নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে। তমালের একটি হাত চলে যায় প্রীতির বুকে! প্রীতি অদ্ভুত সুখের মুর্ছনায় নিজেকে এবারও তমালের হাতে সমার্পণ করে দেয়।
তমালের দুটি হাত লিখতে থাকে প্রীতির শরীরকে উত্তপ্ত করের দীর্ঘ কবিতা। সেই কবিতায় ভেসে আসে ঘণ নিশ্বাসের শব্দ। তমাল এবারও এক অদ্ভুত সম্মোহন আবিস্কার করে নিজের অভ্যন্তরে, আন্দোলিত বিক্ষুব্ধ উত্তপ্ত রাজপথে। প্রীতির গায়ের গন্ধ! এ গন্ধে যেন কি এক অমৃত আছে! আছে স্বর্গনরকের উত্তপ্ত দোলাচল। আচমকা দরজায় টোকা পড়তেই তারা দুজন সরে যায়, তমাল প্রীতির শ্যাম বর্ণের মুখের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় লজ্জায় প্রীতির মুখটি ডালিম ফুলের মতো রাঙা।
-‘কি রে তমাল! কখন এলি?’ , বলে প্রীতির মা।
-এই তো কাকিমা, প্রীতি আপুর কাছে একটু অঙ্ক বুঝতে এলাম।
তমাল হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যায়,
-যাই কাকিমা!
– আরে এলি! একটু কিছু খেয়ে যা।
তমাল শোনে না সে কথা, সিড়ি থেকে সোজা নিচে নেমে পিছনার মাঠটায় চলে যায়।
প্রীতিকে কি সে ভালোবাসে? কে জানে!
সেদিন সারারাত অদ্ভুত এক নেশায় ঘুম চোখ থেকে উড়ে যায়। সারা শরীর জুড়ে এক অদ্ভুত নেশাতুর সম্মোহন শক্তি হাত পা অবশ করে ফেলে প্রীতির।
৫.
‘স্যার, হোয়্যাট ডু ইউ নিড?’
‘আ হোয়াইট ইউনিকর্ণ’, জবাব দেয় শ্বেত বর্ণের লালচে চুলের পঞ্চাষোর্ধ লোকটি!
সাদা শার্ট, কালো-প্যান্ট আর গলায় নীল টাই পড়া লোকটি কিঞ্চিত ইতিবাচক হাসি দিয়ে বলে, ‘ওকে স্যার! উই উইল ম্যানেজ! হোট ইউ ওয়ান্ট। টেক রেস্ট! হ্যাভ আ সুইট নাইট’। শ্বেত বর্ণের লোকটির নাম হ্যারি, জার্মান নাগরিক এই বিদেশী বাংলাদেশে এসেছে একটি ব্রিজের কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।
সাদা শার্ট পড়া লোকটি হোটেলের কামড়া থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে, একটি ডায়মন্ড গাউন পড়ে ঢোকে লোকটির কামড়ায়। মেয়েটির মুখের গড়নের সাথে ডায়নামিক মেকাপ যেন মেয়েটিকে আরও লাস্যময়ী করে তুলেছে। মেয়েটির পনিটেইল চুল, ঠোটে লাল ওয়াটার-প্রুফ লিপস্টিক, চোখে কৃত্রিম পাপড়ি (আইলেশ)
মিষ্টি কন্ঠে বলে, ‘মে আই কাম ইন?’
শ্বেত বর্ণের লোকটি বলে, ‘ওহ! হো হো! ইয়েস প্লিজ’
মেয়েটি এগিয়ে যায় বিদেশী সেই লোকটির কাছে! লোকটি শুয়েই থাকে।
শোয়া থেকে এবার উঠে বসে! মেয়েটির কানের পাশে আস্তে করে হাত রাখে। মেয়েটি নিচের ঠোটটা উপরের দাতের সাথে স্পর্শ করে কেমন একটা শীৎকার দেয়।
শ্বেত বর্ণের লোকটির এবার মেয়েটির ঠোটের দিকে নিজের ঠোটটি এগিয়ে দেয়।
‘ফিসফিসে কণ্ঠে বলে, আর ইউ হর্ণি বেবি?
মেয়েটি মাথা নাড়ায়,ইয়েস! ইউ আর টু মাচ সেক্সি!
