ছোট গল্প – অদিতি ঘোষদস্তিদার
আকাশটা আজ বড্ড বেশি নীল। এমনটাই কি ছিল আগেও? না কি দীর্ঘ আঠারোমাসের যন্ত্রণাময় চার দেওয়ালের কুটুরী ছেড়ে বেরিয়ে বাইরেটা আরো বেশি রঙিন লাগছে?
আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে আবার পিছনে ফিরলেন সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিনী।
জীবনের পালাবদল ঘটে গেছে জেলখানায়। দেড় বছরে সব ওলট পালট।
তবু পেছনপানে তাকাবার সময় নেই। এগিয়ে যেতে হবে। কাজ অনেক বাকি।
সামনের রাস্তার দিকে চোখ ফেলতেই দুটো চেনামুখ। এগিয়ে আসছে একগাল হাসি নিয়ে।
সঙ্গিনীদের সেই হাসির ছোঁয়া লাগল শুকনো ঠোঁটে, বুকে আশার ঢেউ।
“একী? আপনারা এখানে? কেমন আছিস ইলা? থাক থাক রে মা”
বছর কুড়ির ইলা পায়ে হাত ছোঁয়ায়। শিরা বেরোনো বড় শীর্ণ পায়ের পাতাজোড়া।
“আমাদের সব কুশল বড়দি! কিন্তু আপনার চেহারার এ কী হাল!”
“রাজ আদরের সুফল, বুঝলি!”
কথা বলতে বলতেই এগিয়ে আসেন ইলার বড়দি, অপরজনের দিকে। দীর্ঘদিনের সুখ দুঃখের সাথী।
“জাহানারা আপা, আপনি আবার কেন এত কষ্ট করে কেন এসেছেন বলুন তো?”
“রোজ এই দিনটির জন্যই অপেক্ষা করছি কল্যাণী!”
“ওই নামে কেন আমাকে এখনো ডাকেন আপা! কল্যাণীর কোন অস্তিত্ব কি আর আজ আছে?”
কল্যাণী! হ্যাঁ ওই নামই তো দিয়েছিলেন বাবা! মায়ের আদরের মিনু। হাওড়ার সেই বাড়িটা এই বিংশ শতাব্দীতেও যেন পড়েছিল মধ্যযুগে।
“আমি পড়তে চাই বাবা।”
সেই বোধহয় কল্যাণীর প্রথম প্রতিবাদ।
“বাড়িতে পড়, স্কুল কলেজে যাবার কি দরকার? মেয়েরা তো জজ ম্যাজিস্ট্রেট হবে না!”
উত্তর এলো হাইকোর্টের বিচারপতি রায়বাহাদুর বাবার।
“সে কথা কি জোর করে বলা যায় বাবা?”
মুখে মুখে কথা বলার পুরস্কার মিলল গালে পাঁচ আঙুলের দাগে।
তাও ম্যাট্রিক পাশ হলো। বাড়ি থেকেই অবশ্য, প্রাইভেটে। কলকাতায় মামার বাড়ি গেল মিনু। এমন পাশের খবর নিজে মামাকে না দিলে হয়? আর যে সে মামা তো নয়, তিনি যে স্বয়ং প্রমথনাথ বিশী!
“তোকে আমি বেথুন কলেজে ভর্তি করে দেব। এখানে থেকেই পড়াশোনা কর। তোর বাবা আমার ওপর তড়পাবে না।”
অনেকদিন পর আজ মামার জন্যে বুকটা কেমন করে উঠল। কলকাতা ছাড়ার পর আর তো দেখা হয়নি। সবই তো ছেড়েছিল সেদিনের কল্যাণী ভালোবাসাকে সঙ্গী করে। আর সেই ভালোবাসাই ..
চিন্তা ছিঁড়লো গাড়ির হর্নের আওয়াজ আর ইলার ডাকে।
“ড্রাইভার ডাকছেন আমাদের! বড়দি, আপা গাড়িতে যেতে যেতে কথা হোক।”
“কোথায় যাব আমি আপা? আমার তো যাবার কোন জায়গাই নেই!”
“ও কেমন কথা বোন? আপার বাসা কি তোমার নয়? গাড়িতে ওঠো এখন, বাসায় গিয়ে স্নান খাওয়াদাওয়া করে একটু বিশ্রাম নাও তো।”
“সত্যি আপা, জেলের দরজা দিয়ে যখন বেরোবার সময় ভাবছিলাম যে এতবড় পৃথিবীতে আমার একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চয়ই মিলবে। ভাবতে পারিনি আপনারা আমার মত তুচ্ছ মানুষকে এখন মনে রেখেছেন।”
“কি বলছ? রুমিটা বড় ছোট, তাই ফেলে আসতে পারি নাই সব সময়! কিন্তু মন তোমার তরেই পড়েছিল!”
