প্রবন্ধ- রূপান্তরের একাল

প্রবন্ধ- রূপান্তরের একাল

কাজী আশিক ইমরান

রক্তের জটিল সম্পর্ক গুলো কখনো অনায়াসে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। খুব জোরালো বন্ধন বিচ্ছিন্ন হওয়ার গল্পগুলো আসলেই অভাবনীয়, অকল্পনীয়।আমরা স্বার্থ রক্ষায়, নিজের ষোল‌আনা ভেবে যেকোনো কাজ খুব সহজে করতে পারি।তা ইতিমধ্যে বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ করে দিয়েছি। আমরা নিজে বাঁচার জন্যে মাকে ফেলে দিতে পারি। এমনকিভাই , বন্ধু, প্রিয়জন, প্রভু সবাইকে।

আমরা নিমিষেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি সবাই, সবার সাথেই। আমরা নিজেকে খুব ভীতু দাবি করলেও মাঝে মাঝে হাজার মানুষের গলা একাই কাটার ক্ষমতা রাখি।সে সাহস আমাদের আছে।সারাদিন মুখ দিয়ে আদর্শ ও ন্যায়ের ভাষন ছাড়লেও রাতের আঁধারে হাসতে হাসতে দু-চার জন মানুষকে গলা টিপে পরপারে পাঠাতে পারি। আমরা চোরাকারবারির চিন্তা মাথায় নিয়ে উদারতার চোখ জলে ভাসাই। আমাদের হাঁসি- কান্না গুলো কৃত্তিম। আমাদের বাহ্যিক চেহারার সাথে অভ্যন্তরীণ চেহারা কখনোই মিলে না।

আমাদের মনে দূর্বলতা অনেক। আমরা একে অপরকে চোর ভেবে থাকি।কারন আমরা প্রত্যেকেই চোর। অন্যেরা যেমন আমাদের উপর ভরসা করতে পারে না আমরাও কখনো অন্যের উপর ভরসা করতে পারিনা। আমরা একে অন্যজনকে,একদল অন্যদলকে, একজাত অন্যজাতকে চরম সন্দেহ করি।আমরা কখনো অন্যের মাঝে নিজের সুখ দেখি না, অন্যের মাঝে নিজেকে অপ্রাপ্তি গুলো দেখতে পাই। অন্যের অর্জন দেখে নিজে চ্যালেঞ্জ নেয়া আমাদের কাজ না বরং সে অর্জনকে লুট করার পরিকল্পনা করা আমাদের প্রথম কাজ।

আমরা ধর্ষণ প্রতিরোধে সবাই কঠোর। আমরা ধর্ষণের নিউজ শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। ব্যথায় এক একজন ফেটে যাই, ফেসবুকে কষ্ট মিশ্রিত ,আবেগ ঘন স্ট্যাটাস দিই। তারপর ধর্ষকদের তালিকায় আবার আমাদের নামই ই চলে আসে। আমাদের এই মৃদু কোমল মন হঠাৎ হিংস্র হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে কখনো দুঃখ প্রকাশ করি না বরং গর্ববোধ করি। এটা নাকি আমাদের দুঃসাহস, পরিস্থিতি বুঝে রূপ বদলানোর ক্ষমতা। আমরা হাততালি দেই,উৎসাহ দে‌ই।তাতেই ধর্ষণ প্রতিরোধ করি।

আমরা প্রচন্ড ভালোবাসতে জানি। আমাদের প্রত্যেকের ভালোবাসা অন্য সবার ভালোবাসার উর্দ্ধে। এক্ষেত্রে অনেকে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে মুখ দিয়ে বলে যে,” আমি ভালোবাসতে জানি না,পারি না।” কিন্তু এ বাক্যটা ক্ষনস্থায়ী। মূলত সেও শ্রেষ্ঠ ভালোবাসাধারীর দাবিদার। আমরা ভালোবেসে মানুষ কে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাই। ভালোবেসে মানুষ কে ফুটপাতে বাসস্থান করে দেই। ভালোবেসে অন্যের আহার সিন্দুকে ,গোলায় ভরে রাখি। আবার মহা সেমিনারে ক্ষুধার্তের ব্যাথায় ব্যাথিত হ‌ই। দুফোঁটা অশ্রু ফেলি।

আমরা ভালোবেসে অসুস্থ করোনাক্রান্ত মাকে রাস্তায় ফেলে আসি। আবার কেউ ভালোবেসে সেই মাকে হসপিটালের আইসিইউতে রেখে আসলে আমরা সন্তান হয়ে জানতে চাইনা মা কেমন আছে।বরং গালমন্দ করি। আবার আমরা মা বাবা হয়েও করোনাক্রান্ত ছেলেকে ভালোবেসে মধ্যরাতে বাঁশঝাড়ে ফেলে আসি। আমাদের ভালোবাসার অগনিত প্রতিচ্ছবি । বলে শেষ করার মতো না।

