স্বপ্নদোষ কী?
নাইটফল বা স্বপ্নদোষ, পুরুষদের মধ্যে একটি অতীব সাধারণ সমস্যা। মোটামুটি সব বয়সের পুরুষেরাই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন কিন্তু সাধারণত ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী পুরুষেরা এটি বেশি অভিজ্ঞতা করে থাকেন। সাধারণত, ঘুমের সময় বীর্যের এই স্রাব শরীরের মধ্যে হরমোন পরিবর্তনের জন্য হয়ে থাকে। পুরুষদের বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতে, যৌন আকাঙ্ক্ষার সাথে হরমোনগত পরিবর্তনগুলি উদ্দীপনার সৃষ্টি করে এবং রাতের বেলা সেই কারণে নাইটফল বা স্বপ্নদোষ হতে পারে।
স্বপ্নদোষের সমস্যার কারণ কী ?
রাতে, স্বপ্নদোষ বা পতনের কারণ হল ঘুমের সময় গভীর যৌন উত্তেজনা। এটি যে কারও সঙ্গেই ঘটতে পারে।
১)যারা পর্ন ছবিতে আসক্ত, সেই ব্যক্তিরা স্বপ্নদোষের সমস্যায় বেশি ভোগেন। যৌন ক্রিয়াকলাপের প্রতি অত্যধিক ঝোঁক বা যৌন বিষয়বস্তু পড়া বা দেখা অবচেতন মনকে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত নিয়ে কল্পনায় ভরিয়ে দিতে পারে। এই সমস্যার ক্ষেত্রে, সেই ব্যক্তি ঘুম থেকে জেগে যাওয়ার পর, এই বিষয় সচেতন নাও হতে পারেন।
২)দীর্ঘ সময় ধরে যৌন সক্রিয়তা না থাকাও এই সমস্যার একটি কারণ হতে পারে। এমনকী যারা নিয়মিত হস্তমৈথুনের সঙ্গে জড়িত নয়, তারা সবচেয়ে বেশি এই সমস্যায় ভোগে। প্রতিটি পুরুষের শরীরে স্বাভাবিকভাবেই শুক্রাণু বৃদ্ধি পায়। সময়মতো বীর্যপাত না হলে অনিচ্ছাকৃতভাবে স্প্ল্যাশ আউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩)স্বপ্নদোষ সমস্যার অন্য একটি কারণ হল উচ্চ যৌন ড্রাইভ। যে সব পুরুষরা টেস্টোস্টেরন-ভিত্তিক ওষুধ উচ্চ মাত্রায় সেবন করেন, তাদের ঘুমের সময় বীর্যপাত বেশি হয়।
৪)’প্রি-কাম’ নামক স্বচ্ছ তরল পদার্থে অনেক সময় বিছানা ভিজতে দেখা যায়। প্রি-কাম বীর্য নয়, কিন্তু একটি তরল যা শুক্রাণু বহন করতে পারে এবং গর্ভধারণের কারণ হতে পারে।
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
নিম্নলিখিত কিছু সহজ উপায় আলোচনা করা হলো যার সাহায্যে নাইটফল বা স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি সহজেই পাওয়া যেতে পারে:
1. উদ্বেগ, বিষন্নতা এবং চাপ, এই ধরণের সমস্যা কে বাড়াতে পারে। এবং এগুলি নাইটফল বা স্বপ্নদোষ এর জন্য বিভিন্ন চিকিৎসাকেও অকার্জকরী করে দিতে পারে। শান্ত ও নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করুন ও বিনা কারণে চিন্তা করা বন্ধ করুন।
2. অশ্বগন্ধা, ত্রিফলা পাউডার বা শিলাজিত মত বিভিন্ন হার্বস আয়ুর্বেদীয় মতে, এই ধরণের সমস্যার প্রতিকার হিসেবে প্রমাণিত। এগুলির নিয়মিত সেবন, শুধুমাত্র নাইটফল বা স্বপ্নদোষ এর সাথে লড়ার জন্য নয়, এমনকি হারিয়ে যাওয়া শারীরিক ও মানসিক শক্তি এবং জীবনীতা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
3. নিজের চিন্তা ভবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা কেও নাইটফল বা স্বপ্নদোষ এর কারণ হিসেবে ধরা হয়. সে ক্ষেত্রে মেডিটেশন বা যোগ ব্যায়াম খুবই কার্যকর।
4. বিশেষ করে রাতের দিকে যৌন সম্পর্কিত বিষয়বস্তু দেখা বন্ধ করুন ও তার বদলে ঠান্ডা ও শান্ত সংগীত সোনার চেষ্টা করুন।
5. বটল লাউ -এর জুস, নাইটফল বা স্বপ্নদোষকে রুখতে সাহায্য করে কারণ এই জুস টি শরীর কে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে থাকে।
6. গবেষণা করে দেখা গাছে যে নিষ্ক্রিয় মানুষেরা সাধারণত বেশি নাইটফল বা স্বপ্নদোষ এর শিকার হয়ে থাকেন।দিনে কম করে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করতে পারলে এই ধরণের সমস্যা থেকে দূরে থাকাকে যেতে পারে।
7. একটা হালকা গরম স্নান, শুতে যাওয়ার আগে, নাইটফল বা স্বপ্নদোষ এর সাথে লড়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
8. তুলশিপাতার রস মেশানো চা ও এই ধরণের সমস্যার জন্য খুবই কার্যকর।
9. দৈনন্দিন স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য, দৃঢ়ভাবে এই সমস্যার সঙ্গে যুক্ত দুর্বলতা এবং অন্যান্য উপসর্গ প্রতিরোধ করার জন্য সুপারিশ করা হয়।এছাড়া
10. নাইটফল বা স্বপ্নদোষ, সাধারণত উত্তেজনা থেকে বেশি হয়। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে নিজেকে শান্ত রাখুন, গভীর স্বাস নিন বা পারলে মেডিটেশন করুন।
পবিত্র হবেন যেভাবে
যেসব কারণে মানুষের শরীর অপবিত্র হয় তার একটি স্বপ্ন দোষ। এ থেকে পবিত্র হওয়া জরুরি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬)
পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হওয়ার নিয়ত করতে হবে। মানে স্ত্রী-সঙ্গম, স্বপ্নদোষ, ঋতুগ্রাব ও প্রসব ইত্যাদির কারণে যে নাপাকি এসেছে, সেটা দূর করার নিয়ত করবেন। অর্থাৎ, মনে মনে এই চিন্তা করবেন যে — নাপাকি দূর করার জন্য গোসল করছি।
এরপর লজ্জাস্থানে লেগে থাকা নাপাকি প্রথমে ধুয়ে নেবেন। তারপর দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেবেন। সাবান বা এজাতীয় কিছু দিয়ে ধুতে পারলে ভালো; না হলেও অসুবিধা নেই।
তারপর নামাজের অজুর মতো করে পূর্ণাঙ্গ অজু করবেন। এরপর পানি দিয়ে মাথা ভিজিয়ে নেবেন। তারপর প্রথমে শরীরের ডান অংশে এবং পরে বাম অংশে পানি ঢালবেন। তারপর সারা দেহে পানি ঢালবেন।