গল্পগুলো এমনই, আঠারো প্লাস গল্পের নাম কিংবা ব্যপার স্যাপারের সাথে পরিচয় হয়েছে ছোটবেলা থেকেই। তবে এই গল্পগুলো ভিন্ন ভাবে লেখার চেষ্টা করেছেন লেখক। যেহেতু এই গল্পগুলো ১৮+ সেহেতু এই গল্প বড়রা কিংবা ছোটরাও পড়তে পারবে।
‘এইজ ডাজেন্ট ম্যাটার’ এই কথা এই বেলায় হাড়ে হাড়ে খাটবে। ‘ এইজ জাস্টে নাম্বার ।
উঠতি বয়সী উপলব্ধি
যে কোন জিনিস, একবারে লাই দিয়া মাথায় উঠাইয়া দেবা, তারপর ঠাস কইরা নিচে ফ্যালাইয়া দেবা।
আবার আরেকটা জিনিস,একেবারে ছোটো হইতে হইতে মানুষগুলারে চিন্যা রাখবা, তারপর একদিন ঠাস কইরা কানের গোড়া থাব্রা দিয়া উপ্রে উইঠা যাবা।
যুবকটি শঙ্কিত কন্ঠে প্রশ্ন করল, থাব্রা দিলে ব্যথা পাইবো না?
প্রশ্নোত্তরদাতা গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো, তা একটু আধটু পাইবো৷ তয় থাব্রা না দিতে পারলে তো উপ্রে উঠতে পারবা না! হাতের দোষ আছে?
শ্রোতা হাত দু রানের মাঝখানে গুটিশুটি মেরে জবাব দিলো, তা একটু আধটু আছে। শইল্যের জ্বালা.. আবার খারাপ বয়স। সব মিলাইয়া.. ঐ…!
বৃদ্ধ ভদ্রলোক মুদি দোকানীর কাছে সরিষার তেল চাইলেন। শ্রোতাকে বললেন, আপনে এইখানে বসেন। আমি ভেতর থেইকা আই। ভদ্রলোক দুই দোকানের মাঝখান থেকে ভেতরে চলে যাওয়ার আগে দাঁড়িয়ে বললেন, ঐ মিয়া আবার উলটা পালটা ভাইবেন না। আপনাগো বয়স অনেক আগেই পার কইরা আইছি।
সবে মাত্র উঠতি বয়স শেষ করে উঠতি বয়সের ছেলেটা এবার উঠে দাঁড়ালো। ইতিমধ্যেই তার কিঞ্চিত শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে৷ কিছু একটা শক্ত হয়েছে। বাঙালী যুবকদের অল্পেই শক্ত হয়ে যায়, আবার অল্পেই নরম হয়ে যায়। তাদের অল্পেই দুর্বল হয়ে যেতে হয়। তবে ঠ্যাকায় পড়লে সবাই ই শক্ত। এতক্ষণ মনের কথা বলছিলাম। অন্য কিছুর কথা না… যুবকটি নদীর দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে রইলো। শিরশিরে বাতাসে নদীর টলমল জলে পা ভিজি যুবকটি দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এতক্ষণ মেঘলা আকাশ ছিলো, মেঘের কোল থেকে সূর্যের আলো এসে পড়লো যুবকটির আশেপাশে। এতক্ষণের ভ্রম কেটে গেলো, পানি থেকে পা উঠিয়ে হাতে জুতো নিয়ে পায়ের ছাপ ফেলে এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো মুদি দোকানের দিকে। সূর্য আবারো ডুব দিলো মেঘের কোলে।
আরও পড়ুন: বর্ষা-শারদের তিনটি প্রেমের কবিতা
বুড়ো না হওয়ার অসুখ
