থ্রিলার গল্প : সাইকো এজেন্সি

থ্রিলার গল্প : সাইকো এজেন্সি

আশিক মাহমুদ রিয়াদ

নিজেকে উদ্ধার করলাম হাসপাতালের বেডে। অ্যালকোহলের কটু গন্ধ নাকে আসছে। দুজন ডাক্তারকে পরামর্শ করতে দেখা যাচ্ছে। কাঁতর গলায় বললাম,’কোথায় আমি?’ মাথা জুড়ে তখন অসহ্য যন্ত্রনা। মেয়ে ডাক্তারটি ছুটে এলো।’ওনার জ্ঞান ফিরেছে! ডাক্তার ফ্রাদো। দেখুন না।’ মাথাটা যন্ত্রনায় ছিড়ে যাচ্ছে এমন একটা অবস্থা,’আমি এখানে কি করে এলাম?’ ‘হার্ট রেট মনিটর টা বিপ বিপ করে বাঁজছে। হৃদ স্পন্দন একটু অস্বাভাবিক। আপনাকে আরো কিছুক্ষণ নিদ্রায় থাকতে থাকতে হবে, ‘মিস্টার মির্চেল।’ ‘কিন্তু তার আগে আমি জানতে চাই, আমি এখানে কেন? কি হয়েছিলো আমার? ”আপনি দুই বছর পর কোমা থেকে ফিরেছেন। আপাতত,আরো কিছুদিন রেস্ট নিতে হবে আপনাকে।



মস্তিস্ককে উজ্জীবিত করতে দু ঢোক হুইস্কি খেয়েছি৷ একটা সিগারেট ধরিয়েছি তবুও মাথা পরিস্কার হচ্ছে না। কালকের ঘটনা আমি আমার স্মৃতি থেকে মুছতে পারছি না৷ভয়ার্ত চেহারা গুলো আমার স্মৃতিতে মিশে আছে এখনো। কী বিভৎস!! নিষ্ঠুরভাবে ওদের মারা হয়েছে। আমি নিজেও একজনকে মেরেছি;পেটে ছুরি ঢুকিয়েছি। মুখ থেকে আর্তনাদের সাথে সাথে রক্ত বের হয়েছে৷সেই রক্তের থু থু আমার মুখে ছিটিয়ে দিয়েছে মেয়েটি।মেয়েটির চেহারায় মায়া লেগেছিলো। বড় বড় মার্বেলের মতো চোখ দুটোকে ইচ্ছে করছিলো ছুরি দিয়ে উপড়ে নিয়ে আসতে। আরেক ঢোক হুইক্সি গিললাম। প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে নিজের কাছে। রাগ হলো কেন যেন। সাইকোদের মাঝেমধ্যে এমন রাগ হয়। তারা রাগের বসে যা ইচ্ছে তাই করে বসতে পারে। আমিও তার নিয়ম ভাঙলাম না। হাত দিয়ে গ্লাসটাকে চেপে ধরলাম। চাপ সহ্য না করতে পেরে গ্লাসটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। হাত থেকে রক্ত ঝড়লো। অ্যালকোহলে কাটা জায়গায় কামড়ে উঠলো। এবার ব্যথার কারনে হাত দিয়ে মেঝেতে ঘুষি দিতে লাগলাম।প্রচন্ড মাথা ব্যথা আর অবসাদে সঙ্গা হারালাম।




