আমজাদ হোসেন বাপ্পি
যত দিন যায় জান্নাতুলের উচ্ছ্বাস বাড়ে। এইতো আর কয়টা দিন বাদেই ঈদুল আযহা।
অন্য ঈদের চেয়ে তার কোরবানির ঈদটা বেশি আনন্দ দেয়।
এ ঈদে সকাল বেলায় খুব হাক ডাক শোনা যায় ।একদিকে বাবা-ভাইয়েরা গরু নিয়ে থাকে। অন্যদিকে মা-আপু রসই ঘরে ব্যস্ত সময় পার করে।
সারা বাড়ি হইচই রব উঠে।
এ ব্যাপারটা তাকে আনন্দ দেয়।
অন্য ঈদে নতুন জামা নিয়ে বাড়তি আনন্দ থাকলেও এ ঈদে তা থাকেনা।
সব আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে কোরবানের গরুকে নিয়ে।
জান্নাতুলের আর সহ্য হয় না।
– কবে গরু নিয়া আসবা বাবা?
– এইতো মা! আর কয়টা দিনইতো বাকি!
– বাবা। আমারতো ঘুম আসেনা। কবে গরু দেখবো?গরুকে কবে গায়ে আদর দিবো!
যদিও জান্নাতুল গরু ভীষণ ভয় পায়। সে জীবনেও গরুকে আদর করাতো দূরে থাক, কাছেও যাবেনা।
গতবার তার মনে আছে!
সাদা গরু। দেখে অনেক সুন্দর লেগেছিলো। তাই আদর করতে গিয়ে বদ গরুটা বিশাল শিং দিয়ে আরেকটুর জন্যে গুতিয়ে মেরেই ফেলতো।
শেষ মুহুর্তে বাবা এসে উদ্ধার না করলে বড় অঘটন ঘটে যেতো।
তবে গরুকে ভয় পেলেও দূর থেকে দেখে অনেক মজা পায় জান্নাতুল।
জান্নাতুলের বাবা মেয়ের পীড়াপীড়ি দেখে মেয়ে কোলে তুলে বলেন ‘হবেরে মা! সব হবে! আর কয়টা দিন ধৈর্য ধর ‘
২. বাড়ীর উঠোনে অনেক চেঁচামেচি হচ্ছে। জান্নাতুল দৌড়ে উঠোনে গিয়ে সে চোখ বড় বড় করে ফেলে।
চিৎকার দিয়ে উঠে “কি মজা আমাদের গরু এসে গেছে! কি মজা কি মজা”
মুগ্ধ চোখে সে গরুটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।
এবারের গরুটা ছোট। গায়ের রঙ লাল। একটু পর পর লেজ নাড়ে।
বাবা বলল “আয়রে মা কাছে আয়। তোর গরু নিয়া আসছি!একটু আদর দিয়া দেয়! ”
জান্নাতুল কাছে যায় না মোটেও। রফিক মিয়াঁ বুঝতে পারে কেন মেয়ের এত ভয়।
তিনি অভয় দেন। কোলে তুলে গরুর সামনে নিয়ে যান মেয়েকে।
জান্নাতুল ভয়ে কাঁপতে লাগলো। রফিক মিয়াঁ মেয়ের এহেন কান্ডে চাপা হাসি দিয়ে মেয়ে শক্ত করে ধরে রাখে বললেন “মা’রে। আগের গরুটা মেলা ফাজিল!এবারেরটা ভালোরে মা। এদেখ গায়ে হাত দিয়া দেখ। কিচ্ছু কইবেনা! ”
ভয়ে ভয়ে হাত দেয় জান্নাতুল। হাত বুলাইয়া দেয়। গরু কিচ্ছু করেনা। শুধু কি যেন চিবাচ্ছে! আর লালা ঝরছে!
সে আবার হাত সরিয়ে নেয়।
নাহ বাবা ঠিকই বলেছে এ গরুটা ভালোই।
সকাল বিকাল খুব সময় পার করে। গরু ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না।
সারারাত গরুর কথা ভাবে! কবে সকাল হবে। গরু নিয়ে খেলবে!
সে এখন গরুর গলায় আদর করে। গরুও চোখ বন্ধ করে আদর খায়! দুইজনের মধ্যে ভালোই বন্ধুত্ব হয়ে উঠে এ কয়েকদিনে!
৩. ঈদের সকাল। জান্নাতুলের ঘুম ভাঙে। হাত মুখ ধুবে বলে কলের কিনারায় যায়!
আশ্চর্য হয়ে পড়ে সে। সারা উঠোনে খুঁজে সে গরু দেখতে পায় না!
চিৎকার দিয়ে উঠে!
“মা…..মা ও মা!আমাদের গরু কই”
মেয়ের চিৎকারে মা বোন দৌড়িয়ে আসে।
আমার মেয়েটার কি হলোরে? বললে বলতে তাকে কোলে তুলে নেয়!
জান্নাতুল কাঁদোকাঁদো গলায় বলে “মা গরুতো নাই কই গেলো”
মা বললেন “আজতো ঈদ! আজকে গরু জবাই হবে!তোমার বাবা ভাইয়ারা বাড়ীর পিছনে নিয়ে গেছে”
“আজকে কেটে ফেলবে?”
“হ্যাঁ রে মা”
জান্নাতুল চোখের পানি ছেড়ে দিলো!
“মা আমি ওকে অনেক ভালোবাসি! আজকে থেকে আমি কাকে আদর করবো?কার সাথে খেলবো?”
মেয়ের মনে অবস্থা বুঝতে পেরে মা বিড়বিড় করে বলে এটাই ত্যাগরে মা এটাই ত্যাগ!
এই বলে মেয়েকে বুকে টেনে নেয়!