অণুগল্প – নুনভাত

অণুগল্প - নুনভাত

 নৃ মাসুদ রানা

ফজরের নামাজের পরে। ভোর সূর্যের কাছাকাছি। সবেমাত্র বিছানায় পিঠ ঠেকিয়েছি। ঠিক তখনই কাকপক্ষীর ডাক। মা গিয়ে হুঁশ হুঁশ তাড়িয়ে দিল। আর বলতে লাগলো, সক্কাল সক্কাল কাক ডাকে, না জানি কোন বিপদ আছে? কথাটি মাটিতে পড়ে আত্মসমর্পণই করতে পারলো না। কান্নাকাটির শব্দ এসে ভিড় করলো উঠানে। হাউমাউ করে কান্না। যে কান্নায় হৃৎপিণ্ড কাঁদে। আর অশ্রু-শিশির গড়াগড়ি করে। আর দেহপিঞ্জর নিবুনিবু করে। মা একা-একাই বলল, যা ভেবেছিলাম তাই। না জানি আবার কি হলো? এই মিল্টন! এই মিল্টন! কিরে শুনছিস না? দ্যাখ তো কি হলো?

নিমাই দাদা হিন্দু মানুষ। সাতসকালে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। কিন্তু একই পাড়ায় থাকি। প্রায়ই সুখদুখমাখা কথা বলে। তখন তাকে হিন্দু নাকি মুসলিম সেটা মনে হয় না। মনে হয় একই জ্বালায় জ্বলছি। ক্ষুধার জ্বালায়। উঠোন বরাবর যেতেই দেহ থেকে আত্মাটুকু ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলো। দেহের কলকব্জায় ঝং ধরেছে। দেহ যন্ত্রটি হঠাৎই থমকে গেছে। ঘষাঘষি করলেও প্রাণ ফিরে পাবে না। বারান্দার ছাউনি বরাবর। তুলসীগাছের কাছাকাছি। ছাউনি পেরোতেই হাতের বাম পাশে। কয়েকটি কাঠের তক্তার উপর মুখউজ্জ্বল দেহখানা রাখা। একমাত্র মেয়ে ধরিত্রীর। ৯ বছর বয়স। বুঝতে বাকী রইলো না। জিহ্বা দেখা যাচ্ছে। চোখদুটো বড়সড়। চুলগুলো এলোমেলো অগোছালো। চেহারাটা বিবর্ণ, বিভৎস। গলায় দড়ির দাগ। দড়ির ঘষাঘষিতে একপাশের চামড়া উঠে গেছে। বাকিটুকু কালো। নাকে রক্তবমি। এখনো চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। পরনের জামা নাকের রক্তে লাল। পায়ের আঙুলগুলো বাঁকানো। পলক পড়লেই শরীরটা ঝিনঝিন করে ওঠে।

বউদি অজ্ঞান অবচেতন। বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে। মাথার কাছাকাছি অশ্রুপাতের জলে কাঁদায় পরিপূর্ণ। মাটি থাপড়াইয়া থাপড়াইয়া নিচু করে ফেলেছে।নিমাইদা এখনো কাঁদছে। হৃদয় পোড়া আর্তনাদে কাঁদছে। দুঃখকষ্টের আহাজারিতে কাঁদছে আর বলছে রাতে বারবার ভাত চেয়ে না পেয়ে কখন যে মেয়েটি আমার গলায় দড়ি দিছে। আমি আর ধরিত্রীর মা কিছুই জানিনা। নিমাইদা আবার কেঁদে কেঁদে বলে উঠলো, ‘মহাজন রে! কত্তো রে কইলাম আমাকে কিচ্ছু টাকা ধার দ্যান কিন্তু সে দিলোই না। দিলে হয়তো মাইয়াডা আমার…।নিমাইদা তাঁত শ্রমিক। তাঁতের ব্যবসাও আর আগের মতো নেই। তারপরও আবার করোনা পরিস্থিতিতে তাঁতের কাজ বন্ধ। আর শ্রমিকদের কাছে টাকা পয়সা জমানো থাকে না। তারা দিন আনে দিন খায়। প্রচন্ড পানি ঢালার পর জ্ঞান ফেরে বউদির। জ্ঞান ফেরার সাথেই আবার হাউমাউ করে কাঁদে আর বলে, মেয়েটি গতরাতে শ্যাষম্যাশ নুনভাত চেয়েছিল কিন্তু সেটাও…। নিমাইদা বলল, আমি বারবার শ্যামাকে কইলাম মিল্টনদের বাড়ি থেকে নুনভাত চেয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু ও কইলো ওরা মুসলিম। আরে! ক্ষুধা কি আর হিন্দু মুসলিম বোঝে?পাশে আরও দুটি হিন্দু বাড়ি আছে। কিন্তু সেখানেও নিমাইদা যায়নি। তারা নাকি নিচু জাতের সাথে…।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
ভোলা-বরিশাল সেতু সম্পর্কে যা বললেন সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের | Bhola Barishal Bridge

ভোলা-বরিশাল সেতু সম্পর্কে যা বললেন সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের | Bhola Barishal Bridge

সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভোলা-বরিশাল সেতু সম্পর্কে আলোচনা করেন মাননীয় সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের। ভোলা-বরিশাল সেতু সম্পর্কে সর্বশেষ কি ...
বলো দূর্গা মাইকি

বলো দূর্গা মাইকি

গোবিন্দলাল হালদার দৃশ্যগুলো তপ্ত রোদে ছটফট করা তেলে পোড়া করল্লার মতো। আর আক্রান্ত কষ্ট পীড়িত দুস্থরা বিধ্বস্ত হৃৎপিণ্ডকে আঁকড়ে ধরে অতি উচ্চ কন্ঠে কাঁদছে,মাগো! বিপদতাড়িনী,মহামায়া। ...
কবিতা- অজ্ঞাতনামা

কবিতা- অজ্ঞাতনামা

 রীতম দত্ত আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তোমার পানে তোমার চলনে নিজেকে খুঁজে ফিরি তোমার তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত পথিক আমি হাজার বছর ধরে পাড়ি দিয়েছি কত গিরি। তোমাকে ...
রক্তে রাঙানো একুশ

রক্তে রাঙানো একুশ

মনির চৌধুরী স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে আনন্দে লাফিয়ে উঠে রাজু। চিৎকার করে বলে ওঠে, আম্মু আজকে আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসাদ স্যার বলেছেন, আগামীকাল ...
ফ্রগমাউথকে পত্রী

ফ্রগমাউথকে পত্রী

গোলাম রববানী    প্রিয় ফ্রগমাউথ , সুপ্রিয় প্রিয় পাখি আমার্‌ আজকাল তোমাকে আর খুঁজে পাই না মাত্র । সবুজ বৃক্ষের সতেজ পাতার রক্তাক্ত ক্ষতে । ...
শিশুতোষ গল্প-দাদুর সাথে জঙ্গলে আরাফ

শিশুতোষ গল্প-দাদুর সাথে জঙ্গলে আরাফ

 ফজলে রাব্বী দ্বীন আরাফ খুবই অসুস্থ। চার দিন ধরে টানা বিছানায় পড়ে আছে। তার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। মুখে কোন কথা বলতে পারছে না। মাঝেমধ্যে দু’একটা ...