ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শতবর্ষ উত্তীর্ণ করতে চলেছে আগামী ১ লা জুলাই — দুই বাংলার বাঙালির কাছে এক আকাশ অহংকার। শুধু তাই নয়, বাঙালির কাছে এ এক পরম গৌরবের বর্ণময় ঘটনা। তখনকার পূর্ববঙ্গে ওই সময়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা, সাম্রাজ্যবাদী শাসকের হাতে হলেও, খুবই মহৎ কাজ হয়েছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ,পূর্ব বাংলার বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠী তাঁদের নিজেদের মাতৃভূমিতে, নিজস্ব পরিবেশে একটি উচ্চতম শিক্ষার প্রতিষ্ঠান পেয়েছিলেন। তা শিক্ষার সর্বোচ্চ উৎকর্ষের একটি নিজের মানদণ্ড নির্মাণ করেছে এবং নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎকৃষ্ট বিশেষজ্ঞ আর বিদ্বজ্জনের জন্ম দিয়েছে। সেই ‘আলমা মাতের ‘বা বিদ্যাজননীর জঠর থেকে নির্গত বহু সন্তান এই উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক বৈভবকে সমৃদ্ধ করেছেন। সময়ের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহুগুণী অধ্যপকদের অধ্যাপনায় সমৃদ্ধ হয়েছিল। ক্রমশ সে তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে । এ-এক গর্বিত বর্ণিল ইতিহাস। দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতে চলে আসা বহু স্বনামধন্য অধ্যাপক ছিলেন, সে নামের তালিকা প্রলম্বিত–ডঃ সুশীল কুমার দে,গণেশচরণ বসু, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পৃথ্বীশ চক্রবর্তী, অর্থনীতির পঞ্চানন চক্রবর্তী, লোকসংস্কৃতির প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব ডঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য, শান্তিনিকেতনের ডঃ ভবতোষ দত্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের ছাত্র। এছাড়া ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক এনামুল হক, কাজী মোতাহার হোসেন, কবীর চৌধুরী ,মোফাজ্জল হোসেন, আনিসুজ্জামান, নুরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম ‘— নামের তালিকা অন্তহীন।
অহংকারের আয়নায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণীজন: শেখ মুজিবুর রহমান (স্বাধীনবাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা) ,শেখ হাসিনা ( বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী), বুদ্ধদেব বসু ( সাহিত্যিক), হুমায়ূন আহমেদ ( সাহিত্যিক), মুহাম্মদ ইউনুস ( নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ), আনিসুজ্জামান ( ভাষাবিদ), দিনো শাফিক (কৌতুক শিল্পী), সাবিনা ইয়াসমিন ( সঙ্গীত শিল্পী),তসলিমা নাসরিন (সাহিত্যিক),তানভীর মোকাম্মেল( পরিচালক)। অর্থাৎ সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বাংলার সমাজ জাগরণের অগ্রদূত।
শতবর্ষ উদযাপনের শুভ সূচনা :
আগামী বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) শতবর্ষে পা দিতে চলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। বুধবার (৩০ জুন) ৯৯বছর পূর্ণ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়টির। ২০২১ সালের ৩০ জুন একশ’ বছর পূর্ণ হবে। একশ’ বছরে পা দেওয়ার প্রথম দিন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উদযাপন করবে উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, নতুন নতুন নানা গবেষণা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই পরিচিতি পায় বেশি।আশা আকাঙ্ক্ষার জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়েরকর্মকাণ্ডের সমালোচনা করলেও তারা তাদেরপ্রত্যাশা নিয়েই তাকিয়ে আছেন‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বল্প পরিসরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। পতাকা উত্তোলন ও বেলুন ওড়ানোর পর সকাল ১১টায় অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে অনলাইন সভা করা হবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনলাইন ভার্চুয়াল সভায় জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সংযুক্ত হয়ে ‘শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রসঙ্গ: আন্দোলন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক মূল বক্তব্য দেবেন।
স্বাধীন জাতিসত্তার বিকাশের অন্যতম লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।নেটিজনেরা একে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলেও সম্বোধন করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সব জন আন্দোলন ও সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। ১৯২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৯৯ বছর শেষ করে শতকের ঘরে পা দিচ্ছে ১ লা জুলাই ।