ছোটবেলায় বাবা মাকে হারিয়েছি৷ আমার দাদা নাকি শেষ বয়সে এসে পাগল হয়ে পড়েছিলেন। বদ্ধ উন্মাদ। যা ইচ্ছা তাই করে বসেতেন এমন একটা অবস্থা।এক কাজের ছেলেকে খুন করে মেরে দিয়েছিলেন প্রায়। লেখাপড়া শেষ করলাম চাচার কাছে থেকে। একটা ইদুর আরেকটা ইদুরের মাংস খুবলে খুবলে খাচ্ছে। ইদুর দুটির আশেপাশে অসংখ্য সাপ কিল বিল করছে৷ মাছি ভন ভন করে উড়ছে। সাপ গুলো কি ভয়ংকর। কালো কুচকুচে,একটু পর পর মুখ থেকে জিহব্বা বের করছে৷ ইদুরগুলোর জায়গায় এবার আমি নিজেকে দেখতে পেলাম। অসংখ্য ইদুর আমাকে খাচ্ছে। আমি হাত নাড়াতে পারছি না। সাপগুলো এগিয়ে আসছে। টেলিফোনের শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো। আমার ডান হাতটায় রক্ত শুকিয়ে আছে।উঠে টেলিফোনটা কানে রাখতে ওপাশ থেকে নোহোম বলল,’আজ সন্ধ্যা ‘ব্যাটেল আন্ডারগ্রাউন্ডে’ মিটিং আছে। ‘ আমি টেলিফোনটা কান থেকে নামিয়ে কিচেনে ঢুকতেই চোখে পড়লো গতকাল সিমেন পেস্ট্রি শপ থেকে আনা কেকটা ইদুর খুবলে খুবলে খাচ্ছে৷ প্রচন্ড ক্ষুধা বোধ করলাম।ক্ষুধায় মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ঝাপিয়ে পড়লাম ইদুরটার উপর। ছুড়িটা একেবারে মাথা বড়াবড় গেথে দিয়েছি৷ রক্ত গড়িয়ে পড়লো।মাথাটা মাঝখান থেকে দু ভাগ হয়ে পড়েছে। এখনো নড়াচড়া করছে ওটা ৷ আমার ডান হাতটা আবার কেঁটেছে।ইদুরের থেকে আমার হাতের রক্ত বেশি ঝড়লো। মেঝেতে কয়েকটা ফোঁটা পড়লো।এবার অন্য একটা ইদুর এসে সেটার ঘ্রান শুকে পালিয়ে গেলো।

২.

রাত দেড়টাই হাজির হলাম, ‘ব্যাটের আন্ডার গ্রাউন্ডে। শহরের সব সাইকোরা এখানে এসে হাজির হয়। সাইকোদের ক্লাব;সাইকোরা নানা কিছু করে বসে। ধারালো ছুড়ি বের করে তাদের হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলতে মোটেও দ্বিধা হয় না। তবে এখানে একটাই শর্ত এই ছুড়ি যাতে কখনো নিজের গলায় না যায়। ‘অর্থাৎ এখানে আত্মহত্যা করা একেবারেই নিষিদ্ধ। তবে রগের মাথায় হরহামেশাই একজন আরেকজনের উপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে। তবে সেখানে কারোর অংশগ্রহন মোটেও কাম্য নয়। দুজনের মধ্যে খুনাখুনি হয়ে গেলেও কেউ তাদের সাথে একাগ্রতা প্রকাশ করতে পারবে না। কম্বাস তার হাতের আঙুলটা কেটে রক্তের ফোটা ফেললো মেঝেতে। বোঝা গেলো সবাইকে এখন সিরিয়াস হতে হবে। ‘গতকালকের অপারেশনটা আমারা সফল ভাবে সমাপ্ত করতে পেরেছি৷ আমাদের সামনে আরো কয়েকটি অপারেশন আছে। আজ সকালে আমি তার চিঠি পেয়েছি৷ ‘আমরা কি কাজ করতে ইচ্ছুক? ‘,বলল সাইকো প্রধান কম্বাস৷ আমরা সবাই ছুড়ি দিয়ে আঙুল কেটে রক্ত মাটিতে ফেলে বললাম,’সাইকোরা কখনো না বলে না৷ ‘



৩.

