দুর্বোধ্য শিলালিপি
একদিন তোমাকে সুখপাঠ্য মনে হয়েছিল আমার
মনে হয়েছিল তুমি খুবই সহজবোধ্য আনন্দপাঠ,
তোমার চোখমুখ ঠোঁট দেখে মনে হয়েছিল তুমি বাল্যশিক্ষা
আদর্শলিপির অ আ ক খ এর মত প্রাথমিক প্রাথমিক ব্যাপার!
একদিন তোমাকে সরল বাক্যের মত সহজ ও সাবলীল মনে হয়েছিল
অথচ তোমাকে পড়তে গিয়ে আমার মনে হলো তুমি যৌগিক বাক্য
ইদানিং বোধগম্যতার স্তরে তোমাকে মনে হয়- তুমি জটিল বাক্য!
তাই তোমাকে আমার পড়া হয়ে উঠেই না
তোমাকে আর আত্মস্থ করা হয়ে উঠে না আমার
আমার কাছে কখনো কখনো তোমাকে মনে হয়
তুমি কোনো প্রাচীন সভ্যতার অমূল্য নিদর্শন- দুর্বোধ্য এক শিলালিপি!
.
.
.
.
.
খোকা, তুই এখনো ছোট-ই রয়ে গেলি
গঙ্গার প্রবাহমান ঘোলাজলের সাথে আমি বড় হতে থাকি
আমি বড় হতে থাকি শীত আর বসন্তের বাড়াবাড়িতে
আমি বড় হতে হতে একদিন নিজেকে পাহাড় মনে করি
তারপর একদিন বাইরে কালোমেঘের লম্ফঝম্প দেখে
মেঘে মেঘে বিজলি দেখে যখন আমি আঁতকে উঠি
তখন মা আমাকে সযতনে বুকে টেনে নেন
আঁচল দিয়ে আমার চোখমুখ ঢেকে দিয়ে বলেন,
‘খোকা, তুই এখনো ছোট-ই রয়ে গেলি!’
তারপর মেঘ কেটে গেলে ঝলমলে রোদ উঠে আকাশে
গঙ্গার ঘোলাজল বয়ে যায় সূর্য়ের উদয়-অস্ত গুনে গুনে
আমিও ক্রমশঃ আবার বড় হতে থাকি
আমি বড় হতে থাকি প্রিয় মানুষের কাছে; পৃথিবীর কাছে।
আবার কঙ্কাল ডালে নতুন নতুন পাতা গজায়- ফুল ফুটে,
চক্রাকারে ঋতু হেঁটে যায় আরেক ঋতুর কাছে
আমিও চাঁদের সাথে জোয়ার-ভাটা খেলে বড় হতে থাকি
অথচ মা আমাকে কোলে তুলে চুমু খেয়ে বলেন,
‘খোকা, তুই এখনো ছোট-ই রয়ে গেলি!’
.
.
.
.
মা-বাবা চলে গেলে
মা চলে গেলে ঘরের চৌকাঠ কাঁদে
বেঘোরে কাঁদে শোবার ঘর এলোমেলো বিছানাপত্র
রান্নাঘরের চেলাকাঠ হাঁড়িপাতিল থালাবাটি,
মা চলে গেলে ঘরময় হেঁটে বেড়ায় প্রগাঢ় এক শূন্যতা।
অথচ বাবা চলে গেলে অরণ্য উজাড় হয়ে যায়
খরতাপে পুড়ে পুড়ে ধূসর হয়ে যায় সবুজ ঘাস
পিচ্ছিল হয়ে যায় চেনাজানা পথঘাট
বাবা চলে গেলে ঘরের চৌকাঠ থেকে তাবৎ পৃথিবী কাঁদে।