দিনটি উপলক্ষে ঢাবি উপাচার্য জানিয়েছেন, ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ২০২০ সালের এই দিনে ৯৯ বছর শেষ করে শতবর্ষে পা দিলো আমাদের এই চিরতরুণ প্রতিষ্ঠান। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লোকসমাবেশ এড়িয়ে প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রীবিহীন স্বল্প পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন নিঃসন্দেহে আনন্দ, প্রশান্তি ও স্বস্তির ঘাটতি অনস্বীকার্য তবে মুজিব বর্ষেরএই আলোকসামান্য কালপর্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। প্রকৃতপক্ষে, ‘বঙ্গবন্ধু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ বাংলাদেশ নামক আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির দুই অন্তহীন প্রেরণা-উৎস।
ঢাবি উপাচার্য বলেছেন , ‘শিক্ষা ও গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নতুন ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালে আমাদের অস্তিত্বপ্রতিম এই প্রতিষ্ঠান শতবর্ষপূর্তি উদযাপন করবে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও একই বছর উদযাপিত হবে। তাই বছরটি হবে আমাদের জন্য এক বিশেষ মর্যাদা, সম্মান, আবেগ, অনুভূতির সংশ্লেষে গৌরবদীপ্ত ও স্মৃতি-ভাবুকতার বছর।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অদম্য এই যাত্রা নিয়ে সংহতি এবং ক্ষোভ দুই আছে অনেকের মনে। ‘ঢাকা বিশব্ববিদ্যালয় দিবসের’ আয়োজন ভার্চুয়ালি পালন করা হবে। সেটা কতটা অংশগ্রহণমূলক করা যাবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নির্বাচিত প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি এবং কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, রাজনীতি চর্চার ব্যাপ্তি না থাকায় প্রগতি নেই। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষা ব্যয় নির্ধারণের জন্য সরকার ট্যাক্স নেয়। জনগণের টাকা নিয়ে সবার আগে প্রয়োজন স্বাস্থ্য, শিক্ষা এগুলোই। এটার পেছনে খরচ করার নীতি যতক্ষণ না নিচ্ছে রাষ্ট্র, ততক্ষণ এরকমই হবে।’ তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থই হলো ‘নতুন জ্ঞান’ সঞ্চয় করা। গবেষণা কাজ ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় সমৃদ্ধ হতে পারে না। কিন্তু সেজন্য অর্থ বরাদ্দ দরকার ।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান। তার মতে, ‘নতুন নতুন গবেষণা এবং তা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ফলাও করে প্রচার করতে হবে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,’ তিনি আরও বলেন ‘অনেকেই জানেন না নতুন নতুন গবেষণার তথ্য। এগুলো মানুষের চর্চা এবং ব্যবহারে কাজে লাগতে পারে। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো উপস্থাপনে এখনও অনেক ঘাটতি আছে। ১০০ বছরের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, তার এতগুলো বিভাগ এতগুলো কার্যক্রম, কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক ঘটনা পত্রপত্রিকায় ফলাও করে বের হয়। এমনকি ছোট ঘটনা হলেও তা পত্রিকায় জায়গা করে নেয়। কিন্তু অনেক গবেষণার সাফল্য কিংবা খবর সামনে আসে না। আমার কাছে মনে হয়, এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জায়গা আরও বিস্তৃতি করা দরকার এবং একইসঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি চর্চায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে— এটাই আমি প্রত্যাশা রাখি। গবেষণার জায়গায় আমাদের বিশ্বমানের দিক থেকে আরও দায়িত্ববোধ থাকা দরকার আমাদের শিক্ষকমণ্ডলীর, যাতে বিশ্বমানের গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও বেশি সুনাম অর্জন করতে পারে।’ এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ডিন সাদেকা হালিম মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় নারীর জন্য যোগ্যস্থান সংকুচিত হয়ে আসছে। তিনি বাংলাট্রিবিউনকে বলেন, ‘একমাত্র নির্বাচিত ডিনহিসেবে এখন আমি আছি। ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণ জায়গায় আরও নারীদের আসার সুযোগ আছে।’
কেবল একটি বিদ্যায়তনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখার অবকাশ নেই বলে মনে করেন একসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও বর্তমানে গণযোগোযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ড. কাবেরী গায়েন। তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়েই একটি গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল এই বাংলার নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির। সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল একটি মধ্যবিত্ত উচ্চশিক্ষিত অসাম্প্রদায়িক শ্রেণির বিকাশ, যার ঐতিহাসিক মূল্য অনিঃশেষ। জাতির উচ্চশিক্ষার আয়ত্ত্বসাধ্য দ্বার উন্মোচন করার পাশাপাশি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে সব বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও এই জাতির যা কিছু অর্জন, ভালো-মন্দ, তার সঙ্গে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক অচ্ছেদ্য।’
