সাবিকুর সিফাত
‘একটি দালানের বুড়ো হবার গল্প’ বুকভর্তি হরেক রকমের ঘাস আর
লতাপাতা নিয়ে একটি মাঠ
শুয়ে আছে কয়েকশ বছর ধরে,
ঘাসের পরে ঘাস তার উপর মস্ত আকাশ
তারপর একখানি দালান যুগের পর যুগ ধরে
চেয়ে আছে মাঠ খানির দিকে,
চিৎকার দিয়ে কতকথা
বলে যাচ্ছে রোজ রোজ,
সুখের কথা,দু:খের কথা
কথা হচ্ছে জন্ম ও মৃত্যুর,
এইতো সেদিন ভূমিষ্ঠ হবার আগেই
অন্ধকারে মারা গেল শিশুটি
দেখতে পায়নি পৃথিবী,মায়ের কোলে
পারেনি মাথা রাখতে,
হাসপাতালের কোরিডোর থেকে একটু
কোমল বাতাস এসে ছুঁয়ে দিতে পারেনি তাকে,
চোখ মেলে দেখতে পারেনি ১৮,৩০ কিংবা ৩৫ বছরের
সংগ্রাম করা তার মাকে,কয়েকশ বছরের পুরনো মাঠটিকে
কিংবা কয়েকযুগ পেরোনো দালানটিকে,
তারপর বুক চেপে স্ট্রেচারে করে আসা
৪৫ বছরের লোকটি সিসিইউতে ঢুকতে ঢুকতেই
দরজার ওপাশে রেখে আসে জীবন,
আর ক’টা দিন বেঁচে থাকবার আশা নিয়ে যে বৃদ্ধের
শেষ নি:শ্বাসটুকু মিলিয়ে যায় করিডোরের ফুরফুরে বাতাসে,
ফুরুৎ করে পালিয়ে যায় চেয়ে থাকা দূর আকাশে,
আবার আর্তনাদে গোঙাতে থাকা ১৬ বছরের মেয়েটির
কষ্ট হারিয়ে যায় ফুটফুটে গোলাপের মত
জন্ম নেয়া ছেলেটিকে দেখা মাত্রই,
বাইরে থেকে ছুটতে ছুটতে আসা ৬ বছরের ছেলেটি
যখন তার সুস্থ মাকে বাড়ি নিয়ে যাবে বলে
মায়ের শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদে,
কিংবা নতুন বউ যখন তার জামাইয়ের পাশে বসে
গ্রীষ্ণের কোন তপ্ত দুপুরে ঘন্টার পর ঘন্টা হাতপাখা চালায়,
মনের খুশিতে ৮০ বছরের লিকলিকে বুড়ো
তার একমাত্র শেষ সম্বল ক্ষেতের কুমড়াগুলো নিয়ে যখন হাজির হয়
ডাক্তার সাহেবের কাছে,
পুরনো দালানটির মনের কোণে জমতে থাকা হাজারো কথা
শুনায় বুড়ো মাঠটিকে,জল গড়ায় চোখের কোণে
তারপর বৃদ্ধ থেকে আরও বৃদ্ধ হতে থাকে,
আকাশ-হাসপাতাল-মাঠটি।