উপহাসের দীর্ঘশ্বাস

উপহাসের দীর্ঘশ্বাস

 আশিক মাহমুদ রিয়াদ

 

হাসপাতালের বারান্দা। সামনে লম্বা ভীড়।

রোদের তেজ বেশি। বর্ষাকাল, তবুও আকাশে মেঘের ছিটেফোটা নেই। 

 কেউ কাঁশছে, কেউ কাঠফাটা রোদ্দুরে বসে পড়ছে। চেয়ারে বসে আছেন এক চৌকিদার, তিনিও দারুণ বিরক্ত। মাথার ঘাম গাল ভেয়ে তার একটি ফোটা পড়েছে তার পায়ে। খুব ছোটবেলায় তিনি শুনেছিলেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে খেতে হয়। তিনিও তাই করছেন। একটু পর পর পানি খাচ্ছেন,এতে ঘাম আরো বাড়ছে। মুত্রচাপের বেগে বাথরুম থেকে ঘুরে আসছেন একটু পর পর। যাওয়ার আগে লম্বা লাইনের

 আমজনতাকে একটু হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। 

 

কাঠফাটা রোদ্দুরে হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছেন এক মা। তিনি তার সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন শরীরের কিছু পরিক্ষা করানোর জন্য। তার সন্তানকে তিনি তার ওড়না দিয়ে তার শরীরের সাথে আগলে রেখেছেন। ছেলেটির বয়স পনেরো বছর। ছেলেটির বাবা নেই। মা দর্জির কাজ করে সংসার চালান। 

ছেলেটির প্রচন্ড শীত লাগছে, আর মায়ের শরীর বেয়ে পড়ছে ঘাম। ছেলেটার গা’টা তাপে পুড়ে যাচ্ছে।

ছেলেটি মুখ ফুটে খুব কষ্ট করে বলল,’মা পানি খাব?’ 

মা বোতলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন পানি নেই। তিনি আশেপাশে তাকালেন। কোথায় পানির টিউবওয়েল নেই। 

 

২.

আমজনতার ঠ্যালাঠ্যালি বেড়েছে। কেউ কেউ এই ঠেলা ঠেলিতে নেতিয়ে গিয়েছে।

মা উঠে গিয়ে চৌকিদারকে বললেন,’ভাইজান,এইখানের পানির কলটা কোথায়?’ 

চৌকিদারের একটু তন্দ্রায় চোখ বুজে আসছিলো। 

মায়ের কথায় তিনি হকচকিয়ে উঠলেন। 

চৌকিদার মাথা বেজায় গরম। তিনি শলা দিয়ে দাত খুঁচতে খুঁচতে বললেন,এইখানে দিয়া যাইয়া দুই তালার কোনার রুমের আগের রুমের দরজার পাশে দেখবেন একটা ফিল্টার আছে। তয় আফনে যাইতে পারেন কি না সন্দেহ। যে ভীড়!

 

মা বললেন,’আফনে একটু আইন্যা দেন না। ‘

চৌকিরার ফিসফিসিয়ে বলল,’বিশটা টাহা বাইর করেন। ‘ 

মা বললেন,’আমার হাতে তো বেশি টাকা নাই। আছে কয়ডা টাকা। এই টাকা দিয়া আমার বাড়িত ফেরোন লাগবো। ‘ 

চৌকিদার এবার উদাসীন ভঙিতে বলল,’তাইলে আপনে  গিয়া নিয়া আসেন। আমার এইখানে থাহা লাগবো।উপর দিয়া চাপ আছে। ‘

ছেলেটি শীতে কুকড়ে আছে। সে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো মেঝেতে। তার শরীর কাঁপছে,গলা শুকিয়ে এসেছে। তার রবিন্দ্রনাথের কবিতার চারটি লাইন মনে পড়ছে-

খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান।

পদে পদে ছোটো ছোটো নিষেধের ডোরে

বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালো ছেলে করে।

প্রাণ দিয়ে, দুঃখ স’য়ে, আপনার হাতে

সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সাথে।

 

মা এদিক-ওদিক পায়চারী করছেন। তিনি ফিল্টার খুঁজে পাচ্ছেন না।

 

বাংলাবাজার,বরিশাল

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
ভাষাশহিদ

ভাষাশহিদ

ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার পিপিএম বাংলা ভাষায় কথা বলার পেয়েছি স্বাধীনতা, লাল-সবুজ পতাকা পেয়ে ভেঙেছি পরাধীনতা। যুদ্ধ করে পেয়েছি আমরা নতুন এক দেশ, বিশ্বের বুকে ...
শরৎ জোসনার রাত - বিপিন বিশ্বাস

শরৎ জোসনার রাত – বিপিন বিশ্বাস

বিপিন বিশ্বাস   প্রাণময় সতেজ জীবন বাতাসে নাচে, কাশফুলে দুলে, শ্বাস-প্রশ্বাসে খেলে অনন্ত ব্রহ্মের  সাথে পরম সৌন্দর্যে।   শরৎ জোসনার রাতে মা দুর্গার পা স্পর্শ ...
মোহময় থাক রোদ্দুর

মোহময় থাক রোদ্দুর

 মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস আমি যদি চলে যাই ফুল দিও শুধু রাশি রাশি, কান্না নয়, কুন্দ আর কুমুদ, কাঞ্চন, রজনীগন্ধা গোছা আলগোছে রেখে দিয়ো ঘরে৷ ছবিরও ...
কবিতা-মনে পড়ে

কবিতা-মনে পড়ে

গোবিন্দ মোদক  মনে পড়ে    ছোট্টবেলার সেই যে আমার গ্রাম, মনে পড়ে    সেই গ্রামটির ‘ফকিরতলা’ নাম! মনে পড়ে    গ্রামটি ছিল ‘কুসুম’ নদীর তীরে, ...
জেগে ওঠা

জেগে ওঠা

নন্দিতা দাস  চৌধুরী জীবন তো আর কিছু নয় জীবন্ত  উৎসব, চেতনার  বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বৃক্ষ ডালপালা ছড়ানো আঁকা বাঁকা পথ, পথটাতো শুধু পথ নয় লক্ষ্যে ...
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসছে যৌথ বই "ইতিকথা"

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসছে যৌথ বই “ইতিকথা”

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসছে যৌথ বই “ইতিকথা”। লেখক ভারত ও বাংলাদেশের লেখকদের যৌথভাবে রচিত। ইতিকথা মূলত গল্পগ্রন্থ ধর্মী। এখানে রয়েছে বিভিন্ন লেখক এর বিভিন্ন গল্প। ...