আশিক মাহমুদ রিয়াদ
নাটক কিংবা সিনেমার স্ক্রিপ্টের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে নাটক/শর্টফ্লিম/সিনেমার স্ক্রিপ্টের চাহিদা বর্তমান সময়ে তুঙ্গে। তাই তো নিজের স্বপ্নকে কাজে লাগানোর সময় এখনই। । কিভাবে একটি স্ক্রিপ্ট পুর্ণাঙ্গভাবে লেখা যেতে পারে তার নমুনা সহ বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে এই আর্টিকেল এ।
স্ক্রিপ্ট লেখার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে-
Story Analysis for ‘SCRIPT’
- শুরুটা আকর্ষণীয় হতে হবে।
গল্পে এমন কিছু থাকতে হবে যার শুরু এবং মধ্যভাগ থেকে শেষভাগ হয় আকর্ষণীয়।
গল্পে মোচড় থাকতে হবে। অর্থাৎ এমন কোন ক্লাইমেক্স থাকতে হবে যাতে দর্শক শেষে যাওয়ার জন্য প্রবল আগ্রহী হয়।
Start from Amazing Enging will be surprises !
রোমান্টিক গল্প লেখার ক্ষেত্রে যৌনতা কিংবা রোমান্টিকতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। যেমন কোন নায়ক নায়িকার রোমান্টিক দৃশ্যে অশ্লীলতা পরিহার করে একটি সুন্দর সিন লেখা সম্ভব। এই সম্ভাব্যতা কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে অথবা বাক্যালাপ (ডায়লগ) এর মাধ্যমে সংযোজন ঘটানো যেতে পারে। ফ্যামিলি ড্রামার ক্ষেত্রে বিষয়গুলো- পরিবারের সদস্যদের বন্ডিং হিসেবে দেখানো যেতে পারে। বাট ইম্পরট্যান্ট ওয়ার্ড ইজ ‘রিলেশন’।গল্পে এমন কিছু থাকতে হবে যার কারণে মানুষ অধিক বিশ্বাসী হয়। যেটি স্ক্রিপ্টকে আরও সহজ থেকে ভারী করে তুলতে যথেষ্ট। শুরুতেই একটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, স্ক্রিপ্ট হচ্ছে একটি সিনেমা অথবা নাটকের খসড়া। অর্থাৎ সিনেমার স্ক্রিপ্টটি যত গোছানো কিংবা সুন্দর হবে ঠিক ততটাই ইফেক্ট ফেলবে সিনেমায়।
চিত্রনাট্যঃ
কোন সিনেমা নির্মানের পুর্বে তার পরিকল্পনার জন্য যে খসড়া তৈরী করা হয় তাকে চিত্রনাট্য বলা হয়। চিত্রনাট্যকে নীল নকশাও বলা যেতে পারে।
চিত্রনাট্য দুই প্রকারঃ
আর্টিস্ট স্ক্রিপ্টঃ যেখানে আর্টিস্টদের নির্দেষনা দেওয়া থাকে।
শূটিং স্ক্রিপ্টঃ যেখানে শ্যুটিং এর যাবতীয় বিষয় উঠে আসে। ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল, টেক, কাট ইত্যাদি।
Audio+Video Complation
চিত্রনাট্যে এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করে দেওয়া যেতে পারে যেখানে শব্দ খুব গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যেমন বিস্ফোরণের শব্দ। প্রেমের ক্ষেত্রে যেগুলো অডিও এডিটর সংযোজন করবেন। অর্থাৎ ধরুণ শহুরে পরিবেশের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ডে গাড়ির আবহ। কিংবা কোন মানুষ হেটে গেলে হাটার শব্দ। বিড়াল দেখালে বিড়ালের মিউ মিউ শব্দ এরকম কিছু ইলিমেন্ট বা আবহ সংযোজন করতে পারেন। অবশ্য এটি ডিরেক্টর ও সাউন্ড ডিরেক্টররাই বেশি ভালো গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
Element: চরিত্র+দ্বন্দ+পরিণতি
Log Line: পুরো গল্পটিকে দুই লাইনে বলাকে লগ লাইন বলে। লগ লাইন গল্প বিক্রিতে প্রচুর হেল্প করে। যার কারণে এটি Marketing Line নামেও পরিচিত।
যেমনঃ খবরের কাগজে দেখলাম দূর্ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু দূর্ঘটনা যে এভাবে ঘটেছে সেটি বুঝতে পারিনি।
Elevatior Picth- গল্প ভাবনার সময় এমন কিছু মাথায় রাখতে হবে যাতে ইমোশন সহজেই গ্র্যাব করা যায়। এলিভেটর পিচকে লগ লাইনের অন্য নামেও বলা হয়। অর্থাৎ দুই লাইনের গল্পের মূল আবহটা বোঝানো।
সিনোপসিস এ যা যা থাকবে। (সিনোপসিস হলো একটি স্ক্রিপ্টের মূল সারাংশ যা সর্বোচ্চ ১৫০ শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে ভালো হয়।)
