ট্রিকস এন্ড টিপস                  

ট্রিকস এন্ড টিপস                  

জালাল উদ্দিন লস্কর শাহীন

হোটেলে নাস্তার পর কাউন্টারে  বিল দিয়ে বেরুনোর সময় ওয়েটার হ্যান্ডশেক করার জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিলেন।অবাক হলো রুবিন।আমাদের কাছ থেকে এটিকেট আর ম্যানার যখন ক্রমেই বিদায় নিচ্ছে, বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে ঠিক এমন সময় প্রায় প্রত্যন্ত এলাকার কোনো হোটেলের ওয়েটারের এমন বিনয় রুবিনকে নতুন করে নিজের সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করলো।মনে মনে নিজেই নিজেকে রিমান্ডের আসামীর মতো জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে দিলো।হিসাব মিলাতে পারছিল না কিছুতেই।

মানুষের সাথে কতোবার কতোরকমভাবেই না সে কারনে-অকারনে খারাপ আচরন করে আসছে। তার লেখা-পড়ার কী মূল্য আছে।নিজেকে নিজে বারবার ধিক্কার দিতে লাগলো।মনে মনে ভাবতে শুরু করলো, শিক্ষার কোনো শেষ নেই।বয়স নেই।সময়-অসময় নেই।সবার কাছ থেকেই শেখার আছে।এসব ভাবতে ভাবতেই রুবিনের একটা হাদিস মনে পড়লো-দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষার স্থান।মনের অজান্তেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো থ্যান্কস।ওয়েটার রুবিনের দিকে শুকনো মুখে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।একটা কাষ্ঠহাসি দিলো।দেখা হবে বলে ত্রস্তপায় রুবিন হোটেল থেকে বেরিয়ে নিজের গন্তব্যের পানে হনহনিয়ে ছুটতে লাগলো।

প্রায় প্রতিদিন সকাল সকাল রুবিনকে ছুটতে হয় কর্মস্থলে।হোটেলেই সারতে হয় সকালের নাস্তা।একেকদিন একেক হোটেলে নাস্তার কাজটা সারে।

সে ভালো করেই জানে সুস্বাদু হলেও হোটেলের এসব মুখরোচক খাবার মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।তবুও নিরুপায় হয়েই এসব পেটে চালান করেই তাকে জীবনের চাকাটা সচল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।

অনামিকা হোটেল নামে একটা নতুন হোটেল চালু হয়েছে সদাগর পাড়ায়।লোকমুখে শুনেছে ঝা-চকচকে এই হোটেলের খাবার-দাবার নাকি ভালোই।দামও খুব বেশী নয়।নতুন হোটেলের নতুন স্বাদের খাবার খেয়ে রুচি পরিবর্তন করা দরকার।রুবিন মনে মনে ভাবে।

অনামিকা হোটেলের খাবার তার পছন্দ হয়।স্বাদে-গন্ধে নতুনত্ব আছে।বৈচিত্র আছে।স্টাফও চটপটে। সিদ্ধান্ত নিলো এখন থেকে অনামিকাতেই সকালের নাস্তার কাজটা সারবে! আর ওই অনামিকতেই পরিচয় হয় ওয়েটার কুদ্দুসের সাথে।ওয়েটার কুদ্দুসই প্রথমদিন হ্যান্ডশেকের জন্য রুবিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েে তার মনোভূবনে হিরো হয়ে উঠেছিলো। রুবিন ভাবতে হায়! লাগলো বাংলাদেশের সব মানুষই যদি কুদ্দুস ওয়েটারের মতো এটিকেটওয়ালা হতো! সত্যিকারের সোনার বাংলা হয়ে উঠতো এ দেশটা।আশা করতে দোষ কি,স্বপ্ন দেখতেও সমস্যার কিছু নাই।স্বপ্নবাজ আর আশাবাদী মানুষ রুবিন। এখনই না হউক একসময় ঠিকই তার চাওয়া পূরন হবে এমনটা ভাবতে ক্ষতি কি।এমন ভাবনা ভাবাটাই পজেটিভনেস। নেগেটিভিটির এই দাহকালে এতোটুকু পজেটিভ না হলে আর কিসের মানুষ! মনে মনে নিজেকে ইতিবাচক চিন্তার একজন মানুষ ভেবে রুবিনের রীতিমতো গর্ব হতে থাকে।তার মষ্ত্লিস্কে আনন্দ-উৎসারী হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়।আনন্দের আবেশে নিজেকে চিন্তাবিদ-চিন্তাবিদ লাগে।এক পর্যায়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।ঘুমের ঘোরে রুবিন স্বপ্নে নিজেকে সেই অনামিকা হোটেলে আবিষ্কার করে।বিল পরিশোধ করে আসার সময় আজ আর কুদ্দুস হ্যান্ডশেক করতে রুবিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় না।স্বপ্নের মধ্যেই মন খারাপ হয় রুবিনের।ঘুম ভেঙ্গে যায়।সারা শরীরে ঘাম।

