আশিক মাহমুদ রিয়াদ
একটি নিকশ কালো রাত,
বাতাসে ভেসে বেড়ায় ষড়যন্ত্রের ফিসফিস-
কুমন্ত্রণার তোড়জোড়
নির্লিপ্ত স্বরযন্ত্রের কড়াল গর্জন,
রাস্তায় বের হয় শ’খানেক জলপাই রঙা ট্যাংক।
ঢাকা তখন নিস্তব্ধ,
কেউ কেউ দিনশেষে পরিশ্রান্ত
নিদ্রাযাপিত অবলীলায়,
একঝাপটা স্নিগ্ধ বাতাস এসে
ঘুমন্তদের ঘুম গাড় করে দিল!
তারপরপরি, বোশেখের মতো উঠলো ঝড়,
রাক্ষসের রাইফেলের গুলি,
আর বুটের ভয়ংকর পদচারণায় মুখর
মার্চের তিলোত্তমা ঢাকা!
নিরীহ বাঙালীরা নিদ্রা বিহ্ববল,
দপ করে আসা বাতাসে
কুপি নিভে নিকশ কালো অন্ধকার,
সেই রাতে রাক্ষসের নৃত্যে
ক্রদণ সুরে ভারী হয়ে ওঠে মার্চের ঢাকা৷
বারবার প্রতিবার ক্ষণে ক্ষণে
ভেসে আসে আর্তনাদ!
গলি থেকে রাজপথ
ছড়িয়ে যায় বাঙালীদের নির্মম
যন্ত্রণার নৃশংস কাব্যপট।
এ তো আমার দেশ নয়,
এ তো আমার দেশ নয়,
যেন নরকের অসুর নেমেছে,
সবুজের বুক চিড়ে আজন্ম ক্রোধে
তারা জ্বলছে পাপের বিভিষিকায়।
পিশাচের দল, এ-ই তো আমার দেশ।
আর তোরা হলি ভাড়াটে! সর্বনাশার দল।
শিশুর কান্না, মায়ের কান্না, কিশোরের কান্না
যুবকের গর্জনেও ভেসে আসে যন্ত্রণার ভীষণ কাতরতা!
মুমুর্ষ বৃদ্ধ শেষবারের মতো দেখে নেয়
জীবন নামের নরক দ্যুতিকে!
ওরা গ্রেফতার করে মুজিবকে,
হত্যাযজ্ঞে মাতে ছাত্রদের হলে হলে,
যুবকদের বুকে চালায় নির্মম গুলি!
ভেঙে চুড়ে গুড়িয়ে দেয়
যা আছে চাল-চুলি!
আর মেয়েদের? মায়েদের?
না না না! বুকটা-হৃদয়টা ভারী হয়ে আসে যন্ত্রণায়!
কি নির্মমভাবে, লোলুপ লালসায় মাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী
পশুদের নির্লিপ্ত, পাপের অঘোর বাণে
সেদিন থেকেই শুরু হয় স্বাধীনতার লড়াই।
একটি প্রথম প্রহর, দরজায় কড়া নাড়ে
প্রতিশোধের চরম স্পৃহা, এত বড় সাহস?
গর্জে উঠতে হবে, পাক-পিশাচদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ চাই যুদ্ধ! চাই এ স্বাধীন ভূমি।
চাই স্বাধীন মানচিত্র, চাই এ দেশ আমার।
থোড়াই তোর পাকিস্তান,
এ দেশ আমার দেশ,
লালসবুজের বাংলাদেশ।
সুন্দরবণের বাঘেদের গর্জনে
পাকিস্তানি পিশাচ গুটিয়ে পড়ে।
একটার পর একটা, প্রতিশোধ নিতেই হবে৷
আকাশ হোক, জমিন হোক কিংবা জলাশয়।
পাপের অঘোরে পূন্যের জয়।
সব ক’টা হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।
বাংলার জমিনে-
গড়ে তোলা হয় সংগ্রামের চুড়ান্ত ধাপ
বুলেটের বিরুদ্ধে বুলেট,
গ্রেনেডের বিপরীতেও গ্রেনেড।
তোদের হাত ভেঙে দিয়েই,
মুছে ফেলতে হবে অঘোর পাপ।
স্টেনগানের তোড়জোরে,
ওরা বাধ্য হয়, এ দেশ ছাড়তে।
ডিসেম্বরের ষোল তারিখে!
ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে
দুয়ারে দাঁড়ায়ে আজও অপেক্ষায় মা
কবে ফিরবে খোকা?
খোকা তো আর ফেরে না!
সব ক’টা জানালা খুলে দাও আজ৷
মুক্তির আলোয় রাঙা দেখো প্রভাত
পূব আকাশের স্বাধীন জানালায়।
চড়ুই ওরে মুক্ত আকাশে!
দরজায় কড়া নাড়ে বিজয়,
হে আমার দেশ-
তোমার তরে কতঋণ,
হে বীর যোদ্ধা-
তোমাদের জানাই লাখো সালাম।
জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী।
তোমরাই যে এ ধরণীর বীর,
সোনার বাংলার স্বাধীন ভূখন্ডে!
তোমরাই যে জ্বলন্ত চিরন্তন ইতিহাস ।
শত বাধা পেড়িয়ে, শত আঁধার পেড়িয়ে!
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আজ লালন করি!
বিজয়ের রেশ, চোখে চোখ রেখে সাহস।
দেখো বাংলাদেশ আজ দুর্বার এগিয়ে যায়।
বিশ্ব আজ অবাক তাকিয়ে রয়।
শোনো আজ শোনাই তবে,
মুক্ত বাতাসে বিজয়ের জয়গান!
কলবাতাসে ভাসে বিজয়ের কলরব।
বাংলাদেশের বুকে আজ ভেসে বেড়ায়
আমার সোনার বাংলা, আমার মাতৃভূমি।
বাংলাদেশ হোক চিরজীবী।
(যারা আবৃত্তির জন্য কবিতাটি বেছে নিতে চান, তারা নিজ দায়িত্বে পছন্দের প্যারা নিয়ে সংক্ষিপ্ত রূপ দিতে পারেন।)