স্ট্যান্ডার্ড বাংলাদেশ ডেস্ক
একটি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সেই দেশকে বিশ্বয়নের দিকে কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। সেই কথাকেই মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার হাতে নিয়েছে একের পর এক মেগা প্রকল্প, সেই প্রকল্পগুলো নির্মাণ শেষে উদ্বোধন হয়েছে যার সুবিধা পাচ্ছে জনগন এবং যা সড়ক পথে বাংলাদেশকে আরও দ্রুত করেছে। যার বড় উদাহরণ পদ্মা সেতু, পায়রা সেতু, যমুনা রেল সেতু সহ দেশজুড়ে ১০০ টিরও বেশি সেতু ও সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নতিকরণ। বাংলাদেশ নদীনালা-খাল-বিল ও হাওড় বেষ্টিত একটি দেশ। এ দেশের প্রতিটি জেলাতেই আছে নদী কিংবা হাওর। সবুজে শ্যামল এ দেশের বুক চিড়ে বয়ে গিয়েছে অসংখ্য নদী।
উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবার তারই ধারাবাহিকতায় কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ব্রক্ষ্মপূত্র নদের ওপর দিয়ে একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এর অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। সেতুটি নির্মাণ করা হলে কুড়িগ্রামের সাথে ঢাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার খোলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে নতুন মাত্রা যোগ হবে। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটবে এবং দূর হবে দারিদ্র্য।
এ সম্পর্কে আমাদের ভিডিও দেখুনঃ
ব্রহ্মপুত্র নদে সেতু তৈরী হলে রৌমারী ও রাজীবপুরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে, ফলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর চাপ কমবে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের একমাত্র সড়ক সেতু বঙ্গবন্ধুর সেতুর ওপর প্রায় ৪০ ভাগ পরিবহন চাপ কমে আসবে। আর সেতুতে রেল যোগাযোগ যুক্ত করলে মানুষের যোগাযোগ ব্যয়ও কমে আসবে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে।
ব্রম্মপূত্রনদটী সরাসরি হিমালয় থেকে অববাহিত হয়ে তিব্বত থেকে গুয়াহাটি হয়ে কুড়িগ্রাম থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদটি সর্বাধিক প্রস্থ ধারণ করেছে কুড়িগ্রামে। সম্ভব্যতা রিপোর্ট অনুযায়ী চিলমারী-রৌমারি নৌপথে ব্রম্মপূত্র নদের ওপর সেতু নির্মাণ করা হলে সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে আমুমানিক ১০-১৩ কিলোমিটার যা পদ্মা সেতু এবং প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল সেতুর চেয়েও দৈর্ঘ্যে বড় হবে।
ব্রহ্মপুত্র নদের সেতু না থাকায় কুড়িগ্রাম-রংপুর-বগুড়া হয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে যেতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা ব্যয় হয়। অন্যদিকে রৌমারী শেরপুর-জামালপুর দিয়ে ঢাকা-সিলেট-ময়মনসিংহ যেতে ৫ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। এই সেতু বাস্তবায়ন হলে সময় এবং অর্থনৈতিকভাবে সবাই লাভবান হবে। শুধু দেশে নয় এই সেতু হলে আন্তর্জাতিকভাবেও তা গুরুত্ব পাবে। কারণ ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্যসহ নেপাল এবং ভুটানের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, সেতুটি নির্মাণ করা হলে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যপক উন্নতি ঘটবে। তা ছাড়া বর্ষা মৌসুমে যখন ব্রম্মপূত্র নদ উত্তাল থাকে তখন প্রায়শই ঘটে নানা দূর্ঘটনা। যার কারণে এই নৌপথে যাতায়ত কারী মানুষদের জীবনের ঝুকী নিয়ে দীর্ঘ নৌপথটি পাড়ি দিতে হয়। সম্প্রতি এই নৌপথে একটি ফেরী সংযুক্ত হয়ে মানুষের দূর্ভোগ কিছুটা কমলেও পরিপূর্ণভাবে খুশি নয় এই রুটে যাতায়তকারী যাত্রীরা। সেই সাথে নানাবিধ কারণে প্রায়শই ফেরী বন্ধ থাকে, যার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। সেই সাথে একটি ফেরী মিস করলে প্রায় ৬ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় পরের ফেরীটির জন্য। তাই এই ভোগান্তি লাঘবে অতিশীঘ্রই একটি সেতু নির্মাণের দাবী এইরুটে চলাচলকারী যাত্রীদের।