তাল তমালের বনে
দুটি ঘর্মাক্ত শরীর একে অপরকে শেষ চুমু দিয়ে বিছানা থেকে উঠে কাপড় দিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান ঢেকে নেয়। মেয়েটি চুলগুলো গুছিয়ে খোপা করে পুরুষ মানুষের দিক থেকে আয়নার দিকে ঘুরে নিজের পড়নের টাওয়ালটা খুলে আবার আটঘাট করে এটে নিয়ে মিষ্টি গলায় বলে, ‘আমি আগে শাওয়ার নিয়ে আসি। তারপরে তুমি যেও’ পুরুষ লোকটি মাথা নেড়ে সায় দিয়ে, প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট ধরিয়ে ফুরফুর করে টানতেই বাঁধে বিপত্তি, এতক্ষণ হৃৎপিন্ডের ওপর দিয়ে বেশ চাপ গিয়েছে। সেই ধকলের পরে, সিগারেটের নিকোটিনের ধকল না নিতে পেরেই দম ফেঁটে কাশে লোকটি। ভিতরের বাথরুমে শোনা যায় গুণ গুণ করে গানের শব্দ। মেয়েটির গলা ভালো, পুরুষ লোকটি উঠে গিয়ে দরজায় টোকা দেয়। টোকা পড়ার সাথে সাথে ভেতর দিয়ে মিষ্টি গলায় ভেসে আসে, ‘এই কি হলো?’ বাহির থেকে লোকটি দরজার সাথে মুখ লাগিয়ে বলে, ‘আই ওয়ান্ট টু শাওয়ার উইথ ইউ’ ধমকের সুরে ভেতর থেকে আওয়াজ ভেসে আসে, ‘উহু! ভেতরে এখন একদমই আসা যাবে না’।
👉 আরও দারুণ সব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘বেবি! প্লিজ আসি না ?
-‘উহু’ একদমই না। মেয়েদের গোসল দেখার এত শখ কেন হাহ? (কিছুটা ধমকের সুরেই বলে মেয়েটি)
লোকটির পুরুষস্বত্তায় সে কথা গিয়ে আহুত করে। যেন এখানে পুরুষের সব লজ্জা পরিণত হয় ক্রোধে। মেয়েটি বের হওয়ার আগে লোকটি মেয়েটির ফোন ঘাটার উদ্দেশ্যে যেতেই মেয়েটির ফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিণে ভেসে আসে মেয়েটির স্বামীর সাথে ছবি। ফোণে স্ক্রিণে মেয়েটির সাথে লোকটি চেহারায় হ্যান্ডসামনেস নেই বললেই চলে, রোগা-পাতলা মানুষ। মাথার সামনের দিক দিয়ে চুল উঠে গিয়ে অদ্ভুত বিশ্রি এক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। দাঁতগুলো হলদেটে, চোখে পাওয়ারি চশমায় ভেসে উঠেছে তার স্ত্রীর উত্তপ্ত যৌবন। ফোন হাতে নেওয়া লোকটি মৃদু হেসে বলে, ‘স্ক্রাউন্ডেল!’
*
আকাশে কড়া রোদ! চৈত্র মাসের দাবদাহে হাসফাঁস করে মরার উপক্রম। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে লেবুর জুসের স্ট্র-তে চুমুক দিয়েছে আসিফ। গাড়িতে বসে বিরক্তিমুখে কিড়বিড় করে দাঁত চিবিয়ে কি যেন বলছে তিথি, যতটুক আন্দাজ করা যায় তাতে আসিফকে গালিই দিচ্ছে। এই মানুষের সাথে কিভাবে সংসার করা যায়, সেটা তিথি ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। কতটা ইরেস্পন্সেবল আর কেয়ারলেস মানুষ। তিথি শুধু এই মানুষটার সাথে আছে তার মোটা অংকের টাকার জন্য। না হলে এরকম পুরুষত্বহীন নোংরা মানুষের সাথে কোন মানুষই ঘর করতে পারবে না। দু-চার গ্লাস লেবুর সরবত একসাথে খেয়ে গাড়িতে ঢুকে লম্বা একটা ঢোক ছাড়ে আসিফ। ভুরু কুঁচকে বিরক্তির চোখে তিথি আসিফের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিড়বিড় করে বলে, ‘ফাকিং ডিজকাস্টিং’ ।
আসিফ গাড়িতে ওঠার আগে তিথির জন্য একগ্লাস লেবুর সরবত আনতে চেয়েছিলো। তিথি ধমকের স্বরে না বলে দিয়েছে। এতে অবশ্য আসিফ কিছু মনে করেনি! তিথির মাঝেমধ্যে মনে হয় তার স্বামী আসিফের মত এমন বেহায়া কোন পুরুষ মানুষ আদৌ পৃথিবীতে আছে কি না সন্দেহ। তবে আসিফের ক্ষেত্রে এ ধারণ ভিন্ন, আসিফ মনে করে তিথি তাকে যথেষ্ট পছন্দ করে। তিথির মতো একজন সুন্দরী, লাস্যময়ী, পারফেক্ট ফিগারের মেয়ে তার মতো রোগা-পাতলা মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে তা ও বা কম কিসে?