‘দেন লেটস গেট সাম ফান’
মেয়েটির গলায় চুমু দিয়ে মেয়েটির গাউনের অর্ধেকটা খুলে ফেলতেই, হ্যারি ভীষণ অবাক হয়। মেয়েটির গা থেকে অদ্ভুত একধরণের ঘ্রাণ আসছে। এটা কি কোন পারফিউমের ঘ্রাণ? গলার নিচ দিয়ে মেয়েটিকে চুমু দিতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে সেই চুমুর পরিণতি গড়ায় মেয়েটির সারা অঙ্গে। মেয়েটি কামুক হয়ে ভীষণ উত্তেজিত শব্দ করে। হ্যারি ধীরে ধীরে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
এভাবে চলে দুটি নগ্ন শরীরের দোলাচল। কতক্ষণ মেয়েটি থাকে ছেলেটির নিচে, মেয়েটি আবারও উঠে আসে ছেলেটির উপরে। বিদেশী লোকটি ভীষণ আনন্দ পায়। মেয়েটির চোখের দিকে তাকালেই যেন শরীরের ভিতর থেকে নিজের জমানো পৌরষ সত্ত্বা আরও প্রবলভাবে যেগে ওঠে। মেয়েটির ঠোট এগিয়ে নেয় হ্যারির ঠোটের দিকে। পনিটেইল চুলগুলো বে
দুটি দেহের উত্তপ্ত ফাগুণ রাঙে সে রাতে! শেষবার হ্যারি মেয়েটিকে বলেছিলো, ডু ইয়্যু নিড সাম জ্যুস? মেয়েটি মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিলো – ইয়েস।
*
হোটেলের কামড়া থেকে বেড়িয়ে প্রীতি সোজা হেটে যায় এক্সিট গেটের দিকে। এক্সিট গেট থেকে বেরোবার আগে অবশ্য সে নিজেকে আয়নায় বেশ কয়েকবার পরোখ করে দেখেছিলো। কোথাও কোন সমস্যা আছে কি না! জার্মান লোকটিকে সে যতটা হিংস্র ভেবেছিলো লোকটি তার থেকেও ভীষণ কোমল ও লাজুক। সে অনুপাতে দেশের লোকগুলো বড্ড হিংস, তাদের ছোঁয়ায় কোন আর্ট নেই। তারা ইরোটিক বোঝে না, বোঝে না রোম্যান্স কাকে বলে। তারা মেয়েদের জামা-কাপড় ছাড়া দেখলেই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পরে নিজের শরীরের সর্বৎস ঢেলে দিতে। সে কারণেই তারা বেশিদুর এগোতে পারে না। অথচ জার্মান লোকটি কত স্বাচ্ছন্দ্যে প্রীতিকে ইরোটিক ওয়েতে ইম্প্রেস করেছে। প্রীতিকে সম্পূর্ণ উত্তেজিত করেই তবে নিজের ক্রোধ প্রীতির শরীরে ঢালতে চেয়েছে।
হোটেল থেকে বের হয়ে ঠিক যখনই সিএনজিতে উঠতে যাবে ঠিক তখনই পিছন থেকে প্রীতির নাম ধরে ডাক দেয় কেউ একজন!
-‘এই যে প্রীতি!’
প্রীতি পিছন ফিরে তাকাতেই তার কেমন অস্বস্তিবোধ হয়। ভীষণ রাগ হয় নিজের প্রতি!
সেই কেউ একজন তমাল। প্রীতির কাছে এগিয়ে আসতেই প্রীতি ঠোটদুটো প্রসরণ করে সেই হাসি হেসে তমালকে বলে, ‘কোথায় যাচ্ছ তমাল?’
-তমালও ফিকে হেসে বলে, আমি যাচ্ছিলাম না কোথাও। আমার বাসা এখানে! দেখলাম তুমি যাচ্ছো। ডাক দিলাম। কোথাও যাচ্ছো?
প্রীতি মৃদু হেসে বলে, বাসায় যাচ্ছি।
তমাল হেসে বলে, আচ্ছা যাও তাহলে………………।
প্রীতি সিএনজিতে উঠে বসতেই তমাল সিএনজিওয়ালাকে ভাড়া জিজ্ঞেস করে সিএনজি ভাড়া দিয়ে দেয়। প্রীতি এতে জোড়াজুড়ি করে। এক পর্যায়ে প্রীতি বলে, আচ্ছা তুমি চলো আমার বাসায়!
তমাল বলে, আজ থাক অন্য একদিন যাব ।
প্রীতি এবার কিঞ্চিত অভিমানের গলায় বলে, চলো না হলে কিন্তু আমি রাগ করবো।
তমাল সিএনজিতে উঠে বসে! প্রীতির পাশে। সিএনজির গতি বেড়ে যায়, মৃদু বাতাস শেষে আসে বসন্ত শেষে ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা। শহুরে বাতাসে বসন্তের মিষ্টতা পাওয়া যায় না। তমাল চোখ বন্ধ করে লম্বা নিশ্বাস নেয়, প্রীতির গায়ের গন্ধ!