শুরুতেই স্বায়ত্ত্বশাসিত মুক্তবুদ্ধি চর্চার অবারিত প্রতিষ্ঠান হিসেবেই যাত্রা শুরু হলেও সেই মুক্তবুদ্ধি চর্চার পরিসর ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যেনো বা‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’হয়ে উঠেছে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পরিবর্তন হয়ে যায়। নতুন জ্ঞান উৎপাদনের জন্য গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা এবং ক্রমহ্রাসমান মুক্তবুদ্ধি চর্চার পরিসর উন্মুক্ত করার মধ্য দিয়েই কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার উপযোগী করে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে তবে ৯৯ বছরও একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পারেনি ঢাবি।’বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বাংলাদেশের সব সরকারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর হস্তক্ষেপ করে আসছে, যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার দর্শন এবং তার লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করে।
ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ারপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সরকারিহস্তক্ষেপ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৯৯ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে— এটা পুরো বাংলাদেশের জন্য একটা নতুন আশাবাদ তৈরি করতে পারতো, যদি এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাধীন জ্ঞানচর্চা ও মতামত প্রকাশ, গবেষণা, সুষ্ঠু পরিবেশ এবং যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা থাকতো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের খুব সামান্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানতম লক্ষ্য পূরণের কাজে ব্যয় করা হয়। দেশের এবং মানুষের স্বার্থে গবেষণা কাজকে অনেক সময় সরকারিভাবে বাধা দেওয়া হয়, ভৎসনা করা হয়, নিরুৎসাহিত করা হয়।’
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে চিন্তা ও মান নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেছিল, সাম্প্রতিক সময়ে সেটা কমে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে হওয়ার কথা সারাদেশের একটি জ্ঞানের কেন্দ্র, সেখানে আমরা দেখেছি এটা ব্যবসায়িক হাতে গেছে। এখানে যে মৌলিক গবেষণার কথা বলা হয়েছিল, সেটা তো অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। এই করোনার মহামারির সময় কিট, জিনম সিকোয়েন্স নিয়ে সারাদেশে মুখ্য ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, সেখানে আমরা দেখলাম— অনেক আলোচনার পর একটি পিসিআর ল্যাব চালু হলো, আবার টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেলো। ফলে এই যে গবেষণামুখী না হয়ে একেবারে ব্যবসামুখী হয়ে গেছে, যার ফলে করোনা মোকাবিলার যে গবেষণা তাতেও ঢাবি প্রস্তুত না। শুধু ঢাবি নয় বাংলাদেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাই এখন একই অবস্থায় আছে। তাই আমাদের আশা থাকবে যে, ঢাবির শিক্ষার্থীরা যাতে এই বিষয়টি অনুভব করে এবং বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে যে শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা উচিত, সেটা বাস্তবায়নে চলমান আন্দোলনে অংশ নেবে এবং প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে যে গর্বের জায়গা ছিল,সেটা আমরা ফেরত নিয়ে আসতে পারবো।’
ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিত:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্তার বিকাশের লক্ষ্যে ২০ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এর মাত্র তিন দিন আগে ভাইস রয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক এবং অন্যান্য নেতা। ওই বছরের ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যারিস্টার আর. নাথানের নেতৃত্বে ডি. আর. কুচলার, ড. রাসবিহারী ঘোষ, নবাব সৈয়দ আলী চৌধুরী, নবাব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দচন্দ্র রায়, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ.এ.টি. আর্চিবল্ড, জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়, ঢাকা মাদ্রাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, মোহাম্মদ আলী (আলীগড়), প্রেসিডেন্সি কলেজের (কলকাতা) অধ্যক্ষ এইচ. এইচ. আর. জেম্স্, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডব্লিউ. পিক এবং সংস্কৃত কলেজের (কলকাতা) অধ্যক্ষ সতীশ্চন্দ্র আচার্যকে সদস্য করে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়।১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাস করে ‘দিঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’।
ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়ের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবনগুলো ও ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভাগগুলো ছিল— সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং আইন।
