পটাদা ফিরে এসেছে

পটাদা ফিরে এসেছে

শুভ্র শোভন রায় অর্ক

চায়ের দোকানের ঝুপড়িতে ধুমধ্রাম চাঁটির আওয়াজ শোনা গেলো কয়েকটা।
পটাদা পায়ের উপর পা তুলে বসা। পরনে কালো জোব্বার মত কি জানি হাঁটু পর্যন্ত পড়া। ভিতরে ক্যাটক্যাটে হলুদ শার্ট। পটাদাকে সরিষা ক্ষেতের দাঁড়কাকের কম্বিনেশন লাগছে মাইরি। কিন্তু বলার সাহস নেই। পাগল ; বললেই তেড়ে উঠবে হা রে রে করে। এমনিতে সবাই কয়েকখানা চাঁটি খেলামই। তবুও আমরা হ্যাপি। আফটার অল এতদিন পর পটাদা পাড়ায় ফিরে এসেছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কি আছে। যদিও আজব ঘটনাই, বাসা থাকতেও আন্দাজি ম্যাসের ঘুপচি ঘরে এতদিন থেকেছে। তাও যদি এমন হতো অন্য শহরে তাও না হয় মানা যেতো। নিজ শহরে এমন যে করে তাকে নিয়ে কি আর বলার আছে। হি ইজ পটা, দ্যা আন্দাজি আনপ্রেডিক্টেবল। ভাষ্যমতে সে পড়াশুনা আর গবেষনা নিয়ে ভীষন ব্যস্ত।



এদিকে সকাল সকাল পটাদার মেজাজ কেনো চড়া বোঝা গেলো দ্রুত।
তোরা স্টুপিড, গর্ধবের দল এতটা দিনে একটা বারো খোঁজ নিয়েছিস আমার? বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি জানার দরকারটা মনে করলি না? রাবিশ, স্বার্থপর সব। মুখ ঝ্যাংটা মারে পটাদা।
কথা শুনে তো সকলের চোয়াল ঝুলে পড়লো একহাত। ব্যাটা বলে কি? মোবাইল নাম্বার , ফেসবুক, হোয়াটসআ্যাপ সব বন্ধ, এমনকি তার ম্যাসে যাওয়া চরম নিষিদ্ধ করে এখন নিজেই উল্টো ফাঁপর নিচ্ছে, বাবারে বাবা । মন তো চাইলো ধরে দেই ব্যাটাকে দুটো কিন্তু সাহসে কুলোলো না। যতই রাগ করুক পটাদা তো আমাদের জিগরি, ভালোবাসার লোক।
আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম, পটাদা তুমি কিন্তু বেকার ঝাঁরি মেরে যাচ্ছো। তুমি চাওনি জন্যই আমরা দেখা করতে পারিনি। রাস্তায় দেখা হলেও না দেখার ভান করে চলে গেছো। এখন কাহিনী বাদ দাও।
আমাদের হুঙ্কারে পটাদা কিছুটা থতবত খেলো বোধহয় । বললো, না আরকি অনেকদিন তোদের উপর অভিমান করিনা তাই । তোরা দাঁড়িয়ে কেনো, বস বস। এদিকে আয়।



