স্বপঞ্জয় চৌধুরী
কবিতা লিখতে পারতাম বলে বন্ধুরা ভিড় করতো প্রেমপত্র লিখে দেয়ার আবদারে। কবি মানেই প্রেমিক নয়। তবে প্রেমবোধ তার ভিতরে একবিন্দুও কম নেই। অক্ষরে পিঠে অক্ষর জুড়ে দিতে দিতে কখন যে এটা একটা দশ পৃষ্ঠার চিঠি হয়ে যেত তা বুঝতে পারতাম না। বন্ধুদের প্রেমবোধের সরল ভাষাগুলো আমার মাথায় এসে ভর করতো ক্ষণিক সময়ের জন্য চিঠির চরিত্র হয়ে উঠতাম আমি। আবেগে চোখ ভাসাতাম, কখনো আনমনে অকারণে হাসতাম। কখনো ভাবতাম চিঠির ভাষাগুলোর মতো জীবনটা যদি এতো ছন্দময় হতো, এতো আবেগময় হতো তবে মন্দ হতোনা। আমার চিঠির ভাষাগুলো ব্যর্থ ভাঙাচোরা প্রেমগুলোকে পুডিং এর মতো জোড়া দিয়ে দিত। কিন্তু একটা ব্যাপার কী জানো। যে কারিগর ঘর বানায় তারই হয়তো থাকা হয়না সে ঘরে। আমি মেঘ দেখি, আকাশ দেখি, বৃষ্টির রিনঝিন শব্দ শুনি। তোমাকে নিয়ে কোন আবেগি চিঠি লেখা হয়ে উঠেনি কখনো। যতবার লিখতে গিয়েছি আমার হাত অবরুদ্ধ হয়েছে, যতবার তোমার মুখোমুখি হয়েছি আমার কন্ঠ আটকে ছিল এক অজানা কারণে। হয়তো চিঠিপত্রের যুগের মানুষগুলো এমনই। তাদের প্রকাশের জন্য এখনকার মতো হোয়াটসএ্যাপ, ফেসবুক, লাভ রিয়েক্ট কিংবা ইমোজি তৈরি হয়নি তখন। তবে একটা বিশাল হৃদয় তৈরি হয়েছিল সকলের অগচোরে। যে চোখের ভাষা পড়তে পারেনা, সে কখনো প্রেমিক নয়। যে বুকের বেদনা মাপতে পারেনা চেতনার রিখটার স্কেলে তার ভালোবাসার কোন যোগ্যতাই নেই। আমি কতবার তোমার চোখে চোখ রেখেছি। বলতে গিয়ে বলতে পারিনি ভালোবাসার অমর বাণী। কিন্তু তুমিতো বুঝতে পারতে দহনের শেষেও থাকে শুভ্র কাশফুল। কম্পিত ঠোটের ভাষাতেও লেগে থাকে ভালোবাসার বৃষ্টিফোটা। একরাশ কদম তোমার জন্য ফুটেছিল অমৃত সন্ধ্যায় তুমিতো ছুঁয়ে দেখনি তার মখমল সৌরভ। ফুলের নরম পাপড়ি ঝরে যেতে পারে, তোমার সচল চোখ নিথর হতে পারে। তবু ভালোবাসার চিঠিগুলোর ভাষা রয়ে যায় অমলিন হৃদয়ের ককপিটে।