নিজেকে একটু ছড়িয়ে নিয়ে থাকবে বলে বিনয় মোড় থেকে বেশ খানিকটা হেঁটে গিয়ে একটা জায়গা বেছেছিল। চারপাশ বেশ চুপচাপ। একসঙ্গে দু’বিঘে কিনেছিল বলে দামেও একটু কম হয়েছিল। পরমার সঙ্গে কথাই হয়েছিল বিনয়ের বাড়ি করার জন্যে সে পাবে মাত্র দু’কাটা। আসলে বিনয়ের লক্ষ্য গাছ আর পরমার বাড়ি।
পরমা যখন বাড়ির ভিত দেখতো, সেইসময় বিনয় দুটো গাছের মধ্যে কতখানি ফাঁক থাকবে সেই নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। এইভাবেই কয়েক বছরের মধ্যে গাছের মিছিলে এসে দাঁড়িয়েছিল নিঃসন্তান পরমা আর বিনয়।
আজ মহালয়ার ভোরে গাছবাড়ি-র বাগানে বসে দুজনে চেনা সুর আর কথায় গুনগুন করছিল। বাবার কথা মনে পড়ল বিনয়ের। রেডিও ছিল না। চাদরটা মাথায় ঢাকা দিয়ে গলায় বেঁধে দিতো বাবা। তারপর মাটির দুয়ারে এসে বসতো বাবা মায়ের সঙ্গে।
দিগন্ত থেকে চোখ সরিয়ে বিনয় বাড়িটার দিকে তাকাল। অসংখ্য গাছের মাঝখানে দু’কামরার ছোট্ট একটা বাড়ি। চারপাশের গাছগুলো যেন চারদিক থেকে বাড়িটাকে আগলে রেখেছে। বিনয় সেদিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, “দ্যাখো পরমা, গাছগুলো যেন সরে গিয়ে আমাদের একটু জায়গা করে দিয়েছে। আমরা ওদের আশ্রিত।”
—– “তুমি যাই বলো এতো জঙ্গল আমার ভালো লাগে না। বাইরে থেকে বাড়িটা দেখাই যায় না !”
—– “আমি তো এটাই চেয়েছিলাম পরমা। তুমি যাকে জঙ্গল বলছ, ওরাই তো আমাদের পিতা। তুমি যতদিন এটা রক্ত দিয়ে বিশ্বাস করবে ততদিন তোমার অহংকারের মাথা কোনোদিন সোজা হয়ে দাঁড়াবে না। আসলে কি জানো পরমা, কোনো কোনো জায়গায় মাথা নিচু করলে মাথা ভালো থাকে।”
পরমার মনে পড়ল, তারা দুই ভাই বোন তখন কলেজে পড়ে। সেইসময় বাবা দাদুর কাছে গেলে বাবাকে মনে হতো স্কুল পড়ুয়া। গলার স্বরও কেমন বদলে যেত। গাছবাড়িতে বসে পরমার মনে হলো, তার মানুষটাও অনেকখানি বদলে গেছে।
হুগলী ,পশ্চিমবঙ্গ,ভারতবর্ষ ।