আমরা গোল হয়ে পটাদাকে ঘিরে বসলাম। পটাদা যখন গিয়েছিলো তখন দাড়িতে সাদাকালোর ছায়া ছিলো এখন একদম কুটকুটে কালো। জিজ্ঞেস করলাম, আজকাল দেখি কলপের আস্তরন মুখশ্রীজুড়ে।
হাসতে হাসতে টুক করে চাঁটি মেরে দিলো আমার মাথায়।
পটাদার পরনের কালো জোব্বায় ইঙ্গিত করে প্রশ্ন করলো, বলতো এটা কারা পড়ে?
কারা?
ভেবে বল?
উ..মম..ম উকিল গুলোকে পড়তে দেখেছি!
এমা পটাদা তুমি কি উকিল হয়ে গেলে নাকি?
নো নো গর্ধব। হয়নি।
তাহলে?
পারলি না তো…
এটা হলো ডাক্তারদের এপ্রোন। পটাদা খুব গম্ভীর ভাবেই কথাটা বললো।
ধুর ছাই কি সব বলো উল্টোপাল্টা। সারা পৃথিবীর ডাক্তারেরা পড়ে সাদা এপ্রোন। কালো কোন দেশে পড়তে দেখেছো? আর তুমি ডাক্তারের এপ্রোন কেন পড়বা? তুমি কি ডাক্তার নাকি? আজগুবি কাহিনী তোমার যত।
পটাদা ভেঙচি কেটে মাথা দোলাতে লাগলো চোখবুঝে । বুঝলি না তো, বুঝলি না তাই না।
বোঝাও…!
মনে আছে তোর মাসতুতো বোনের পিশির শ্বাশুড়ির খুড়তুতো ভাইয়ের শ্যালকের ভাস্তির মেয়ে আমাকে কি বলেছিলো।
না তো
এত বড় ঘটনা এত জলদি কি করে ভুললি। নাটক করিস নে। খেঁকিয়ে উঠলো পটাদা।
আমার মনে নেই তুমি বলোতো৷
পটাদা ডান নাক চেপে ধরে বাম ছিদ্র দিয়ে বার কয়েক শ্বাস টেনে মুখ দিয়ে ছাড়তে লাগলো, কিছুক্ষন চললো। তারপর আবারো সেই হাসি হাসি মুখ ফিরিয়ে এনে বললো, কেনো তোর মনে নেই তোর সেই বোন যে আমাকে রিজেক্ট করেছিলো?
হু। তার সাথে তোমার কালো এপ্রোনের কি সাধ?
আছে সাধ আছে।
তুমি এত না প্যাঁচায় সোজাভাবে বলো তো ঘটনা কি?
তোর বোন তো আমাকে রিজেক্ট করেছিলো আমি ডাক্তার নই বলে। মনে আছে। এবার বোঝাবো মজা। এই আমি এখন ডাক্তার রে, ডাক্তার।
আমরা সকলে হো হো করে হেসে উঠলাম। এজন্য না, পটাদা রিজেক্ট হয়েছিলো বা ছ্যাঁকা খেয়েছিলো। পটাদা বলে ডাক্তার হয়েছে, শুনেছিস কান্ড।
মানে গুল মারার জায়গা পাওনা নাকি৷ দশমাসে বড়জোর বিয়ে করে বাচ্চার বাপ হওয়া যায়। চাইলে আরো একটা বিয়ে করা যেতে পারে তাই বলে ডাক্তার? বোকাচন্দ পেয়েছো নাকি।
পটাদা বসিয়ে দিলো পরপর কয়েকটা চাঁটি৷ আমরা কেঁকিয়ে উঠে টুপ করে চুপ মারলাম।
হোদলের দল, পুরো কথাটা শোন আগে৷ আমি হ্যোমিওপ্যাথের কোর্স করেছি। এই দেখ সার্টিফিকেট।
জামার ভিতর থেকে একটা মোড়ানো কাগজ বের করলো ও। ঘটনা সত্য। আনকোরা কোন প্রতিষ্ঠানের রঙচঙে সবুজ বর্ণ সার্টিফিকেট। আমাদের মুখ আরো একবার ঝুলে পড়ে আঁকৎসিকতায়।
একজন বললো, এত জলদি ডাক্তার হওয়ন জায় জানতাম না।
অন্যজন ফোঁড়ন কাটলো চোখটিপে , হারবাল ডাক্তার।
অপরজন বললো, হ্যোমিওপ্যাথ ডাক্তারও ডাক্তার আর তেলাপোকাও পাখি।
আরেকজন, হে হে বুন্দিয়ার ডাক্তার ।
চুপ হারামজাদারা চুপ। চেঁচালো পটাদা। বেঁশি কথা না।
এইজন্য তুমি এতদিন গায়েব ছিলা? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
এইতো বুঝতে পেরেছিস এবার৷ পটাদা বুকফুলিয়ে ভাব নিলো একখান৷
বাহ পটাদা বাহ। তুমি তো কামাল করে দিলে৷ ছ্যাঁকা খেয়ে ডাইরেক্ট হ্যোমিও ডাক্তার । ওকে ঠিক আছে। দুটো কথা বোঝাও (১) হ্যোমিও ডাক্তারেরা কি কালো এপ্রোন পড়ে। (২) আমার সেই আত্মীয় তো এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া বিয়ে করবে না বলেছিলো।
পটাদা রে রে করে তেড়ে উঠলো। নো নো চাঁদু তোমার বোন বলেছিলো ডাক্তার ছাড়া বিয়ে করবে না। অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি নাকি হারবাল সেটা একবারও বলেনি।
আমি পটাদার যুক্তি শুনে কপাল চাপড়াতে বাধ্য হলাম ওর নির্বুদ্ধিতায়।
পটাদা বলে চললো, আর এই কালো কোট এজন্য পড়েছি এটা আমার বিদ্রোহ, বিদ্রোহের প্রতীক কালো। তোর বোনের অহংকার চূর্ন করার বিদ্রোহ। দুবারে ম্যাট্রিক পাশ করা মেয়ের শখ কত “ডাক্তার ছেলে লাগবে। ঘন্টা পাবে “।এবার আমি বোঝাবো মজা, আমি যাবো আর ওর মুখের উপর রিজেক্ট করবো ওকে এবার।
পটাদা সত্যি একটা জিনিস । একমাত্র ভগবানই জানে পটার মাথায় কখন কি ঢোকে।
ওকে ওকে কিন্তু এই হলুদ ক্যাটক্যাটে শার্টটা কেনো পড়েছো? তুমি জানো তোমাকে কাকতাড়ুয়ার মত লাগছে।
বাজে বকিস নে….!!
ঠিকই বলছি, এটাও কি তোমাদের হ্যোমিও ডাক্তারের ড্রেসকোড নাকি? ফোঁড়ন কাটলাম।
তোরা আসলেই গ্যান্দা পোলাপান সব। জীবনে প্রেম করেছিস কে কে বল? হাত তোল৷