“আমায় মাপ করবেন আপা, আসলে কি জানেন মনটা একটু ভার। মেয়েটার জন্যে মন কেমন করে। কোথায় আছে, কেমন আছে কিছুই জানিনা যে।”
“আমরাও কিচ্ছু জানি না …আসলে মান্নাফ সাহেব তো আমাদের দেখলেই এখন মুখ ফিরিয়ে নেন.…অথচ আগে কত হৈচৈ আনন্দ। মানুষ কেন যে এত বদলে যায়!”
মুহূর্তের দুর্বলতায় নিজের ওপরই বিরক্তি আসে।
“ওসব কথা এখন থাক আপা । নিজেদের জীবনের হাজার ঝামেলা সমস্যা তো থাকবেই। কিন্তু ওসব ভাবার সময় নয়
এখন, প্ল্যান করতে হবে অনেক কিছু। শহীদদের রক্তের ঋণের বোঝা মাথায়। জেলে একটি রাতও আমি শান্তি পাইনি। মাতৃভাষা মায়ের মত, সে কি কেউ কখনো কেড়ে নিতে পারে?”
“এত শক্তি যে কোথা থেকে পান বড়দি?”
“তোরাই তো আমার শক্তি রে! তোদের পেয়েছিলাম বলেই তো এক ডাকে গোটা মর্গান স্কুল মিছিলে।”
“গায়ে কাঁটা দেয় ভাবলে। তিনশজনের সেই মিছিলে আগে আগে যাচ্ছেন মরগ্যান স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতাজ বেগম! তোমার লড়াইকে আমরা সালাম করি বোন!’ ‘
মমতাজের চোখে ভেসে উঠল চাষাঢ়া মাঠের জনসভা। ১৯৫২ সাল। দেশ দু’টুকরো করেও শাসকের শান্তি নেই, এবার কেড়ে নিতে চায় মুখের ভাষাটুকুও। জোর করে জারি করেছে ১৪৪ ধারা! কদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ উত্তাল।
তারমধ্যে ২১শে ফেব্রুয়ারি খবর এলো ঢাকায় ছাত্রদের গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার খবর। মমতাজ আর থাকতে পারেননি। এবার এসপার কি ওসপার! জনসংযোগ করতে হবে। কলকারখানা, খনি শ্রমিক সবার ঘরে ঘরে মা বোনদের বোঝান, পাশে পাওয়া তাদের। ঘরের মেয়েরা বেরিয়ে আসছে দলে দলে । হাতে তাদের প্ল্যাকার্ড, মুখে গান।
আজ অনেকদিন পর মমতাজকে পেয়ে জাহানারার আবেগ আর বাঁধ মানছে না।
“তুমি একাই তো একশো, না না এক লক্ষ লোকের কাজ করেছিলে। তাই পুলিশ বুঝে গেছিল তোমাকে গ্রেপ্তার না করে তাদের আর উপায় নেই! তোমাকে না আটকালে ঘরের মেয়েগুলো সব উচ্ছন্নে যাবে এমন প্রচার চালাত ওরা।”
দেড় বছরের পুরো ঘা আবার দগদগে হয়ে উঠলো ইলার। অন্যায় অপবাদ দিয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় বড়দিকে কী নাজেহালই না করলো পুলিশ! ২৭ তারিখে স্কুলে এসে সরকারের লোক ধরে নিয়ে গেলো স্কুলের তহবিল চুরির অভিযোগে।
“কথায় বলে না বড়দি দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না! এমনিতে তো আপনাকে ধরতে পারবে না, তাই চোর বদনাম দিয়ে ঢাকায় ধরে নিয়ে যেতে চাইলো। তবে আমরা সবাই অনেক চেষ্টা করেছিলাম বড়দি। নারায়ণগঞ্জের কোন মানুষ বাড়িতে বোধহয় সেদিন ছিল না!”
“আমাকে লোকে এত ভালোবাসে জেনে আমার বুকের ভেতরটা তোলপাড় হচ্ছিল জানিস?”
