দেখুন মশাই অনেকদিন থেকেই ঘরবন্দি আমরা
এখন লকডাউন তেমন ভাবে নেই
আজ আমি আপনাদের সামনে আসতে পেরে খুব সতেজ ভাবছি নিজেকে
আমাকে আপনারা কবিতা পাঠের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, কিছু তো পাঠ করতেই হবে ।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে যখন গাড়িটা স্টার্ট দিলাম একটা মেয়ে মাঝ বয়সী এসে আমার সামনে দাঁড়াল ।
আমি চিনতে পারিনি , কিন্তু মেয়েটির তাকানোর ভঙ্গিতে মনে হচ্ছিল সে কিছু বলতে চায়
আমার তো এত সময় নেই তাই পাত্তা না দিয়েই চলে এলাম , এবার মনে পড়েছে গতবছর মেয়েটি আমাকে নিয়ে এবং আমার কোনো কবিতার উপর একটা রিভিউ লিখেছিল । লিখেছিল
আমার বিরুদ্ধেই , আমরা নাকি সুন্দরীদের কবিতার বই প্রকাশে অনেকটা সাহায্য করি
সে যাই হোক লিখেছেতো কি হয়েছে …
আপনারা তো ডাকছেন আমাকে , আর আমরা না থাকলে কি আর বুদ্ধিজীবীর মহল এতো স্ট্রং হতো ?
আমরা আছি বলেইতো এখনো রবীন্দ্রনাথ জীবিত , বিদ্যাসাগর অক্ষত ।
ভাষার জন্য ভোট বয়কট , মজদুরদের সুখের নিদ্রা সবটাই আপনাদের ভালোবাসা মশাই , যেমন ভালোবেসে আপনারাই নেতা মন্ত্রী নির্বাচন করেন তেমনি আমরাও আপনাদের দ্বারাই তৈরী ।
তবে মাঝেমধ্যে একটু মুখোমুখি আড্ডায় বসতে হয়
শিল্পীদের হরতালে কলম ধরতে হয়
কফি হাউস অথবা নন্দন চত্বরে ঘুরে ঘুরে দেখতে হয় নুতন মুখ ক’টা এলো !
যা বলছিলাম মশাই , আজকের কবিতা পাঠের মঞ্চে আপনারা আমাকে দুটো কবিতা পাঠ করতে বলেছেন । একটা কবিতা সদ্য প্রকাশিত আমার কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা …
যে ছেলেটা সিঙ্গারা ফেরি দিত রোজ সন্ধ্যায় আমার বাড়ির পাশ দিয়ে শুনেছি এবার কোভিড তাকে নিয়ে গেছে
তার পকেটে একটা খোলা চিঠি ছিল , লিখেছিলো
“আমি নন্দন থেকে বেহালা , বেহালা থেকে হাওড়া , হাওড়া থেকে কলেজ স্ট্রিট , রাজডাঙা , গড়িয়াহাট অনেক ঘুরেছি ক্ষিধেটাকে পিঠে নিয়ে , অনেক জনসমাবেশে গেছি গরম সিঙ্গাড়া নিয়ে , কতো সাহিত্য আসরে বিক্রি করেছি আমার খাঁটি তেলে ভাজা সিঙ্গারা
কিন্তু কোথাও শুনিনি কোনোদিন খাঁটি কথা
কেউ বলেনি কোনো দিন আমাদের মুখের অন্ন যোগাতে তাদের কবিতার কথামালা ” ।
দেখুন মশাই আসলে এই কবিতাটি আমি লিখতে পারতাম কিন্তু তাতে আরো যারা বুদ্ধিজীবী আছেন তারা হয়তো খেপে ওঠতেন ,
আমার হাতে আজ আর সময় নেই , কোনো এক রমনীকে সময় দিয়েছি রাত দশটা, তার একটা বই বেরুবে , যেতে হবে আমাকে ঐ আড্ডায়