আশিক মাহমুদ রিয়াদ
বাতাসের স্নেহ, পায়ে শুড়শুড়ি দিয়ে যায়
মানুষ ভাসে স্বপ্নে; যাপিত আকাঙ্খায়।
তিমির রাত্রি জ্বলে প্রদীপ শিখায়,
স্বপ্ন সেখায় অট্টালিকা? সেই তো কৃশকায়!
কারাগারের শেকল আটকে দাও,
দাও মুক্তির প্রভাত রাঙায়,
অথবা দাও সন্ধ্যে আলোয় বিসর্জন
বিভোল নিভেছে হৃদয় প্রদীপ
তিমির হয়েছে নগ্ন প্লাবন..
-আশিক মাহমুদ রিয়াদ
ডোম এসেছে? জ্বালিয়েছে মোমবাতি
নেশার ঘোরে এদিক ওদিক কত আহাজারি!
বাইরে দাঁড়ায় স্বজন-সুজন; মুক্তির দরজায়
শেষ মুক্তির আগে প্রদীপ রাঙিও
আগর ঘ্রাণে নিশ্চল ঘ্রাণ!
এ তো আমার শরীর নয়,
হারের ব্লেডে ধার কমেছে..
চোখে ভাসে না অলীক কল্পনা,
পাপের লালসায় বন্দি আমি..
মুক্তি দেয়নি জড়তা..
প্রেমিকা তোমায় দিয়েছি উপহার
আমার হারের স্বর্ণালঙ্কার..
যত্নে রেখো আমায়..
অথবা যদি ছোঁও আমায়
নিশ্চিহ্ন জড়তায়;
বিদিশা ও বিদিশা
সাঝ-সন্ধ্যে বেলায়,
তোমার চোখের কোণে
সরলতায় মেঘ জমেছে..
আমি আছি; না না! থেকেও নেই..
শোও তুমি কার তলায়?
কার সাথে যাও তুমি?
নগর-ফরিং এর মেলায়।
মেঘে মেঘে জড়ায় আকাশ
বাতাসে ফিসফিস; তোড়জোড়ে নগ্ন ঝড়!
মর্গে পড়ে আছে; প্রেমিক তোমার।
অথবা বলতে পারো..এ এক ব্যর্থ ক্যাডাভার!
কিংবা তোমার প্রেমিক বটে,
প্রাণহীণ এক ক্ষুধার্থ অস্থি-ঝঙ্কার!
সম্পর্কিত গল্পঃ
নগর-ফড়িং এর মেলা
সময়ঃ রাত ১১ টা। অন্ধকার। রাস্তাঘাটে দু একটা কুকুর ডাকছে।
একটি অন্ধকার রূম, বাইরে ফ্লাড লাইটের আলো পড়েছে দরজার সামনে। একটি ছায়া মুর্তি ঢুলতে ঢুলতে এসে দাঁড়ায় দরজার সামনে, ব্যাকগ্রাউন্ডে পুরনো কোন গানের সাউন্ড (লাইক তোমাকে চাই শুধু তোমাকেই চাই)। দরজা খুলে সেই মাতাল লোকটি শিশ দিতে থাকে। তার সামনে ঢাকা একটি মরোদেহ, মদ খেয়েছে দেখে এলোপাথারি কথা বলছি, “ও সোনা, কেনো কথা শোনো না?” তবে যখন মৃতদেহটির মুখ থেকে সাদ কাপড় সরায়। তখন বিরক্ত হয় কিছুটা। মুখ থেকে কাঁচুমাচু করে বলে ‘ধুর শালা! এ তো দেখে পোলা। পোলা হইয়া পোলারে না না”
ফোনে কলিং সাউন্ড হচ্ছে। বিপ বিপ বিপ..রিসিভ করে ওপাশ থেকে কেউ বললো, হ্যাঁ আজমত। স্যার, কালকে আপনা লাশঘরে ক্লাস নেবেন? একটা বডি আছে, আপনে কইলে কালকের ক্লাসের জন্য রাখবো স্যার! ওপাশ থেকে ভারী গলায় বলে, “আচ্ছা রাখো”।
সময়ঃ সকাল ৭ টা। মেডিকেলের সামনের সড়ক। একটি মেয়ে রাস্তা পাড় হচ্ছে।