সিগারেট চাপা দিয়ে। ছাইদানি পাশে সরিয়ে সোফাটায় গা এলিয়ে বসতেই প্রথমেই আফসারের যেটি মাথায় আসলো। সেটি হচ্ছে মৃত্যু। বাসায় কেউ নেই। স্ত্রী রুনু কয়েকদিনের জন্য বাপের বাড়িতে গিয়েছে ছেলেটাকে নিয়ে। অফিসও কয়েকদিনের জন্য বন্ধ। আপাতত বাসায় আফসার একা। শুধু একা নই একপ্রকার ভীষণ একা। সেই ব্যাচেলর জীবনের মতো আয়েশ করে চক্রাকারে একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে যাচ্ছে। মুখ পানসে হয়ে গিয়েছে। বেশি সিগারেট খেলে মুখ পানসে হয়ে যাওয়াটা দোষের কিছু নই। চিন্তায় বিরতি দিয়ে ক্ষাণিক নিশ্চুপ নিরাবতায়। ভীষণ অস্বস্তি লাগছিলো তার। সোফা থেকে উঠে রুমে গিয়ে অর্ধ উলঙ্গো অবস্থায় বাথরুমে ঢুকে আয়নার দিকে একবার তাকিয়ে নিলো সে। তারপর মোচড় দিয়ে শাওয়ারের ট্যাপ খুলে দিতেই ঝরঝর করে ঠান্ডা পানি এসে পড়লো তার গায়ে। প্রথমে ঠান্ডা পানির ছোয়া পেয়ে শীতে ক্ষাণিক কাকিয়ে উঠলো সে। এরপর তার শরীর মানিয়ে নিলো। ঠান্ডা জলে নিজের শরীর ভিজিয়ে, চুপ করে বসে রইলো কিছুক্ষণ৷ ঝরনার ঝর ঝর পানির আওয়াজ তার আশেপাশে৷ দেয়ালে দেয়ালে বাষ্প..চার দেয়ালের ভেতরে সে বন্দী। বাষ্পগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে ভেন্টিলেটর দিয়ে।
অনেকেরই বিভিন্ন রকমের শখ আহ্লাদ থাকে। তবে আফসারের এই মুহুর্তের শখ হচ্ছে একটা খবর জানা। কিংবা জানার চেষ্টা করা। তার এই সন্দেহ প্রথমে উঁকি দেয়, প্রথমে অন্য ব্রান্ডের প্যাকেট দেখে৷ প্রথমে সন্দেহ না করলেও পরবর্তীতে সন্দেহের ব্যপারটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তাহলে কি এই ভিন্নর রংয়ের প্যাকেট রুনু নিয়ে আসলো? না এমনটাতো হওয়ার কথা না।
তাহলে হলোই বা কেনো? আশ্চর্য। এই রংয়ের ভিন্ন ব্রান্ডের কনডমের প্যাকেট কেন তার খাটের তলায় পাওয়া যাবে? তাহলে রুনু কি…… সন্দেহের বীজটা সেদিন থেকেই মাথায় গেথে যায় আফসারের।
রুনুকে কি কিছু দিতে পারছে না? কি দিতে পারছে না? সময় নাকি অন্য কিছু?
আচ্ছা এসব ঝুট ঝামেলা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন একটা ব্যপার নিয়ে ভাবা যাক। সব মানুষ কি বুড়ো হয়ে চায়? সব মানুষকি চায় বুড়ো বয়সে, অন্যের বোঝা হতে। বৃদ্ধদের যদি এই প্রশ্ন করা হয়, তাহলে বোধয় অধিকাংশ বৃদ্ধরাই উত্তর দিবেন, বৃদ্ধ বয়স হচ্ছে গোটা জীবনের উপসংহার। এটা হচ্ছে জীবনের সেই পাহাড়। যেখান থেকে জীবন কিংবা মৃত্যু একসাথে দেখা যায়। সব মানুষ কি বুড়ো হতে চায়?
এর থেকে একটা আশা রেখে যাই, আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলো চির যৌবন নিয়ে বাঁচুক। ততদিনে আমরা না হয়, আবোলতাবোল ভেবে মরলাম। কিংবা আগেই ল্যাটা চুকিয়ে বিদায় জানালাম। সবাই তো আর বুড়ো হতে চায় না৷ এ বরং ঘোরতর অসুখ!