২.
‘আমাদের ইয়ুথ ওয়েমেন লিডারশীপ ওয়ার্কশপের একটি মাত্রই উদ্দেশ্য। নারীরা কোন ভাবেই পুরুষের দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকবে না’। ওয়েমেন লিডারশীপের প্রোগ্রামে তিথি গোটা পুরুষজাতির বিরুদ্ধে এক পশলা আগুন ঝরা বক্তব্য দিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করার সাথে সাথে মঞ্চের পাশে সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরলো,
একজন প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
-আপনি কি মনে করেন? এই জেনারেশনের মধ্য নারীদের নিগ্রহের সম্ভাবনা কমেছে?
তিথি ঠোটের কোণে কিঞ্চিত হাসে এনে, আত্মবিশ্বাসের স্বরে বললো-
‘ওয়েল! এটা ঠিক যে বর্তমান সময়ে নারী-পুরুষের সমতা আগের থেকে কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পুরুষের জাতটাই নিগ্রহের! তারা জানে শুধু নারীদের কিভাবে নিগ্রহ করতে হয়, অত্যাচার করতে হয়’
এবার একজন পুরুষ সাংবাদিক প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, ‘আপনি কি পারিবারিকভাবে আপনার স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন?’
তিথি এবার রাগ মাথায় চেপে গেলো। হাত বাড়িয়ে সাংবাদিকের গালে থাপ্পড় দিয়ে বললো, ‘ইটস মাই পার্সোনাল ম্যাটার।‘ সেখানে থাকা আরও কয়েকজন পুরুষ সাংবাদিক তিথির দিকে এগিয়ে এলো।
উচ্চস্বরে বললো, ‘আপনি নিজেকে কি মনে করেন? আপনি ওনাকে মারলেন কেন?
তিথিকে উদ্ধার করলো, আয়োজকরা। তিথির খবর ছড়িয়ে পড়লো সারাদেশ জুড়ে। তবে এত কিছু হয়ে গেলো তাও জানতে পারলো না তিথির স্বামী আসিফ। সে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। গুগলের সাথে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স সম্পর্কে একটা মিটিং গেলো সারাদিন। আর তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও খুব একটা সরব না আসিফ।
তিথি হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ঢুকতেই আসিফের সাথে দেখা হতেই, আসিফ জিজ্ঞেস করলো,
-কোথায় গিয়েছিলে?
-তিথি কোন কথা না বলেই বেডরুমে ঢুকে ধড়াম করে দরজা দিয়ে দিলো।
-দরজার শব্দে আসিফ কিছুটা ভুরু উঁচু করে বললো, ‘ স্ট্রেইঞ্জ!’
