কবিতাপ্রথম পাতাভালোবাসার কবিতাসর্বশেষ

বামায়ন

আরজুদা আঞ্জুম জয়িতা

 

মনে আছে সেদিনের কথা? 

যেদিন তোমাকে লাল আগুনে দাহ করা হচ্ছিল?

সেদিন আমি সেখানেই ছিলাম

সুতীব্র অনলে তোমার সাথে জ্বলছিলাম।

তোমার গগনবিদারী চিৎকার

আকাশ বাতাস হলো প্রকম্পিত

দেবতারা দৃষ্টি বন্ধ করতে বাধ্য হলেন

বরুণদেব নিঃশ্বাস ভুললেন

গঙ্গায় সুউচ্চ ঢেউ খেললো

তখনও আমি তোমার পাশেই 

দাঁড়িয়ে ছিলাম দৃঢ় পায়ে,অবিচল।

 

মনে আছে? সেদিন মধ্যদুপুর তিথিতে বিস্তীর্ণ অগ্নি বেদির উপর তোমাকে প্রতিষ্ঠা করা হলো

রঘুবীর সদর্পে গর্জে উঠলেন,”প্রমান দাও সতিত্বের!”

সেদিনও আমি সেখানেই ছিলাম

অগ্নির বিরল তেজে সতীত্ব জ্বলছিল

উজ্জ্বল কমলা যন্ত্রনায় ডুবেও সর্বাঙ্গে ঝংকার তুলে হেসেছিলাম সেদিন।

বলেছিলাম,

হায় মূর্খ রঘুবীরেরা! তোমরা কি জানো না

নারীর সতীত্ব প্রমাণের ক্ষমতা পৃথিবীর কোনো কমলা শিখার নেই।

কি ঠুনকো, কি অসহায়ই না লাগছিল সেদিন অগ্নিদেবকে

সতীত্বের আগুনের কালিমা আজো বয়ে বেড়াচ্ছে সেই হতভাগ্য।

 

মনে আছে সেই শরতের সকাল? 

হঠাৎ তীব্র নীল যন্ত্রনায় তোমার সারা শরীর কুঁকড়ে উঠলো,

নীলচে ঠোঁটগুলো কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো বারবার,

তোমার বহুদিন না ঘুমানো কালো চোখের বাঁধ খুলে দিলেন কোনো অদৃশ্য সত্ত্বা

আহহ সেই তীব্র যন্ত্রনা !!!

এই নীল যন্ত্রণাকে কি নাম দাও তোমরা? বিষ? 

ঠুনকো নাম।

আমি কিন্তু সেদিনও তোমার পাশেই ছিলাম

বিশ্বাস করো যোগিনী, তোমাকে রক্ষা করতে কোনো গৌড়ের আবির্ভাব ঘটেনি সেদিন

এই অনন্তকালেও কোনদিন ঘটেনি !!

 

আলোকসজ্জায় সুসজ্জিত সেই রাজসভার কথা খুব মনে পড়ে আমার,

রজঃস্বলা একবস্ত্রা তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে বিবস্ত্র, লাঞ্চিত, পীড়িত

তোমার খোলা চুলে বাজছিল যুদ্ধের দামামা শুধ,

তোমার উন্মুক্ত স্তন, যে স্তন পানে জীবন পেয়েছিল ভারতবর্ষ

সেদিন তা উন্মুক্ত ছিল তেত্রিশ কোটি দেবতা সকাশে

দেব পুরুষেরা সেদিন ছিল দৃষ্টিহীন, ধর্ম ছিল মূক

সেদিনও আমি ঝংকার তুলেছিলাম

সেই ঝংকারে আস্থা রেখেই লঘুলুহান হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কেশ খোলা রেখেছিলে তুমি।

 

ইতিহাসের কালে কালে পাতায় পাতায় আমি ছিলাম,

তোমার ক্ষত বিক্ষত বিপর্যস্ত রাতে আমি ছিলাম,

জ্বলেছি, পুড়েছি, ছাই হয়েছি বার বার

তবুও টিকে আছি, টিকে থাকবো অনন্তকাল।

 

মন্দির থেকে আছড়ে যখন তোমাকে চিড়িয়াখানায় প্রতিষ্ঠিত করা হবে

সেদিনও সেই জং ধরা জীর্ণ খাঁচায় শীর্ণ দেহে আমিই থাকবো

সিন্দুরী সন্ধ্যাকালে তোমার রক্তে যখন নতুন প্রান লেখা হবে

সেই জীবনদায়ি যন্ত্রনায়ও আমিই থাকবো।

 

নাহ আমি মানুষ নই।

আমি নারী।

তুমি নারী।

অনন্তকাল ধরে অসীম হাস্যকর যন্ত্রণাময় পথচলা আমাদের।

যুগ যুগ ধরে আমরা সেই পথেই চলছি,

সেই পথেই চলবো

নতুন দেবতাদের আবির্ভাব ঘটাতে!

 

 

এই লেখাটি শেয়ার করুন
ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

ছাইলিপির কথা

লেখালিখি ও সৃজনশীল সাহিত্য রচনার চেষ্টা খুবই সহজাত এবং আবেগের দুর্নিবার আকর্ষণ নিজের গভীরে কাজ করে। পাশাপাশি সম্পাদনা ও প্রকাশনার জন্য বিশেষ তাগিদে অনুভব করি। সেই প্রেরণায় ছাইলিপির সম্পাদনার কাজে মনোনিবেশ এবং ছাইলিপির পথচলা। ছাইলিপিতে লিখেছেন, লিখছেন অনেকেই। তাদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই ওয়েবসাইটের প্রতিটি লেখা মূল্যবান। সেই মূল্যবান লেখাকে সংরক্ষণ করতে লেখকদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। কোন লেখার মধ্যে বানান বিভ্রাট থাকলে সেটির জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ছাইলিপি সম্পর্কিত যে কোন ধরনের মতামত, সমালোচনা জানাতে পারেন আমাদেরকে । ছাইলিপির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ছাইলিপির নতুন সংযোজন ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল Chailipi Magazine। সাবস্ক্রাইব করার আহ্বান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা থেকে বিরত থাকুন ! বিশেষ প্রয়োজনে ইমেইল করুন [email protected]