সেলিব্রেশন

সেলিব্রেশন
অমিত মজুমদার
 “কয়েকদিন পর অভিশপ্ত বছরটা বিদায় হবে আর এবার একত্রিশে ডিসেম্বর রাতে আমরা সেলিব্রেট করবো না ? আলবাৎ করবো। বর্ষ বিদায় মুহূর্ত প্রতি বছর যেমন তোদের বাড়িতে আমরা কয়েকজন মিলে সেলিব্রেট করে থাকি এই বছরও ঠিক তেমনটাই করবো। কেক কাটা হবে। এবারেও আমি নিজের হাতে মাংসটা রান্না করবো। কাকিমাকে বলে রাখিস। তুই বলতে না পারলে আমিই বলবো।” ফোন কানে নিয়ে টানা এতগুলো কথা বলার পরে থামলো শেলী।
        ওপাশ থেকে অরিত্র হেসে বললো “বেশ সেলিব্রেশনে আমার আপত্তি নেই। আমরা কয়েক জন বন্ধু এক জায়গায় হবো এর থেকে আনন্দের কিই বা আর হতে পারে ? কোভিড নাইন্টিনের প্রভাবে তো আমাদের সবাই এক জায়গায় হয়ে আড্ডাটাও অনেক দিন হয় না।”
        “তাহলে আর সমস্যা কিসের ? সবাইকে বলে দিলেই হয়।”
        “সবাই কি আসবে ?”
        “আসবে না কেনো ?  আমরা কেউ কোভিড পজিটিভ নই। আর বিষয়টা এখন অনেক জলভাত হয়ে গেছে। সবাইকেই নিজের কাজে বেরোতে হচ্ছে। কেউ ঘরে বসে নেই।”
        “হ্যাঁ আমরা কেউ ঘরে বসে নেই। তবে আমাদের গ্রুপের কয়েকজনকে তাদের অফিস বসিয়ে দিয়েছে। তুই হাইস্কুলের দিদিমণি। তোর সমস্যা নেই। আমারও সমস্যা নেই। তবে কয়েকজনের তো কাজ চলে যাওয়ার জন্য মাঝখানে কয়েক মাস কোনো ইনকাম ছিলো না। এখন তারা অন্য কাজ করছে। কি করছে ? না কেউ ধূপকাঠি বিক্রি করছে। কেউ বা কিছু করার চেষ্টা করেও পারেনি। প্রাইভেট সেক্টারে কাজ ছিলো তাদের। কোম্পানি রাখেনি। তাদের এই অবস্থায় বলি কি করে নতুন বছর সেলব্রেটে আসতে ?”
        কথাটা শুনে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলো শেলী। বললো, “কথাটা ঠিক বলেছিস। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে কেউ আমাকে কিছু বলেনি। আমি সঠিক জানিও না যে কার কার কাজ নেই। সবার সঙ্গে যোগাযোগ নেই আমার। অনেককে মেসেজ করলে রিপ্লাই দেয় না। ফোন করলে ধরে না। পরে কল ব্যাকও করে না। লকডাউন শুরু হবার পরও সবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো। তারপর কিছুদিনের মধ্যেই সবাই আমাকে কেমন যেনো অ্যাভয়েড করা শুরু করলো। আমার অপরাধ আমি হাই স্কুলে চাকরি করি। স্কুল বন্ধ তবু আমার বেতন কাটা হচ্ছে না কেনো ? এটাই সবার সমস্যার কারণ ছিলো কেননা সবার ইনকাম বন্ধ হবার পরেও ঘরে বসে আমি বেতন পাচ্ছি। শোন আমি তো সরকারকে বলিনি যে স্কুল বন্ধ করে দিতে। এই সিদ্ধান্ত সরকারের। আমি কি করতে পারি ?” কথাগুলো বলতে বলতে বেশ উত্তেজিত হয়ে গেলো শেলী।
        “রেগে যাস না। দোষ তোর না। দোষ তাদেরও না। সময়ের ফল আমরা ভুগে চলেছি।”
        “শোন এসব কথা আমাকে বলতে যাস না। মেজাজ খারাপ হবে। একত্রিশে ডিসেম্বর তোদের বাড়িতে আমাদের পিকনিক হচ্ছে এটাই আমার শেষ কথা। দু দিন আগে বড়দিন গেলো। প্রতি বছর বড়দিনে কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাই। এবছর সেটাও হয়নি। তাই এই পিকনিক আমি মিস করবো না কোনোভাবে। কেউ না থাকলে তুই আর আমি দু’জন মিলেই করবো।”
        “পরে সেটা সবাই জানলে কি ভালো হবে ?”
        “পিকনিকের দরজা সবার জন্য খোলা। সবাইকেই জানানো হবে। আসা না আসা তাদের ব্যাপার। তোর দায়িত্ব থাকছে সবাইকে জানানোর। তুই সবাইকে বলবি আসতে। তবে দয়া করে আমার কথা বলবি না।”
        ৩১সে ডিসেম্বর রাতে অরিত্রদের বাড়িতে শেলী বাদে সবাই এসেছে। রান্নার দায়িত্ব সবাই ভাগ করে নিয়েছে। বেশ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। শেলীকে দু দিন ধরে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। নিউ ইয়ারের সেলিব্রেশনে না আসার জন্য সবাই তার সমালোচনা করছে । দিদিমণি হয়ে অহংকার হয়ে গেছে এটাই মূল আক্রমণের বিষয় । অরিত্র জানে শেলী আসবে না। দুদিন আগেই জেনেছে পঁচিশে ডিসেম্বরের আগের দিন ওর কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। কয়েকদিন হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলো। সব বন্ধুদের এক জায়গায় আনার জন্য এমন একটা পরিকল্পনা করেছিলো সে। তিন চার দিন হলো রোগটা বাড়াবাড়ি হয়েছে। দুদিন আগেই তাকে বাড়ি থেকে কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাবার আগে ফোনে শেলীকে প্রমিস করার জন্য এই কথাটা অরিত্র বলতে পারছে না কাউকেই। এদিকে অভিশপ্ত কুড়ি ক্রমশই এগিয়ে চলেছে নতুন বছরের দিকে।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
উৎসর্গ

