অঘ্রানের শীতে-
রাতের আহারশেষে আরাম কেদারায় বসে – ঘামতে থাকেন কবি।
সামান্যই খেয়েছিলেন কাকরোল ভাজি ও বাঁশমতি চালের ভাত – সাথে তালের ক্ষীর ও দইবড়া।
বোধহয় হজম হয়নি ওসব-
এম্নিতেই ক’দিন থেকে প্রচণ্ড দাঁতের ব্যথা!
তথাপি একটু তামাকু সেবন না করলে কি হয়?
গেলো সপ্তায় খেয়েছিলেন বালিহাঁসের ভুনা মাংস
তন্দুর রুটি দিয়ে – এখনো মুখে লেগে আছে।
আকাশের নীহারিকাপুঞ্জ কী দীপ্তিময়!
আঁধার ঘিরে জ্বলজ্বল করে জ্যোতির্ময় সপ্তর্ষিমণ্ডল।
গভীর অমাবস্যার রাতে – কখনো বা যান
শ্মশানে। দেখেন, কী হিংস্র ভাগাড়ের শকুনগুলো!
যেতে হয়- তাড়া খেতে হয় নিশাচর শেয়ালের!
একটি ঘাসফড়িংয়ের মৃত্যু দেখেও কেঁদে উঠেন তিনি! পাতিহাঁসের পাখার চেয়েও কত হাল্কা,
কত ঠুনকো এ জীবন!
তাঁর নিকষিত রচনাবলি -পাঠকপ্রিয়তা পায়-
সে কি এম্নি এম্নি?
কখনোবা স্টেশনের প্লাটফর্মে ভিখেরির মতো রাত
জেগে জেগে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হন।
একবার বমি করেছিলেন গঞ্জিকা সেবন করে ;
পঁচা গোবরের মতো গন্ধে ভেতরটা কেমোন গুলিয়ে
আসে তাঁর!
জীবনানন্দ দাশ শেষ জীবনে দালালি করেছেন
কাছারি অফিসে । ধুঁকে ধুঁকে মরেছেন
স্বভাব কবি গোবিন্দ দাস!
পার্সি বিশে শেলি’র হয়েছে সমুদ্র সমাধি;
সে হিসেবে অনেক ভালো আছেন তিনি
বেশ তো চলে যাচ্ছে দুমুঠো খেয়ে, পরে।
কবি হতে গেলে কখনো কখনো নাবিক হতে হয়
জাহাজের, খালাসী হতে হয় নৌবন্দরে। কখনোবা ভবঘুরে হয়ে- ভিক্ষে করতে হয় ফুটপাতে;
পৃথিবীর সবাই কি আর কবি!
পকেট মারের অভিজ্ঞতাটা না নেয়াই ভাল;
এতে জীবনের ঝুঁকি আছে!
কথায় আছে- ‘যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ!’
পছন্দ নয়- নোংরা গণিকালয়। জীবনেও ওপথ মাড়াননি তিনি!
হিমশীতল রাতে নামে বাবুইয়ের ঝাঁক আখক্ষেতে,
কী নরম তুলতুলে মাংস বাবুইয়ের!
বহুকাল খাওয়া হয়নি তাঁর – বড় আফসোস!
আর ঐ হলিবিলের বেগুনরঙা পানকৌড়িগুলো!
নৈশভোজে যদি পাখির মাংসই না থাকে –
সেটাকে কী আর আহার বলা চলে?
আচমকা, হঠাৎ শিরদাঁড়ায় ব্যথা উঠে তাঁর-
অসহ্য বেদনায় ঢলে পড়েন চেয়ার থেকে মাটিতে-
টেবিলে পাণ্ডুলিপি ঠাসা-
বেরোবে নতুন বই, কতই না ছিলো আশা!
গোপালপুর, জামালপুর।