*
আসিফ যখন রুমে ঢুকেছে তিথি তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছিলো। তিথির পড়নে গোলাপি নাইটি। নিচে ব্রা পড়া নেই বলে সু-ডৌল স্তন গুলো যেন হাত বাড়িয়ে ডাকছে আসিফকে। কাত হয়ে শুয়ে আছে বলে স্তন গুলো হেলে পড়েছে। যেন আরেকটু হলেই কাপড়ের ফাক থেকে বেরিয়ে যাবে। আসিফ গিয়ে তিথির গায়ে ব্ল্যাঙ্কেটটা তুলে দেয়। ব্ল্যাঙ্কেটটা ঠিক করে দিতে গিয়ে তিথির হাত আসিফের হাতকে নিজের গালে চেপে ধরে। আসিফের বুঝতে বাকি থাকে না, হোয়াট ডাজ তিথি ওয়ান্ট। ঘুমের মধ্যে তিথির শরীরের আদরের প্রত্যেকটি স্টেপ পূর্ণ করে আসিফ। তিথির ঠোট থেকে আসিফের ঠোট নামতে থাকে তিথি গলায়, গলা থেকে বুক, বুক থেকে পেট পেট থেকে তলপেট। আসিফের এমন ছোঁয়া পেয়ে তিথি যেন ঘুমের ঘোরেই নিজেকে পাগল করে ফেলেছে। ধড়মড়িয়ে উঠে আসিফকে নিচে ফেলে এবার তিথি সম্ভোগ করে আসিফের শরীর। তিথি যেন আসিফের দেওয়া সুখের প্রতিশোধ নেয় একটু একটু করে। আসিফ পাগল হতে হতে এক পর্যায়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে ভিন্নতার অদ্ভুত জ্বরে যেখানে এন্টার্টিকার বরফ শীতল জলের সাথে মেশে আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভা: যেন জন্মান্তরের সম্মোহনের শেষ সীমানায় মেঘ উড়ে গিয়ে ঝুপ করে নামে এক পশলা বৃষ্টি। তিথির বমির শব্দে ভ্রম কাটে আসিফের। এতক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। চিকন গলায় তিথির দিকে ছুটে যায়, ‘তিথি, য়্যাম ট্রাই সো হার্ড’ তিথি মুখ মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করতে করতে বেরিয়ে বলে, ‘আসিফ ইউ নো ওয়ান থিং? ইউ আর ফাকিং Coward! শিটি পারসোন।
আসিফ নিজের ভুলে নিজেকেই নিজের অভ্যন্তরে গুটিয়ে নেয়। নিজের ভেতরে ক্রোধের বিষন্যতা কাজ করে। অনুতপ্ত বোধ করে!
তিথি আসিফকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি একটু ডাক্তারের কাছে তো যেতে পারো। আমাদের তো একটা রোমান্টিক লাইফ আছে, আমিও তো মানুষ । আই নিড সামওয়ান হু গিফট মি আ গুড সেক্স লাইফ। আর কত আসিফ?
আসিফ সুডৌল স্তন যুগলের মধ্যে ঘন নিশ্বাস নেয়। এই ঘ্রাণ এখন কেন যেন তার আর ভালো লাগছে না।
আসিফ উঠে বেলকনিতে চলে যায়, আকাশে উঠেছে বাঁকা চাঁদ সে চাঁদের নিচে শুক্র। যেন এক অপার্থিব সৌন্দর্য এসে জড়িয়ে ধরেছে। বাইরে বয়ে যাওয়া শীতল হাওয়ায় কা কাঁপুনি দিয়ে ওঠে আসিফের। শরীরটা তাকে বার বার জানিয়ে দিচ্ছে, তার হাতে আর বেশি সময় নেই।
৩.
“তোমার ঐ উটকো বরটাকে তোমার সহ্য হয় কিভাবে?”
-তোমার কাছে আসলেই তুমি শুধু বর বর কেন করো?
তিথির কথায় কিছুটা আহত হয় শাহেদ। নিজের ক্রোধ আড়ালে চেপে বলে, না এমনি বললাম আরকি! তেমন কিছু না।
