গল্প: কে চোর?

গল্প: কে চোর?

আহসান হাবিব আরাফ


‘অপয়া কি মা?’ ভেজা চোখ নিয়ে মাকে প্রশ্ন করে খুকু। মায়ের শুকনো মুখে কোনো জবাব নেই।’নিশির মায়ে আমারে কয় চোরের মাইয়া।মা আমার আব্বায় কি চোর ছিল?’ বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে খুকু।’আম্মারে ক্ষমতা থাকলে মাইনসে কত কিছুই না কইতে পারে।মানুষরে অপবাদ দিয়া ঘর ছাড়া করতে পারে।তোর বাপের মতো ভালা মানুষটারে চোর অপবাদ দিয়া গেরামের মানুষরা গেরাম থাইকা তাড়াই দিছিলো।’ অপবাদ যে কি সেটা বোঝার বয়স এখনো খুকুর হয় নি।তবে তার ছলছল স্বচ্ছ চোখের পানি দেখে শুধু এটিই বোঝা যায়,তার ছোট্ট মস্তিষ্ক বুঝে নিয়েছে যে তার বাবা চোর নয়।সে নিশির মাকে জবাব দিতে প্রস্তুত। ‘মা ক্ষুধা লাগছে।ভাত দাও।’ বলে চোখের পানি মুছতে থাকে খুকু।
মা পাতিলের তলানি থেকে একমুঠো ভাত তুলে লবণ মরিচ দিয়ে মেখে দেয়।খুকুর ছোট্ট ক্ষুধার্ত চোখ একমুঠো ভাতের দিকে।

খুকুর মা শহরের একটা ছাত্রদের মেসে রান্নার কাজ করতো।মেসের ছাত্রদের অবশিষ্ট খাবার নিয়ে তাদের মা-মেয়ের দুবেলা চলে যেত।এদিকে সারাদেশে করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে।কিন্তু পেটের ক্ষুধা তো আর মহামারী মানে না!পেটের ক্ষুধার জ্বালা যে বড় জ্বালা! কিন্তু সারাদেশ লকডাউনের কারনে খুকুর মায়ের কাজ বন্ধ। তাই দুবেলার খাওয়ার জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,দুইদিন বাজারে ত্রাণ আনতে গিয়ে খালি হাতে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে তাকে!

খুকু একমুঠো ভাত দুই ভাগ করে একভাগ নিজে খায় আর একভাগ মায়ের জন্য রাখে।
মা খুকুকে বলে ‘আম্মা আর যাইও না নিশিগো বাড়িত।এই সময় কোথাও যাওনের দরকার নাই।ভাইরাস ছড়াইতিছে।’
খুকু বড় বড় চোখ করে বলে ‘মা জানো আজকে নিশি আর আমি যখন খেলতাছিলাম তখন নিশি আমারে ওগো গোডাউন ঘরে নিয়ে গেছিলো।মা ঐ ঘরটা না অনেকগুলা চাউলের বস্তা আর বড় বড় তেলের বোতল দিয়া ভরা।আমাগো ঐ ঘরের ভেতর দেইখা ওর মায়ে আইসা যা-তা বইলা আমারে তাড়াই দিছে।’
‘হইছে আমার আম্মা আর মন খারাপ কইরা থাকো না।’ বলে মা খুকুর কপালে চুমু খায়।

২.
‘কই রে খুকুর মা,চল আইজকা নওয়াব মিয়া স্কুলের মাঠে ত্রাণ দিবো’ প্রতিবেশী বিলকিস ভাবি এসে খুকুর মাকে ডাকে।
‘আম্মা খাওন আনতে যাই।তুমি ঘরে থাইকো।’ খুকুকে বলে মা বেরিয়ে পরে।

যেতে যেতে তার মনে পড়ে সেই দিনের কথা,যেদিন খুকুর বাবাকে নওয়াব মিয়া তার গোডাউন থেকে পাঁচ বস্তা চাল চুরির অপবাদ দিয়ে গ্রামছাড়া করেছিল।আজ সেই নওয়াব মিয়া মানুষকে ত্রাণ দিবে।অথচ তার ঘর আজকে চাল আর তেল দিয়ে ভর্তি! আর খুকুর মায়ের মতো মানুষদের এই নির্মম সময়ে না খেয়ে থাকতে হয়। এসব ভাবতে ভাবতে সে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।নিজের অজান্তেই তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে।

.

.

.
পূর্ব খাসবাগ,মহিগঞ্জ,রংপুর

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
জীবনানন্দ দাশ : বাংলাভাষার শুদ্ধতম কবি

জীবনানন্দ দাশ : বাংলাভাষার শুদ্ধতম কবি

 গোবিন্দ মোদক  . . . .  আধুনিক কাব্য জগতে রবীন্দ্রনাথের পরই যাঁর নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় তিনি হলেন কবি জীবনানন্দ দাশ যাঁকে বাংলা ভাষার “শুদ্ধতম ...
হৈমন্তিকা

হৈমন্তিকা

অশোক কুমার পাইক হেমন্তেরই পরশ আজি লাগলো বুঝি গায়ে প্রকৃতিটা জাগলো হেসে রঙিন রাঙা পায়ে, শিউলি ফুলের গন্ধে ভরে ধরার ধুলার পরে ঘাসের মাথায় শিশির ...
আইপিএল ২০২৪ সময়সূচি

আইপিএল ২০২৪ সময়সূচি

আইপিএল লাইভ স্কোর ২০২৪ স্পোর্টস ডেস্ক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এবার মাঠে গড়াচ্ছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেট আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ তথা আইপিএল। ইতিমধ্যেই প্রকাশ ...
ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা/ সিটি কর্পোরেশন এ দরখাস্ত লেখার নিয়ম

ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা/ সিটি কর্পোরেশন এ দরখাস্ত লেখার নিয়ম

নিত্য বাতায়ন দরকারী কাজে মাঝেমধ্যেই আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা কিংবা সিটি কর্পোরেশনে নাগরিক সুবিধা নিতে বিভিন্ন ধরণের দরখাস্ত -পেশ করতে হয়। যার মধ্যে জন্ম কিংবা ...