চটি দুঃখ
সামনে প্রবাহমান নদী। বর্ষায় ফুলে ফেপে উঠেছে কানায় কানায়। তার ওপর পূর্ণিমা। গোসল সেরে ভেজা গায়ে বসে আছেন উকিলঘাটা মসজিদের মোয়াজ্জেম সোবাহান মোক্তার। আজ তার সাথে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে৷ সেই দুঃখজনক ঘটনা আর কারো কাছে খুব বেশি একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও তার কাছে ব্যপারটা আসলেই ভীষণ কষ্টের। বর্ষার ভরা জোয়ারে কোন তার পায়ের চটি জুতো, ভেসে গিয়েছে। তিনি খেয়াল করেননি। তবে যতদূর মনে আছে তিনি মসজিদ থেকে জুতা পায়ে দিয়ে ঘাটের কাছে এসেছিলেন।
সোবাহান মোক্তারের নামের শেষে মোক্তার রাখার কারন হলো তার বাবা মোক্তার ছিলেন, দাদাও মোক্তার ছিলেন। সেখান থেকে নামের শেষে মোক্তার পদবী নিয়ে ঘুরলেও তিনি জীবদ্দশায় যৌবনে ছিলেন খেয়াঘাটের কুলি। তবে বর্তমান জীবনে তিনি চায়ের দোকান আর মসজিদের মোয়াজ্জেম।
সোবাহান মোক্তার বিয়ে করেননি বলে তার সন্তানাদি থাকার প্রশ্নই আসে না। তবে লোকেরা তার কাছে বিয়ে না করার কারন জানতে চাইলে সে বরাবরের মতোই এড়িয়ে গিয়েছেন কখনো নিশ্চুপ থেকে কিংবা তোপ দিয়ে। তবে তিনি যে মসজিদের মোয়াজ্জেম, সেটি নিয়েও বাক বিতন্ডা হয়েছে।
সোবাহান মোক্তার বিশ্বাস করেন, তার জীবনে সুঃখ কিংবা দুঃখ বলতে আসলে কিছুই নেই। তিনি পুরোদস্তুর একজন সাদামাটা মানুষ।
তবে তিনি তার চটি জুতো হারিয়ে কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। তার দুঃখ বোধ হচ্ছে। এই চটি জুতো তিনি আগলে রেখেছেন চল্লিশ বৎসর ধরে। প্রথমে ট্রাংকে, পরবর্তিতে পাঁচ বছর ধরে পায়ে। তবে এই জুতো জোড়াকে তিনি মোটেও চোখের আড়াল হতে দেননি।
সবুদ্দার খাঁ’র হাটে একবার এক ভদ্রমহিলা এসে সোবাহানের কাছে আবদার করলো তার হাতের জুতো জোড়াকে কিনতে। এই জুতো জোড়া তার সদ্য প্রয়াত স্বামীর। সোবাহান এই জুতো কিনতে প্রথমে না রাজি হতে চাইলেও পরে বোরকা পরা সেই নারীর আকুতি মিনতিতে সোবাহান এক টাকা দিয়ে জুতোটি কিনে নেয়। জুতোটি কিনে তিনি খিলি পানের দোকানের সামনে গেলে এক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করে, এই চটি জোড়া আপনি কোথা থাইকে নিলেন?
সোবাহান বলে, কেন ভাইসাব? দোকান থেইকা নিছি।
সেই ভদ্রলোক পান মুখে দিয়ে চাবাতে চাবেতে অস্পষ্ট ভাবে বলে, না এই জুতা তো জরিনা বিবির জুতা। আফনে কই থেইকা পাইলেন। সোবাহানের কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে,
আপনে এদিকে আসেন.. আপনার লগে একটা কথা আছে।
সোবাহান কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে কঠিন গলায় বলে, আপনারে চিনি না জানি না আপনার লগে আবার কিয়ের গোপন কথা?
ভদ্রলোকটির জোড়াজুড়িতে গিয়ে, সে যা জানতে পারে সেই কথা শুনে কিঞ্চিত অবাক হয়ে যায়। তবে নিজের বিচলিত মনের দূরাবস্থা দেখে। একটু বেশি দামের বিড়ি মানে সিগারেট কিনে ফুরফুর করে টানতে টানতে নিশ্চিন্ত হয় ক্ষানিকের জন্য৷ সেই জুতো জোড়াকে ডান হাতের বগলের ফাঁকে রেখে সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে আসে সোবহান।
তারপরের ঘটনা এলাকাবাসীর জানা। সোবাহান সেই জুতো পাওয়ার পরে থেকেই চিরকুমার রয়ে গেলেন। একটা চায়ের দোকান। সেখানেই রাতে ঘুমান। ঘুম থেকে ওঠেন ফজরের আজানের সময়।
গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা। নদী থেকে একটা ডুব দিয়ে উঠে নিজেকে পবিত্র করে আজান দেন। তার আজানের সুরে কেউ কেউ নিভৃতে কাঁদে। লোকেরা তাদেরকে দূর্ভাগা বলে ডাকে।
লবটফু
ফাস্ট্রেশন মাস্ট্রেশন বাদ দিয়ে ফুটবল ম্যাচ দেখতে বসেছি অনেকদিন পরে। এদিকে আবার গ্যাস্ট্রিকের জ্বালা। ওদিকে চুলকা চুলকি। এই ব্যাপার স্যাপার হইলো গিয়া জট পাকানো। ওদিকে আবার ডি বক্সের মধ্যে গিয়ে হালারা জট পাকায়া পইড়া যায়। বল গোলে ঢোকে না। কত কিছুই তো ঢোকে না। ত্যাল মাইরা ঢুকাইতে হয়। এই ধরেন অনেক ব্যাপার। তেল – তদবীর না হইলে কিছু হইছে এই জীবদ্দশায়? তেল মারেন গোল এমনেতেই হইবো। উহু গোলতো আর শশুর বাড়ির কই মাছ না যে হাড়ি দিয়া লাফ দিয়া পাতে আইসা পড়বো। আমার ভাগ্য হইসে যেমন, আমি যে যে বিষয় গুলারে পছন্দ করছি সেইগুলাও ঐরকম। ভাজ্ঞের রেখা কি ত্যাল মাইরা বদলান যায়? তাইলে একটু ত্যাল মাইরা একটা ভালো ভবিষ্যত বাইর কইরা আনতাম।
আপনার মনে হইতাছে না যে, আমি এই চুলের গল্প কেন পড়তে আইলাম? এইখানেই টুইস্ট বুঝলেন।
আপনার পকেটে যদি টাকা থাকে৷ তাইলে আপনি এহনকার রাজা। আবার মনে করেন ট্যাকা নাই, তাইলেও আপনি রাজা। আবার মনে করেন ট্যাকা আছে কিন্তু শান্তি নাই, তাইলে আপনে ভিখারি।
এক্সাক্টলি, এইখানেই কবি দাঁড়াইয়া উঠে। আগে আসল জিনিস দাঁড়া করেন। পরে আপনার লইগা আরো একশ মানুষ দাঁড়াইয়া যাইবো। এই লন প্রত্থম গোল। আপাতত এক শূন্য গোলে জিতেন। নিজে জিতলে কাগার নাম।
নীলগাই গুলা মরে কেন?
নীলগাই মানে আপনে কি জানেন? নীলা রংয়ের গাই? এইডা আবার কহনো হয় নাকি? নীল রংয়ের গাই নীল গাই না ভাই। এইডারে যদিও ইংরেজীতে ‘Blue bull’ বইলা ডাকে। ভারত, পাকিস্তান কিংবা নেপালে নীলগাইয়ের দেখা মিললেও উইকিপিডিয়া বলে, ১৯৫০ এর পর থেকে বাংলাদেশে নীল গাই প্রায় বিলুপ্ত বলা চলে।
তবে সম্প্রতি সময়ে এই নীল গাই হত্যা কিংবা আহত করার মত খবর ভেসে বেড়াচ্ছে অনলাইনে। একটা নিউজ দেখলাম এমন যে নীল গাই জবাই দিতে শুরু করেছে এমন সময় পুলিশ এসে হাজির। কিঞ্চিত গলা কেটে নীলগাই ফেলে উধাও গ্রামবাসী।
দেখতে কিছুটা বিদঘুটে চেহারার হলেও নীলগাই কিন্তু ভীষণ সুন্দর। মুখটা লম্বাটে, ঘোড়ার মতো। মনে করেন আপনার আমার মতো। নিষ্পাপ, কিচ্ছু বোঝে না। চুপ চাপ। আউলকাউল এড়ায়া চলে। নীল গাই এড়ায়া চলে ঘন জঙ্গল, আপনে আমি এড়াইয়া চলি জঞ্জাল। তারপরেও কহনো কহনো আমগো জবাই হইতে হয়৷ এই শহরে মুখ ভার করা মানুষের মতো। অধিকাংশই মানুষেরই মুখ গোমড়া। তার মধ্যে আমি আপনে হাসলে কিংবা হাসাতে চাইলেই..ছোট হইয়া যাই। নীলগাই ছোট হয় না, আমাদের দেশে ঢুকলেই মরে যেতে হয়। তবে নীলগাই মরলে নিউজ হয়। হওয়ার কথা, হওয়া উচিত। আপনে আমি মরলে কি নিউজ হয়? এ শহর কি ভাঁড়কে চুম্মা দেয়?
এইরকম একটা নির্বিকারের মতো কথা কইয়া চুপ কইরা বিড়ি টানতে হয়। তখন নিজেরে দারুণ বক্রচন্দ্র মনে হয়। মানে অর্ধেক পাঠা আর অর্ধেক গাধা। তবে অতিশয় উজ্জ্বলবাণ ভবিষ্যতের আশায় নিজেরে মাঝেমধ্যে আসলেই বক্র চন্দ্রমনে হয়। মইধ্যবিত্তগো শালার জীবনটাই আন্ধার। তার মধ্যে অর্ধেক বক্র চন্দ্রের আলো, বাকি তিন ভাগের দুইভাগ হইলো আন্ধার। যাই এইবার একখানা ডুব দিয়া আহি!