তমাল চেষ্টা করেও সে গন্ধ উপলব্ধি করতে পারে না। তার নাকে ভেসে আসে ড্রেনের উটকো পঁচা গন্ধ, ডাস্টবিনের নোংরা গন্ধ।
৬.
প্রীতির বাসায় এসেই – তমালের ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। প্রীতির মা গত ৭ বৎসর যাবৎ প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। তার রুমে ঢুকতেই তমালের গা গুলিয়ে বমি আসলেও ঠিক আসে না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এনে, রুমে কিঞ্চিত উঁকি দিয়ে বলে, কাকি কেমন আছেন?
-আঁধশোয়া অসুস্থ মহিলা তমালের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে প্রায় দেড় মিনিট সময় নেয়।
-তমালকে দেখে সে চিনতে পারে না। ঘাড়টা আবার ঘুরিয়ে নেয়। তমাল এতে ভীষণ অপমানিতবোধ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। প্রীতি আসে, তমালকে ঠেলে রুমে ঢুকে যায়। নোংরা কাঁথা-কাপড় সরাতে সরাতে প্যারালাইজড মা’কে বলে… ‘মা’ ওকে চিনতে পেরেছো? আমরা সিরাজগঞ্জে থাকতে ও আমাদের বাসার পাশে ছিল…ওর নাম তমাল। প্রীতির মা এবার বিরক্তির স্বরে প্রীতির মাথায় একটি চাটি মারে…প্রীতি ভুলে গিয়েছিলো এই রুমে একজন পুরুষ মানুষ আছে। আর পর-পুরুষের সামনে প্রীতির মা নিজেকে উলঙ্গ হতে দিতে কখনো চায় না।
প্রীতি তমালকে চোখের ইশারা দিয়ে বলে..তুই আমার রুমে গিয়ে বস!
প্রীতির রুমে আসতেই তমাল মুগ্ধ চোখে রুমটা অবজার্ভ করে। এই রুমটা ভীষণ পরিপাটি….বিছানা দেখলেই ঘুম চলে আসে। মাথার কাছে রাখা বড় একটি টেডি বিয়ার। আর বামপাশে..রাখা কোলবালিশ। মাথার কাছে বালিশের ওপরে রাখা একটি নকশি কাঁথা। তমাল এগিয়ে যায় বিছানার দিকে…..নকশি কাথাটি হাতে নিয়ে নিজের নাকের কাছে ধরতেই অদ্ভুত একটা সম্মোহনী শক্তি জেগে ওঠে। এক নিশ্বাসে চোখের সামনে ভেসে ওঠে শৈশবের সব পুরণো স্মৃতি! সেই আবেগ। বুকে দুরু দুরু অনুভূতি!
*
বাবা মারা গেলেন হঠাৎ করেই। একরাতে মায়ের সাথে অভিমান করে বেড়িয়ে গেলেন ঘর ছেড়ে। এরপর চার-পাঁচদিন ধরে কোন খোঁজ পেলাম না। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করেও বাবাকে পেলাম না।বাবা ফোনটাও বাসায় রেখে গিয়েছিলেন। এর চারমাস পর একদিন রাত বারোটার দিকে ফোন আসে! ফোন ধরেই মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়…খাটের কোণে মাথার সাথে বাড়ি লেগে বাজেভাবে ইঞ্জ্যুর্ড হয়। মা’কে হাসপাতালে ভর্তি করাই। এদিকে বাবার মৃত্যুর খবর ভেসে আসে। রেললাইনের পাশে বাবার ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে আছে। আমার সেদিনই ভীষণ মরে যেতে ইচ্ছে করেছিলো জানিস তমাল। শুধু মায়ের কারণে আমি বেঁচে আছি।বাবার মরোদেহটাও আমি দেখতে পারিনি। বাবাকে রেলওয়ে গোরস্থানে দাফন করে দেয় সেখানের লোকজন। মা’ যখন একটু সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরে তখন আমার কিছুই করার নেই। গোটা আকাশ যেন ভেঙে পড়েছে আমার মাথায়। নিজেকে ভীষণ একা মনে হয়!
প্রীতির চোখ থেকে জল গড়ায়! তমাল কাছে টেনে নেয় প্রীতিকে।
প্রীতির সাথে যে লোকটিকে দেখেছিলো তমাল। সে লোকটি প্রীতির হবু বর নয়। প্রীতির ক্লাইয়েন্ট! অবশ্য তমাল জানে না যে প্রীতি নিজের লাস্যময়ী চেহারা আর শরীর বিক্রি করে নিজের মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করে।
৭.