অভিনেতা/অভিনেত্রী হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই দারুন। আমরা সবাই অভিনয় করতে জানি। আমাদের অভিনয় খুব নিখুঁত। প্রতিনিয়ত আমাদের অভিনয় সত্যকে মিথ্যা করছে আর মিথ্যাকে সত্য করছে। আমাদের নিখুঁত অভিনয় দেখে কারো বুঝার জো নেই যে আমরা অভিনয় করছি। আমাদের অভিনয়ে কখনো সত্য উদঘাটন হয়না, মিথ্যা শক্তিশালী হয়।

আমরা সাধ্যমত‌ই আমাদের কাজ করে থাকি। আমরা সাধ্যের বাইরে কিছু করতে যাই না। আমাদের সাধ্যে আছে ভালোবাসায় কাউকে ডুবিয়ে রাখা আর সেখানে ডুবে কেউ মারা গেলে তার আমাদের কি আসে যায়। আমাদের গুরুজন ভেজালযন্ত্র আর আমরা তাতে সৃষ্ট ভেজাল পণ্য। অন্যের সুখ ছিনিয়ে আনার সাধ্য আমাদের আছে তাই কারো সর্বস্ব লুট করে আপন ঝোলায় পুরি। আমাদের চিন্তায় থাকা সৌরজগতের গ্রহ নক্ষত্র গুলি কারো কাছে বিক্রি করে দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও আমরা পারিনা।কারন তা আমাদের সাধ্যে নেই ভাবনায় আছে।তাই আমরা বিক্রি করতে যাই না।

অতিরিক্ত অর্থ লোভ আমাদের জঘন্য করে দিয়েছে। আমরা ভুলে গেছি নিয়ম নীতি, শৃংখলা, সংস্কৃতি। আমরা বিস্তৃতি লাভ করতে গিয়ে শিকড় হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের এখন আর ভালো মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা নেই । অপসংস্কৃতিকে বাহবা দিতে দিতে আমাদের আপন সংস্কৃতি মুমুর্ষ অবস্থায় পরে আছে। আমাদের বিবেক বিক্রি হচ্ছে দু- চার পয়সায়। লজ্জা বিক্রি হচ্ছে কথায় কথায়। অপরাধী হলেই এ সমাজে বাঁচার যোগ্যতা অর্জন করি অন্যথায় ধ্বংস অনিবার্য। হয়তো সমাজের এই প্রক্রিয়া ঘুচবে না।তবে কি হবে এর পরিণাম?জানা নেই…।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
নির্বাচিত ঈদের কবিতা ২০২৪

নির্বাচিত ঈদের কবিতা ২০২৪

ঈদ মোবারক আশিক মাহমুদ রিয়াদ বাতাসে বইছে দেখো আজ পবিত্রতার স্নিগ্ধতা আকাশে ফকফকে সূর্য, পাতা ঝিলমিল করা পত্রপল্লবি আজ এসেছে খুশির দিন, চারদিকে আনন্দের হিড়িক ...
আবেদন

আবেদন

 জাহেদ আহমদ     (এক). আমি শত সহস্র রাতের উপোস হতে রাজি আছি কবি__শুধুমাত্র একটি কবিতার জন্য মোলায়েম শব্দের শীতল স্পর্শে হৃদ দ্বিখণ্ডিত হয় হউক ...
কাঠকয়লার ঝড়

কাঠকয়লার ঝড়

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় একটা রোগা দড়ির ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঠিক বিকেলবেলায় একটা ভাঙাচোরা সেতুকে দেখলাম ছোটবেলার চার লাইনের কবিতা মনে রাখার মতো স্মরণপথে এলো একটা ...
তিনটি কবিতা

তিনটি কবিতা

ক্ষয়িষ্ণু জীবন পেছনে সরে গেছি অনেক দূরে দাঁড়িয়ে পামগাছটা একটা নিষ্প্রাণ মুখ তাকিয়ে থাকি প্রবল আর্কষণে- এভাবে ক্ষয়ে যাই পড়ন্ত বিকেল ঝরা বকুল,নক্ষত্র অথবা অশ্রæর ...
শিমুল তলে দেখা

শিমুল তলে দেখা

বিভীষণ মিত্র হোক না কোন শিমুল তলে তোমার আমার দেখা, বসন্ত ক্ষনে দুজনের পথ হলেও যদি বক্ররেখা। ছোঁয়ে দেওয়ার নেশায় তোমার হাতের পরশ নেবো, তোমার ...
বনলতা সেন: জীবনানন্দর চোখে

বনলতা সেন: জীবনানন্দর চোখে

ডঃ গৌতম সরকার পুরুষ মাত্রই কামনা করে একজন ‘বনলতা সেন’ , যার কাছে তার ক্লান্ত প্রাণ ‘দু দণ্ড শান্তি’ ভিক্ষা করতে পারে। সব পুরুষেরই কল্পচোখে ...