গতকাল রাতে অপারেশনটা শেষ করতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে৷ শেষের দিকে ঝামেলা পাঁকিয়ে ফেলে আলবাস। ইকার্দো অবশ্য সেই ঝামেলা উসুল করে দিয়েছে।

১৮ আগষ্ট, সোমবার। 

ইন্সপেক্টর জর্জ কার্দে এসে তল্লাশি চালিয়েছে আমার বাসায়। ব্যাটার উপর দারুন বিরক্ত হয়েছি বলা যায়। শুধু বিরক্ত না,বিরক্তের শেষ সীমানায় পৌছে  পৌছে গিয়েছিলাম। মধ্যরাতে দুটো টেলিফোন বেজে উঠলো। কাতরাতে কাতরতে গিয়ে টেলিফোনটা তুললাম,’ওপাশ থেকে ইকার্দো আতংকিত গলায় বলে উঠলো, ‘কম্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সার্দিগোকে ক্রস ফায়ার দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তুমি…. তুমি… ‘ হঠাৎ শব্দ হলো। মাটিতে ধপ করে পড়ার শব্দ হলো। এপাশ থেকে আন্দাজ করলাম স্নাইপিং করে ওকে শেষ করে দেয়া হয়েছে।  যতদ্রুত হোক এখান থেকে বেরোতে হবে আমাকে। খুব তাড়াতাড়ি এবং সেটা এক্ষুনি। দোতালা থেকে দৌড়ে নেমে হাতে শট গানটা নিয়ে দরজা খুলতেই দেখলাম সামনে পুলিশের গাড়ি। এলোপাথাড়ি গুলি করতে লাগলো ওরা। দরজা বন্ধ করে ভেতরে এসে স্টোর রুমের এক কোনে আশ্রয় নিলাম। ওখানে ইদুরের অভয়ারণ্য বলা যায়। সাপখোপ আছে কি না কে জানে।বাহির থেকে একজন মাইক দিয়ে গোটা ফোর্স টাকে শান্ত হতে বললো পুলিশ অফিসার এম্বাস.ডিকোস্টা। দক্ষিন দিকে স্নাইপিং স্কোয়াডের সদস্য আলফার্দো স্নাইপার তাক করে টিগার টিপে দিলো। মাটিতে লুটিয়ে পড়লো মির্চেল।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram

সেদিন দেখা হয়েছিল

জোবায়ের রাজু দীর্ঘ অপেক্ষার পর বেশ ঝাক্কি ঝামেলা পোহাবার মধ্য দিয়ে অবশেষে লোকাল বাসে উঠতে সক্ষম হলাম। সীটও পেয়ে গেলাম সৌভাগ্যবশত। আজ এই লোকাল বাসে ...
ছোটগল্প-নিশুতির কান্না ভরা অমানিশা

ছোটগল্প-নিশুতির কান্না ভরা অমানিশা

প্রদীপ দে    গভীর অরন্য আমায় ডাকে। অনেক চেষ্টায় একটা  জংগলে থাকার ব্যবস্থা করে ফেললাম, তাও আবার মাস ছয়েকের জন্য। সকলেই আমাকে পাগল আখ্যা দিলো ...
চিঠিপত্রের যুগ

চিঠিপত্রের যুগ

স্বপঞ্জয় চৌধুরী কবিতা লিখতে পারতাম বলে বন্ধুরা ভিড় করতো প্রেমপত্র লিখে দেয়ার আবদারে। কবি মানেই প্রেমিক নয়। তবে প্রেমবোধ তার ভিতরে একবিন্দুও কম নেই। অক্ষরে ...
Technology Changed My Life. Here’s My Story

Technology Changed My Life. Here’s My Story

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...
এই তো জীবন | গোলাম কবির  

এই তো জীবন | গোলাম কবির  

| গোলাম কবির     যেমন কখনো নীল সাদা আবার কখনো ঘনকৃষ্ণ কিংবা ছাইরঙের মেঘে ঢেকে থাকে বাহারি আকাশ, জীবনও তেমনি কখনো আনন্দে, বেদনায়, কখনো গভীর ...
ক্ষোভ ক্ষুধা প্রতিশোধ- সৌর শাইন

ক্ষোভ ক্ষুধা প্রতিশোধ- সৌর শাইন

সৌর শাইন  ‘আজকে তোকে ছাড়বো না.. শালার পুৎ.. আইজকা তোরে হাতের কাছে পাইছি.. শুয়োরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা.. জানোয়ারের বাচ্চা.. আইজা তোর জান বরবাদ করে ফেলবো।’ ...