তমালকে তার পরিবারের লোকজন টুকু বলে ডাকে। তমালের সৎ বোনের বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তা ধরে হাটতেই ফোন বেজে ওঠে, প্রীতির গলা-
-কোথায় তুই?, মিষ্টি গলায় জিজ্ঞেস করে প্রীতি।
-এইতো বাংলামোটরে রাস্তায় হাটছি।
-আচ্ছা শোন, তুই ডিরেক্ট যমুনা ফিউচার পার্কে চলে আয়। কতক্ষণ লাগবে আসতে?
তমাল বলে, জ্যাম আছে তো। কতক্ষণ লাগবে জানি না।
তমালের পকেটে যমুনা ফিউচার পার্কে যাবার মতো টাকা নেই। ফোনেও মাত্র অল্প কিছু টাকা আছে। তমালের বন্ধু নিগ্রো রুবেলকে ফোন দেয়..মাসের শেষ। রুবেলের কাছেও টাকা থাকার কথা না। রুবেলকে ফোন দেওয়ার পরে রুবেল জানায় তার কাছে নিজের চলার মতই টাকা নেই, তাও আশ্বাস দেয়। অন্য কোন বন্ধুর কাছ থেকে ম্যানেজ যদি করতে পারে তাহলে তমালকে সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ বাদে আসে প্রীতির ফোন,
-তুই ওখানেই দাড়া। আমি আসছি।
যমুনা ফিউচার পার্কের একটি ক্লথ শপে গিয়ে প্রীতি তমালকে বলে, তোর যা যা ভালো লাগে তুই নিয়ে নে। তমাল ভেবে পায় না কিছু। সে পছন্দ করার মতো একটা গেঞ্জি নিয়েছে নিজের জন্য!
প্রীতি কিছুক্ষণ বাদে এক গাঁদা জামা কাপড় নিয়ে এসে দেখে তমালের হাতে শুধুমাত্র একটি গেঞ্জি ছাড়া আর কিছুই নেই। জামাকাপড়গুলো কাউন্টারে রেখে আবার ফেরত আসে তমালের দিকে। মিষ্টি রাগ দেখিয়ে বলে, কিছু পছন্দ হচ্ছে না এখান থেকে?
(তমাল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।)
চল এখান থেকে। পাশের শপে যাই।
তমালের হাতে যে ব্যাগের বোঝা তা সামলাতে তার কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা বোঝা যায়। প্রীতির হাতেও ব্যাগের বোঝা। তমাল সারাজীবনে এতগুলো জামাকাপড় পড়েছে কি না তা তার জানা নেই। বাবা টাকা পাঠালে সে টাকা দিয়ে বন্ধু রুবেলকে নিয়ে নিউমার্কেটে গিয়ে সস্তায় কিছু জামা-কাপড় কিনেছে।
প্রীতি যে গাড়িটিতে এসেছে সেটি হলদে কালারের টয়োটা এসইউভি! মডেলটা ঠিক আন্দাজ করতে পারে না। গাড়ি ড্রাইভ করছে প্রীতি নিজেই। সে এই গাড়ি কোথায় পেলো তমাল তা জানে না। প্রীতি অবশ্য ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। কে জানে! সে হয়ত বড় কোন চাকরী করছে।
ঢাকা থেকে বেড়িয়ে ওরা চলে যায় নারায়নগঞ্জের দিকে। কোন একটি রিসোর্টে। তমাল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কোন অদ্ভুতুড়ে ভাবনায় বুঁদ হয়ে আছে।
*
রিসোর্টের একটা ঘর নিয়েছে ওরা! তাহলে কি এক কামড়াতে থাকবে? প্রীতি যৌবনের প্রতিটি ভাঁজ তমালের চোখে ধরা দিয়েছে। তমালকে এখন অবশ্য প্রীতির থেকে ভীষণ নিচু মনে হয়। প্রীতির লাস্যময়ী চেহারা আর ফুঁটে ওঠা যৌবন যেন তমালকে নিমিষেই গ্রাস করে ফেলতে পারে।
-আমি ফ্রেশ হতে গেলাম। তুই একটু রেস্ট নে।