একটি মেয়েকে দেখা যায়। মেয়েটি হম্বি তম্বি হয়ে রাস্তা পাড় হচ্ছে। তাকে ক্লাস ধরতে হবে। রাস্তা পাড় হওয়ার সময় একটি বাইক এসে মেয়েটির পাশ দিয়ে সাঁই করে বেরিয়ে যায়। মেয়েটি পড়ে যায় রাস্তায়, পা মচকে যায়। বাইক থেকে নেমে সেই লোকটি এসে বলে, “এই আপনাগো মাইয়া মানুষগো এক দোষ। রাস্তায় নামলে সামনে যাবেন নাকি পেছনে যাবেন বোঝার কোন উপায় নাই। ব্যাথা কি বেশি পাইছেন?” মেয়েটি নরম গলায় বলে, “না না ঠিক আছে।” এরপর খুড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে যায় ল্যাব ক্লাসের দিকে। ল্যাবক্লাসের দাঁড়াতে পারছিলো না মেয়েটি। কোনমতে দাড়িয়ে ক্লাসের শেষভাগে যখন মৃতদেহটির মুখ উন্মোচন করার পরে মেয়েটি দেখতে পায় এই মৃতদেহটি তার এক্সবয়ফ্রেন্ডের।
ছেলেটি তার প্রেমীকাকে ভীষণ ভালোবাসতো। তার প্রেমিকা ছিলো মেডিকেল স্টুডেন্ট। মেয়েটি মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পরে ছেলেটির সাথে আর যোগাযোগ রাখেনি; এদিকে ছেলেটি সমবয়সি হওয়ার দরুণ মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন থাকলেও সে আর মেডিকেল এ পড়তে পারেনি। তার চান্স হয়নি কোথাও। শুধু মেডিকেলে চান্স হওয়ার কারণে সে এতটাই হীণমন্যতায় ভোগে যে বাকি সব অ্যাডমিশন গুলোতেও বাজে ফলাফল করে। “মেয়েটির সাথে দেখা হওয়ার পর ছেলেটি বিষণ্যতার কাঁতর গলায় বলে, “আমার কোথাও চান্স হচ্ছে ন” মেয়েটি তেমন পাত্তা দেয় না। ফোনে কার সাথে যেন চ্যাট করতে থাকে। এদিকে মেয়েটি মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পরপরি ছেলেটির সাথে দূরত্ব বাড়ায়..প্রেম শেষ হয়ে যায়। ছেলেটি জানতে পারে মেয়েটি অন্য কারো সাথে রিলেশন করছে। সেই মাঝেমধ্যেই মেয়েটির পুরনো আইডিটি চেক করতো। ছেলেটির পরিস্থতিতি দিন দিন এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে সে একসময় ভেঙে পড়ে। পাশে কোন বন্ধুবান্ধবের সাপোর্ট পায় না.. একসময় সুইসাইড করে। এখান থেকেই মূল গল্পটা শুরু।
মেয়েটি ততদিনে বেশ ভালো লেখাপড়া করে এগিয়েছে। মেডিকেলে সে নতুন বয়ফ্রেন্ড পেয়েছে। নিয়মিত ল্যাবে আসা যাওয়া করে। একদিন সেই মেয়েটি জানতে পারে অটোপসি ল্যাবে একটি ডেডবডি তাদেরকে দেখানো হবে। সে সেদিকেই এগোয়.. অটোপসি যখন করা হয় তখণ ছেলেটির মুখ ঢাকা ছিলো। কিন্তু একপর্যায়ে মুখটা দেখাতে গিয়ে মেয়েটি যখন দেখে এটা তার এক্স বয়ফ্রেন্ড তখন সে ভেঙে পড়ে। এবং ওখানেই সেন্সলেস হয়ে যায়। পরেরদিন সবাই হাসাহাসি করে.. এরপর সেই ছেলেটির ইচ্ছা অনুযায়ী সেই ক্যাডাভারটিকে নরকঙ্কালে পরিণত করা হয়। মাস ছয়েক পর সেই ছেলেটির নরকঙ্কালটি চুরিয়ে হয়ে যায়। এক মহিলার কাছ থেকে মেডিকেলের সামনে থেকে মেয়েটি নরকঙ্কালটি কিনে নেয়। আসলে সেই নরকঙ্কালটি মেডিকেল ল্যাব থেকে চুরি যাওয়া নরকঙ্কাল। যেটি আজমত উল্লাহ চুরি করে তার স্ত্রীর মাধ্যমে মেয়েটির কাছে বিক্রি করে। ছেলেটির নরকঙ্কাল মেয়েটিকে দেওয়া হয়। কঙ্কালটি থাকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় একটি ব্যাগে। মেয়েটির মনে হয় এটিই সেই কঙ্কাল, সেই ছেলেটির কঙ্কাল।