বইয়ের নাম-
থ্রি এ এম (থ্রি এম সিরিজের প্রথম বই)
ধরন-থ্রিলার
লেখক-নিক পিরোগ
বই পর্যালোচক –আবির জয়।
প্রচ্ছদ ছবি-তাসনিম তূর্জ।
নিক পিরোগ এর লেখা ‘থ্রি এএম’ একটা থ্রিলার বুক!যেকোনো থ্রিলার প্রেমীর কাছে খুব সহজেই বইটা মনে জায়গা করে নেবে!
বইয়ের মূল নায়ক হেনরি বিনস!যিনি একজন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মানো পুরুষ!তবে তার প্রতিবন্ধকতা ছিল সবথেকে ভিন্ন!
যেকোনো পরিবেশেই হাত নেই পা নেই কিংবা বোবা অন্ধত্ব এসব ধরনের জন্ম খুঁত দেখা যায় তবে হেনরির ক্ষেত্রে ভিন্ন!
হেনরি ২৪ঘন্টায় মাত্র এক ঘন্টা জেগে কাটান বাকি সময় ঘুমান তিনি!না চাইতেও তার ঘুম চলে আসে কিছুটা কোমার মত!
আর এই জেগে কাটানোর সময়টাও একদম নির্দিষ্ট!রাত তিনটা থেকে চারটা!ডাক্তাররা তার এই অসুখের এই অসুখের কোন কারণ খুঁজে না পেয়ে এটা তার জেনেটিক মডিফাই বলে ধরে নেন এবং এই অসুখের নামকরণ তার নামেই করা হয় “হেনরি বিনস!”
তো তাকে ছোটবেলা থেকে তার এই একঘন্টার মাঝেই সব শিখতে হয়েছে!কথা বলা,হাঁটতে পারা,পড়াশোনা আর কি একজন সাধারণ মানুষের যা শিখতে হয় তা সবই!
কেমন যেন মানিয়ে নিয়েছে এই একঘন্টার জীবনকে!যেখানে তার মত কোনো সাধারণ মানুষ ১৫-১৬ঘন্টা জেগে কাটিয়ে সব কিছুর সাথে সামাঞ্জস্য করে বড় হচ্ছে সেখানে সে মাত্র ১ঘন্টা জেগে থেকে সব যেন শিখে যাচ্ছে সাধারণের মত!ডাক্তাররা এটা তার মস্তিষ্কের একটা বিরাট কৃতিত্ব বলে দাবী করেছেন!সবকিছুই খুব সহজেই সে শিখতে কিংবা বুঝতে পারে!
এই দুর্বোধ্য দায়িত্ব পালন করেছেন একমাত্র তার বাবা রিচার্ড বিনস!অক্লান্তভাবে তাকে সময় দিয়েছেন সবকিছু শিখিয়েছেন!হেনরির মা হেনরির ছ’বছর বয়সের সময় তাকে ও তার বাবাকে রেখে চলে যান!তাই হেনরি বাবার কাছেই বড় হয়!
সে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তার বাবার বাসা ছেড়ে ভার্জিনিয়াতে তার নিজস্ব এপার্টমেন্টে থাকে!এখানেই ঘটনার মূল কেন্দ্রবিন্দু যেখানে কাকতালীয়ভাবে হেনরি একটা মার্ডার কেসের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন যার আসামী ছিলেন আমেরিকার স্বয়ং প্রেসিডেন্ট কনর সুলিভান!
আর এই কেসের সাথে জড়িত হয়ে তার সাথে পরিচয় হয় ল্যাসি এবং ইনগ্রিডের!ল্যাসি হচ্ছে একটি বিড়াল এবং ইনগ্রিড একজন হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের একজন!
ল্যাসিকে সে খুঁজে পায় ঐ ক্রাইম সিনে যেখানে প্রেসিডেন্ট স্বয়ং মার্ডারের অভিযুক্ত ছিলেন!তবে ল্যাসি আর হেনরির বন্ধুত্ব সহজেই হয়ে যায়!ল্যাসি খুব দুষ্ট প্রকৃতির হলেও হেনরিকে খুব ভালোবাসে!তবে এখানে সব থেকে বড় টুইস্ট হেনরি ল্যাসির সব কথা বুঝতে পারে এবং ল্যাসিও হেনরির সব কথা বোঝে!একজন সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলার মতই হেনরি ল্যাসির সাথে কথা বলে!ল্যাসি বিড়াল হয়েও হেনরির সহযোদ্ধা ছিল বলা যায়!
অপরদিকে ইনগ্রিড এতই সুন্দরী ছিল যে তার প্রেমে পড়ে যায় হেনরি বিনস!পুরুষ সুন্দরী নারীর প্রেমে পড়বে এটাই স্বাভাবিক তাই বলে নারীরা এমন কারো সাথে তারা প্রেম করবে না যার কি না এমন অসুখ আছে!বলা যায় ২৪ঘন্টায় ২৩ ঘন্টা সে মৃত একজন মানুষ!এটা তার প্রতিবন্ধকতা!এর জন্য সে ভালোবাসার কথা জানাতেও ইতস্তত বোধ করত যে সে সাধারণ আর কতক মানুষের মত নয়!
কিন্তু ইনগ্রিড এখানে প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে ভিন্ন!সে হেনরিকে আপন করে নিল!তার প্রতিবন্ধকতার গুরুত্ব না দিয়ে বরং তাকে মানুষের হিসেবে বিবেচনা করে তাকে ভালোবেসেছে!
মূলত এই বইয়ে যা লক্ষ্য করা যায় তা হলো হেনরির অসামান্য কৌতুহল এবং বিচক্ষণতার সাহায্যে তার কেস সলভের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা!
সেই সাথে আমার কাছে হেনরি আর ইনগ্রিড সম্পর্কটা ভিন্নতর লেগেছে যা অনেক রোমান্টিক গল্পকেও হার মানাবে!যদিও এটা থ্রিলার সিরিজ তবুও ইনগ্রিড আর হেনরিকে ভালোভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে!
হেনরির বাবাকে কেন্দ্র করে তার মূল জীবনের পথচলা আর এখানে হেনরির মায়ের চরিত্রটা পাঠকের কাছে কৌতুহলী করে উহ্য রাখা হয়েছে!তবে যারা থ্রিলার প্রেমী না তাদের কাছেও এই বইটা ভালো লাগবে একমাত্র হেনরি আর ইনগ্রিডের লাভ টুইস্টের কারনে!সেই সাথে ল্যাসির দুষ্ট কার্যকলাপ এবং হেনরিকে বিপদে সহোযোগিতা পাঠককে আরো আকর্ষিত করবে বইটির প্রতি!
বইটি পড়তে পারেন আশা করি ভালো লাগবে!ইউএসএ’র বুক ফেস্টিভ্যালে ভালো নাম কামিয়েছে এই তরুণ লেখক নিক পিরোগ!
সহ-সম্পাদক, ছাইলিপি ।