রুমের সাথে এটাচ বাথরুম। প্রীতি জামা-কাপড় নিয়ে ঢুকলো বাথরুমে। তমাল এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো বাথরুমের দরজার দিকে। বাথরুমের শাওয়ারের জল পড়ার শব্দ হচ্ছে। তমাল নিজের অভন্ত্যরে এক অদ্ভুত ক্ষুধার উন্মোচন উপলব্ধী করতে পারছে। বুকে যেন কেউ একজন জোরে জোরে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করছে। জানলা দিয়ে আসা বাতাসের ঝটকায় তমালের চুল গুলো নড়ে উঠলো। এ বাতাস যেন~ফিসফিস করে বলে গেলো, পৃথিবী এখানে শান্ত এবং শান্তিপূর্ণ।
ধীরে ধীরে কমে এলো বাথরুমের পানি পড়ার শব্দ। খট করে বাথরুমের দরজা খুলে প্রীতি শুধু গলাটা বের করে, তমালকে বললো- আমার ল্যাগেজের মধ্যে আমার তোয়ালেটা আছে। ওটা একটু দিবি? তমাল শরীরে যেন অন্যরকম এক শক্তি অনূভব করলো। প্রীতির তোয়ালেটা প্রীতির দিকে এগোতে এগোতে মনে মনে চাইলো প্রীতি যেন তাকে সেদিনের মতো হ্যাঁচকা টান দিয়ে বাথরুমের ভেতরে নিয়ে নেয়। আর প্রীতির সর্বাঙ্গে যে মাদকতা আছে সেটি গ্রাস করে ফেলে তমাল। এক-পা দু-পা করে তমাল এগিয়ে যায় বাথরুমের দরজার দিকে। প্রীতির হাত ভেজা। সে হাত বাড়ি টয়েল নিয়েই খট করে আবারও দরজা বন্ধ করে দেয়……এখানেই ঘটে তমালের এক বিষন্য দুপুরের উপখ্যান।
প্রীতি ফ্রেশ হয়ে গোলাপী রাঙা টয়েল দিয়ে নিজের বুকের অর্ধেকটা ঢেকে বের হয়। প্রীতির ফর্সা দেহ আর মেকাপ ছাড়া চেহারায় যেন এক ভিন্ন ধরণের মাদকতা আছে। যে মাদকতা যে কোন পুরুষের নার্ভ দূর্বল করে দিয়ে পৌরষস্বত্তাকে প্রবলভাবে উন্মাদিত করে তুলতে পারে। তমাল অবশ্য বাথরুমে গিয়ে চোখ বুজে প্রীতির গায়ের গন্ধ পাওয়ার জন্য লম্বা একটি নিশ্বাস নেয়। সে নিশ্বাসে সুগন্ধি সাবানের সাথে তমালের নাকে ভেসে যায় অদ্ভুত সম্মোহনী এক ঘ্রাণ। যে ঘ্রাণে শৈশবে তমাল আহত হয়েছিলো। যে ঘ্রাণ শৈশবে তমালকে দায়িত্ববান পুরুষ বানাতে চেয়েছিলো। তমাল অবশ্য হেয়ার কন্ডিশনার দিয়ে নিজের পৌরষবোধের ক্ষুধা মিটায়। যখনই তার শরীর থেকে বসন্তে নতুন করে উৎপন্ন রস নির্গত হয়। ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ে প্রীতির।
- ছেলেদের ফ্রেশ হতে এত সময় লাগে? কি করিস এখনো?
তমাল উঠে গোসল সেরে বের হয়। প্রীতি ততক্ষণে ফ্রেশ ড্রেস পরে নিয়েছে। প্রীতি কি তবে টয়েলটা ছেড়ে তারপরে জামাকাপড় পড়েছে?
তমালের মাথায় চলে জন্মান্তরের নৃশংস ক্ষুধার নগ্ন আক্রোশ।
৮.
শিমুল গাছটার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পরেছে। গাছের নিচে বসেছে। একঝাক মানুষের আড্ডা। এরা কেউ কাউকে চেনে না। একটা ছেলে গান গাইছে। তার গিটার টিউনিং ভালো নেই। গিটার বাজাতেও পারে না ঠিকঠাক। তমালের পাশে বসা প্রীতি। প্রীতির বেসুরে গানে মন দিতে পারছে না দেখে মোবাইলে কি যেন করতে ব্যস্ত। এখানে অতভালো নেটওয়ার্কও পাওয়া যায় না।
তমালের অবশ্য আনকোরা লাগছে নিজেকে। প্রীতি যেহেতু তার পাশে বসা এবং তার গায়ে সাহেবী জামা-কাপড়। রিসোর্টের কামড়া থেকে বেরোনর আগে সে অবশ্য নিজেকে আয়নায় দেখেছিলো একবার। চুলগুলোকে পরিপাটি আর গায়ে জেন্টস পারফিউম সব মিলিয়ে তমালের মনের মধ্যে আলাদা একধরণের আত্মবিশ্বাস কাজ করছে।
তমাল গিটার বাজানো ছেলেটিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-ব্রো, ক্যান আই গেট দিস?
ছেলেটি গান থামিয়ে বলে, হোয়্যাট?