প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। যেসব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তারা হলেন— হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ. সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, জি এইচ ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ এ জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, এ এফ রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অস্থিরতা ও দেশভাগের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বা পরবর্তী সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত প্রদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা উজ্জীবিত হয়। নতুন উদ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের) অধ্যক্ষ সতীশ্চন্দ্র আচার্যকে সদস্যকরে একটি শক্তিশালী কমিটিগঠিত হয়।১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাস করে ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অস্থিরতা ও দেশভাগের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বা পরবর্তী সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত প্রদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা উজ্জীবিত হয়। নতুন উদ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড শুরু হয়। তৎকালীন পূর্ববাংলার ৫৫টি কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। ১৯৪৭-৭১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৫টি নতুন অনুষদ, ১৬টি নতুন বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে সব জন-আন্দোলন ও সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীসহ শহীদ হয়েছেন অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালের আইয়ুব সরকারের জারি করা অর্ডিন্যান্স বাতিলের জন্য ষাটের দশক থেকে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই অর্ডিন্যান্স বাতিল করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ-১৯৭৩ জারি করেন। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে এবং পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬০টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ১৯টি আবাসিক হল, ৪টি হোস্টেল ও ১৩৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ১৫০ জন। পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৮ জন শিক্ষক।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিচ অ্যান্ড লিবার্টি’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশ ও জাতির সার্বিককল্যাণে উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ ও অগ্রগতিতে নিবেদিত এ বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণা-কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
শতবর্ষের কর্মসূচি: কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে এই ওয়েবিনারের উদ্বোধন করবেন। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি।
চলতি বছর ১লা জুলাই প্রতিষ্ঠার একশ বছর পূর্ণ হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘সেলিব্রেটিং দ্য হান্ড্রেড ইয়ার্স অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা: রিফলেকশন ফ্রম দ্য অ্যালামনাই-ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ন্যাশনাল’ শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক ওয়েবনারের আয়োজন করা হয়েছে।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে একটি করে বিষয়ের উপর তিন দিনব্যাপী ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে।বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের পর ২২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি ‘হিস্ট্রি অব দ্য ইউনিভার্সটি অব ঢাকা অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রথম ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর ২৫-২৭ ফেব্রুয়ারি ‘সায়েন্স ফর সোসাইটি’, ২৮-৩০ মার্চ ‘আর্টস, লিটারেচার অ্যান্ড কালচার’, ২৫-২৭ এপ্রিল ‘বিজনেস ফর সাস্টেইনেবলিটি’, ২৩-২৫ মে ‘সোশ্যাল সায়েন্স ফর লাইফ অ্যান্ড লিভিং’, ১৩-১৫ জুন ‘ফিউচারস অব হায়ার এডুকেশন’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে।সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, “এই ছয়টি ওয়েবিনারের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গ্রাজুয়েট একটি প্ল্যাটফর্মে একত্রিত হতে পারবেন। ইতোমধ্যে অনেক গ্রাজুয়েট তাদের প্রবন্ধসমূহ জমাও দিয়েছেন। প্রায় শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ এই ওয়েবমিনারে উপস্থাপন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারক ও
গবেষকরা ইতোমধ্যে এই ছয়টি থিমের উপর ভিত্তি করে প্রবন্ধসমূহ জমা নিয়েছেন।”