আমরা সবাই ইতিউতি তাকিয়ে চিন্তাভাবনা করে বুঝলাম সবাই জেনুইন সিঙ্গেল। প্রেম টেম করার সময় কোথায় আমাদের। স্কুল, কলেজ, কোচিং, আড্ডা মেরে সময় কোথায়? আর আমাদের কোন মেয়ে…..
এজন্যই তো, এজন্যই তো বলি গাধার দল। এখনো তো স্মার্ট হতে পারলি না। দুএকটা প্রেম করলে চালু হয়ে যেতি। আজ কত তারিখ মনে আছে?
হু, চৌদ্দ তারিখ।
আজ কি?
পহেলা ফাল্গুন। ওরে হ্যাঁ হ্যাঁ আজ তো ভ্যালেন্টাইন ডে ও। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

হু রে গর্ধবের দল। ফাগুনে সবাই হলুদ, লাল, সাদা যাকে বলে রঙিন ড্রেসে সেজেগুজে পার্টনার নিয়ে ঘুরতে বেড়ায়, অনুষ্টানে যায়। কিন্তু তোরা তো শিশু এখনো।
এটা কিন্তু বেশি বেশি হয়ে গেলো পটাদা। আমরা একদম শিশু নই। আমাদের বন্ধু কামাল, সুবর্ণ, সুমন, দীপকদের গার্লফ্রেন্ড আছে। ওরাও ঘুরতে যায়। হতে পারে এবার আমাদের নেই, সামনের বছর দেখিও প্রেমিকার লাইন লেগে থাকবে।
আহারে…..ওই বন্ধুদের প্রেমের হিসাবই করো খোকা।

তা যাইহোক, তাই বলে এত ক্যাটক্যাটে হলুদ পড়া কোন স্মার্টনেসের ব্যাপার আমাদের মাথায় ঢুকলো না। আবার ফাগুনে কালো এপ্রোনই বা পড়তে হবে কেনো। আজগুবি পটা।

পটাদা উঠে পড়লো, আমরাও উঠলাম। জিজ্ঞেস করলাম কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছো সক্কাল সক্কাল। গার্লফ্রেন্ড?



কালো সানগ্লাস পড়তে পড়তে চোখটিপে পটাদা উত্তর দিলো, যাচ্ছি তোর বোনের সাথে দেখা করতে। আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই আসবো৷
তা পটাদা তোমার হাতে গোলাপ কেনো?
ও তোরা বুঝবি না।
আমরা পটাদার পেটে গুতো দিতে লাগলাম। হে পটা এই তোমার হেস্তনেস্ত। বাবারে বাবা তোমার ঢং, কি প্রেমিক রে।

শোন আমি জলদি ফিরবো, তোরা আমার সংবর্ধনার ব্যবস্হা কর। এ পাড়ায় প্রথম ডাক্তার এসেছে, এবার সানাইও বাঁজবে…
পটাদা তুমি কি সিরিয়াস।
হুম অবশ্যই সিরিয়াস। আর আজ থেকে তোরা সম্মান দিয়ে চলবি বুঝলি। আমাকে ডা. পটাদা বলবি …ডা. পটা ……. ওকে….

বাহ রে পটা বাহ……..

থানাপাড়া, লালমনিরহাট।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
সংসদ নির্বাচন ২০২৩: এগিয়ে কোন দল?

সংসদ নির্বাচন ২০২৩: এগিয়ে কোন দল?

সংসদ নির্বাচন ২০২৩: এগিয়ে কোন দল? BNP | Awamileuge | Jatiya Party | অবরোধের খবর | Bd Politics
The Ultimate Guide to Stock Market

The Ultimate Guide to Stock Market

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...
সাদাকালো মহাকাল

সাদাকালো মহাকাল

জীবনের গল্প – আদিল মাহফুজ রনি    শুক্রবার, বেলা দুপুর দুইটা। জুম্মার নামাজ শেষ করে মফিজ উদ্দিন বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়ালো। তার বাড়িটা পড়েছে সৈয়দ ...
আবশ্যকঃ একজন কর্মমুখী শিক্ষক

আবশ্যকঃ একজন কর্মমুখী শিক্ষক

অনির্বাণ চক্রবর্তী নিউমার্কেটের সামনে যে ছেলেটা স্যুট প্যান্টে দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি তানিম আহমেদ। পেশায় একজন প্রাইভেট ব্যাংকার। তবে এখানে তিনি শুধু শুধু দাঁড়ায় নি। সায়মা ...

Don’t Share This Politics Insider Secret

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...
মন কেমনের জন্মদিন

মন কেমনের জন্মদিন

আশিক মাহমুদ রিয়াদ ভোরসকাল। ঢং ঢং আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। দক্ষিণ দিকের জানলা খুলে দিতেই ধবধবে শাদা গির্জাটা চোখে পড়ে। আজ রোববার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ...