আশিক মাহমুদ রিয়াদ
৪০ বছরে পা রাখলো আমাদের অসম্ভব ভালোবাসার ব্যান্ড Warfaze। ওয়ারফেইজকে যখন থেকে শুনি, তখন থেকেই বোধয় আমাদের “পূর্ণতা” শুরু। ওয়ারফেজ যেন গোটা একটা “রূপকথা”র ডায়েরি, সেই ডায়েরিতে লেখা হয়েছে পাতার পর পাতা। দিন কেটে গেছে, কত বিকেলে হিমেল হাওয়ায় বসেছি একা। কল্পনার এ দুয়ারে সে দুয়ারে কত উকিবুকি হয়েছে, জীবনে প্রেম এসেছে; “অবাক ভালোবাসা”য়।
“আশা”র “স্মৃতিগুলো” ছড়িয়ে কোক স্টুডিও বাংলার আয়োজনে এবার আরও একবার “আলো” ছড়ালো ওয়ারফেজ। ঠিক যখনই এই ঘোষণা বাতাসে ভেসে এলো, তখনই যেনো থমকে দাঁড়িয়েছে মহাকাল। “সব আলো নিভে যাঁক আঁধারে”। “কারণ আজ বাতাসে স্লোগানে মিলেমিশে অদ্ভুত এক সুর দানা বেঁধেছে উন্মাদ ঝংকারে!
অস্তিত্বের আনন্দে হৃদয় ভরে গিয়েছে। বাবনা করিম যখন সেই চিরচেনা অবাক ভালোবাসার সুর গাওয়া শুরু করলেন, আর যখন গাইলেন শুভ্র বালির সৈকতে, এলোমেলো বাতাসে গিটার হাতে। আমার তখন গুজবাম্প হচ্ছিলো। শুধু তাই নয়, নার্ভ ব্লিংকিং সব মিলে মিশে যেনো ভেতরে ভেতরে এক সুখের কান্না বয়ে যাচ্ছিলো। চিরচেনা সেই বাঁশির সুরও আছে, ওয়ারফেইজ লাভাররা আরও একবার ভাসলেন আনন্দের উৎসবে। অবাক ভালোবাসার মোহময় শুভ্র সুরে।
বেইজকে ঘিরে যেন এক মোহমায়ায় আচ্ছ্বন্ন করে রেখেছেন রজার। এরপর কিছুদূর গড়াতেই বর্তমান ভোকালিস্ট পলাশ যখন গাইতে শুরু করলেন। তখন আরও একবার ভেতরে ক্ষুধা বাড়লো। “পলাশ” এই লোকটা জাস্ট ইনক্রিডিয়েবল। ২০২১ সালে একেবারে স্টেইজের কাছ থেকে তার গলা উপভোগ করেছি। এ আমার ভাগ্য বটে। পলাশ ভাই গুণ সম্পন্ন মানুষ, তার ধারাবজায় রেখেছেন লাইভ পারফর্মেন্সে। কোক স্টুডিও বাংলায়ও তার ব্যতিক্রম নয়, যেন তৃষ্ণার্ত মরুর বুকে একপশলা ক্লান্ত বিকেলে তিনি বৃষ্টি ছড়িয়েছেন, ভক্তরা ভিজেছে তার কণ্ঠের জাদুতে; কল্পনার আলপনা এঁকে দিয়ে যায় অবাক ভালোবাসায়!
