ওয়েব সিরিজ : কারাগার
মোট পর্ব: ৭টি (প্রতিটি পর্ব ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ মিনিট)
পরিচালক: সৈয়দ আহমেদ শাওকি
অভিনয়শিল্পী: চঞ্চল চৌধুরী, ইন্তেখাব দিনার, আফজাল হোসেন, তাসনিয়া ফারিণ, এফএস নাইম, এ কে আজাদ সেতু, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, বিজরি বরকতউল্লাহ,পার্থ শেখ, আবদুল্লাহ আল সেন্টু সহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশের ওয়েবসিরিজ ইন্ড্রাস্ট্রিতে সর্বপ্রথমই যিনি ধাক্কা মেরে ছিলেন তিনি পরিচালক সৈয়দ আহমেদ শাওকি। শাওকির পরিচালনায় দুর্দান্ত রহস্য আর থ্রিল মিশ্রিত গল্পে চঞ্চল চৌধুরীর অনবদ্য অভিনয়ে তাকদির মুক্তি পায় গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে। সেই থেকেই শুরু ওয়েবসিরিজের রাজ্যে বাংলাদেশীদের গণজোয়ার । সেই গণজোয়ার শামিল হয়েছেন অনেকেই। এ ঘটনাকে আমরা দুর্ভাগ্যজনক অথবা সৌভাগ্যজনক ও বলতে পারি । সত্যিকথা বলতে গেলে থ্রিলার জ্বরে নাজুক নাজুক থ্রিলার কন্টেন্ট মেক করে একসময় থ্রিলারের স্বাদটাই কেমন যেনো তেতো হয়ে উঠেছিলো দর্শকের কাছে। তবে ভালোর সুসংবাদ সবসময় প্রচার করতে হয়।
[স্পয়লার থাকতে পারে]
ঠিক বছরখানেক পেরিয়ে এবার মুক্তি পেলো সৈয়দ আহমেদ শাওকির নতুন ওয়েবসিরিজ কারাগার। ওয়েবসিরিজটিতে অভিনয় করেছেন এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী । কারাগারের সব থেকে এক্সাইটিং পার্ট কোনটা সেটা দর্শক বুঝতে পারবেন একেবারে সিরিজের শেষে গিয়ে । জেলখানার অপকর্ম হুট করে এক পরিত্যাক্ত সেলে হাজির হওয়া এক কয়েদী, জেলারের কপালে চিন্তার ভাজ। কেমন হয় জেলখানার জীবন? এক জায়গায় প্রত্যেকদিন সেখান থেকে একই আকাশ । পাখিদের কুঞ্জন কর হিংস্র মানুষদের এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব।
মানুষ জীবনে কত কিছু করে ! তাই বলে মির্জাফরের খুনি হয়ে এতগুলো বছর ধরে হারিয়ে গিয়ে আবার সেই পরিত্যাক্ত সেলে ফিরে আসে? ঘটনা নিঃসন্দেহে গাঁজাখুরি মনে হতে পারে তবে এটাই ঘটনা। সিরিজটির প্রথম পার্ট মুক্তির পর থেকে দ্বিতীয় পার্টের জন্য অপেক্ষা করছেন দর্শকেরা ।
কারাগার ওয়েবসিরিজ সম্পর্কে একজন দর্শক বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত একটি মুভি রিভিউ গ্রুপে লিখেছেন-
কারাগার সিরিজের ট্রেলারে কিছু জিনিস বলা ছিলো যে আকাশনগর কারাগারে কয়েদি সংখ্যা ৩২৫। কিন্তু একরাতে দেখা যায় কয়েদি সংখ্যা ৩২৬! একজন যেখানে বেশি পাওয়া গেলো সেই সেলটি বন্ধ প্রায় পাঁচ দশক ধরে। সিরিজে আমরা দেখতে পাবো সেলটির কোনো চাবি নেই এবং কোনো এক কারণে সেলটিকে সিলগালা করে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে একটি প্রশ্ন যে সিলগালা করা অবস্থায় সেলে লোকটা আসলো কিভাবে? তার প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ২য় সিজনে। তাছাড়া ট্রেলারে আরও দেখা গিয়েছিলো ১৪৫ নং সেলে যাকে পাওয়া গেছে সেই লোকটি জেলখানায় বন্দী ২৫০ বছর ধরে। আবার তিনি কথাও বলতে পারেন না। কথা বলেন সংকেতিক ভাষায়। আবার মাহাকে তিনি বলছেন মীর জাফরের খুন তিনি করেছেন খাবারে বিষ মিশিয়ে। মাহা তাকে জিজ্ঞেসও করেছিলেন যে মীর জাফর কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন তাহলে তিনি তাকে খুন করেছেন কিভাবে! এখানে চঞ্চল চৌধুরী একটা অদ্ভুত রকমের উত্তর দেন তাকে।
