এম.সাইদুল ইসলাম তালুকদার
দুর্বাসিত একটা রুদ্ধ শহর ছেড়ে গ্রামে এসেছি
যে শহরে সতেজ অনুভূতিগুলোর মৃত্যু হয়েছে অনিবার,
সমীরচ্যুত বিষাদের চারদেয়াল ছেড়ে ঘরে ফিরেছি
যে দেয়ালে বন্দি পাখির মতো ছটফট করেছি বহুবার।
আমি এখন এক মুক্ত পাখি, প্রসুপ্ত আমার হৃদয়
এখন আমি গাঁয়ের মাতাল, ছুটছি আপন ছুতোয়।
এখানে কেউ রুখিবার নাই তাই কেউ রুখে না
এখানে অনেকে থমকে দাঁড়ায়, চোখে বিমুগ্ধের সূচনা।
এখানে আছে মাঠের পর মাঠ, দিগন্তের পর দিগন্ত
দিকবিদিক সবুজ থেকে সবুজে মিশে একাকার,
এখানে আছে আদিকবি’র ধ্যানে বেদিশার পথ চলন্ত
মৃদু হাওয়ার ছোঁয়ায় ধান খেতের বিস্তৃত সমাহার।
এখানে আছে শরতের কাশফুল, কদম ফুটা বর্ষা
আরো আছে খেজুররসে মিষ্টি শীতের সকাল,
এখানে আছে কোকিলকণ্ঠে বসন্ত, নবান্ন উৎসব হেমন্ত
আরো আছে আম কিংবা গ্রীষ্মের পাকা কাঁঠাল।
এখানে আছে গাঁয়ের সাজে রাতের সুন্দর একটি চাঁদ
জোছনা সাজে পল্লীবালিকার অবাক রূপের ঝলক,
এখানে আছে জোনাকির পিছুপিছু দুরন্ত ছেলেবেলা
আরো আছে গুপ্তচরে মুগ্ধ হওয়া না পড়িবার পলক।
এখানে আছে পল্লীকবি’র প্রিয় নকশিকাঁথার মাঠ
আরো আছে পড়ন্ত বিকেলের অপ্রতীম কিছু দৃশ্য,
এখানে আছে গোধূলির সন্ধ্যায় নিস্তব্ধ-নীরবতা
আরো আছে বিদীর্ণ ঐতিহ্যের হয়ে পড়া নিঃস্ব।
ওরা শহুরে বড্ড অভাগা, ক্লান্তির ঘন ঢাকা অন্ধকারে
বিছানায় কেটে যায় ওদের কুসুম রোদের সকাল,
ওরা গ্রামের বিশুদ্ধ প্রকৃতির সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত
বিষাক্ত সমীরে আসক্ত হয়ে ওদের মরণদশা অকাল।
সেখানে নেই নীরব সন্ধ্যা কিংবা সকাল বেলার পাখি
আছে শুধু নিয়ম করা কাক ডাকা ভোর,
সেখানে নেই পুরো একটি নিস্তব্ধ রাতের প্রসুপ্ত বিশ্রাম
আছে শুধু ব্যস্ত শহরে ক্লান্তির খোলা দোর।
সেখানে নেই বিস্তৃত সরিষা খেত আর ফুটন্ত হলুদ ফুল
আছে শুধু পরিম্লান ঘাসে ধূলি পড়া ক্ষয়,
সেখানে নেই অতিথি পাখির অপলক মুক্তির আকাশ
আছে শুধু নিজেকে হারিয়ে ফেলার ভয়।
সেখানে কোথাও নেই একজন পল্লীকবি জসিমউদ্দীন
কোথাও নেই নকশীকাঁথার মাঠ কিংবা ঘন ঢাকা সবুজ
আছে শুধু ইটের পর ইট, পাথরের পর পাথর,
সেখানে ওরা মুগ্ধ হয়ে চাঁদের আলো দেখে না
সেখানে ওরা অবাক জোছনা গায়ে মাখে না
দেখে শুধু বিষাদময় একটুকরো সাঁঝবাতির শহর।