উৎসর্গ

বন্ধু নিয়ে কবিতা – নুসরাত শর্মি   বন্ধুরা আর ক-টা দিন, প্লিজ আর ক-টা দিন, অনলাইন জগতে নিজেকে ব্যস্ত রাখ! তারপর আমরা আবার একসাথে হবো, ...
বেশ্যা বাড়ির মাটি

বেশ্যা বাড়ির মাটি

আশিক মাহমুদ রিয়াদ শারদপ্রাতে, বাতাসে মিষ্টিঘ্রাণ আকাশে ওড়ে সাদা মেঘ, ধু ধু কুয়াশা ঘেরা প্রান্তরে মর্ত্যলোকে নামলেন দেবী! চারদিকে ছড়িয়ে গেলো সুঘ্রাণ, ধুপ-ধুনোর গন্ধ রাঙালো ...
মা দিবসের দুটি গল্প

মা দিবসের দুটি গল্প

জোবায়ের রাজু মায়ের স্বপ্ন রাত সাড়ে এগারোটা। এত রাতে বাসায় ফিরেছি দেখে ভাবলাম মা রেগে মেগে আগুন হয়ে যাবেন। কিন্তু মায়ের মুখের মধুর হাসি দেখে ...
চিত্ত যেথা ভয়শূন্য

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য

ছোট গল্প – অদিতি ঘোষদস্তিদার   আকাশটা আজ বড্ড বেশি  নীল। এমনটাই কি ছিল আগেও? না কি দীর্ঘ আঠারোমাসের যন্ত্রণাময় চার দেওয়ালের কুটুরী ছেড়ে বেরিয়ে ...
অহংকার   

অহংকার   

গোবিন্দ মোদক    ‘রেইনি ডে’ ঘোষণা করেছেন হেডমাস্টার। গুটিকয় যে ক’জন ছাত্র-ছাত্রী এসেছিল তারা সব চলে গেছে। এতো বৃষ্টিতে বের হবার উপায় নেই — তাই ...
স্বাক্ষর

স্বাক্ষর

জোবায়ের রাজু সাত সকালে মায়ের বাড়ি কাঁপানো চিৎকার শুনে আমাদের চোখ থেকে ঘুম নিমিষেই পালিয়ে গেল। কোন অঘটন ঘটেছে কিনা, সেটা পর্যবেক্ষণ করতে আমি আর ...