লাল কাপড়ের শ্লোক
আমগো বাজারে এক পাঞ্জাবি কাগু ছিলো। কাগুরে অনেকে কাবুলিওয়ালা বইলা চেনে। মানে কাবুল থেইকা আসছে বইলাই কাবুল। তবে কাগু আধো আধো বাংলায় বলে,’ তুমহারা আমাকে বুঝতে পারছো না। হামি পাঞ্জাবি হ্যা, আফগানি না ‘
ঐ কাগুরে আমরা ছোটরা পাকিস্তানি কাগু বইলা ডাকতাম। কাগু নদীতে নাইমা কানে মানে পানি পুনি দিয়া তারপরে মনে করেন একটা ডুব দিয়া উইঠা আমগো কইতো। বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আইসা
নাকি আমগো কাগিমারে তার ভালো লাইগা যায়৷ তাই এইখানেই বিয়া কইরা থাইকা যায়। তয় পাঞ্জাবি কাগুর কোন মাইয়া পোলা নাই দেইখা আমগো আদর যত্ন করে। তার বাজারে একটা মিষ্টির দোকান আছে। আমরা গিয়ে ক্ষানিক দাঁড়ালেই, তার কাছ থেকে রসগোল্লা পাওয়া যায়৷ কাগু রসগোল্লা আমগো হাতে দিয়া তারপরে বলেন, এই রসগোল্লা বানাইছে কে জানো? তুমহারার বাঙ্গালি বাবু। ক্যা হ্যা বাবুর নাম? ম্যানে ইয়াদ নেহি করতে পারছি।
কাগুরে আমরা পাকিস্তানি বইলা চ্যাতাইতাম। স্বাধীনতার পরে কাউরে পাইক্কা কইলেই চ্যাত্তো। আমরাও কাগুরে পাইক্কা কইয়া ডাকতাম।
তয় ঐ কাগু নাকি আসলেই পাকিস্তানি। যুদ্ধের পরে আর দ্যাশে ফির্যা যায় নাই। কাগিমা নাকি কইছিলো, ঐ দ্যাশে আমি যামু না। তুমি আমার লগে সংসার করতে চাও তো এই দ্যাশেই থাকো। নাইলে ফুটে যাও। কাগুর সামনে কেউ পাকিস্তানিদের নিয়ে কিছু বললে কাগু চুপ কইরা থাকতো।
ছোটবেলায় আব্বার সাথে শহরে যাইয়া লাল কাপড় বাঁধা হাড়ি দেইখা আব্বারে প্রশ্ন করছিলাম, আব্বা এই হাড়িতে লাল কাপড় কেন বান্ধে? আব্বায় কইছিলো যে, এই হাড়িতে বিরিয়ানি থাকে দেইখা লাল কাপড় বান্ধে।
গ্রামে ফির্যা খেয়াল করলাম আমগো পাকিস্তানি কাগুও মিষ্টির হাড়িতে লাল কাপড় বান্ধে। আমি তারে জিগাইলাম যে কাগু আপনার হাড়িতে তো বিরিয়ানি নাই৷ আপনে কেন হাড়িতে লাল কাপড় বান্ধেন?
কাগু আমারে কইছিলো যে, লাল কাপড় বানলে মানুষের চোখে পড়ে৷ এই কারনেই মিষ্টির হাড়িতে লাল কাপড় বান্ধি৷ কাগু তারপর আমারে এক গল্লা, কাঠাল দিয়া কইলেন, যাও বাছা, এখন তুমি ঘরে চইলা যাও।
বড় হইয়া এই লাল কাপড়ের মতো কিছু জিনিস পাতির লগে পরিচয় হইলো, এই ধরেন চটি। যেটারে গ্রামের মানুষ জুতা বইলা যানে। আবার শহরের মানুষ জানে অশ্লীল চমকপ্রদ গল্প হিসেবে। আরো আছে, যৌন কিংবা যৌনতা, চুমু স্পর্শ। এই শব্দগুলো আসলেই উত্তেজিত। তবে ঐ কাগুর মিষ্টির হাড়িতে লাল কাপড় বান্ধার মতো। কামডা এইখানেও ঘটছে। সকল চটি গল্পই, অশ্লীল নয়।
[লেখকের এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোন মিল পেলে সেটি সাংঘর্ষিক এবং কাকতালীয়। তবে লেখক বিশ্বাস করেন গল্প শুধু কাল্পনিকই হতে পারে৷ লেখক বাস্তবের নয়, কল্পনার গল্প লেখেন। ]