কোক স্টুডিও বাংলার এবারের সবচেয়ে ভালোলাগার বিষয়টি হচ্ছে, সিনেমাটোগ্রাফি, সেট ডিজাইন আর কস্টিউম ম্যানেজমেন্ট। জাস্ট মাইন্ড ব্লোয়িং, মাইন্ড ব্লোয়িং বললে ভুল হবে “আই ব্লোয়িং” এতটা সুন্দর করে ভিডিওর আয়োজন করা যে চোখে অদ্ভুত প্রশান্তি পাওয়া যায়। সাদা কস্টিউমের সাথে আলতো শুভ্র লাইটিং প্রত্যেকটা ফ্রেমে অদ্ভুত এক মায়া জাগিয়েছে। মনে হয়েছে যেনো শুভ্র বালির সৈকতে এক অদ্ভুত গানের আসর বসেছে। কোক স্টুডিও বাংলার এই এপিসোডটির চিত্রায়ন করা হয়েছে বিএফডিসিতে। ফ্রেম জুড়ে ফুঁটে উঠেছে চাঁদনি রাতে সমুদ্র সফেন এক অদ্ভুত জড়তা। যে জড়তায় শুধু মোহ আছে, আছে অদ্ভুত প্রেমের দ্বগ্ধতা। ভিডিও পরিচালনা করেছেন কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়।
ইন্সট্রুমেন্টাল অ্যারেজমেন্টে ব্যাতিক্রম কোক স্টুডিও বাংলা। দিজ ইজ দ্যা রিয়েল ফিউশান। ভিডিওর শুরুতে সান্তুর, তানপুরার সুরের অদ্ভুত কম্বিনেশন, সাথে ভায়োলিনের সিম্ফোনি মিলেমিশে প্রত্যেকটা সুরের সাথে অদ্ভুত এক সুঁতো গেঁথেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড ভোকাল আর্টিস্টদের প্রতি কুর্ণিশ রইলো। তারা প্রত্যেকেই দুর্দান্ত করেছেন। অবাক ভালোবাসার অন্যতম একটা বিশেষ অংশ হচ্ছে বাঁশির মন কাড়া সুর। মোহাম্মদ জালাল (ব্যান্ডের বাইরে) সেই সুর তুলেছেন, সমুদ্র তীরে যেন এক হ্যামিলিয়ন সুর তুলেছেন। টানছেন অবাক ভালোবাসায়। গিটারে চিরচেনা স্রোতে সুর তুলেছেন সামির এবং কমল। কিবোর্ডে ভালোবাসার মেলোডি গেঁথেছেন শামস।
তবে সব মিলে মিশে সমুদ্রতটে অসাধারণ এক কাব্য সৃষ্টি হয়েছে আরও একবার। কোক স্টুডিও বাংলার মঞ্চে। বিশ্বাস করুন! যখন থেকে শুরু হয়েছে কোক স্টুডিও বাংলার যাত্রা। আমার পরিচিত অনেকেই এই ক্ষুধার কথা আমাকে জানিয়েছেন, কোক স্টুডিও কি ব্যান্ডদের নিয়ে কাজ করবে না? কোক স্টুডিও বাংলা সেই কথা রেখেছেন। ভক্তদের আরও একবার ভিজিয়েছেন অদ্ভুত ভালোবাসায়। আর এবার ওয়ারফেইজের মধ্য দিয়ে সঙ্গীত প্রেমীরা মোহচ্ছন্ন হলো অবাক ভালোবাসায়। তবে অবাক ভালোবাসায় অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এখানে লিরিক্সের ব্যাত্তয় ঘটেনি শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড ভোকালে, আর ইন্সট্রুমেন্টে কিছু অ্যাডিশন এসেছে। বাবনা করিম ও পলাশ দুই পার্টে গেয়েছেন। সব মিলিয়ে অদ্ভুত ভালোবাসায় আচ্ছ্বন্ন করেছে এই “অবাক ভালোবাসা”
উল্লেখ্যঃ দেশের ব্যান্ড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ওয়ারফেইজ যাত্রা শুরু করে ১৯৮৪ সালে। এরপর ১৯৯১ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম ওয়ারফেইজ মুক্তি পায়। সে সময় ব্যান্ডের সদস্য ছিল পাঁচজন। তাদের মধ্যে এখন শুধু টিপু ও কমল ব্যান্ডের সঙ্গে আছেন। বাকি তিনজন সঞ্জয়, বাবনা ও রাসেল এখন আর ব্যান্ডের সঙ্গে নেই। বর্তমানে ওয়ারফেজের সদস্য সংখ্যা সাত। তারা হলেন—পলাশ (ভোকাল), কমল (লিড গিটার), টিপু (ড্রামস), রজার (বেইজ), শামস (কিবোর্ড), সামির (লিড গিটার), সৌমেন (রিফ গিটার)।