নিরাপদ দূরত্ব 

নিরাপদ দূরত্ব 

 রোকেয়া ইসলাম 

 

মৌসুমিকে আজ বেরোতেই হবে ।নইলে করোনার ভয়াবহতার চেয়েও ভয়ংকর রোগে মারা যাবে সবাই ।গতকাল দুপুরের পর আর চুলা জ্বলে নি। দুপুরের বেচে যাওয়া ভাতগুলো পানিতে ভিজিয়ে রেখেছিল মা সেগুলো কাঁচা মরিচ ডলে লবন মাখিয়ে খেয়েছে পাঁচজন মানুষ। রাতের খাবার কেউ ইচ্ছে করেই খায়নি বলে সকালে পান্তাটুকু খেতে পেরেছে  পাঁচজন। 

 আসলে পেট ভরে খেলে দুজন খেতে পারতো। দুদিন আগে বস্তিতে বস্তা ভরে চাল ডাল দিয়ে গেছে। মা দাঁড়িয়েছিল নেতা হাত নেড়ে সরিয়ে দিয়েছে। 

ওর বিষয়টা বস্তির সবাই জানে। সবাই ওদের সঙ্গ এড়িয়ে চলে। 

 এমনিতেই এখন সন্ধ্যা মিলিয়ে যেতেই গভীর রাতের নিস্তব্ধতা নেমে আসে ।বস্তিতে তো আরো আগেই ।

ধোঁয়া সালোয়ার কামিজ বের পরে ঠোঁটে কড়া করে লিপস্টিক লাগায়। মুখে শরীরে সস্তা দরে কেনা পাউডার মাখে খানিকটা। 

টুকটাক শব্দে আর পাউডার গন্ধে জেগে যায় মা। 

-কেমনে যাবি যে কঠিন রুগ। কুনু চিকিতসা তো নাই। 

-প্যাডের খিদার কুনু ওসুদ পাইছো জনম ভইরা। 

– সাবদানে যাইস 

-আমাগো আবার জীবন তার আবার সাবদান।

চুপচাপ বেরিয়ে বেশ খানিকটা পথ হাঁটতে থাকে।রিক্সা চোখ পড়ে না।

এই দ্যাশের মানুষের এতো মরনের ডর হান্দাইলো কবে থে। 

মনে মনে ভাবতে ভাবতে দেখে দোকানের সাটার সেঁটে শুয়ে আছে অনেকেই। 

ওমা তাজ্জব বিষয় এ্যরাও ভদরলোক হইলো মশারী টাঙ্গাইয়া শুইয়া পড়ছে এতো তাড়াতাড়ি। 

 

বাজারে ঢোকার গলির মুখেই দেখে তিনটা চাল ভর্তি ট্রাক থেমে আছে ।আজ ভাল রোজগার হবে মনে করতেই বেশ পরিতৃপ্ত মনে একটু আড়ালে দাঁড়ায় ।

নারকেল গাছটা ছায়া আর ল্যাম্পপোস্টের ঝরে পড়া আলো আঁধারীতেও চিনে ফেলে ট্রাকের ড্রাইভার। জল ত্যাগ করে প্যান্টের 

 জিপার টানতে টানতে পুরানো গ্রাহক সামনে এসে পড়ে ।

-আগের দাম কইলাম দিমু না।সাতজন আছি তিনশত পাবি

-মাগনাই তো হইলো ।

-দিলে দিবি নইলে ভাগ ।অবস্থা ভাল না ।আগে মাল আনতাম দুই টেরাক।আইজ পাইলাম এক টেরাক ।

-আত্তি গাতায়  পইলে তেলাচুরাও পিট বায়

-তুই আবার আত্তি নি

বলেই চোখের দৃষ্টিতে ওকে চেটে ফেলে ।

জিপার খুলতে খুলতে হাত বাড়ায় ।

 

-হোন প্রটেকশন লইস না আইজ। 

-না প্রটেকশন লইতে অইব।

-হারাপত মুহে নাহে মাস্ক লাগাইয়া আইছি। অহন প্যারা দিস না কইলাম।

 

পুলিশের বাঁশির তীব্র আওয়াজ কানে আসে ।  মৌসুমি ছুটে গিয়ে আড়ালে দাঁড়ায়। ড্রাইভার সরে ট্রাকের কাছে দাঁড়ায়। 

 এক দল মানুস শরীরের ক্ষুধা নিয়ে আরেকজন একদল মানুষের পেটের ক্ষুধা নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ায়। 

পাঁচজন মানুষের খাবার নিয়ে না গেলে নিরাপদ দূরত্বেই ওরা চলে যাবে  চিরদিনের জন্য ।  সামাজিক দূরত্ব মানতে হলে পেটে অন্তত একবেলা খাবার তো দিতে হবে। তার  ব্যাবস্থা করার জন্য  ওদের মত মেয়েদের নিরাপদ দূরত্বের তালা ভাঙতে হয়। করোনার চেয়েও মরনব্যাধি।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
কাকে বিয়ে করলেন ফারাজ করিম চৌধুরী? পাত্রীর পরিচয়

কাকে বিয়ে করলেন ফারাজ করিম চৌধুরী? পাত্রীর পরিচয়

বিয়ে করছেন ফারাজ করিম চৌধুরী, পাত্রী হিসেবে রয়েছেন যিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় ও বিভিন্ন দুর্যোগকালীন মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তরুণ ফারাজ করিম চৌধুরী বিয়ে ...
জোবায়ের রাজুর দুটি গল্প

জোবায়ের রাজুর দুটি গল্প

অকৃজ্ঞ  রিনা খালাকে মাঝে মাঝে আমার আধা পাগল মনে হয়। মাঝে মাঝে কি সব অদ্ভুত আচরন করেন। এ বয়সে তার নাকি শখ হল নাচ শেখার। ...
বাংলার রূপ

বাংলার রূপ

 ইমরান হোসাইন   এই বাংলায় হয়েছিল যে দেখা কথা ছিল হবে আবার দেখা , এই বাংলা রয়ে যাবে চিরকাল তুমি রবে না একা । আবছা ...
আজ ফাগুনে

আজ ফাগুনে

হামিদা আনজুমান একটা চিঠি লিখব তোমায় বলে কত ফাগুন দোল দিয়ে যায় চলে। কিশলয়ের সবুজ ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভ্রমর যখন ভালোবাসায় নুয়ে বলে কথা ফুলের কানে ...
যেদিন গেছে ভেসে

যেদিন গেছে ভেসে

ভালোবাসার কবিতা – প্রিয় রহমান আতাউর    প্রায় তিন দশকেরও আগে ছেড়ে এসেছি – প্রাণের ক্যাম্পাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।  মতিহারের প্রতিটি ঘাসে চিকচিক করে উঠতো শিশির ...
সুন্দরবনের ভ্রমণ কাহিনী

সুন্দরবনের ভ্রমণ কাহিনী

প্রদীপ দে  সুন্দরবন ঢুকছি টুরিস্ট ব্যুরোর বড় লঞ্চে। দেখতে একটা ছোট জাহাজ। ম্যাংগ্রোভের জঙ্গলের পাশ দিয়ে, উজানে তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছি। একবার ডেকের মাথায় চড়ি তো ...