“হাজার হাজার মানুষ ঘিরে ফেলেছিল থানা। বেগতিক দেখে ওরা জামিনে ছাড়া দেবে ঘোষণা করলো!” ইলার আবেগ আর বাধ মানে না।
“ওসব ভাঁওতা! জান তো বোন, কত কত লোক জামিনের টাকা নিয়ে রেডি ছিল, নিলই না! আসলে তোমাকে ছাড়লেই ওদের মুশকিল তাই না?” বিরক্ত,ক্রুদ্ধ জাহানারা
মমতাজ একবার শিউরে উঠলেন! না! বাইরে তো রোদের দিন, জেলের সেল নয়! কি অমানুষিক অত্যাচার! তাও নুইবেন না একইঞ্চিও।
“স্বীকার কর যা করেছিস ভুল করেছিস, আর কোনদিন ভাষা আন্দোলনে যাব না তাহলে তোকে ছেড়ে দেব. চাকরিও যাতে ফেরত পাস্ সেই ব্যবস্থাও করা হবে!
“না বলব না, মরে গেলেও বলব না! লজ্জা করে না, বাংলার মাটিতে বসে তারই ভাষা কেড়ে নিতে চাইছ?”
“বাংলা নয়, এ পূর্ব পাকিস্তান, এখানে উর্দুই বলবেই একদিন সবাই।”
“কক্ষনো নয়। তোমরাই মুছে যাবে একদিন!”
“তবে রে! যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা! চুপচাপ মেনে না নয়তো জেলের ঘানি টান।”
“কি ভাবছেন বড়দি?”
মমতাজ ঘাড় নাড়লেন। ভাবনার কি শেষ আছে? কিন্তু এই বাচ্চা মেয়েটাকে বলে কি লাভ? কম অত্যাচার তো ইলার ওপর দিয়েও যায়নি!
“তবে সেদিন অত্যাচারী সরকার বুঝে গেছিল আমাদের দমানো অত সোজা নয়। হাজার হাজার লোক রাস্তায়, শুধু ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ১৬০টি গাছ কেটে ব্যারিকেড করেছিলম্ আমরা ছাত্রছাত্রীরা! কিন্তু শেষ রক্ষে হলো না এই যা দুঃখ!”
মমতাজ ইলার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলেন। বড় মায়া।
মেয়ে তো এরাও! তিনি তো শুধু খুকুর মা নয়! খুকু! হায়রে খুকু এখন কোথায়!
নাহ! দুর্বল হলে চলবে না! কাজ অনেক বাকি! যতদিন না বাংলা ভাষাকে নিজের পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা না করা যাবে -শান্তি নেই। কিন্তু কোথা থেকে আবার শুরু করবেন মমতাজ?
আজ তো কিছুই নেই! না অর্থবল, না লোকবল!
বাপের বাড়ির সম্পর্ক তো সে কবেই ঘুচে গেছে।
বাবার সঙ্গে তো চিরকালই বিরোধ। বি এ পাশ করে ব্যাঙ্কে চাকরি। তাতে বাবার প্রবল আপত্তি। কিন্তু পায়ের নিচে মাটি না থাকলে মেয়েদের চলবে না-অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দরকার আগে। তাই নিজের সিদ্ধান্তে অটল। মানতে বাধ্য হলেন বাবা।
এই ব্যাঙ্কেই তো তাঁর প্রেমের মুকুল ফুটল। ভালবাসলেন আব্দুলকে, আব্দুল মান্নাফ।
কানে কথা গেলো বাবার। চাকরি ছাড়িয়ে মেয়েকে ঘরে বন্দি করতে চাইলেন। কিন্তু কল্যাণীর পায়ে শিকল পরান কি অতই সোজা? মান্নাফের সঙ্গে সোজা পূর্বপাকিস্তানে। সেখানে আরো পড়াশোনা, এম এড করা আর স্কুলের চাকরি।
সুখের সংসারে কোলে এলো খুকু!
“কে বললে কিছু হয়নি? সারা দেশ এখন উত্তাল। আমাদের জয় হবেই, তাই না কল্যাণী?”
চিন্তার জাল গেল ছিঁড়ে।
“নিশ্চয়ই আপা, সেই স্বপ্ন নিয়েই তো বাঁচছি!”
“কত প্রাণ চলে গেলো, কত ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে গেলো, তার মূল্য চোকাতেই হবে এদের! তুমিও কী কিছু কম দিলে বোন?'”
“আমার কথা ছাড়ুন আপা!”
“কি করে ছাড়ি? চোর বদনামে চাকরি নিয়ে নিল, জেলে চোরের মার মারল-“
“এত কিছুর পর কিন্তু আমি মুচলেকা দিই নি আপা, মনকে শক্ত করেছি প্রাণপণ!”