এসব যখন বিদ্যমান তখন লোকটি ফারিণকে এমন কিছু বলেন যা ফারিণের অতীতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। কাকতালীয় ভাবে ফারিণ সেই প্রশ্নের উত্তরটাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ফারিণ লোকটার সাথে একাকী একটু কথা বলতে চাইলে তাকে সময় দেয়া হয় মাত্র ১০ মিনিট। এদিকে ফারিণ সাংকেতিক ভাষায় কথা বলতে শুরু করলে লোকটি তাকে বলে মুখে কথা বলতে। ফারিণ একটু অবাকও হয় কিন্তু যেহেতু কম সময়ে কথা শেষ করতে হবে তাই সে অন্যদিকে না গিয়ে সোজা পয়েন্টে কথা বলে। এবার আসতে থাকে এক এক করে চমক। শেষে শতাব্দী ওয়াদুদের সাথে ফারিণের দেখা হলে একটা বই সে দেখতে পায় টেবিলে উপর। বইটি দেখে ফারিণ অবাক হয়ে যায়। একটা বড়সহ টুইস্ট দিয়ে প্রথম সিজনের ইতি টানা হয় এখানেই।
কারাগারই এমন সিরিজ জানামতে, যার কি না দুই সিজনের শুটিং একত্রে সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই আশা রাখবো মহানগর, দৌড় এবং কাইজারের মতো অপেক্ষা না করিয়ে তারাতাড়ি যেন ২য় সিজন মুক্তি দেয়া হয়।
সৈয়দ আহমেদ শাওকির হইচই -তে এটি দ্বিতীয় নির্মাণ। তার প্রথম সিরিজ ‘তাকদীর’ ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিলো দুই বাংলায়। হইচইতে শাওকি’র ২য় সিরিজ হলেও চঞ্চল চৌধুরীর এটি ৩য় সিরিজ। অন্যদিকে সাবরিনা এবং দৌড়ের পর হইচইতে ইন্তেখাব দিনারের এটি ৩য় কাজ। ওটিটি যেন ইন্তেখাব দিনারেরই জায়গায়। দিন দিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে ফারিণের অভিনয় আরেকটু ভালো হওয়ার দরকার ছিলো। অন্যদিকে যতটুকু স্ক্রিনে ছিলেন অসাধারণ ছিলেন আফজাল হোসেন। এফএস নাইমকে দেখে মনে হচ্ছিলো চরিত্রে মানিয়ে গেছেন। ইন্তেখাব দিনারকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন এ কে আজাদ সেতু। শেষদিকে শতাব্দী ওয়াদুদকে দেখালেও তার ভূমিকা হয়তো পরবর্তী সিজনে দেখা যাবে।
সব মিলিয়ে ভালো একটা সিরিজ ছিলো। সিজন-২ খুব তাড়াতাড়ি আসবে সেই কামনা করছি।
▫️প্রথম সিকুয়েন্স ছিল দুর্দান্ত। যেকেউ এই প্রথম সিন দেখেই এই সিরিজের ফাঁদে পড়ে যাবে আর বাদবাকি কাজ সেড়ে ফেলবে এর অসাধারণ চিত্রনাট্য। চিত্রনাট্য ছিল খুব ভালো। সিনেমাটোগ্রাফিও ভালো লেগেছে। কারাগারকে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিজিএম এবং কালার গ্রেডিং পারফেক্ট। গল্প বিল্ডাপ করা হয়েছে যথার্থ ভাবে। সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য।
জুটি হিসেবে সৈয়দ আহমেদ শাওকী এবং চঞ্চল চৌধুরী আবারও একটি সেরা কাজ উপহার দিয়েছেন। দর্শকদের উপহার দিয়েছেন দেশসেরা একটি নির্মাণ। কিছু বিষয় নিয়ে দর্শকদের হতাশা থাকলে সিরিজটির IMDb রেটিং ৯.৩। দেশীয় নির্মাণের জয়জয়কারে যুক্ত হল নতুন একটি সিরিজ। প্রিয় দর্শক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে দেখে নিতে পারেন সিরিজটি। দেখার পর কেমন লাগল এবং আপনার ব্যক্তিগত রেটিং কমেন্ট করে আমাদের জানান।