অণুগল্পগল্পজীবনের গল্পনির্বাচিত সেরা গল্প (২০২৩)প্রথম পাতাসর্বশেষ

উপহাসের দীর্ঘশ্বাস

 আশিক মাহমুদ রিয়াদ

 

হাসপাতালের বারান্দা। সামনে লম্বা ভীড়।

রোদের তেজ বেশি। বর্ষাকাল, তবুও আকাশে মেঘের ছিটেফোটা নেই। 

 কেউ কাঁশছে, কেউ কাঠফাটা রোদ্দুরে বসে পড়ছে। চেয়ারে বসে আছেন এক চৌকিদার, তিনিও দারুণ বিরক্ত। মাথার ঘাম গাল ভেয়ে তার একটি ফোটা পড়েছে তার পায়ে। খুব ছোটবেলায় তিনি শুনেছিলেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে খেতে হয়। তিনিও তাই করছেন। একটু পর পর পানি খাচ্ছেন,এতে ঘাম আরো বাড়ছে। মুত্রচাপের বেগে বাথরুম থেকে ঘুরে আসছেন একটু পর পর। যাওয়ার আগে লম্বা লাইনের

 আমজনতাকে একটু হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। 

 

কাঠফাটা রোদ্দুরে হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছেন এক মা। তিনি তার সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন শরীরের কিছু পরিক্ষা করানোর জন্য। তার সন্তানকে তিনি তার ওড়না দিয়ে তার শরীরের সাথে আগলে রেখেছেন। ছেলেটির বয়স পনেরো বছর। ছেলেটির বাবা নেই। মা দর্জির কাজ করে সংসার চালান। 

ছেলেটির প্রচন্ড শীত লাগছে, আর মায়ের শরীর বেয়ে পড়ছে ঘাম। ছেলেটার গা’টা তাপে পুড়ে যাচ্ছে।

ছেলেটি মুখ ফুটে খুব কষ্ট করে বলল,’মা পানি খাব?’ 

মা বোতলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন পানি নেই। তিনি আশেপাশে তাকালেন। কোথায় পানির টিউবওয়েল নেই। 

 

২.

আমজনতার ঠ্যালাঠ্যালি বেড়েছে। কেউ কেউ এই ঠেলা ঠেলিতে নেতিয়ে গিয়েছে।

মা উঠে গিয়ে চৌকিদারকে বললেন,’ভাইজান,এইখানের পানির কলটা কোথায়?’ 

চৌকিদারের একটু তন্দ্রায় চোখ বুজে আসছিলো। 

মায়ের কথায় তিনি হকচকিয়ে উঠলেন। 

চৌকিদার মাথা বেজায় গরম। তিনি শলা দিয়ে দাত খুঁচতে খুঁচতে বললেন,এইখানে দিয়া যাইয়া দুই তালার কোনার রুমের আগের রুমের দরজার পাশে দেখবেন একটা ফিল্টার আছে। তয় আফনে যাইতে পারেন কি না সন্দেহ। যে ভীড়!

 

মা বললেন,’আফনে একটু আইন্যা দেন না। ‘

চৌকিরার ফিসফিসিয়ে বলল,’বিশটা টাহা বাইর করেন। ‘ 

মা বললেন,’আমার হাতে তো বেশি টাকা নাই। আছে কয়ডা টাকা। এই টাকা দিয়া আমার বাড়িত ফেরোন লাগবো। ‘ 

চৌকিদার এবার উদাসীন ভঙিতে বলল,’তাইলে আপনে  গিয়া নিয়া আসেন। আমার এইখানে থাহা লাগবো।উপর দিয়া চাপ আছে। ‘

ছেলেটি শীতে কুকড়ে আছে। সে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো মেঝেতে। তার শরীর কাঁপছে,গলা শুকিয়ে এসেছে। তার রবিন্দ্রনাথের কবিতার চারটি লাইন মনে পড়ছে-

খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান।

পদে পদে ছোটো ছোটো নিষেধের ডোরে

বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালো ছেলে করে।

প্রাণ দিয়ে, দুঃখ স’য়ে, আপনার হাতে

সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সাথে।

 

মা এদিক-ওদিক পায়চারী করছেন। তিনি ফিল্টার খুঁজে পাচ্ছেন না।

 

বাংলাবাজার,বরিশাল

এই লেখাটি শেয়ার করুন
ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

ছাইলিপির কথা

লেখালিখি ও সৃজনশীল সাহিত্য রচনার চেষ্টা খুবই সহজাত এবং আবেগের দুর্নিবার আকর্ষণ নিজের গভীরে কাজ করে। পাশাপাশি সম্পাদনা ও প্রকাশনার জন্য বিশেষ তাগিদে অনুভব করি। সেই প্রেরণায় ছাইলিপির সম্পাদনার কাজে মনোনিবেশ এবং ছাইলিপির পথচলা। ছাইলিপিতে লিখেছেন, লিখছেন অনেকেই। তাদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই ওয়েবসাইটের প্রতিটি লেখা মূল্যবান। সেই মূল্যবান লেখাকে সংরক্ষণ করতে লেখকদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। কোন লেখার মধ্যে বানান বিভ্রাট থাকলে সেটির জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ছাইলিপি সম্পর্কিত যে কোন ধরনের মতামত, সমালোচনা জানাতে পারেন আমাদেরকে । ছাইলিপির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ছাইলিপির নতুন সংযোজন ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল Chailipi Magazine। সাবস্ক্রাইব করার আহ্বান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা থেকে বিরত থাকুন ! বিশেষ প্রয়োজনে ইমেইল করুন [email protected]