গল্প থেকে চিত্রনাট্য :
সিনোপসিসঃ
■ নাটক: “পূর্ণবিন্দু”
পরিচালনা: তনয় খান
রচনা ও চিত্রনাট্যঃ আশিক মাহমুদ রিয়াদ
মিডিয়া : টিভি/ইউটিউব
জনরা : রোমান্টিক ড্রামা
লোকেশন: মূলত গ্রাম+ শহর
মূল চরিত্র সংখ্যা : ৩ জন
পার্শ্বচরিত্রঃ নারী- ২ জন + পুরুষ- ১০ জন+ পথশিশু
দৃশ্য সংখ্যা : ২০টি (সম্ভব্য)
ব্যাপ্তিঃ ৪০-৪৫ মিনিট।
গল্পসংক্ষেপঃ
আবির ও রূপা নামের দু’টি চরিত্র থাকে। তারা একই গ্রামের এবং একই বাড়ির। রূপাদের পরিবার চাকুরীর সুবাদে আবিরদের বাড়ির দোতালায় চারা থাকে। আবিরের তুলনায় রূপা বয়সে কিঞ্চিত বড়। আবির পড়ে ক্লাস টেনে অপরদিকে রূপা কলেজে। একদিন রূপার অশ্লীল ছবি ডিপফেক করে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেয় রূপাকে উত্ত্যাক্তকারী নোমান। এরপর আবির বেধড়ক পেটায় সেই ছেলেকে। শালিস বসে। শালিস থেকে ফিরে আসার পরে রূপার মা রূপার বাবাকে জানায় রূপা নিখোঁজ। এরপর আর তার কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। দশ বছর পরে আবিরের সাথে মডেলিং কিংবা ফটোগ্রাফিক ইভেন্ট থেকে পরিচয় হয় প্রীতি নামের একটি মেয়ের সাথে। মেয়েটি রূপার ছোটবোন। অতঃপর মেয়েটির সাথে তার প্রেম হয়ে যায়। (শেষ দৃশ্যে রয়েছে নাটকীয় চমক)
দৃশ্যপটঃ গ্রামের স্কুল, গ্রামের রাস্তা, ২. নদীর পাড়, ৩. গ্রামীণ ঘর, ৪. পুরানো জমিদার বাড়ি ধাঁচের ঘর, ৩. অন্ধকার ঘরে লাইট। শহুরে রাস্তা, লেকের পাড়।
প্রয়োজনীয় জিনিসঃ
১. নায়কেরঃ সাইকেল, কলেজ ড্রেস, সানগ্লাস।
২. নায়িকারঃ কলেজ ড্রেস,
৩. ভিলেনঃ সানগ্লাস, বাইক, কলেজ ড্রেস, দামী মোবাইল।
Inciting Incident:
স্ক্রিপ্টঃ
দৃশ্যঃ ০১
শীতের সকাল; দুই বন্ধু কলেজে যাবার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। উদ্দেশ্য রুপা আসবে, তারপরে তারা রূপার পিছনে পিছনে যাবে।
আবির রসুকে বলছে, “কিরে রূপা কই? আসতেছে না কেন?”
রসু: আরে চাতক পাখি, তুমি এত যদি করো ডাকাডাকি, বসিয়া করো সবুর, কারণ সবুরে ফলে মেওয়া। মিউ মিউ!।
আবির: ফাইজলামি শুরু করতাসোস? প্রেমে পড়লাম আমি, কবি হইলি তুই। এডা কেমন কথা?
রসু; একটা যাদু দেখবি? (আবিরের মেজাজ বিরক্ত। সে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে রূপার জন্য কিন্তু রূপা আসছে না। তাই সে কিছুটা বিরক্ত হয়ে রসুর ওপরে চরাও হতে যাবে ঠিক এমন সময় রসু বললো, এইই রূপা আসতেছে (গলায় স্বর নিচু করে।)। আবির কলার শার্ট পরিপাটি করে, চুল গুলো ঠেলে রূপার জন্য দাঁড়ায়।
একটি স্ক্রিপ্টের ভেতরে অনেক ধরণের মডিউল থাকতে পারে। যার কিছু প্রচলিত ধারাও আছে। বিশেষ করে সিনেমার স্ক্রিপ্ট গুলোতে বিভিন্ন ভাগে গল্প বিভক্ত থাকে। গল্পের সংযোজন, উত্থান, মধ্যবিন্দু সহ বিভিন্নভাবে একটি স্ক্রিপ্টকে খন্ডিত করা হয়। নিচের ডায়াগ্রামটি খেয়াল করুন। তবে দেশীয় নাটকের স্ক্রিপ্টে সাধারণত এ ধরনের নিয়ম ছাড়াই একটি স্ক্রিপ্ট লেখা সম্ভব। একটি গল্পকে স্ক্রিপ্টে রূপান্তরিত করতে আশা করি এই লেখাটি ভীষণভাবে কাজে দিবে। এ ছাড়াও যদি কোন ধরণের জিজ্ঞেসা থাকে সেটি এই পোস্টের কমেন্টে জানাতে পারেন। বিষয়গুলো ক্লিয়ার করার চেষ্টা করবো।
একটি নাটকের পূর্ণাঙ্গ নমুনা পড়তে এই লিংকে প্রবেশ করুন
(এভাবে শুরু করতে পারেন। আরও বিস্তারিত জানতে নিচে কমেন্ট করুন) । নাটক কিংবা শর্ট ফ্লিমের জন্য স্ক্রিপ্ট প্রয়োজন হলে হোয়্যাটস অ্যাপে যোগাযোগ করুন – 01703689295 নম্বরে। কোনভাবেই সরাসরি কল দেওয়া যাবে না। হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দিন।