“তোমার প্রাণটা ছাড়া সব তো কেড়ে নিল বোন!”
আবার গলার কাছে একটু ডেলা পাকাল মমতাজের। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন গাড়ি থামতে কথাটা চাপা পড়ে গেলো।
“বাড়ি এসে গেছে, নামুন বড়দি!”
ছোট্ট বাড়ি। বাইরে দিয়ে উঠেছে বোগেনভেলিয়ার ঝাড়, আর একদিকে লতানে জুঁই।
নিজের বাগানটার কথা মনে হলো মমতাজের। শখের বাগান, বেদি, দোলনা। দুজনে চায়ে চুমুক, খুকুর খিলখিল হাসি!
এত নিষ্ঠুর কি করে হল আব্দুল? নিজের চাকরি বাঁচানটাই সব কিছুর থেকে বেশি? নাকি ভুল চিনেছিলেন কল্যাণী। সবচেয়ে কাছের মানুষটাই দুঃসময়ে সবচেয়ে বড় আঘাত দিলো!
জেলে দেখা করতে এসেছিলেন আব্দুল। মমতাজের মুচলেকা আদায়ের জন্যে। প্রথমে অনুনয় , বিনয় তারপর চরম হুমকি।
“এমন বৌকে নিয়ে আমি ঘর করব না! তোমার শরীরে কি দয়ামায়া কিচ্ছু নেই? নিজের স্বামী সন্তান সব ভুলে গেছ ভাষা ভাষা করে?”
বিবাহবিচ্ছেদ ঘটল জেলের মধ্যেই। আব্দুল মান্নান সরকারকে দেখিয়ে দিলেন যে বেয়াড়া , সরকারবিরোধী মমতাজ তাঁর কেউ নয়। কেড়ে নিলেন খুকুকেও!
এখন না হয় আপা নিয়ে এলেন, কিন্তু কী ভবিষ্যৎ?
স্নান করে খেতে বসেছেন তিনজনে টেবিলে। কতদিন পর এমন রান্না! তাও কি মুখে ওঠে মমতাজের! মাথায় হাজার চিন্তা!
“শোন কল্যাণী, কটা দিন বিশ্রাম নাও, তারপর ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটিতে গিয়ে ইন্টারভিউটা দিয়ে এস। বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাজটা হয়ত তোমার হয়ে যাবে, আমি কথা বলে রেখেছি।”
আনন্দে চোখে জল মমতাজের।
“আপা! কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেব!”
“কিচ্ছু না! তুমি যে সবাইকে দেখছ, সবার ভাল ভাবছ, আমাদের এইটুকু করতে দাও!”
সব হারিয়েও সহযোদ্ধাদের পাশে পেয়ে আবার বুক বাঁধা ভাষাসৈনিক মমতাজের। আবার নতুন পথচলা।
( কোন চরিত্র কাল্পনিক নয়)
লেখিকার কথাঃ
মমতাজ এরপর ঢাকা বিদ্যালয়ের পরিদর্শক হন। তারপর ১৯৫৪ সালে আনন্দময়ী গার্লস স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা পদে এবং পরে কিছু সময়ের জন্য আহমদ বাওয়ানী জুটমিল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পদে চাকরি করেন। তাছাড়া শিক্ষাবিস্তারের লক্ষ্যে ‘শিশু নিকেতন’ নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষাপ্রচারে আজীবন ব্রতী ছিলেন। তবে অভাবে, অত্যাচারে শরীর ভেঙে পড়েছিল। মাত্র ৪৪ বছর বয়েসে ১৯৬৭ সালে এই মহিয়সী মারা যান। ভাষা আন্দোলনে মমতাজ বেগম এক বিস্মৃত অধ্যায়।
গল্পে উল্লিখিত জাহানারা অর্থাৎ জাহানারা ইমাম বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক। তাঁর ছেলে শাফি ইমাম রুমী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। জাহানারা শহীদ জননী নাম খ্যাত।
ইলাঃ মমতাজের ছাত্রী। ভাষা আন্দোলনের সামনের সারির আন্দোলনকারী। পুলিশের নির্মম অত্যাচার আর নানান বাধা পেরিয়েও আদর্শে অটল।
তথ্য সহায়ক:
1. নারায়ণগঞ্জের ভাষা আন্দোলন ও মহিয়সী মমতাজ বেগম- রফিউর রাব্বী।
- https://www.pressnarayanganj.com
- https://roar.media/bangla/main/history/the-story-of-language-movement-fighter-mamtaj-begum