তিথি বিড়বিড় করে কি যেন বলে, শাহেদ কিছু অনুধাবন করতে পারে না। তিথির মাথা শাহেদের বুকের ওপর। শাহেদ হাত দিয়ে তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তিথি খানিকের জন্য চোখ বুজে থাকে এরপর শাহেদ নিজের বসা পজিশন থেকে হাত তিথির শরীরের দিকে, শাহেদের ভেতরে লালিত ক্রোধ জেগে ওঠে। তিথির ততক্ষণে চোখ ভিজে গিয়েছে। শাহেদের কাছ থেকে এমন স্পর্শ পেয়ে ধড়মড়িয়ে উঠে, ক্রোধের দৃষ্টিতে শাহেদের দিকে খানিক তাকিয়ে থাকে। শাহেদ কিছু বুঝে উঠতে পারে না, শাহেদ স্মিত গলায় বলে, কি হয়েছে? তিথি সপাটে চড় মারে শাহদের গালে। এরপর বিছনা থেকে নেমে বেডরুম দিয়ে বের হয়ে সোজা বের হয়ে যায় ফ্লাট থেকে। শাহেদের ভেতরে অতৃপ্ত ক্রোধ জন্মে। হাতের তালুতে জমতে থাকে, তিথিকে না ছোঁয়ার ক্রোধের পরিসীমা। হাতের মুঠোয় জমে, আজন্ম ক্ষোভ। যে ক্ষোভের আগুন তিথির গর্হহ্বর ঢেলে দেওয়ার কথা ছিলো শাহেদের।
তিথির সাথে স্বামী আসিফের সাথে প্রথম পরিচয় হয় একটি, প্রোমোশনাল ক্যাম্পেইনে। আসিফের বন্ধু বড় মাপের একজন পরিচালক। সেখানেই একটি সান্ধ্য পার্টিতে আসিফ আমন্ত্রিত হয়েছিলো বছর সাতেক আগে। রবি আসিফের ছোটবেলার বন্ধু, আসিফ কর্পোরেট জগতে নিজের আলাদা একটি নাম করে নিয়েছে। পরিচালক হিসেবে রবি যখন স্ট্রাগলিং সময় পাড় করছে ঠিক তখনই আসিফ তাকে তাদের কোম্পানির একটি টিভিসি বানাতে দিয়ে সাহায্য করেছিলো। সময়ের তোড়ে রবি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে মিডিয়া পাড়ায়, তার সাথে সখ্যতা আছে দেশের সুন্দরী সব অভিনেত্রীদের সাথে।
পার্টির এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে বাকিদের পার্ফমেন্স দেখে হাতে তালি দিচ্ছিলো আসিফ। সবাই এত ভালো পার্ফমেন্স করছিলো বেখেয়ালে তিথি একটু একটু করে আসিফের দিকে ঝোকে! এক পা দু পা করতে করতে আসিফের গায়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে আসিফের ব্লেজার মদে মাখামাখি হয়ে যায়। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে আসিফের ব্লেজার পরিস্কার করে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে। আসিফ বার বার তাকে এসব করতে না করে, কিন্তু তিথি নিজের ভুলে অনুতপ্ত! আসিফ ততক্ষণে অবজার্ভ করে নিয়েছে মেয়েটিকে। মেয়েটির শরীর থেকে অদ্ভুত রকম মিষ্টি একটি পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে। যে ঘ্রাণে যে কোন পুরুষ নিজের চেতনা শক্তি হারাতে পারে। মেয়েটির কানের দুলটি সোনা বা ডায়মন্ডের না হলেও, ফর্সা কানের লতির সাথে সেটি যেন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে আকাশে ওঠা বাঁকা চাঁদ আর তারা যেভাবে নিজেদের মানিয়ে নেয়। এতক্ষণ মেয়েটিকে পরোখ করতে করতে, কখন যে মেয়েটির চোখে চোখ পড়ে গিয়েছে সেটি খেয়ালই করে না আসিফ।
তিথিও ততক্ষণে বুদ হয়েছে আসিফের প্রতি। ভরাট গালের সাথে, চাপ দাড়ি! মাথায় ঘন চুল। হ্যান্ডসাম আছে,বেশ সেক্সিও। তিথির মাথায় দোল খেলায় এসব কথা। আসিফও তিথিকে অবজার্ভ করে, ‘স্নিগ্ধ চেহারা! কোমল ঠোট। মুখে গোল্ডেন স্মুদ মেকাপ’ যেন মেয়েটিকে আরও লাস্যময়ী করে তুলেছে। চোখের পাতায় কৃত্রিম পাপড়ি, স্লিভলেস ব্লাউস। যেন স্বর্গের কোন অপ্সরা দাঁড়িয়ে আছে আসিফের সামনে।
