সন্ধ্যে রাতে ডিঙি নৌকার টিমটিমে আলো,
মাগরিবের আজান,গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।
কত দৃশ্যপট চোখে ভাসে,
কত মানুষ কত গল্প, কেউ মন্দ কিংবা ভালো।
ধানসিঁড়ি চিড়ে বেড়িয়ে যায় কমলা রকেট
কেউ বাঁচে বিলাসীতায় কারো ফুটো পকেট।
বিকেল গড়িয়ে নামে অন্ধকার
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি
আদর সোহাগ,ভালোবাসাবাসি
এসব নিয়ে এই সন্ধ্যে রাত,
গন্তব্যের যে আরেকটু বাকি!
.
এমন ঘনঘোর বর্ষায় দু’ চার বারের জন্য পিরোজপুর থেকে বরিশালে নদী পথে ভ্রমণ করেছি, এ জনপদের পরিবেশ এবং প্রকৃতি দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বাকরুদ্ধ হয়েছি৷ কানে পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। বৃষ্টিতে বিভিন্ন রকমের ফুলের ঘ্রাণ আমাকে বারবারই আবেগী করে তুলেছে।বাংলার কৃত্রিম সুয়েজ খাল খ্যাত এ নদীটির নাম ধানসিঁড়ি। কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিবিজড়িত ধানসিঁড়ি নদীটি যুগে যুগে কত কালের সাক্ষী হয়ে আছে। ধানসিড়ির বুক চিড়ে চলে দেশের শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার গুলো।কতসব স্মৃতি জড়ানো এ জনপদে৷
বিকেলে ফুটবল খেলা শেষে উঠতি বয়সের দুরন্ত কিশোরেরা ঝাপিয়ে পড়ে নদীতে৷ কী দারুন লাগে দেখতে! নদীর পাড় ঘেষা বাজার, আর সেই বাজারে দোকান থেকে ভেসে আসে পেঁয়াজু ভাজার সুঘ্রাণ৷
বৃষ্টিস্নাত কোন সন্ধ্যায় নদীর পাড় ঘেষা কোন শসানে শবদাহ করা হয়,
মাথায় টুপি দিয়ে সাদা দাঁড়ি চুলে বয়স্ক মুরব্বীরা হাটে মসজিদের দিকে।
বালু বোঝাই জাহাজ ডুবে যাওয়ায় সেটির উদ্ধার করছে ডুবুরি।
আরেকটু সময় গড়িয়ে যখন আসি সন্ধ্যা নদীতে তখন নেমেছে সন্ধ্যা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি! নদীতে টিমটিমে আলো জ্বলে। ডিঙি নৌকা গুলো মাছ ধরায় ব্যস্ত। বড় বড় জাহাজ চলে যায়। পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ।
এ যেন একটি সিনেমার দৃশ্যপট!
অন্তত একবার হলেও আপনার এই নদী পথে ভ্রমণ করা উচিত।
বাংলাকে নিয়ে ডিপ্রেশনে ভোগার আগে অন্তত এই জনপদে একবার ভ্রমণ করে দেখতে পারেন। কিংবা অনেকদিন ধরে হয়ত ভাবছেন কিছু লিখবেন কিন্তু লিখতে পারছেন না।আপনিও এই পথে ভ্রমণ করে দেখতে পারেন।
বাংলার এই চিরচেনা রূপক দেখে কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ফুটে উঠেছিলো-“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়”
কমলা রকেট তখন ধানসিঁড়ি পেরিয়ে সুগন্ধা নদীর হিমেল বাতাসে ছুটে চলছে। ধানসিঁড়ির মুখ থেকে বেরিয়ে সুগন্ধা নদীর ওপার ঘেষা ইউটার্ন নিয়ে নোঙর করে ঝালকাঠি স্টিমার ঘাটে।
দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ হয়ে এই রুটে ভ্রমণ করেননি এমন মানুষ খুব কমই আছে৷
শেষবার খুব সম্ভবত গতবছরের ডিসেম্বরে লঞ্চ ভ্রমণে বরিশালে গিয়েছিলাম।অনেক দিন যাওয়া হয় না। যাওয়া হবে কি করে এই কঠিন সময়ে মাথায় এরকম এক ঝাক কল্পনা ছাড়া আর কি ই বা আছে?