আশিক মাহমুদ রিয়াদ
চাঁদনী উঠান
চোখ জুড়ে দারুণ ঘুম নেমে আসে। আকাশের চাঁদ তখন মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে৷ একটু আগেও কি সুন্দর ভরা জ্যোৎস্না ছিলো। সর্বনাশা এই চৈত্রমাসের জোস্নাই বুঝি শুধু সুন্দর। আকাশে তারা গোনে সে! বসতে বসতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলো কে জানে। ঘুম ভাঙলো যখন তখন নিজেকে উদ্ধার করলো ব্যস্ত শহরের কোন এক এটিএম বুথের পাহারাদার হিসেবে। ততক্ষণে রাত গড়িয়েছে ভীষণ। ঝুপ করে বৃষ্টি নেমেছে। এটিএম বুথে হামলা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। মতিন মিয়া তখন ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলো। ঘুম ভাঙতেই সব কিছু বুঝে ওঠার আগেই আকাশ থেকে বৃষ্টি নামলো অঝোরে। আজ সারারাত বৃষ্টি হবে।
নয়াবউ
গররাতের পয়সা আজকে উসুল করতে হবে ভেবেই রাস্তাধরে হাটতে হাটতে হাটে এসছিলো মতিন মিয়া। ঝুম বর্ষা নেমেছে, এদিকে বাজিও জমেছে জমপেশ। আজকে বাজি জিতবেই সে। প্রথম কয়েক খ্যাপ জিতলেও পরের খ্যাপে বার বার হারার পরে হাত খালি হয়ে আসে মতিন মিয়ার। বহদ্বর হাট থেকে আজ সে বাড়ি ফিরবে শূন্য হাতে এ তো হতে পারে না। শেষবার লালুচাঁন এর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, লাগবি? লালু চাঁন মুচকি হেসে বললো, তোর কাছে তো মাল নাই, খেলবি কিদ্দ্যা? মতিন মিয়া দাঁড়িয়ে মালকোঁচা দিয়ে বলল আয় তবে। হারলে বউ তোর। লালু চাঁন বললো, নয়া বউ?
মতিন অঘোরে ঘুমাচ্ছিলো তখন। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। নয়া বউ দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণে যা অঘটন ঘটার ঘটে গিয়েছে।
ফটোকপি
শেষবার আবসারকে চুমু খেয়ে রিদিশা বলেছিলো, এই ক্রিসমাসে তুমি আমায় বিয়ে করবে। আবসার সে কথা ফেলতে পারেনি। তার চুমুর দাঁগ এখনো লেপ্টে আছে পিচঢালা পথের গায়ে।
পেটফাঁটা
একটি ইন্টারভিউতে অমুক নামের একজন সেলিব্রেটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। আপনাকে যদি জীবনে তিনটি জিনিস নিতে বলা হয়, কি কি নিবেন? সেই সেলিব্রেটি উত্তরে বলেছিলো- লাভ, সেক্স এন্ড সিগারেট। তবে মাঝবয়সে এসে যৌনশক্তি লোপের কারনে প্রচুর বিষণ্নতা ভদ্রলোক প্রচুর মদ্যপান শুরু করেন। একদিন তিনি পেটফেঁটে মরে যান। মদ খেতে খেতে সেই গল্পই বলছিলো তারা। ততক্ষণে রাস্তা পাড় হবার সময় একটি বিশাল ট্রাক এসে তাদের চাপা দেয়। তাদের পেট বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পরে, সেই ট্রাকচালক মদ্যপ অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে। বাজেভাবে আহত হয়ে মরে যায়। আমি যখন এই গল্প লিখছি ঠিক তখনই আমার হাত একটি মশা বসে রক্ত পান করতে করতে পেট ফেটে মারা যায়। এবার কি তাহলে আপনার কিংবা আমার পালা?
চু-স্বাদ
ছেলেটি মেয়েটিকে ভীষণ ভালোবাসে অথবা মেয়েটি ছেলেটিকে। দুজন দুজনকে ভীষণ ভালোবাসে এটাই মুখ্য কথা।দুই পক্ষ একে অপরদের ধোকা দেয়। এই ধোকার মধ্যে দুই পক্ষই আনন্দ পায়। দুটি ঠোট আলাদা আলাদা ঠোটে চুমু খায়। তবে তারা এক থালায় ভাত খায় না। একই বিছানায় ঘুমায় না। এক হাত ধরে বসে না। শেষবার মেয়েটিকে ছেলেটি বলেছিলো, তুমি যাকে নিয়ে সুখে থাকতে চাও তুমি তোমার মতো সুখে থাকো। মেয়েটিও তাই বলে শেষবার ছেলেটির কাছে আবদার করেছিলো চুমু খাওয়ার। সেই চুমুর স্বাদ তারা এখনও ভুলতে পারেনি। কি অদ্ভুত একটা নোংরা গল্পের সৃষ্টি হলো।
পাপের তাপ
কোথাও কোথাও গল্প লেখা ভীষণ বারন। মনগড়া এসব কাহিনী লিখে লাভ কি? গল্প তো কত আগেই সৃষ্টি হয়েছে। দৌড়ে ঝাপটে পিছপা হয়ে কত গল্পের শুরু হয়েছে। তবে এই বেলায় কেন সেই লেখা গল্প বার বার শুরু করতে হবে? নিরাশ হয়ে বসে থাকে লেখক। ততক্ষণে লোডশেডিং হয়েছে। চোখ জুড়ে ঘুম আসলেও সে তাকিয়ে আছে গল্প না লেখার আক্ষেপে।