এরপর মেঘে মেঘে কেটেছে অনেক বেলা। আসিফ মেয়েটির প্রেমে হয়েছে দূর্বল। দিনক্ষণ ঠিক করে একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে আঙটি বদল সারে ওরা। এরপর সম্পর্ক গড়ায় প্রণয়ে। প্রণয় থেকে বিয়ে। বিয়ে থেকে বাসর। ভার্জিনদের কাছে এ রাত বড্ড উৎকন্ঠার। ঠাকুমার ঝুলির মতো, গা ছম ছম। কি হয় কি হয়। অবশ্য আসিফের সে রাতে ভীষণ কনফিডেন্স ছিলো। আর তিথির অদ্ভুত কারণে কোন পুরুষকে নিজের মত করে আলতো স্পর্শে ছোঁয়ার কোন তাড়া ছিলো না। ফুলসজ্জা রাতে যা হয়, তাই ই হয়েছিলো সেদিন। তবে ঘটে ছিল বিশেষ কিছু। বিয়ের আগে পুরুষের বিশেষ স্পর্শে নিজেকে উজার করে দিয়েছিলো তিথি, তাও যেন তার উৎকন্ঠা ছিলো প্রবল।
বাইরে নামলো ঝুপ করে বৃষ্টি, আষাড়ে ঘনঘোরে বৃষ্টির ঝাপটা এসে লাগলো কাঁচের গ্লাসে, ঠোটে ঠোট মিলে মিশে সৃষ্টি হলো বৃষ্টিস্নাত জোস্নারাতের শিহরণ। এরপর বাড়লো ঝড়, মেঘ কেটে আকাশে জমলো ধূসর মেঘ ঝুপ করে নামলো এক-পশলা তাজা বৃষ্টি। তিথি বিরক্ত হয়ে গেলো! সে বুঝতে পারলো, ফুটবল মাঠে এ পুরুষের দম নেই। তিথির কাছে সে রাতে আসিফ খেলো মোট ৭ খানা গোল । অবশ্য বার কয়েক চাইলো, যাতে একটা বল তিথির জালে আসিফ ঢোকাতে পারে। তবে সে শঙ্কা থেকেই গেলো। বাইরে বাড়লো ঝড়, সেদিনের পর থেকে আসিফের জীবনেও আসলো ঝড়। বৃষ্টিস্নাত রাতে অপ্সরি হয়ে গেলো নগ্ন রাক্ষসী। আসিফের গলায় সেদিনই সেইরাতে প্রথম কামড়!
৪.
আসিফ তিথিকে বিছানায় সুখী না করতে পারলেও বিয়ের পর থেকে চেয়েছে বিবাহিত জীবনে সুখী করতে। বিয়ের তিথিকে নিয়ে ঘুরেছে কত ভালো ভালো দেশ। তাও তিথির মন ভরেনি। আসিফ কেন যেন নিজেকে আরও অনুতপ্ত আর অনুশোচনায় ডোবা পুরুষ হিসেবে আবিস্কার করে। সেক্সুয়াল স্পেশালিস্ট, সাইকাট্রিস্ট সবার দাড়ে দাড়ে ঘুরে এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।
আসিফ ভেবেছিলো গোটা জীবনে সে তিথির মতো কাউকে পেয়েছে বলে, তার আর জীবনে অপ্রাপ্তির কিছু রইলো না। নিজের জন্য আসিফের যা আছে তা ব্যাপক। দামী ফ্লাট, বিলাসবহুল জীবন, বিয়ের আগে ট্রেন্ডি ফ্যাশন আর অঢেল টাকা। আসিফ শুধু জীবনে পায়নি বাবা মায়ের মুখ দেখতে। বড় হয়েছে চাইল্ড কেয়ারে। আসিফ ঠিক কিভাবে সেখানে এলো, ছোটবেলা থেকে কারও কাছে কোন উত্তর পায়নি। চাইল্ড কেয়ারের সিনিয়র আয়াকেই সবাই মা বলে ডেকেছে। আসিফও তার ব্যাতিক্রম না। ঝড়ের রাতে অজানা কারণে ভয়ে যখন ঘুমভেঙে যেতো, আসিফ তখন নিজেকেই নিজে আপন ভেবেছে। নিজেকে নিজে শান্ত করে, নিজের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছে। কৈশরে মেলে ওঠা ডালপালার সাথে নিজেকে বেঁধে নিয়ে জীবনের তোড়ে এগিয়েছে। মেঘে মেঘে কেটেছে অনেক বেলা, নিয়তি আসিফকে দিয়েছে সব কিছু। আসিফ জানে নিজেকে নিজে কিভাবে ভালো রাখতে হয়।
