জয়ন্ত মল্লিক
অরণ্যের রোদন
আমার সমস্ত কথারা মরে গেলে-
বাক্ জমিনে একটা গাছ পুঁতে দিও।
কন্ঠ ফুঁড়ে শাখা-প্রশাখা মেলে দেবে আকাশের আহবানে,,
তোমাদের শাণিত করাতের পোঁচে-
বিক্ষত হবে তার দেহকান্ড,
করাতের দাঁত গড়িয়ে সাদা রক্তের স্খলন;
দা’য়ের অনবরত কোপে খন্ডিত হবে তার সমুদয় “অরণ্য রোদন।”
বাঁচার আকুলতায় সে যখন প্রতিবাদী হবে-
সেই প্রতিবাদের ভাষায়-
আমার মৃত কথারা পূর্ণজন্ম পাবে।
নীল পাখি
রোজই স্বপ্নে একটা নীল পাখি-
ডেকে যায় মোহনীয় ঠোটের আবেদনময়ী সুরে;
পিপাসিত মনো দেওয়ালের কার্নিশ ধরে।
তাকে অনুসরন করি,
ধরতে যাই।পারিনা।
সে উড়ে যায় সহজাত স্বভাবে
আমি ছুটি…
আবার উড়ে যায়,
আবার ছুটি উর্দ্ধশ্বাসে…
ক্লান্তিকর সে ছুট চলে সমগ্র স্বপ্ন জুড়ে।
ভোর আসে নতুন ব্যস্ততায়-
অবসাদ মেখে ঘরে ফেরে দেহ।
নীল পাখি ফিরে যায় বিজয়ের উল্লাসে।
আর
চেনা দেওয়ালের হ্যাঙ্গারে ঝুলে থাকে একটা পরাজিত জামা…
পাঁজর
এ বুকের পাঁজর–
তোমরা ভেবেছ কংক্রিটের চেয়েও পোক্ত।
বুকের পাঁজর বেয়ে তাই প্রতিদিন
তোমরা তরতরিয়ে উঠে যাও উপরে
আকাশের ঠিক কাছে।
তোমাদের পদস্পর্শে ধন্য হই আমরা।
চুর্ণ করে পাঁজর ক্ষতবিক্ষত করে আমাদের;
তোমরা বিলাসে মেতে থাকো।
আমরা মাটিতে দাড়িয়ে থাকি তখনো।
বুকের পাঁজর বেয়ে রক্ত ঝরে
ভিজে যায় পায়ের তলার মাটি।
শুষ্ক বসুন্ধরা শুষে নেয় রক্ত,মিলিয়ে যায় দাগ।
তবু তোমাদের ফ্লোরে লেগে থাকে দাগ।
তোমরা সবই জানো।
জেনে বুঝেই রঙীন কার্পেটে ঢেকে দিয়ে দাগ
তোমরা মেতো ওঠো এমন নিষিদ্ধ উল্লাসে!
তবে কতদিন আর ঢেকে রাখবে।
একদিন পৃথিবীর কাছে উন্মুক্ত হবে
তোমাদের উত্তাল পদধ্বনি আর ভাঙা পাঁজরের আর্তনাদ।
সেদিন ঝড় উঠবে,রঙীন কার্পেট ছিড়ে যাবে তান্ডবে।
যবনিকা আনবে তোমাদের ঔদ্ধত্য পদধ্বনির।।