আহমেদ বিন মুখতার
অনেক খোঁজার পরও রাগের কারণ খুঁজে পায় নি নিপা। বা পার্শে কাত হয়ে এদিক সেদিক মন দৌড়াচ্ছিলো সে। সকাল থেকে মনের গতি তার ভালো নেই। নিপার আম্মা নাস্তা পানি খেতে দিয়েছেন, কিছুই খেতে মন চাচ্ছে না তার। কিছুক্ষণ পরপর তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু নিপার যেন রাগের ইমোশনই বৃদ্ধি করছে এগুলো।
এটা ওটা মনে আসছে তার। ভাবছে এটা হয়তো তার রাগের কারণ হবে! কিন্তু এতো ছোট কারণে রাগতে সে চায় না। রাগের কারণ ভিন্ন কিছু। আরো গভীরে তালাশ করে সে। আরো অনুসন্ধান করে। বারবার এক্টা কথা তার মনে আসছে। সকালে তার বাবা কী যেন নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি জানতেন নিপার পক্ষে কাজটি সমাধা করা সম্ভব না! নিপা কাজটি করবে না। তবুও তিনি বলেছেন। নিপা তার বাবার সাথে রাগ দেখায় নি। শুধু হ্যাঁ – বলে সামনে থেকে সরে এসেছে। নিপার অভিমান, কেন তাকে এমন কিছু করতে বলা হয় যা সে করবে না সবাই জানে। যে নির্দেশ দেয় সেও জানে, তবুও বুঝতে চায় না কেউ।
দরজার সামনে নিপা তার বাবার মুখোমুখি হয়। নিপা পাশ কেটে যেতে তার বাবার ক্ষীণ আওয়াজ শোনতে পায়। ভদ্রলোক মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলেন কাগজটির কথা। নিপা না বলে হনহন করে চলে আসে সেখান থেকে। বাবার সমাদর সোহাগে নিপা আজ অনেক বড়। তাই বাবাকে কষ্ট দেয়ার ইচ্ছে নেই তার। তবু্ও মাঝেমধ্যে এদিক সেদিক হয়ে যায়। কেন যেন তারা নিজেরাই এর জন্য দায়ী।
আজ ঈদের দিন। ঘরে বাহিরে কত্ত আনন্দ! হরেক রকমের নাস্তা! জমজমাট আয়োজন। মেহমানরা আসা যাওয়া করছেন। নিপার যেন কোন ভাবান্তর নেই। নিপার কোন আনন্দ লাগছে না। বাহিরে বেরুতে ভালো লাগছে না। খাওয়া দাওয়ার আগেই তার উদর যেন ভরে আছে। অথচ গতকালই মাকে বলেছিলো এই এই তৈরি করতে।
সকালের ঘটনাকে সে একেবারে তুচ্ছ করেও দেখতে পারছে না। কী ভাবেই বা দেখবে। যে ঘটনা তার মনের গতিকে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে। আনন্দগুলোকে ছাইচাপা দিয়ে দিয়েছে। রয়ে গেছে শুধু বেদনা। ভাষাহীন এক নিরব বেদনা। সবকিছু কেমন যেন মলিন লাগছে তার কাছে। কিছুই ভাল্লাগছে না তার।
নিপার আম্মা ভাইয়া ভাবি বুঝতে পেরেছে বিষয়টি। সে বোঝতে দিতে চায় নি। হেসেই বেড়াচ্ছে। এইতো কিছুক্ষণ আগে ঘরে মেহমান এসেছেন, নিপা বেড রুমের দরজা আঁটসাঁট করে লাগিয়ে দিয়ে ঘুমের ভান করে রয়েছে। নিপা শোনতে পাচ্ছে তাকে কেউ ডাকছে। তবুও সাড়া দিচ্ছে না কোন। নিপার বড় ভাই এসে জোর গলায় নিপা! এই নিপা!! ডাকতে শুরু করে। গত্যন্তর না দেখে লাফিয়ে উঠে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার বড় ভাইয়ের চেহারার দিকে। বিরক্তি যেন তার অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে। অলসতায় কাঁপা কাঁপা শরীরে খাট থেকে নেমে মেহমানদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। গাল ভরে কৃত্রিম হাসি একটা দিয়ে তড়িৎ ফিরে এসেছে সেখান থেকে। তার মন যেন ভালো হতেই চায় না। আবেগ উচ্ছ্বাস ফিরেও আসছে না। না কি সেই ফিরিয়ে আনতে চায় না? তাও বুঝে উঠতে পারছে না সে।
নিপা এমনিতেই রাগি মেয়ে। ছোট বেলা থেকেই রাগে সে সবার অগ্রজ। আগে অবশ্য কিছু থেকে কিছু হলেই রেগে যেতো। পরে কাঁদতো বসত। এখনও সে রেগে যায়। অনেক কিছু মেনে নিয়েও তার রাগ উঠে যায়। নিপাকে সবাই ভালোবাসে। রাগের কারণে ভয়ও করে।
নিপা আজকাল রাগকে উপভোগ করে। তার ধারণা; রাগ আসা খারাপ না, রাগের মাথায় উনিশ-বিশ বকোয়াজ করা খারাপ! এজন্য রাগ উঠলেই খুঁজতে থাকে রাগের কারণ। মনের ভেতর কাল্পনিক দাঁড়িপাল্লা এঁকে নিয়ে ওজন করে রাগের কারণগুলো; আসলেই এজন্যে রাগ করতে হয়, বা কতটুকু রাগতে হয়!
নিপা কীই-বা করতে পারতো!