গল্প-চোর

গল্প-চোর

আশরাফ  উল আলম শিকদার

সারাদিন ঘরে বসে বসে আতঙ্কে দিনাতিপাতের চাইতে অনেক ভালো  ছেলে মেয়ে আর বউকে নিয়ে বসে লুডো খেলে। গুটি খাওয়ার উত্তেজনা আর গুটি খাওয়ানোর মর্মপিড়া, টিভির সামনে বসে দুনিয়ার লাশ গোনার নিরাশা থেকে তবু মুক্তি দেয়। শওকত ঠিক করে দিলো, যে জিতবে সে পাবে কেএফসির একটা ফ্রায়েড চিকেনের ঠ্যাং-মানে লেগ পিস। ঝোটন এক লাফে রাজি হয়ে গেলো। তবে মন ওর চশমা নামিয়ে প্রশ্ন করে, ‘এখন এই লক-ডাউনে?’

‘এখন না, পরে লক-ডাউন শেষ হলে যে যার পুরস্কার পেয়ে যাবে।’

সেদিন জেতার নেশায় খেলা হলো অনেক রাত পর্যন্ত। ঝোটন আর মনের স্কুল নেই; শওকতের অফিস নেই; মেঘনার মাকেটিং যাওয়ার পথ খোলা নেই; তাহলে আর মিছেমিছি তাড়া দিয়ে সবাইকে দশটার মধ্যে ঘুমোতে পাঠানোর কোনো মানে হয় না।

শওকত ভেবেছিল, সরকারি এই লম্বা সাধারণ ছুটিতে জোরদার ঘুম দেবে ক’দিন। প্রথম ছয় দিন দুপুর বারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে ওঠবার পর, সপ্তম দিনে নিজেই বিরক্ত হয়ে গেলো পড়ে পড়ে শুয়ে। 

তারপর আবার অভ্যাস মতোই সেই সকাল ছ’টার মধ্যে ঘুম ভেঙ্গে উঠে পড়া। কাল রাত দুটো পর্যন্ত লুডো খেলে ভেবেছিল পরের দিন বেলা করে উঠবে। হলো না। ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভাঙ্গলেই ওর চাই চা আর খবর কাগজ। মৌ তখনো ঘুমিয়ে কাদা – মানে, পঙ্ক। চা চাইলে নিজেকে রান্নাঘরে গিয়ে চুলোয় চা বসাতে হবে। তা এজন্মে সম্ভব নয়, তবে খবর কাগজে কোনো সমস্যা নেই। 

শওকত ওর বাসার গেটটা খুলে এসে দাঁড়ালো তিন-তলায় সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে। ‘শালারব্যাটা! পেপার দিয়ে যায় নি এখনো।’ করোনা সতর্কতায় পেপার পৌছে দিতে আজকাল হয়তো দেরিই হয়। শওকত দুই হাত ছড়িয়ে বিশাল একটা হাই তোলে, সাথে ঘুম তাড়ানো আড় মোড়। শব্দ করে ফুটে ওঠে ওর দশাসই গর্দানটা।

ওর চোখ আটকে গেল নিচের ল্যান্ডিংয়ে। মনে হলো, কে যেন জড়ি-মড়ি হয়ে মাথা আর দু’হাঁটু এক সাথে করে সিঁড়ির দেয়ালে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। শওকত তর তর করে কয়েক ধাপ সিঁড়ি নিচে নেমে গিয়েও আচমকা থেমে পড়ে। কী মনে পড়ায় তড়াং করে দু লাফে পিছিয়ে এসে আবার আগের জায়গায় ফিরে এসে চোখ দুটো বড় বড় করে ঘাড় এগিয়ে ভালো করে দেখে। গলা বেশ ভারী করে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘এই, কে, কে রে ওখানে?’

রা নেই। লোকটা নাকি অন্য কিছু বস্তার মতো, দেয়ালে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে, নাকি দেয়ালে হেলে পড়ে আছে! শওকতের বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে। ও গলা আরো চড়ায় উঠিয়ে অভদ্রের মতো জোর চিৎকার দেয়, ‘এই কে রে ওখানে কে?’

