গোবিন্দ মোদক
মনে পড়ে ছোট্টবেলার সেই যে আমার গ্রাম,
মনে পড়ে সেই গ্রামটির ‘ফকিরতলা’ নাম!
মনে পড়ে গ্রামটি ছিল ‘কুসুম’ নদীর তীরে,
মনে পড়ে সে গ্রাম সবুজ গাছ-গাছালির ভিড়ে!
মনে পড়ে ঘুম ভাঙতো ভোরের আজান শুনে,
মনে পড়ে ডাকতো পাখী স্বপ্নের জাল বুনে!
মনে পড়ে রাম রহিমের পাঠশালাতে যাওয়া,
মনে পড়ে বন্ধুর কাছে আচার চেয়ে খাওয়া!
মনে পড়ে নদীর জলে সকাল-বিকেল নাওয়া,
মনে পড়ে ঝড়ের সময় আম কুড়োতে যাওয়া!
মনে পড়ে বর্ষার মাঠে ভিজে ফুটবল খেলা,
মনে পড়ে আষাঢ় মাসে পীর-দরগার মেলা!
মনে পড়ে চু-কিত্-কিত্, হা-ডু-ডু, গুলি খেলা,
মনে পড়ে নদীর জলে ভাসাই কলার ভেলা!
মনে পড়ে ফলসা বনে দৌড় আর হুটোপুটি,
মনে পড়ে গুটি খেলা সকল বন্ধু জুটি!
মনে পড়ে সন্ধ্যা হলেই ফিরতে হতো বাড়ি,
মনে পড়ে লম্ফ জ্বেলে পড়া তাড়াতাড়ি!
মনে পড়ে পড়া শেষে ঠাকুমা-দাদীর গল্প,
মনে পড়ে আজও সেসব রূপকথা রূপ-কল্প!
মনে পড়ে গ্রামের পরব ঈদ বা মহরম,
মনে পড়ে পুজো হত নানান রকম !
মনে পড়ে মন্দিরেতে বাজতো কাঁসর-ঘন্টা,
মনে পড়ে ফকির-দাদুর উদাস করা গানটা!
মনে পড়ে সেই গ্রামের শালুক ফোটা বিল,
মনে পড়ে গ্রামবাসীদের মনের কত মিল!
মনে পড়ে সুখে-দুখে থাকতাম সেই গাঁয়ে,
মনে পড়ে রাম আর রহিম মিশতো ভায়ে ভায়ে!
মনে পড়ে ভীষণ ভাবে সেই গাঁয়েরই স্মৃতি,
মনে পড়ে শ্রদ্ধা-ভক্তি, ভালবাসার প্রীতি!
স্বপ্ন জুড়ে আজও ভাসে আমার সে গ্রাম,
কানে কানে বাতাস বলে ‘ফকিরতলা’ নাম!!
নদীয়া,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত।