বন্ধুদের সাথে অাড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরেছি ঠিক বারোটার সময় ৷ যদিও ফেরার ইচ্ছা ছিলনা ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে ফিরতে হয়েছে ৷ চাইলে বাইরের খাবার খেতে পারতাম ৷ কিন্তু বাইরের খাবার আমার একদম পেটে হজম হয়না ৷ বাসায় ফিরেই মাকে বললাম খুব ক্ষুধা লাগছে খেতে দাও ৷
আমার মমতাময়ী মা একটু মেজাজ দেখিয়ে বললো , যে ছেলে এক টাকা আয় করতে পারেনা আমি সেই ছেলেকে ভাত দিতে পারবো না ৷
মায়ের কথা শুনে আমি বুকের মাঝ বরাবর আঘাত পেলাম ৷
মা এটা কি বলছে ? আমার বাবার এতো টাকা ,পয়সা থাকতে আমি কষ্ট করে টাকা আয় করতে যাবো কোন দুঃখে ?
আমার মতো মাকেও ক্ষুধা লেগেছে নাকি ? তাই এমন কর্কশ কথা বলছে ?
আমি আবার বললাম , কি হলো মা ভাত দিবে না ?
আমি কি বলেছি তোর কানে যায়নি ? যেদিন টাকা আয় করতে পারবি সেদিন ভাত খেতে আসবি ৷
বাবার এতো টাকা থাকতে আমি টাকা ইনকাম করবো কেন ?
আমাদের যতো সম্পদ আছে আজীবন আমরা তিনজন বসে খেলে তো ফুরাবেনা ৷ আর তুমি বলছো ইনকাম করতে ?
হুম বলছি ৷ আজীবন বাবার ঘাড়ে বসে বসে খাবি নাকি ? নিজে তো কিছু একটা কর ৷
হুম এবার ঠিক অাছে ৷
কি ঠিক আছে ?
এই যে বললে নিজে কিছু করতে ৷ বাবাকে বলবে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে ৷ আমি বিজনেস শুরু করবো ৷
তোর বাবা বলেছে এক টাকাও দিবে না ৷ নিজে চাকুরী করে টাকা ইনকাম করবি তারপর সেই টাকা দিয়ে বিজনেস করবি নাকি পুকুরের পানিতে ঢালবি তোর ব্যাপার ৷ আমরা তোকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাই ৷
মা আমার ক্ষুধা লাগছে ৷ তুমি ভাত না দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলছো ? যদিও না খেয়ে মরেই যাই তাহলে প্রতিষ্ঠিত হবো কিভাবে ?
একবেলা না খেয়ে থাকলে কেউ মরে না ৷
কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখিস ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা একবেলা খেয়েই বেঁচে আছে ৷ তোর মতো ওরা তিনবেলা পোলাও , বিরিয়ানী খায় না ৷ ওরা কি মানুষ না ? ওরা কি বেঁচে নেই ?
মায়ের কথা বার্তা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে ৷ ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারলাম না ৷ মা তো এর আগে কখনো এমন কথা বলেনি ৷ আজ হঠাৎ বস্তির ছেলেদের না খেয়ে থাকার কথা বলছে কেন ? নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে ৷
মা সত্যি করে বলো তো তোমার কি হয়েছে ? হঠাৎ কমলাপুর স্টেশনের ছোট্ট পিচ্ছিদের কথা বললে যে ?
মায়ের চোখে অশ্রু চলে এলো ৷ মায়ের চোখে পানি দেখে আমিও কেঁদে ফেললাম ৷
মা অার আমি কাঁদছি ৷ মা কেন কাঁদছে জানিনা ৷ আমি কাঁদছি মায়ের চোখের জল দেখে ৷
মা শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বললো , একটু আগে টিভিতে দেখলাম কমলাপুর স্টেশনে পড়ে থাকা ছোট্ট বাচ্চা গুলো ক্ষুধার জ্বালায় বাসি , পঁচা খাবার খুলো ডাস্টবিন থেকে নিয়ে খাচ্ছে ৷
আচ্ছা রনি বলতে পারিস ওদের কি অপরাধ ছিল ? ওরা কেন এভাবে স্টেশনে পড়ে থাকে ? কেন পঁচা খাবার খায় ? ওদের কি ভালো খাবার খেতে ইচ্ছা করে না ?
আমি কি বলে সান্তনা দিবো বুঝতে পারলাম না ৷ শুধু এতোটুকুই বললাম , মা ওদের অধিকার বঞ্চিত দূর্বল মানুষ ৷ আমরা কেড়ে নিয়েছি ওদের ভাগের খাবার তাই ওরা না খেয়ে দিন কাটায় ৷
এখন চলো তোমার ছেলেকে বাঁচাও ৷ নইলে ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে মরে যাবো ৷
মা বললো ফ্রেশ হয়ে আয় ৷ আমি ভাত দিচ্ছি ৷
আমি দৌড়ে ওয়াশরুমে গেলাম ৷ দুই মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে চলে এলাম মায়ের কাছে ৷
রুই মাছের মাথা দিয়ে মা প্লেট ভর্তি করে রেখেছে ৷
মা এতো বড় মাথা কিভাবে খাবো ? তুমি অর্ধেক নাও ৷
তোকে দিয়েছি তুই খা ৷
আর কিছু একটা করার চিন্তা ভাবনা কর ৷
জানিস আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের নাদিয়া মেয়েটা বাসায় থেকেই মাসে অনেক টাকা ইনকাম করে ৷ নিজের সংসার চালায় এবং ওর ছোট দুই ভাইকে লেখাপড়া করায় ৷
পাশের ফ্ল্যাটের নাদিয়া মানে ?
ও তুই চিনবি না ৷
আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে আমি চিনি না তাহলে তুমি চিনলে কিভাবে ?
মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় অাসে ৷ আমার সাথে গল্প করে ৷
বাহ ভালোই তো ৷
হুম , মেয়েটা খুবই লক্ষী ৷ ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে নাদিয়া নিজে ইনকাম করে সংসার চালায় ৷
ওর বাবা মারা গেছে এটাও জানো ?
বললাম না মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় এসে আমার সাথে গল্প করে ৷
আমি তখন কোথায় থাকি ?
তোর কি বাসায় মন থাকে নাকি ? তুই তো বাজপাখির মতো উড়তে থাকিস তোর বদমাইশ বন্ধুদের সাথে ৷
খবরদার মা , আমার বন্ধুদের গালি দিবে না ৷ আমার বন্ধুরা অাছে বলেই তোমার ছেলে আজও বেকার ৷ বাবার হোটেলে খাচ্ছে আর ওদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে ৷
ঐ বদমাইশ গুলো তো তোকে খারাপ বানাইছে ৷
কাল সকালে বাসায় থাকিস নাদিয়াকে ডেকে আনবো ৷ ওর পা ধোয়া পানি খাওয়াবো দেখবি তোর বেকারত্ব ঘুচবে ৷
ছি ! মা ছি ! তুমি এসব কি বলছো ? আমি কিছু করিনা বলেই তুমি এমন কথা বলবে ?
একটা অপরিচিত মেয়ের পা ধোয়া পানি খাওয়াবে ?
তুমি এটা বলতে পারতে তোমার পা ধোয়া পানি ৷ আমি মেনে নিতাম কিন্তু একটা অচেনা মেয়ের পা ধোয়া পানি ? ছি ! ছি ! ছি !
তুই জানিস নাদিয়া কতটা সুন্দরী এবং লক্ষী মেয়ে ?
আমার জানা লাগবেনা ৷ অার জানার আগ্রহ নেই ৷
তোর চেয়ে নাদিয়াই ভালো ৷ ইশ্ নাদিয়ার মতো আমার একটা মেয়ে থাকলে ভালোই হতো ৷
যাও তাহলে নাদিয়াকে মেয়ে বানিয়ে নাও ৷
পারলে তো নিতাম ৷
আমার অার সহ্য হচ্ছে না ৷ মায়ের মুখে একটি অচেনা মেয়ের নাম বারবার শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেল ৷ আমি ভাত খাওয় বাদ দিয়ে চলে গেলাম ৷
কে এই নাদিয়া ? বাসায় থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করে ? নিশ্চয়ই অনলাইনের কাজ করে ৷ নয়তো অনলাইনে মার্কেটিংয়ের কাজ করে ৷
অাজকাল অনেকেই এভাবে টাকা ইনকাম করছে ৷
কিন্তু আমার যে চাকুরী করতে ভালো লাগে না ৷ পুরুষ হয়ে অন্য পুরুষের কথা মতো কাজ করাকে আমার কাছে গোলামী করা মনে হয় ৷ আমার খুব ইচ্ছা বিজনেস করবো ৷ আমার বাবার তো টাকার অভাব নেই ৷ বাবার কাছে থেকে টাকা নিয়ে বিজনেস করবো ৷
মনের ভিতর শুধু নাদিয়া নামটি ঘুরপাক খাচ্ছে ৷ আমাদের পাশের বাসায় থাকে অথচ অামি চিনি না এটা কেমন কথা ?
যাই হোক মা যেহুত বলেছে অাগামীকাল নাদিয়াকে ডেকে অানবে ৷ তখন দেখবো কে সেই নাদিয়া ? যার নাম মুখে নিতে নিতে মা ক্লান্ত হয়ে গেছে ৷
আমি বিছানায় শুয়েই ছিলাম ৷ মা আমার রুমে গিয়ে আমাকে ডেকে তুললো ৷
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা করবি ৷
আমি বুঝতে পারলাম না মা এতো সকালে কেন আমাকে নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাকছে ?
এর আগে তো এভাবে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলেনি নাস্তা খেতে আয় ৷
আমি দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেছি এবং নিজেই নাস্তা খেতে গেছি ৷ আজ কি সূর্য উত্তর দিকে উঠলো নাকি ?
আমি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে হতভম্ব হই ৷
ওমা একি কান্ড আসমানে চাঁদ কেন আমাদের বাসায় ৷ পৃথিবী উল্টে গেল নাকি ?
মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো , রনি তোকে নাদিয়ার কথা বলছিলাম না ৷ ওর নাম নাদিয়া ৷
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক বুঝানোর চেষ্টা করলাম ৷ চেয়ারে বসে নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে অাছি ৷ নাদিয়া নাস্তা খাচ্ছে মা ও নাস্তা খাচ্ছে ৷ আর আমি নাদিয়ার চাঁদ মুখের দিকে তাকিয়ে অাছি ৷ এর জন্যই তো বলি মা বারবার নাদিয়ার কথা বলে কেন ?
আর কেনই বা নিজের ছেলের প্রশংসা না করে চাঁদ মুখওয়ালী নাদিয়ার কথা বলে ৷
অাসলেই নাদিয়ার রুপের প্রশংসা করা উচিৎ ৷ প্রশংসা করার মতোই নাদিয়ার রুপ ৷ হয়তো সৃষ্টিকর্তা নাদিয়াকে হুরপরীদের মতো করে সৃষ্টি করেছেন ৷
কি রে নাস্তা খাচ্ছিস না কেন ?
আমার ক্ষুধা নেই মা ৷ তুমি খাও ৷
মা হয়তো বুঝে ফেলেছে বিষয়টা ৷ তাই আমাকে ধমক দিয়ে বললো , নাস্তা খাবি না তো এখন থেকে যা ৷ নাদিয়াকে নাস্তা খেতে দে ৷
আমি থাকলে সমস্যা কি ? আমি কি তোমাদের ভাগের নাস্তা খেতে চাচ্ছি নাকি ?