ওদিক থেকে কোনো সাড়া-শব্দ নেই। তবে শওকতের গলা শুনে পাশের ফ্ল্যাটের ষাটোর্ধ রহমান সাহেব বেরিয়ে আসলেন স্বস্ত্রীক। কিছুক্ষনের মধ্যেই সিঁড়িঘরে ওদের বাক্যালাপ আর বিভিধ প্রশ্নের শব্দবানে নিচের দুটো তলার চারটে ফ্ল্যাটের জনা ছয়েক পিতা ও পুত্র এসে নিচে দাঁড়ালো ভিড় করে যে যার ফ্লাটের সামনে।

সর্বজনমান্য ভুঁইয়া সাহেব নিচ তলা থেকে যা বললেন তাতে বোঝা গেলো ও চুরি করতে ঢুকে বাইরে আর্মির টহল দেখে আর বেরোয় নি। কথা শুনেই যে যার মতো পিটানোর অস্ত্র জোগাড় করে নিয়ে প্রস্তুুত হলো ওকে আচ্ছা করে শিক্ষা দেবার জন্য।

অবস্থা দেখে মতিন বলে ওঠে, ‘ও সারেরা, এহানে একটু ঘুমায় পড়ছিলাম, আমায় মাপ করে দেন। কয়দিন কিছু খাই না। গায়ে জ্বর তিন চারদিন। গলাটা ব্যাথা..’

কথা শেষ হওয়ার আগেই সবাই উবে গেলো যে যার ঘরে।

মতিন চোরা উপর নিচের ছয়টা ফ্ল্যাটের দরজায় ঝোলানো ছ’টা তালা নিয়ে বেরিয়ে গেলো চট পট। ভাবলো পাঁচ দিন পর সকালে চুরি করতে বেরিয়ে তার লোকশান হয় নি। রাস্তায় এখন পুলিশও নাই!

ফাঁকা রাস্তায় চোরাই মাল হাতে নিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো মতিনচোরা।

 

পূর্ব বাসাবো, সবুজবাগ ।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
“গাঁয়ের মেয়ে” | এম-এ-রুদ্র

“গাঁয়ের মেয়ে” | এম-এ-রুদ্র

|এম-এ-রুদ্র   গাঁয়ের মেয়ে নিঝুম কাল, কালো তাঁর কেশ। কেশের মাঝেই চুম্বক টানে, মাঝে আমার বেশ। সূপ্তবর্না হ্রদয় তাঁর, অষ্টবর্না আশা। ধাতুর মাঝেই রয়ে গেলো, ...
Why Stock Market Affects Men and Women Differently

Why Stock Market Affects Men and Women Differently

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...
ব্যবধান  | আশিকুর রহমান বিশ্বাস

ব্যবধান  | আশিকুর রহমান বিশ্বাস

 | আশিকুর রহমান বিশ্বাস     তখন আমন ধানের মতো ঘ্রাণ তার চুলে। শুনেছিলাম, কাকের ডাক তবু আহা কী মধুর! এলো সে ক্ষীণপদে হেঁটে যেনবা ...
ভালোবাসার গল্প : বিচ্ছিন্ন মগ্নতা

ভালোবাসার গল্প : বিচ্ছিন্ন মগ্নতা

তানবীর সজিব আজ দোসরা শ্রাবণ। অধিকাংশ সময়ে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। ঘাসের সবুজ ডগা শুকানোর আগেই আবার বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি একটু ...
বন্ধন

বন্ধন

অনঞ্জন পাখিটার পায়ে শিকল, ঝাপটায় ডানা আর্তিতে, ঠোঁটে কামড়ায় খাঁচা রক্তাক্ত আকুলতায় মুক্তির তীব্র ইচ্ছায়! দিলাম খুলে খাঁচা, “যা পাখি, যা উড়ে আকাশে আনন্দে, ওইযে ...
একটি বৃষ্টির কবিতা

একটি বৃষ্টির কবিতা

আরিফুল ইসলাম টপ টপাটপ বৃষ্টি পড়ে আকাশ ফুঁড়ে ঐ, বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টির বাড়ি কই? দমকা হাওয়ায় ঝিরিঝিরিয়ে পড়ছে মধুর সুরে, এমন সময় মন ...