তিথির কাছ থেকে প্রথম আঘাত আসলো যখন তখন, আসিফ বিধ্বস্ত! তিথি গোপনে আসিফকে চেতনা নাশক ওষুধ খাওতো। সন্ধ্যের পরে অফিস থেকে ফেরার পর যখন এককাপ চা, কিংবা একগ্লাস জুসের সাথে হাইলি এফিসিয়েন্ট স্লিপিং পিল খাওয়াতো আসিফকে। প্রচন্ড নেশাতুর হয়ে আসিফ ঘুম ঢুলু ঢুলু চোখে ঘুমিয়ে যেতো। মারাত্মক যৌনত্তেজনা জাগলেও, আসিফের কিছু করার থাকতো না। হাত-পা অবশ হয়ে যেতো। এই সুযোগ নিতো তিথি। আসিফকে একা ঘরে রেখে বেরিয়ে পড়তো শহরের অভিজাত বারগুলোয়। গভীরঘুমে আচ্ছন্ন আসিফ তখন সান্ধ্যকালীন নেশাতুর নিদ্রায়। হঠাৎ কি যেন কি হয়ে গেলো আসিফের, কি একটা অদ্ভুতুড়ে স্বপ্নে নিজেকে হারিয়ে ফেললো কোন অজানায়। স্বপ্নের সর্বশেষ স্টেপের আগে স্টেপে, মস্তিষ্কে কি এক সতর্ক বার্তায়। ঘুম ভেঙে নিজেকে এসি ছাড়া ঠান্ডা ঘরে আবিস্কার করে প্রথমে ভাবলো, সে হয়ত কোন লাশকাটা ঘরে শুয়ে আছে।
হ্যালুসিনিউশনে আশেপাশে দেখলো কিছু অদ্ভুত লোক তাকিয়ে আছে তার দিকে। ততক্ষণে ঘুমে পুরো পুরি মগ্ন আসিফ। বাইরের শহুরের কোন কোলাহল তার কানে আসছে না, শরীরে অদ্ভুতুরে শক্তি কাজ করছে। পুরুষদন্ড শক্ত হয়ে আছে, নিজের অভ্যন্তরে এতটুকু আশার আলো দেখেছে আসিফ। আজই তার মোক্ষম দিন, আজই সে তিথিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ দিয়ে নিজেকে। তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘোরে রুমের দেয়াল ধরে ধরে একটু একটু করে এগোল তিথির খোঁজে। সে যতই তিথির খোঁজে এগোচ্ছিলো, তার পৌরষস্বত্তা নিজেকে আরও অনুপ্রেরণা দিচ্ছিলো আজই তার শ্রেষ্ঠ দিন। তিথিকে আসিফ যখন খুঁজে পেলো, তিথি ততক্ষণে সেদিনের সবটুকু সুখ নিজের করে নিয়েছে। ভিজিয়ে দেয়া দরজার ফাঁকে দাঁড়িয়ে আসিফ দেখলো তিথি যেন কোন পুরুষের সাথে নিজেকে উজার করে দিয়েছে। পুরুষটি তিথির গায়ের ওপর। দিনের পর দিন নতুন সঙ্গীর কাছে বিকিয়ে দিত নিজের উত্তপ্ত যৌবন। সেরকমই এক সন্ধ্যে বেলার ঘটনা। তিথি এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়েছে যে সেই নতুন সঙ্গীকে নিয়ে ঘরে এসেছে।
সেদিনের পর থেকে আসিফ তিথিকে একবারের জন্যেও স্পর্শ করেনি। বরং জন্মেছে আজন্ম ক্ষোভ। নিজের প্রতি নয়। জন্মেছে এক বিশ্বাসঘাতকের প্রতি। যে সুযোগ নিয়েছে আসিফের। আসিফকে বিলীন করে দিয়েছে।
৫.
-চলোনা দূরে কোথাও ঘুরে আসি?
(এ কদিনে তিথির সাথে আসিফের একবারের জন্যেও দৈহিক মিলন হয়নি। আসিফ যতদূর সম্ভব প্রীতির থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করেছে। অফিস থেকে ফেরার পরে, তিথির বানানো চায়ের কাপ কিংবা জুসের গ্লাসের পুরোটা ফেলে দিয়েছে বেসিনে। তিথিকে আড়াল করেই।)
-আসিফ তিথির কানের পাশের চুলগুলো সরিয়ে তিথির গালে ছোট্ট একটা চুমু খেলো। যেটা তিথির ভীষণ পছন্দের না হলেও তিথি একাজে আসিফকে কখনো বাধা দেয়নি।
আসিফ স্মিত গলায় বললো, ‘কোথায় যেতে চাও?’
