পলিপাস কী?
সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নাকের দুদিকে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাকের একপাশে সাদা বা ধূসর বর্ণের পিণ্ড আঙুর ফলের মতো ঝুলতে থাকে। একেই বলে নাকের পলিপ। এ ক্ষেত্রে নাকের মিউকাস গ্রন্থি বড় হয়ে থলির আকার ধারণ করে। । আমাদের মাথার খুলির মধ্যে নাকের হাড়ের আশেপাশে কিছু বায়ুপূর্ণ স্থান থাকে। এদের প্যারান্যাসাল সাইনাস বলা হয়। অবস্থান অনুযায়ী এদের বিভিন্ন নাম আছে। যেমন- ফ্রন্টাল ম্যাক্সিলারি, ইথময়ডাল, স্ফেনয়েড ইত্যাদি।শারীরবিদ্যায়, একটি পলিপ হল একটি শ্লেষ্মা ঝিল্লি থেকে প্রক্ষিপ্ত টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। যদি এটি একটি সংকীর্ণ প্রসারিত ডালপালা দ্বারা পৃষ্ঠের সাথে সংযুক্ত থাকে এটিকে বৃন্তযুক্ত বলা হয়; যদি এটি একটি ডালপালা ছাড়া সংযুক্ত থাকে এটি সিসিল বলা হয়। পলিপ সাধারণত বৃহদন্ত্র, পাকস্থলী, নাক, কান, সাইনাস, মূত্রথলি এবং জরায়ুতে পাওয়া যায়। পলিপাস হলো এই নাক এবং প্যারান্যাসাল সাইনাস এর মধ্যকার মিউকাস টিস্যুর অতিরিক্ত বৃদ্ধি।বিশেষ করে এই রোগটি যাদের ঠান্ডা কিংবা ধূলোবালি জনিত এলার্জি আছে তাদের ক্ষেত্রে তীব্র যন্ত্রণা ও বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে
নাকের পলিপ কেন হয়?
নাকের পলিপের অন্যতম কারণ হচ্ছে এলার্জি। এ এলার্জি নাকের ভেতরে ধুলোবালি বা ধোঁয়ার এলার্জি থেকে হতে পারে। নাকের ভেতরে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের এলার্জি থেকে কিছু কিছু রোগীর উভয় নাকে এবং অনেক সাইনাসজুড়ে পলিপ তৈরি হয়।
যাদের নাকের এলার্জি আছে, তাদের ১৭ থেকে ১৯ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে হাঁপানিও আছে। যাদের হাঁপানি আছে, তাদের ৫৫-৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে নাকের এলার্জিও থাকে।
নাকের এলার্জি ও ফুসফুসের এলার্জির (হাঁপানি) একটির প্রভাব আরেকটির ওপর পড়ে। নাকের এলার্জি ঠিকমতো কন্ট্রোল না করলে অনেক সময় হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে বা হাঁপানির চিকিৎসা করা দুরূহ হতে পারে। সে রকম ফুসফুসের এলার্জি বা হাঁপানি ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া নাকের ওপর পড়ে
পলিপাস এর বিভিন্ন লক্ষন রয়েছে । যেমনঃ একনাগাড়ে হাঁচি , নাক দিয়ে পানি পড়া , নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম , নাক এবং তালু চুলকানো , নাকে ব্যাথা , মাথা ব্যাথা , জ্বর জ্বর অনুভূতি, খাবারে অরুচি, ঘুমের সময় নাক ডাকা, শরীর শুকিয়ে যাওয়া ও কখনো নাকের মাংস বাইরে বের হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ।
পলিপাস এর ধরন–
সাধারণ মিউকাস পলিপাস- পলিপাস এর মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এলার্জি জনিত কারণে হয়।
মিউকাস পলিপাসের কারণ কি?