নাস্তা খেলে খা নইলে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে থাক ৷
এখন আর ঘুম ধরবে না ৷
একটু বসে থাকি না ৷
মা অামাকে ধাক্কা দিয়ে চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিলো ৷
মায়ের কান্ড দেখে আমি অবাক হলাম এবং নাদিয়া বললো , অান্টি রনি ভাইয়া থাকুক না কিছুক্ষন ৷
ওমা নাদিয়া কথাও বলতে পারে ৷ একটা মেয়ে সবদিক থেকে এতো পারফেক্ট হয় কিভাবে ? নাদিয়া দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি ওর কন্ঠস্বরও মিষ্টি ৷
আমার আর থাকা হলো না ৷ আমি রুমে চলে গেলাম ৷ রুমের দরজা বন্ধ করে বালিশ দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম ৷ খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গলে পরে অার ঘুম অাসে না ৷ আমারও চোখে ঘুম না এসে অন্যকিছু এলো ৷ আমি সেই অন্যকিছুর মাঝে হারিয়ে গেলাম ৷
অাজকাল মায়ের মুখে নাদিয়ার নাম শুনতে শুনতে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার যোগাড় হলো ৷ সব কিছুতেই মা নাদিয়ার উদাহরণ দিতো ৷ নাদিয়া এটা পারে ,ওটা পারে ৷ নাদিয়ার টাকায় সংসার চলে ৷ নাদিয়া ওর মাকে শাড়ি কিনে দেয় , এটা কিনে দেয় , ওটা কিনে দেয় , ঘোড়ার ডিমও কিনে দেয় ৷
মায়ের কথা শুনে মাঝে মাঝে মনে হয় মা অামাকে রাস্তা থেকে তুলে এনেছে ৷ আর নাদিয়াকে পেটে ধরেছিল ৷
অামার মাথায় কিছুতেই ঢুকতেছিল না ৷ নাদিয়া কোনো চাকুরী না করেই কিভাবে সংসার চালায় ? নাদিয়ার সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে ৷ আমি নাদিয়ার সম্পর্কে জানার জন্য গোপনে গোয়েন্দাগিরি শুরু করলাম ৷
দীর্ঘ তিনমাস গোয়েন্দাগিরি করার পর আমি জানতে পারলাম নাদিয়া কল গার্ল ৷ দিনরাত ছেলেদের সাথে ফোনে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে এবং টাকা নেয় ৷ আর সেই টাকাতে ওদের সংসার চলে ৷
এই বিষয়টি জানার পর অামার মাথা ঘুরতেছিল ৷ নাদিয়ার মতো একটা সুন্দরী মেয়ে এমন কাজ করতে পারে ? অার কেনই বা এমন কাজ করে ? চাইলেই তো ভালো একটা জব করতে পারে ৷ নাদিয়া তাহলে জব না করে কল গার্ল হলো কেন ?
ভাবলাম নাদিয়ার বাসায় বসে থেকে ইনকামের কথাটি মাকে বলে দিবো ৷
পরে ভাবলাম মা তো নাদিয়া সুন্দর মুখটা দেখে এতো প্রশংসা করেছে কিন্তু নাদিয়ার ভিতরের মনটা দেখেনি ৷ মা যদি নাদিয়া গোপন তথ্য জানতে পারে তাহলে মায়ের মন খারাপ হবে ৷ সেদিনের মতো কাঁন্না করবে ৷ তারচেয়ে বরং না বলাই ভালো ৷
এখন আমাকে জানতে হবে কেন নাদিয়া এই কল গার্ল হওয়ার পথ বেঁচে নিলো ?
মা তোর বোনের মেয়ে নাদিয়া কেমন অাছে ?
আমার বোনের মেয়ে মানে ?
হুম তোমার বোনেরই তো মেয়ে তাই না ?
তোকে কে বলেছে নাদিয়া অামার বোনের মেয়ে ?
মা সব কথা কি বলতে হয় নাকি ? কিছু কথা বুঝে নিতে হয় ৷
দেখ ফাজলামি করবি না ৷ মেয়েটা দেখতে শুনতে ভালো বলেই আমাদের বাসায় অাসে ৷ ও অাসে বলেই আমার অবসর সময়টা ভালো কাটে ৷
সেজন্যই তো বলছি নাদিয়ার মাকে তোমার বোন বানিয়ে নাও ৷
নিবো তো ৷ তাতে তোর কি ?
আমার কিচ্ছু না ৷ এখন কথা হলো তোমার বোনের মেয়ে কালকে আমাদের বাসায় অাসতে বলবে ৷
কেন ?
তুমি না বলো নাদিয়া বাসায় থেকে টাকা ইনকাম করে ৷ ভাবছি এখন থেকে আমিও বাসা থেকে টাকা ইনকাম করবো ৷
হুম করবি , তো নাদিয়ার কি দরকার ?