তিথি বললো,’দাঁড়াও লোকেশন দেখি!’ তিথি মোবাইলটা হাতে নিতেই আসিফ বাধ সাধলো। আবারো স্মিত গলায় বললো, লোকেশন আমি সেট করে নেব। তুমি ভেবো না’
বেলকনিতে বসে কাকে যেন ওদের গন্তব্যের ঠিকানা জানিয়ে দিলো তিথি, ব্যপারটা চোখ এড়ালো না আসিফের। আকাশে মেঘ জমছে ধীরে ধীরে, বাতাস হয়েছে ঠান্ডা। বর্ষাকাল, সাগরে নিম্নচাপের তোড়ে আকাশে ধীরে ধীরে কালো মেঘের ঘনঘটা, ওরা মাথার ওপরে কালো মেঘ নিয়ে বেরিয়ে গেলো বর্ষা উদযাপনের উদ্দ্যেশ্যে। তিথিকে আনন্দিত দেখা যাচ্ছে, গাড়ির গ্লাস অল্প ফাঁক করে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ধরছে। বাড়ছে বাতাসের তোড়। আরেকটু বাদেই উঠবে ঝড়।
রিসোর্টের কামরায় সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আনমনে কি যেন ভাবছে আসিফ। তিথি তখন বাথরুমে গোসল করছে। বাথরুমের বাইরে থেকে ভেসে আসছে গোসলের পানি পড়ার শব্দ, নিজের প্রতি অদ্ভুত এক ক্ষোভ কাজ করছে। আজ যেন নিজেকে সত্যিকারের পুরুষ মনে হচ্ছে। যে পুরুষত্বহীনতার কামণায় আসিফ পুড়েছে এ কয়েক বছর। তিথি আসিফকে ব্যবহার করেছে নিজের স্বার্থে, আসিফের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভালোবাসা ছুড়ে ফেলে দিনের পর দিন শুয়েছে অন্য পুরুষদের সাথে। অন্য পুরুষদের গরম নিশ্বাসের সাথে নিজের শরীর দুলিয়ে, সম্মোহিত শব্দের শীৎকারে নিজের জড়ায়ুতে বার বার নষ্ট করেছে মানবভ্রুণ। তিথি কি চেয়েছে? শুধু কামুকতা? কামুকতার নগ্ন নৃত্যে তিথি যেন নরকের সর্বনিম্ন স্তরের স্বাদ পেয়েছে। যেখানে দুটো নর-নারী আগুনে পুড়ে মরে মিলিত থাকা অবস্থায়। বিধাতা যাদের নিঃশ্বেস করে দেয়, জন্ম থেকে জন্মান্তরে যারা কামুকতার জন্যই মরে যায়।
তিথি যখন বাথরুমের গোসল সেরে বের হলো চারদিক তখন কি এক অদ্ভুত সুবাসে ছড়িয়ে গেলো। আসিফ সিলিংয়ের দিক থেকে ধ্যান সরিয়ে তাকালো তিথির দিকে। তিথির সদ্য গোসলের পানিতে ভেজা শরীর যেন হাত বাড়িয়ে আসিফকে ডাকছে অদ্ভুত এক সম্মোহোনের টানে। আসিফ দ্যান সড়াতে চাইলেও পারলো না। তিথি এক পা দু পা করে এগিয়ে এলো আসিফের দিকে আসিফের রোগা শরীর যেন আজ পূনঃর্জীবত হয়েছে বহুবছর পরে। আসিফের কোলে বসার আগে তিথি শাদার রংয়ের টাওয়েলটা ফেলে দিয়েত পা দুটো দুদিকে দিয়ে বসলো আসিফের কোলে। আসিফ আধশোয়া অবস্থায় বসেছিলো কাউচটায়। থাই গ্লাসের পর্দাটা টেনে দিয়ে আসিফ নিজের সর্বৎস উজাড় করে দিলো তিথির জন্য।
তিথির গোলাপের মত ঠোটের মাদক নৃত্য চলতে রইলো আসিফের সারা গা জুড়ে, সেই সাথে তিথির শরীর থেকে আসা মিষ্টি গন্ধ যেন আসিফ দীর্ঘদিন অতৃপ্ত ক্ষুধার্ত ব্যাক্তির মতো গ্রাস করছে। তিথির ভেঁজা চোখের পাঁপড়ির সাথে অর্ধবিলাতি চোখের দিকে তাকাতেই আসিফ বুঝতে পারলো এ চোখ তাকে মায়ার বাঁধনে বাঁধতে চাইছে। এ চোখের নেশাতুর সম্মোহনে আসিফ পাথর হয়ে গিয়েছিলো এতদিন । আসিফ তিথিকে সরিয়ে আধশোয়া অবস্থা