বিশ্বাস করতে চায়না সে এমন তাজ্জব স্বপ্ন। পরদিন যথারীতি অনামিকা হোটেলে সকালে নাস্তা শেষে বিল পরিশোধ করে চলে আসার সময় কুদ্দুস হাসিমুখে হ্যান্ডশেকের জন্য হাতটা বাড়িয়ে দেয়।হ্যান্ডশেকের পর হোটেল থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে রুবিনের মনে পড়ে পড়ে যায় গতকাল দেখা সেই স্বপ্নের কথা যা দেখে তার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো।তার কাছে তার দেখা সেই স্বপ্নটাকে মনে হলো ‘ শয়তান্যা খোয়াব’! কারন মুরুব্বীদের কাছে রুবিন শুনেছে যে শয়তান্যা খোযাব সত্যি হয় না! সত্য স্বপ্ন হলে তো আর কুদ্দুস হাত বাড়িয়ে দিতো না হ্যান্ডশেকের জন্য।যদিও শয়তান-টয়তানে তার তেমন বিশ্বাস নেই।

সেদিনের পর থেকে আর কোনোদিন কুদ্দুস রুবিনের দিকে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িযে দেয় না।রুবিনও এর কোন  কারন খুঁজে পায় না।মনে মনে কেমন একপ্রকার অশান্তি অনুভব করে।একধরনের অস্বস্তি মনের মধ্যে খোঁচাতে থাকে তার। তবে এতোদিন ধরে সে কী ভেবে আসছে? কুদ্দুসের হঠাৎ বদলে যাওয়ারই বা কারন কী?তবে রুবিন লক্ষ্য করে দেখেছে অন্য অনেকের সাথ  কুদ্দুস হাসিমুখে হ্যান্ডশেক করছে।কথা বলছে।মন খারাপ করে রুবিন ভাবে তবে কি সে না বুঝে কোনো কষ্ট দিয়েছে।মনে করতে পারে না।

একদিন কথায় কথায় বন্ধু মিরাজের কাছে সব খুলে বলে রুবিন।সব শুনে মিরাজ জানায় তুই একটা বোকা।

তোর সাথে হ্যান্ডশেক করাটা ছিল কুদ্দুসের  একটা ট্রিকস।টিপসের জন্য। তোকে দিয়ে কিছুই হবেনা রে হাদারাম!বিড়বিড় করে কী যেন বলতে চায় রুবিন।বুঝা যায় না কিছুই।

 

শিক্ষক, উপজেলা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। 
মাধবপুর,হবিগঞ্জ।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
বড়দিনের ইস্তাহার

বড়দিনের ইস্তাহার

মহীতোষ গায়েন একদিন এইখানে বড়দিনে চাঁদ ডোবা রাতে বলেছিলে পাশে আছি চিরদিন, এখন দুঃসময়,স্মৃতি সব ভেসে গেছে,ভেসেছে শপথ,অঙ্গীকার,সব আশা ক্ষীণ। একদিন এইখানে রক্তিম ভোরে একজোট ...
ষোলোই ডিসেম্বর

ষোলোই ডিসেম্বর

বদ্রীনাথ পাল স্বাধীনতা নয় সহজ সরল কথা- পিছনেতে তার রয়েছে যে ইতিহাস, স্মরণে জাগায় মর্মে  মর্মব্যথা- কতো না দুঃখ, কতো না দীর্ঘশ্বাস। সন্তান হারা হয়েছে ...
ভালোবাসি বাবা [ কবিতা ]

ভালোবাসি বাবা [ কবিতা ]

তানভীর আহমেদ তপু হয়নি বলা কিছু কথা বাবা, হয়নি বলা ভালোবাসি। বাবা তুমি মানুষ নও! তুমি আমার জীবন ডায়েরির পাতায় রটানো অসংখ্য ভালোবাসায় জড়ানো মহান ...
All Your Burning Technology Questions, Answered

All Your Burning Technology Questions, Answered

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...
আমার গ্রামে রাত

আমার গ্রামে রাত

অলোক কুমার প্রামাণিক   আমার গ্রামে চাঁদ উঠেছে  তেঁতুল গাছের মাথায়  ঠিকরে পড়ে চাঁদের আলো  হুগলি নদীর পাতায়।    এপার ওপার গাছের সারি  নেইতো রাতে ...
একজন কবি এবং তার কবিতা | আতিদ তূর্য

একজন কবি এবং তার কবিতা | আতিদ তূর্য

আতিদ তূর্য এক. একটি সুস্বাদু জীবনের রেসিপি তোর খোপায় গুঁজে দেবো, পাহাড়ি কোন এক রঙিন ফুল। তোকে নিয়ে ১৮০০ ফুট উঁচুতে, হৃদয়ের টবে গুছিয়ে সাজাবো। মেঘ ...