ছুঁ কিতকিত
বেলাখানেক মেঘলা থাকার পরে নীল আকাশে আষাড়ের সূর্য উঠলো। হঠাৎ করে তাপ বেড়ে যাওয়ায় টিনের চাপে খই ফোটার মতন শব্দে ঘুম ভাঙলো টুনুর। গতকাল রাতে সে পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে এসেছে। পুলিশ তাকে খুঁজছে। সে খুঁজছে রহিমকে। রহিমকে আবার খুঁজছে অন্য কেউ। গভীর রাতে ফোনে কথা বলছিলো টুনু। হঠাৎ করেই একদল মানুষ এসে তাকে জাগিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়। জ্যোৎস্না ভরা আলোর দিনে সেই পুকুরে সে আরও একজনকে ঠাহর করতে পারে। লোকটি মৃত। এরপর পুকুর থেকে উঠে সে হাটা দিতেই তাকে পুলিশ ধাওয়া করে। পুকুরে টুনু যে লাশটি দেখেছিলো সেটি তার নিজেরই ছিলো। নিজের গায়ের পঁচা গন্ধ বাড়ছে দিন দিন। টুনু আরো এক পশলা ঘুম দিলো। লোম জড়ানো কম্বল টেনে দিলো গায়ে।
নীলাবালু
গলাটা মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে আসে জানেন। কেউ একজন যেন গলা টিপে ধরে। আমার কখনো কখনো গরম লাগে ভীষণ। কখনো আবার ভীষণ ঠান্ডা লাগে। সারারাত চোখদুটো বুঝতে পারি না। ভীষণ ঘাড় ব্যথা করে, কোমড় ধরে যায়, এসব কথা কাকে যেন বলছিলো নীলু। গতকাল সে তার ভাইকে দিয়ে কোথা থেকে একবস্তা পরিস্কার বালু এনে বিশাল ড্রাম ভরিয়েছে। নীলু সেই ড্রামের মধ্যে ডুবে থাকে সারাদিন। তার ভীষণ ভালো লাগে। তবে কেউ একজন তাকে বলেছে নীল বালু জোগাড় করতে। নীলু সেই কথা মোতাবেক নীল বালু জোগাড় করলো এই বালু ভীন্ন জগতের। নীলুর দিকে সারাদিন একটি চোখ তাকিয়ে থাকে। এই চোখে কত কথা জমে আছে। নীলুর বড্ড অস্বস্তি লাগছে!
একটি চটি দুঃখ
একটা গল্প বলি! কোন এক সন্ধ্যার গল্প। কোন এক চাঁনরাত গড়ানোর গন্ধ। আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে শপিং করতে গেলাম। মানে বড়লোকরা যেটা বলে আরকি। কিছু কেনাকাটা করতে গেলাম। একটি শার্ট, প্যান্ট, জুতা কেনার পরে আমার হাতে টাকা শেষ হয়ে গেলো। বন্ধু হঠাৎ একটা আবদার করে বসলো, আমাকে এক জোড়া চটি কিনে দিবি?
আমি আমার সেই বন্ধুকে চটি কিনে দিতে পারিনি। চটি মানে পায়ের পাতলা স্যান্ডেল। জানেন হয়ত। এই চটি দূঃখ আমার ততদিন পর্যন্ত রয়ে যাবে। আমি তাকে একজোড়া দামি জুতো উপহার দিতে চাই। এই আক্ষেপ যেন পূরণ হয়।
ব্যাঘ্রঘ্রাণ
সমীর দা’দের পুকুর পাড় দিয়ে সন্ধ্যে নাগাদ ফিরছিলাম । ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমেছে। সারা বিকেল খুব বৃষ্টি হয়েছে। পথঘাট তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। বিনুমাসির শরীর খারাপ করেছে, তার ছোট ছেলেটি আমাদের এখানে বেড়াতে এসেছিলো।তাকে আগিয়ে দিতে গিয়েছিলাম। বনের পাশ ধরে খাল দিয়ে যেতে হয়। খুব বেশি দূরের পথ না। শুকনোর দিনে দু একবার যাওয়া হয়। ও বাড়িতে টিভি আছে। পুকুরের পানিতে পা ভিজিয়েছি। ততক্ষণে পুকুরের জলে সাতার কেটেছে একটি কেউটে। কেউটেগুলোর উৎপাত বেড়েছে আজকাল। কি একটা তামাটে আঁশটে গন্ধ পাচ্ছিলাম কিছুক্ষণ ধরে। পুকুরের ওধারয়ায় চোখ যেতেই দু জোড়া চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হলো ভীষণ। বাঘের গায়ের তামাটে গন্ধে আমার বমি আসছে। তাও ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
কলম দুঃখ
লেখক এক কলম দিয়ে বার বার ঘুরে ফিরে একই গল্প লিখে গেলেন। বার বার তিনি উপমা দিলেন, সবুজ ঘাসে উড়ে আসা পাখির পালক ঝরার দুঃখকে। কতগুলো কলমে সৃষ্টি হলো একই গল্প। মতবাদ মতাদর্শ তাকে বললো, এবার একটু আমায় ক্ষ্যামা দে। নতুন কিছু সৃষ্টি কর। ততদিনে লেখক লেখার শক্তি হারিয়েছে। কলমের পিন ভেঙে কালি পড়ছে খাতায়। নতুন কিছু সৃষ্টি হয়েছে লেখকের মাথায়। তিনি খাতায় গল্প বলতে চান। তবে সেই শক্তি এখন আর নেই তার।