-গিটার।
তমালের ফোনে গিটার টিউনের অ্যাপস আছে। ফোনটাও ভাজ্ঞ্যেস কিনেছিলো ক’দিন আগে। আগে যে ফোনটি ছিলো তা দিয়ে লোক-সমাজে যাওয়ার কোন উপায় ছিলো না। এই ফোনটি কিনতে তাকে সাহায্য করেছে..তার বন্ধু রুবেল। যাকে সে নিগ্রো রুবেল বলে ডাকে। যার প্রধান কারন, রুবেলের ঠোট আফ্রিকার পুরুষের মতো। রুবেলকে অবশ্য সে কথা বললে, রুবেল বলে….আমার ঠোট দিয়ে কি করবি? চুষবি? এখানে রুবেল থাকলে অন্য একধরণের সাপোর্ট পেতো তমাল।
গিটারটাকে ঠান্ডা মাথায় টিউন করানো শেষে…কর্ডসে আঙুল চেপে গিটার বাজানো শুরু করে শুরু করে। এবং কিছুক্ষণ পরে গিটার টিউন লো করে গান ধরে তমাল। তমালের গানের গলা ভালো।ভার্সিটি লাইফে বন্ধুদের সাথে কত গান গেয়েছে সে। চেয়েছিলো একটা ব্যন্ড দাড় করতে, সে হবে লিড ভোকালিস্ট। তমালের গানের সাথে সাথে প্রীতি মোবাইল ফেলে তমালের মুখের দিকে তাকায়, গালে হাত দিয়ে। মৃদু হাসিতে তমালও প্রীতির চোখের দিকে তাকিয়ে গান ধরে,
প্রতিটি স্পন্দনে আমি তোমায় চেয়েছি,
মাঘের শেষে ফাল্গুনের উৎসবে।
তুমি কি আমায় শুনছো?
আমি তো ভালোবেসেছি
শুধু তোমাকেই, হ্যাঁ তোমাকে।
এটি তমালের নিজের লেখা গান। সেই গানে যেন সর্বচ্চো সুর তুলে তমাল কিছুক্ষণ জটপাকানো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিলো। গান শেষ হওয়ার সাথে সাথে কড়তালি পরে গেলো ছোটখাট একটা। একজন বলে উঠলো, ওয়ান মোর প্লিজ। তমাল আরও একটি গান ধরলো। পুরোটা গানে সে প্রীতির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রীতি গালে হাত দিয়ে সেই মিষ্টি হাসি হেসে রইলো, যে হাসিতে বার বার বধ হয়েছে তমাল।
রাতে খেয়েদেয়ে শোবার আগে প্রীতি তমালকে বললো, তুই খাটে শুয়ে পড়। আমি ঐ কাউচটাতে শুয়ে পড়ব।
তমাল চুষে চুষে কি একটা ড্রিংসে চুমুক দিচ্ছিলো তখন, তমাল প্রথমবার কথাটি কানে না নিলেও পরে বললো, তা হবে কেন? তুমি বিছানায় শোও। আমি ওখানে যাচ্ছি।
প্রীতি হেসে বললো, না তা হবে কেন? তুই এখানে শুয়ে পড়। একটা বালিশ নিয়ে প্রীতি ঘরের কোণে কাউচটাতে শুতে গেলো।
কাউচটাতে আধশুয়ে তমালের দিকে তাকিয়ে প্রীতি আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলো, তমাল-তুই কখনো কারও প্রেমের পরিস নি?
-তমাল আত্মবিশ্বাসের স্বরে বললো, পড়েছি।
-কার প্রেমে? জিজ্ঞেস করলো প্রীতি!
-সেটা তো বলা যাবে না।
তমাল এবার পালটা প্রশ্ন করে বসলো প্রীতিকে…তুমি কখনো কারও প্রেমে পড়েছো?