থেকে উঠে যায়, তিথির যৌন ক্ষুধায় তপ্ত শরীর যেন চোখের সামনে খাবার না পেয়ে বিরক্ত হয়, রাগ হয় ভীষণ। নাক দিয়ে ফোঁস ফোঁস করতে করতে তিথি আসিফের সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট ধড়ায়। কড়া সিগারেটে টান দিতে দিতে আসিফের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, আসিফও তিথির চোখের দিকে তাকায় এবার । আসিফ এবার এগিয়ে যায় তিথির দিকে। শাদা ধবধবে এ নারী দেহের সুগঠন দেখে যে কোন পুরুষের ফাল আউট করার সম্ভাবনা প্রবল। আসিফ এবার সিগারেটে লম্বা টান দিতে থাকে। সিগারেটের মাথায় জমে ছাই, সেই ছাইয়ের ফুঁলকি টোকা দিয়ে ফেলে তিথির শরীরে।
এরপর শুরু হয় এক নগ্ন নৃত্যের সমীরণ, আসিফ নিজের শরীর নগ্ন করে খেলে এক অদ্ভুর শাস্তির খেলায়। বাইরে ততক্ষণে নিম্নচাপ গড়িয়েছে ঘুর্ণিঝোড়ে। আর এখানে চলছে জলছ্বাসের তোড়জোড়। আসিফ নিজের পড়নের বেল্ট খুলে একের পর এক চাপড় চালায় তিথির শরীরে। প্রত্যেকটি চাপড়ে যেন তিথি নতুন করে সম্মোহীত হচ্ছিলো ঝড়ের দিনে বাইরের কেউ না শুনতে পেলেও প্রত্যেকটি শব্দ কানে আসছিলো আসিফের। একেকটা ঘাতে, তিথির শিৎকার কামরার দেয়াল গুলোকে অট্টোহাসির মতো প্রস্ফুটিত করছে। এরপর আসিফ বেল্ট দিয়ে বাঁধে তিথির গলা। তিথি এসব উপভোগের সাথে সাথে ভীষণ অবাক হচ্ছিলো! আর আগে আসিফকে এরকমভাবে আবিস্কার করতে পারেনি তিথি। যেন নতুন পুরুষের সাথে যৌনলীলায় তপ্ত হচ্ছে তিথি, যেন বৃষ্টিস্নাত রাতে ফাগুন রাঙা আগুন এসে জেপে বসেছে তিথির সারা শরীর জুড়ে।
গলায় বাঁধা বেল্ট যে কখন আসিফ চেপে ধরেছে নিজের সর্বৎস শক্তি দিয়ে সেটি বুঝতেই পারেনি মেয়েটি। বাইরে বিকট শব্দে বাজ পড়ছে। শেষবার যখব বাজ পড়লো তখন মেয়েটির নিথর দেহ আসিফ শেষবারের মতো দেখে নিলো। যে নিষ্পাপ মুখ দেখে মেয়েটির প্রেমে পড়েছিলো আসিফ। নগ্ন শরীরের নিথর দেহটি যেন সেই নিষ্পাপপ চাহনী আসিফের ক্রোধের আগুনে বার বার ঘি ঢেলে দিচ্ছে। এরপর আসিফ যে কাজটি করলো সেটি যথেষ্ট জঘন্য, নিজের ক্রোধ মেটাতে তাকে ঘিরে ধরলো নেক্রোফিলিয়া। মৃতদেহের সাথে সঙ্গমে জড়াতে একটুও দ্বিধা বোধ করলো না আসিফ। শেষ কাজটায় আসিফ নিজেও আহত হলো কিছুটা, তার মধ্যে গভীর চিন্তা এসে নাড়া দিলো। মেয়েটিকে বশে আনার জন্য চায়ের সাথে এলএসডি নামের মাদক মিশিয়েছিলো আসিফ। সদ্য মৃত মেয়েটির সাথে সঙ্গম করতে গিয়ে, মেয়েটির ঠোটে আঁদর করতে গিয়ে নিজেও সেই মাদকের গ্রাস হয়েছে আসিফ। কি এক অদ্ভুত যন্ত্রণা আর পাপবোধ ঘিরে ধরলো তাকে, তীক্ষ্ণ সার্জারি ব্লেড চালিয়ে দিলো নিজের গলায়।লুটিয়ে পড়লো, মৃত মেয়েটির পিঠে………!
এভাবেই একটি ঝড়ের রাত সাক্ষী হলো দুটি নগ্ন দেহের মৃত্যু যন্ত্রণার। একটি ক্রোধের, আরেকটি ক্ষুধার।
শুনুন হট রোমান্টিক গল্প – প্রীতির গায়ের গন্ধ এর প্রথম পর্ব। গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক দিতে ভুলবেন না।