নাদিয়ার কাছে পরামর্শ নিবো এবং ওর পা ধোয়া পানি খাবো ৷
পা ধোয়া পানি খাবো শুনে মা খুব খুশি হয়েছে ৷ মনে হচ্ছে আজকে ঈদের দিন ৷
অাচ্ছা আগামীকাল আসতে বলবো ৷
নাদিয়া এবার তোমার সুন্দরী মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ডাইনীর রুপটা বের করে মাকে দেখাবো ৷
আর তুমি এতোটা সুন্দরী হওয়ার পরও কেন এমন কাজ করো ?
দেয়াল ঘড়িতে দশটা বেজে অাট মিনিট ৷ অামি আর মা ডাইনিং রুমে বসে নাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করতেছি ৷
মা তুমি নাদিয়াকে অাসতে বলোনি ?
হুম বলেছি তো ৷
তাহলে এখনো অাসতেছে না কেন ?
সময় হলেই অাসবে ৷ তুই এতো অধৈর্য হচ্ছিস কেন ?
অামি অার কথা বাড়ালাম না ৷ ঠিক দশটা বেজে পনেরো মিনিটে নাদিয়া এসে হাজির হলো ৷
স্যরি অান্টি একটু লেট হয়ে গেল ৷
মা মুচকি হেসে বললো অাচ্ছা ঠিক অাছে ৷
নাস্তা খেতে খেতে মা বললো , নাদিয়া তুমি বলেছিলে না মোবাইলে কাজ করে তুমি অনেক টাকা পাও ৷ তো রনিও ঐ রকম মোবাইলে কাজ করে টাকা ইনকাম করতে চাচ্ছে ৷ তুমি যদি রনিকে একটু শিখিয়ে দিতে ৷
মায়ের কথা শুনে নাদিয়ার নাস্তা খাওয়া বন্ধ হলো ৷ ফর্সা মুখটাতে কালো মেঘের আগমন ঘটলো ৷
আমার বুঝতে বাকী রইলো না ৷ নাদিয়ার ভিতরে কি ঝড় শুরু হয়েছে ৷ কারণ মানুষ খাবার মুখে দিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারে না ৷ নাদিয়া ও মিথ্যা কথা বলতে পারেনি ৷ শুধু বললো , আচ্ছা অান্টি আমি রনি ভাইয়াকে শিখিয়ে দিবো ৷
নাদিয়ার কথা শুনে অামি একটু মুচকি হাসি দিলাম ৷
কি রে হাসছিস কেন ?
এমনি ৷
নাস্তা খাওয়া শেষ করে মা নাদিয়াকে বললো , এবার বলো নাদিয়া মোবাইলে কি কাজ করে টাকা ইনকাম করো ?
নাদিয়া ফর্সা মুখটাতে অন্ধকার নেমে এসেছে ৷ নাদিয়া কি বলবে হয়তো ভেবে পাচ্ছে না ৷ নাদিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে বললো , অান্টি আমি যদি শুধু রনি ভাইয়াকে মোবাইলের জবটা সম্পর্কে বলি তাহলে সমস্যা হবে ?
না সমস্যা নেই ৷ যেহুত কাজটা রনি করবে তাই রনিকে বলো ৷
রনি ভাইয়া চলুন ছাদে গিয়ে গল্প করি এবং আমার জব সম্পর্কে অালাপ করি ৷
দুজনে ছাদে গেলাম ৷ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে অাছি ৷ নাদিয়া চুপ করে অাছে ৷ আমিও চুপ করে অাছি ৷
অামার মনে হচ্ছে নাদিয়া সত্যিটা লুকিয়ে মিথ্যা কাহিনী বানাচ্ছে ৷ তাই চুপ করে আছে ৷ মিথ্যা কাহিনী বানানো হলে অামাকে বলবে ৷
কি হলো চুপ করে আছো যে তোমার মোবাইলের জব সম্পর্কে বলো ৷
ভাইয়া সত্যিটা বলবো নাকি মিথ্যাটা ?