তিনি বলেন, ছয়টি ওয়েবিনারে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিভিন্ন কৌশল, শিক্ষা ক্ষেত্রে এসডিজির বিভিন্ন দিক সর্ম্পকিত তথ্য-উপাত্ত গবেষণা পবন্ধে উপস্থাপন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে রূপান্তর করা যায়, সে সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সেখানে পাওয়া যাবে। এছাড়া এখানে থাকবে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যারা রাষ্ট্র ও সমাজে বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে কাজ করবে তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান গবেষকরাও ওয়েবিনারে অংশ নেবেন বলে জানান অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।।তিনি বলেন, “এসব ওয়েবিনারে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি সম্পূর্ণ প্রায় দুইশত বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সাথে যুক্ত হবে। তদেরকে আমরা ওয়েবিনারে অংশগ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছি। তারা আমাদের সাথে বিভিন্ন এজেন্ডায় অংশগ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সাথে যুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন।”
এছাড়া বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভাবনা এবং খ্যাতিমান পণ্ডিত, গবেষক ও বিশেষ করে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক চুক্তি ও সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১২-১৪ জুলাই লন্ডনে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। সম্মেলনে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকবে অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিজ।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মেয়ে অ্যানকে এই সম্মেলন উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মলনে অন্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য-সচিব ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল এবং ওয়েবিনারের আহ্বায়ক ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান:
সময়ের হাত ধরে এক একটি বিশ্ববিদ্যালয় এক হিসাবে একটা সমাজের জাগরণের অগ্রদূত ও উৎসভূমি হয়ে ওঠে। বিশ্বের জ্ঞান ও চেতনার সাথে যোগ ঘটিয়ে আমাদের নিজেদের দিকে তাকাতে বাধ্য করে, অগ্রগতির লক্ষ্য ও সীমানা নির্দেশ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই মহান কাজ সার্থকভাবে করেছে, পরে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও তার যোগ্য সহযোগিতা করেছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যা অনন্য গৌরব,যে কারণে পৃথিবীর আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয় তাকে নিস্ফল ঈর্ষা করতেই থাকবে—তা হল তার সুমহান একটি কীর্তি, যে কীর্তি আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয় কোনও দিন অর্জন করতে পারবে কি না সন্দেহ। হাজার বিদ্যায়তনিক সাফল্য দিয়েও যার মূল্য লঘু করে দেখা চলে না। কারণ, এই মহতী কীর্তি বাঙালি জাতির অস্তিত্ব ও তার আত্মমর্যাদার সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িত। এই সুমহান বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় একটি দেশের, বর্তমান বাংলাদেশের, স্বাধীনতার অঙ্কুর প্রথম জেগে উঠেছিল। যার বীজ পুঁতেছিল ছাত্ররা ,কায়েদ–ই আজম জিন্নার মুুখের উপর ভাষা– সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপোসহীন লড়াই ও প্রতিবাদ নিক্ষেপ করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ। ২১ শে ফেব্রুয়ারির বিপ্লব ও এক সমুদ্র বুকের রক্তদান তাদেরই আয়োজনে। সেই সময় থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বাঙালি সংস্কৃতির অখণ্ড উত্তরাধিকারের সন্ধান করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র শেখ মুজিব রহমান ওই অঙ্কুরে জলসিঞ্চন করেছিলেন ,মৌলানা ভাসানির সুযোগ্য নেতৃত্বে্ আওয়ামি লীগ তাকে পল্লবিত করেছিল। এটাই ইতিহাস। সময়ের হাত ধরে নানা ক্ষোভ ,বিক্ষোভ, প্রতিরোধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সেই কিশলয় তরু দীর্ঘতা ও শক্তি পেয়েছে ।পরবর্তীতে শেখ মুজিব রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে্ সেই তরু মহীরুহ হয়ে ওঠে। ভাষাগত , রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে রক্তাক্ত, মরণপণ লড়াইয়ের ও যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। এ- কথা কেউ অস্বীকার করতে পারি না। বাাংলাদেশে ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে শুধুমাত্র নয়,স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এই ইতিহাস আগামী প্রজন্মের কাছে মেধাবী পাঠ উঠবে বলে মনে হয় আমার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিমা যেমন অমলিন ও অম্লান, ঠিক সমগ্র বিশ্বের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিমা অমলিন হয়ে থাকবে। অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় এই বিভাময় মর্যাদা দাবি করতে পারে বলে মনে হয় না । বাঙালি হিসেবে আমি বাঙালির গৌরবের এই পবিত্র পীঠস্থানকে নতজানু হয়ে কুর্ণিশ জানাই।
তথ্যসূত্র (বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভ ও ব্যক্তিঋণ ডঃ পবিত্র সরকার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) ডঃসুবীর মণ্ডল, লোকগবেষক, প্রাবন্ধিক, অণুগল্প, ছোটগল্প,ফিচার ও রম্যরচনা এবং ভ্রমণকাহিনীর লেখক।