- প্রীতি বিষণ্যতার অন্ধকার আড়াল করে বলে, না! ঘুমিয়ে পড়।
প্রীতি চোখ বুজে শুয়ে আছে, সে ঘুমে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আছে। বিড়বিড় করে বলছে, তমাল তোর কি সেদিনের কথা মনে আছে? যেদিন আমরা প্রথম চুমু খেয়েছিলা। তমালের তখনো কান সজাগ! চোখ খুলে অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে বাইরের জ্যোৎস্না আলো এসে পড়েছে। প্রীতিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে, খোলা সিল্কি চুলগুলো যেন আকর্ষণ করছে বাইরের সব ঘুটঘুটে অন্ধকারে আলো জ্বালানো জোণাকিদের। তমাল উঠে প্রীতির কাছে গেলো সন্তাপর্ণে। হাটুগেড়ে বসে প্রীতির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, তখনো প্রীতি বিড়বিড় করছে। তমাল হাত রাখে প্রীতির গালে, পৃথিবীর সব মায়া যেন এখানে এসে জমেছে। একি! মেয়েটির গা অসম্ভব গরম! শীতে কুচো হয়ে শুয়ে আছে। তমাল প্রীতিকে কোলে নেয়, বিছানায় নিয়ে আসে। ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে ঢেকে দেয় প্রীতির শরীর, নিজে যখন পা বাড়িয়ে শুতে যায় কাউচটার দিকে তখন প্রীতির বিভোর ঘুম ঢুলো শরীরের হাত তমালের হাতকে টেনে ধরে। কাছে টেনে নেয় এক অদ্ভুত অপ্রত্যাশিত ঘোরে। তমাল প্রীতির পাশে শোয়, তমালের হাতকে টেনে নিয়ে প্রীতি বুকের মধ্যে ভীষণ যত্নে রাখে। তমাল প্রীতির কপোলের চুল শরীয়ে প্রীতির ফর্সা কপালে একটি স্নিগ্ধ চুমু দেয়। পৃথিবীর সব মায়াটুকু জমেছে প্রীতির কপোলটাতে। তমাল প্রীতিকে বাহুডোরে জড়িয়ে ঘুম দেয়।
আসলে প্রীতি তখনো ভীষণ জ্বরে ঘুমায়নি। সে এতক্ষণ শুয়ে তমালের কার্যক্রম অবজার্ভ করছিলো। তমাল যখন প্রীতিকে জড়িয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন। প্রীতি তখন চোখের চলে তমালের হাত ভিজিয়ে ফেলে। ঘুরে তমালের চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে তমালের ঠোটে লম্বা একটি চুমু দেয়। যে চুমুতে মিশে আছে প্রীতির সারাজীবনের আক্ষেপ।
৯.
সুদীপা আমি আর এ কাজ করতে চাই না! বিষন্য গলায় বলে প্রীতি। সুদীপা অবাক হওয়ার গলায় বলে, ‘কেন করতে চাস না? এই বাজারে তোর প্রাইসটা তুই নিজেও জানিস! এখান থেকে পিছনে গেলে পস্তাবি।‘
প্রীতি এক চোখ ক্রোধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘য়্যাম নট প্রোডাক্ট, আর কত বিক্রি করবো নিজেকে? লোকেদের সাথে শুয়ে শুয়ে জীবনটা পার করে দেব?’
সুদীপা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাসিমুখে বলে, ‘তুই যা ভালো বুঝিস, লাইফ তোর ডিসিশানও তোর’
বাইরে কড়া রোদ, রোদের উজ্জ্বলতা এতটাই তীব্র খালি চোখে তাকাতে গেলে চোখ ছোট হয়ে আসে। প্রীতির চোখে সানগ্লাস, প্রীতির পড়নে যে ড্রেসটি সেটি ভীষণ আকর্ষণীয় বলে রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষ প্রীতির দিকে একনজর তাকিয়ে যাচ্ছে। যেন প্রীতি ঢাকার রাস্তার লিবার্টি অফ লাস্ট! শহুরে পুরুষের ভীষণ বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকে। শহর মানেই এরকম, অসুস্থ মানুষ।
প্রীতি কিছুক্ষণ দাড়াতেই তমাল এসে পরে, তমালের গায়ে লাল পাঞ্জাবি। পায়ে চামড়ার একজোড়া জুতো। তমাল একটি রিক্সা ডাক দেয়, ওরা দুজন রিক্সায় চড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে এক চায়ের দোকানদার বলে ওঠে, ‘এই চ্যাঙরা হইলো এই মাগীর নাগোর’ কথাটা কানে পৌছোয় তমালের, তমাল রিক্সা থেকে নেমে বৃদ্ধ চায়ের দোকানদারকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে কানে কানে বলে আসে, ‘তোর বিচি কাইটতা দোকানের সামনে ঝুলাইয়া রাইখা দিব, মাদারচোদ’ প্রীতি কিছু বুঝে উঠতে পারে না। রিক্সা চলা শুরু করে। প্রীতি তমালকে বলে, মারলি কেন লোকটাকে?