যা সত্যি সেটাই বলবে ৷ আমার মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা কথা শোনা কোনোটাই ভালো লাগে না ৷ অতএব তুমি সত্যিটাই বলবে ৷
এবার নাদিয়া মুখ খুললো ৷ শুরু থেকে শেষ অব্দি সব ঘটনা হরহর করে বলে দিলো ৷
অাসলে নাদিয়ার কল গার্ল হওয়ার পেছনের গল্পটি অজানাই থাক ৷ নাদিয়া শখ করে কল গার্ল হয়নি ৷ কল গার্ল হওয়ার কারণ হলো নাদিয়ার মুখোশধারী প্রেমিক রোহান ৷
ভালোবাসার নাম করে নাদিয়ার সবটুকু কেড়ে নিয়েছে ৷ ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়ে হরণ করেছে ফুলের মধু ৷
সবকিছু শেষ হওয়ার পর নাদিয়া শথপ করে ভালোবাসার ছলনা করে যে পুরুষ তার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে সেও পুরুষের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে সবকিছু কেড়ে নিবে ৷ অামি আগে সাদা গোলাপ ছিলাম ৷ কিন্তু এখন কালো গোলাপ হয়ে গেছি ৷ আমি মিষ্টি কথার যাদুতে মানুষকে প্রেমের ফাঁদে ফেলি ৷ কালো গোলাপ কখনো মানুষের মনে পবিত্র ভালোবাসার জন্ম দিতে পারেনা ৷ ঠিক আমিও পারিনা ৷
অামি নাদিয়ার কাছে জানতে চাই তুমি চাইলে ভালো জব করতে পারো ৷ করো না কেন ?
নাদিয়া বলে , একটি ভালো কোম্পানীতে জব নিয়েছিলাম ৷ কিন্তু সেখানেও বেশি দিন টিকতে পারিনি ৷ সেখানেই আমার সাথে ©©© আমি নাদিয়ার মুখে হাত দেই ৷ আমি বুঝে নেই নাদিয়ার সাথে কি হয়েছে ৷
চাইলে তুমি বিয়ে করে নিজের জীবনটাকে সাজাতে পারো ৷
স্বামীকে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছু নেই ৷ তাই বিয়ে করিনি ৷ আর বিয়ে করলে আমার বৃদ্ধ মা এবং ভাইদের কে দেখবে ৷
আমি চাইনা আমার মতো অপবিত্র মানুষের জীবনে ভালো কেউ আসুক ৷
আমি বাকী জীবনটা এভাবেই কাটাতে চাই ৷ এবং ঐ সব মুখোশধারী মানুষ গুলোকে লুটে খেতে চাই ৷
আমি কি বলে নাদিয়াকে সান্তনা দিবো আমার জানা নেই ৷ আমিও তো পুরুষ আমার মতো পুরুষই তো নাদিয়ার জীবনটাকে নরক বানিয়েছে ৷ নাদিয়া তো ইচ্ছা করে এই পাপের পথে আসেনি ৷
নাদিয়ার মায়াবী মুখটা দেখে খুব মায়া হচ্ছিল ৷ আবার খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওর পুরোনো ইতিহাস শুনে ৷
আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল নাদিয়াকে বলে ফেলি , তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে ?
কিন্ত আমার মনটা না বলে উঠলো ৷ কারণ নাদিয়ার চোখে পুরুষ মানেই মুখোশের আড়ালে হায়েনা ৷ নাদিয়া জেনে গেছে পুরুষ মানুষের অন্তরে পশুর বসবাস ৷
অান্টিকে এসব কথা বলবেন না প্লিজ ৷ অান্টি জানলে হয়তো মন খারাপ করবে ৷ অামাকে যতোটা ভালোবাসতো ঠিক ততোটাই ঘৃণা করবে ৷
ভাবছি আগামী মাসে এই বাসা ছেড়ে দিবো ৷ চলে যাবো দুরে কোথাও ৷ ভালো থাকবেন ভাইয়া ৷
আমি নাদিয়াকে কিচ্ছু বললাম না ৷ শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝাতে চাইলাম ৷ নাদিয়া অামার পাশ দিয়ে চলে গেল ৷
আকাশটা এতো কালো কেন ? সাদা মেঘ গুলো কি তাহলে অপবিত্র প্রেমের স্পর্শে কালো হয়েছে ? নাকি পাপের খেলায় মেতেছিল ৷
এই শহরে মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা বড়ই কঠিন ৷ সেটা নাদিয়া অামাকে শিক্ষা দিয়ে গেল ৷
আমি মানুষ হতে চাই মানুষ ৷