আগেই বলেছি- মিউকাস পলিপাস এর কারণ মূলত এলার্জি। যার ফলে নাক এবং সাইনাসের নিউকাছে জল জমে মিউকাস ফুলে ওঠে ও নাকের মধ্যে শ্বাস চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় এই ফুলে ওঠা মিউকাছের ওপর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ হয়। সুতরাং এলার্জির জন্য প্রথমে ফুলে উঠলেও পরে মিউকাছের উপর অভিকর্ষের টান, ইনফেকশন ও নাক বন্ধ হওয়ার জন্য নিঃশ্বাসের চাপের স্পর্শে সাইনাসের মিউকাস টিস্যুগুলো আরো স্পষ্টভাবে ফুলে ওঠে। একেই ন্যাসাল পলিপাস বলা হয়।
ফাংগাল পলিপাস- রাইনো স্পোরিডিয়াম সিবেরি নামক একটি ফাংগাল ইনফেকশনের কারণে হয়।
নেওপ্লাস্টিক- নাকের মধ্যে টিউমার বা ক্যান্সার জনিত কারণে সৃষ্টি হয়। যেহেতু পলিপাস বলতে আমরা সাধারণত
মিউকাস পলিপাস কেই বুঝি তাই আমাদের আলোচনা এই ধরনের পলিপাস এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখব।
ইথময়ডাল সাইনাসে এই ঘটনা ঘটলে পলিপাসগুলো নাকের ফুটো দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে বা নাকের ভেতরে টর্চ ফেললে দেখা যায়। একে বলে ইথময়ডাল পলিপাস।
ম্যাক্সিলারি সাইনাস এর দ্বারা যেহেতু পেছন দিকে তাই এই সাইনাসের পলিপ নাকের পেছনের দিকে বৃদ্ধি পায়। হা করলে মুখের পেছনের দিকে পোস্টেরিয়র ন্যাসল ক্যাভিটিতে ঝুলতে দেখা যায়। এর নাম অ্যান্ট্রো কোয়ানাল পলিপাস।
ঘরোয়া চিকিৎসা-
নাকের পলিপাস দূর করতে আদা বেশ কার্যকর একটি ভেষজ। তাই প্রতিটি রান্নায় আদার গুড়ো সহ আদা ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও আরো বেশি উপকার পেতে আদা দিয়ে চা বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। নাকের পলিপাস মূলত এলার্জি ঘটিত কারণে হয়ে থাকে, সেহেতু এলার্জি কমাতে হলুদ খাওয়া যেতে পারে। হলুদ আমাদের দেহের এলার্জির প্রভাব কমিয়ে ফেলে। ফলে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় আপনি হলুদ রাখতে পারেন এবং প্রতি বেলা খাবারে দুচা-চামচ হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন।
সুন নাকের পলিপাস দূর করতে বেশ উপকারি একটি ঔষধ। এটি আমাদের দেহে গিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি দেহের কার্য-ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হামদর্দ ইউনানী ল্যাবরেটরীজ এর কুলজম নামের একটি লিকুইড ঔষধ পাওয়া যায় । এটি তুলার সাহায্যে পলিপাস এর উপরে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায় ।
চিকিৎসা
নাকে পলিপের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসা হলো ধুলোবালি, ধোঁয়া ও ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে নাকে স্টেরয়েড জাতীয় স্প্রে ব্যবহার করলে এটি চলে যেতে পারে।
পলিপ যদি নাককে সম্পূর্ণ অথবা আংশিকরূপে বন্ধ করে দেয়, তা হলে সাধারণত ওষুধে কাজ হতে চায় না। এ রকম ক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে পলিপ ফেলে দেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীকে নাক দিয়ে ভাপ নেওয়া, নাকের ড্রপ ও অ্যালার্জির ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়। এতে রোগী বেশ উপকার পায়। প্রাথমিক ও ছোট আকারের পলিপের ক্ষেত্রে অনেক দিন ধরে স্টেরয়েড স্প্রে করলে রোগী ভালো হয়ে যায়।
তবে বড় আকারের পলিপের জন্য অপারেশনের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকরা পলিপের উৎপত্তিস্থল, আকার, সংখ্যা ইত্যাদি দেখে সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশনের মধ্যে বর্তমানে পলিপেকটমি ও এন্ডোসকপি সাইনাস সার্জারি বেশ জনপ্রিয়।
[পলিপাস মাঝেমধ্যে ভীষণ যন্ত্রণাদায়কও হতে পারে। তাই বেশি যন্ত্রণাদায়ক হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ সেবন করতে হবে]