তমাল বন্ধ করা নিশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘মারবো না তো কি করবো? শুয়োরটাকে পুতে ফেলে রাখতে পারলে খুশি হতাম’
প্রীতি খিল খিল করে হাসে, তমাল বিব্রত দৃষ্টিতে প্রীতির দিকে তাকায়। প্রীতির এ অনার্থক হাসির কারণ তমাল বুঝতে না পেরে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রীতি তমালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, ‘বড় হয়ে গিয়েছিস অনেক। শোন তোকে একটা কথা বলার ছিলো। চল রমনা পার্কে হাটতে হাটতে বলা যাবে’
চৈত্রের কড়া রোদ আর অসহ্য গরমে লেকে কিছু বাচ্চা গোসল করছে। তমাল এতক্ষণ ধরে হাটতে হাটতে তাই লক্ষ্য করছিলো। ছোটবেলায় কত এমন করেছে! প্রীতি তমালকে ডাক দিতেই তমালের বুকটা হঠাৎ অজানা কারণে মোচড় দিয়ে ওঠে। প্রীতি তমালকে বলেছিলো, তমাল অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। এ কথাটি তমালকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিলো। কেমন অন্য ধরণের অনুভূতির সঞ্চার ঘটলো তমালের হৃদয়ে।
প্রীতি তমালের দিকে তাকিয়ে হাসে। তমাল এতে ভীষণ বিব্রত বোধ করে। তমালের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়! প্রীতিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-তুমি আমাকে দেখে হাসছো কেন? আমি জানি আমার চেহারা জোকারের মত।
-প্রীতি এবার স্নিগ্ধ হাসির সাথে তমালের গাল টেনে বলে, তুমি মোটেও জোকারের মতো না। তুমি যথেষ্ট হ্যান্ডসাম।
-তাহলে হাসছো কেন?
প্রীতি হঠাৎ কথার বাঁক নেয়,
-তমাল তোর কি সেদিনের কথা মনে আছে?
-কোনদিন?
-মনে করে দেখ, একদিন সন্ধ্যেবেলায় তুই ঘরে শুয়ে ছিলি।
-আমার মনে পরছে না।
-ছোটবেলার কথা।
তমালের এতক্ষণ যে সেদিনের কথা মনে পড়ছিলো না এমন না। তমাল ইচ্ছে করেই প্রীতির কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে। প্রীতি এবার দীর্ঘশ্বাস টেনে বলে, সত্যি আমরা বড় হয়ে গিয়েছি। তমাল প্রীতির দিকে তাকায়, তার স্নিগ্ধ চেহারায় হঠাৎ করে আসে বিষন্য মেঘ।
কিছুদূর হেটে একটি বট গাছের নিচে বসে প্রীতি তমালকে বলে,
-তমাল
-হুম।
-একটা কথা বলবো?
-বলো
-রাগ করবি না তো?
– না!
-আমায় বিয়ে করবি?
তমাল অবাক হয়ে প্রীতির দিকে তাকায়। প্রীতির চোখে একরাশ শূন্যতা। যেন অনেকদিন যত্ন না পাওয়া একটি ফুল গাছ। যেখানে গাছটিকে একটু পরিচর্যা করলেই গাছটি আবারও ফুলে ফুলে সমরোহ হবে।
তমাল এবার কোন কথা বলে না। বসা থেকে উঠে বসে প্রীতির হাতটেনে বলে, চলো! এখানে আর ভালো লাগছে না। প্রীতির চোখে এবার আষড়ে বৃষ্টি নামার আগের ন্যায়ে ঘন অন্ধকার জড় হয়। একটু পড়েই কয়েক ফোঁটা জল চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে। তমাল হাটতে থাকে, তার পিছু পিছু আসতে থাকে প্রীতি। প্রীতি চোখের জল লুকানোর জন্য ভীষণ চেষ্টা করে। সময় বয়ে যায়, অসহ্য গরমে কখন যে দক্ষিণ আকাশে কালো মেঘ জমেছে তা খেয়ালই করতে পারে না ওরা দুজন। এক ঝাপটা বাতাস আসে ! বাতাসে উড়ে আসে ধুলোবালি। ওরা সেই বাতাসের মধ্যে হাটতে থাকে, প্রীতির ভীষণ ইচ্ছে হয় এখনই তার সাথে এমন কিছু হোক যেটা তাকে গ্রাস করে নিক চিরকালের মতো। ফুটপাত ধরে হেটে যায় ওরা দুজন, ওদের পাশ থেকে ছুটতে থাকে বাস-গাড়ি। ঝড় আসার আগে মানুষ ভীষণ উদ্বস্ত হয়, দমকা হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার ভয়ে।
[গল্পটির প্রথম কিস্তি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো তা জানাতে পারেন। গল্পটির দ্বিতীয় কিস্তি আপনারা কবে চান, তা সম্পর্কে জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে। এ ছাড়াও এরকম আরও রোমান্টিক গল্প নিয়মিত পড়তে ডানপাশের বেল বাটনে ট্যাপ করে সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। যুক্ত হতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে।]
[লেখককে সমর্থন জানাতে, লেখকের পেইজে গিয়ে মেসেজ করতে পারেন।]