ছাইলিপি আর্টিকেল ডেস্ক
দাঁতে ব্যাথা দাঁত সংক্রান্ত একটি তীব্র ব্যাথা যা সঠিক চিকিৎসা না করলে দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে একসময়ে ভীষণ প্রদাহ বা ব্যাথার সৃষ্টি করতে পারে। দাঁতে ব্যাথার অন্যতম কারণ-সঠিক সময়ে দাঁতের যত্ন না নেওয়া। দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার না করার কারণে ময়লা জমে। তার থেকে মুখে দুর্গন্ধ হওয়া স্বাভাবিক। দীর্ঘদিনের অযত্ন ও অবহেলায় দাঁতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তেমনই এক সমস্যা হলো দাঁতে প্লাক জমা। এ ক্ষেত্রে দাঁতে স্থায়ীভাবে ময়লা জমে হলদে থেকে কালচে হয়ে যায়। যা দাঁতের সৌন্দর্য একেবারেই নষ্ট করে দেয়।
দাঁতের ক্ষয় (গর্ত হওয়া): দাঁতের ক্ষয়, সাধারণত ক্যাভিটি বা ক্যারিস নামে পরিচিত, দাঁত ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ। মুখের ব্যাকটেরিয়া যখন খাবার থেকে শর্করা ভেঙে ফেলে, তখন তারা অ্যাসিড তৈরি করে যা এনামেলকে ক্ষয় করে, যা গহ্বরের দিকে পরিচালিত করে। ক্ষয় বৃদ্ধির সাথে সাথে, এটি দাঁতের সংবেদনশীল অভ্যন্তরীণ স্তরগুলিকে প্রকাশ করতে পারে, যার ফলে ব্যথা এবং গরম এবং ঠান্ডা তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীলতা দেখা দেয়।
মাড়ির রোগ (জিঞ্জিভাইটিস এবং পিরিওডোনটাইটিস): দাঁতের ব্যথার পিছনে মাড়ির রোগ গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মাড়ির রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে মাড়ির প্রদাহ, মাড়ির প্রদাহ এবং রক্তপাত ঘটায়। যদি চিকিত্সা না করা হয় তবে এটি পিরিয়ডোনটাইটিসে (পেরিডনটাইটিস হল দাঁতের ব্যাকটিরিয়াঘটিত সংক্রমণ) অগ্রসর হতে পারে, যেখানে সংক্রমণটি দাঁতকে সমর্থনকারী টিস্যু এবং হাড়গুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। মাড়ির রোগের কারণে মাড়ি ফোলা, মাড়িতে ফোলা এবং দাঁতের চারপাশে হাড় ক্ষয়ের কারণে দাঁতে ব্যথা হতে পারে।
দাঁতে ফাটল: দাঁত ভাঙা বা ফাটাও দাঁতে ব্যথা হতে পারে। এটি আঘাতের কারণে ঘটতে পারে, যেমন মুখে আঘাত করা, শক্ত জিনিসে কামড় দেওয়া, এমনকি দাঁত পিষে বা চেপে ধরার ফলে (ব্রুকসিজম)। ফাটল বা ফাটল দাঁতের সংবেদনশীল অভ্যন্তরীণ স্তরগুলিকে উন্মুক্ত করতে পারে, যার ফলে ব্যথা হতে পারে, বিশেষত যখন চিবানো বা কামড়ানো হয়।
দাঁতের সংবেদনশীলতা: দাঁতের সংবেদনশীলতা, গরম, ঠাণ্ডা, মিষ্টি বা অ্যাসিডিক খাবার এবং পানীয় খাওয়ার সময় তীব্র ব্যথার দ্বারা চিহ্নিত, দাঁত ব্যথার মতো অস্বস্তি হতে পারে। এটি প্রায়শই ঘটে যখন দাঁতের প্রতিরক্ষামূলক এনামেল স্তরটি জীর্ণ হয়ে যায়, যা অন্তর্নিহিত ডেন্টিনকে প্রকাশ করে। ডেন্টিনে ছোট টিউবুল থাকে যা দাঁতের স্নায়ুর দিকে নিয়ে যায়, উদ্দীপিত হলে সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করে।
আক্কেল দাঁত: আক্কেল দাঁতের কারণে ব্যথা হতে পারে যখন তারা মাড়ির মধ্য দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে। ইমপ্যাকশন ঘটে যখন দাঁত সঠিকভাবে উঠার জন্য চোয়ালে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে। এর ফলে আশেপাশের মাড়ির টিস্যুতে ব্যথা, ফোলাভাব এবং সংক্রমণ হতে পারে।
ফোড়া দাঁত: একটি ফোড়া দাঁত হল দাঁতের গোড়ায় বা দাঁত এবং মাড়ির মধ্যে একটি গুরুতর সংক্রমণ। এটি প্রায়ই তীব্র, কম্পনকারী ব্যথা, ফোলাভাব, জ্বর এবং মুখের মধ্যে একটি খারাপ স্বাদ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। চিকিত্সা না করা দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ বা দাঁতের আঘাত থেকে ফোড়া তৈরি হতে পারে।
দাঁতের চিকিৎসাজনিত কারণে: দাঁতের ব্যথা নির্দিষ্ট দাঁতের পদ্ধতির ফলেও ঘটতে পারে, যেমন ফিলিংস, রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট বা দাঁত তোলা। যদিও এই পদ্ধতিগুলি প্রায়ই অন্তর্নিহিত দাঁতের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে নিরাময় প্রক্রিয়া চলাকালীন অস্থায়ী অস্বস্তি বা সংবেদনশীলতা ঘটতে পারে।
‘দাঁত ব্যথা’ প্রদাহের সৃষ্টি, যা একজনের খাওয়া, ঘুম এবং দৈনন্দিন কাজকর্মকে প্রভাবিত করে। নিয়মিত দাঁতের যত্নের মাধ্যমে দাঁত ব্যথার অন্তর্নিহিত কারণটি সমাধান করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত দাঁতের চেক-আপ, সঠিক মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন এবং দাঁতের সমস্যাগুলির তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করতে এবং সর্বোত্তম মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে।
দাঁতে হঠাৎ ব্যথা শুরু হলে দ্রুত যা করবেন
♦ কুসুম গরম লবণ পানি দিয়ে ৪০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট ধরে কুলকুচি করতে হবে দিনে তিন-চারবার।
♦ লবণমিশ্রিত পেস্ট বা বাসায় ব্যবহৃত পেস্টও দাঁতের গায়ে লাগালে ব্যথামুক্ত হতে পারেন। এটা দুই-তিন মিনিট দাঁতের গায়ে লাগিয়ে রাখতে হবে।
♦ লবণে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল থাকায় ব্যথামুক্ত করতে সাহায্য করে।
♦ তবে মনে রাখতে হবে, স্থায়ীভাবে ব্যথা কমানোর জন্য অবশ্যই নিকটস্থ বিডিএস বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অবশ্যই দেখাতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন- ডা. অনুপম পোদ্দার (সূত্রঃ কালের কন্ঠ)